ইরাকের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে আছে বেতার, টেলিভিশন, ল্যান্ডফোন, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট, এ সবের পাশাপাশি ডাক ব্যবস্থাও বিদ্যমান আছ।
২০০৩ সাল থাকে বেসরকারী বেতার ও টেলিভিশনের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ছে।[১] ইরাকিরা অধিকাংশ খবরই টেলিভিশন থেকে পায়। টেলিভিশনের বৃদ্ধির সাথে সাথে রেডিও শোনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেসরকারী গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন থেকে নির্ভরযোগ্য পরিমাণে আয় হয়।[২]
সাদ্দাম হুসাইনের শাসনামলে সম্প্রচার কার্যক্রম মুলত ইরাকি ব্রডকাস্টিং এন্ড টেলিভিশন এস্টাবলিশমেন্টের (আইবিটিই) এক্তিয়ারে ছিল। আইবিটিই তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হত। আইবিটিই প্রায়ই সাদ্দাম হুসাইনের অনুকূলে সম্প্রচার করত, যেমন তার প্রশংসামুলক গান, কবিতা, ইত্যাদি সম্প্রচারিত হত। আইবিটিইর বেশির ভাগ ট্রান্সমিটারই বাগদাদ এলাকায় ছিল, আঞ্চলিক স্টেশন খুবই কম ছিল। সাদ্দাম হুসাইনের পতনের পর আইবিটিই বিলুপ্ত হয়ে যায়।[৩][৪][৫]
বর্তমান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হলো ইরাকি যোগাযোগ ও মিডিয়া কমিশন,[৬] এবং সরকারি সম্প্রচারক হলো ইরাকি মিডিয়া নেটওয়ার্ক।[৭] ইরাকি মিডিয়া নেটওয়ার্ক বর্তমানে ইরাক প্রজাতন্ত্রের বেতার এবং সরকার সমর্থিত আল-ইরাকিয়া টিভি পরিচালনা করে। জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল আল-শারকিয়াসহ অনেক বেসরকারী টিভি চ্যানেলও সম্প্রচারিত হচ্ছে। ইরাকে ৯৭% এর বেশি বাড়িতে স্যাটেলাইট ডিশ সংযোগ আছে এবং ত্রিশটিরও বেশি স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক আছে।[২]
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, আমেরিকান ফোর্সেস নেটওয়ার্ক (এএফএন), ব্রিটিশ ফোর্সেস ব্রডকাস্টিং সার্ভিস প্রভৃতি বিদেশী স্টেশন ইরাকে সম্প্রচারিত হয়। ইরাকের অভ্যন্তরে পরিচালিত অন্যান্য বিদেশী বেতার কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং সেন্টার (এমবিসি), প্যারিসভিত্তিক মন্টে কার্লো ডউআলিয়া, ময়েন অরিয়েন্ট এবং রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (এরএফআই) প্রভৃতি।[২]
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধে ইরাকের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বসে পড়ে। The মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আওতাভূক্ত ইরাক রিকনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট অফিস (আইআরএমও) ইরাকের যোগারোগ মন্ত্রণালয়কে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনপ্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গণচীন, তুরস্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের অনেক সরকারী-বেসরকারী কোম্পানি সম্পৃক্ত ছিল।
সাদ্দাম হুসাইনের সরকার খুব কঠোরভাবে ইন্টারনেট এক্সেস নিয়ন্ত্রণ করত, এবং খুব কম মানুষ অনলাইন সম্পর্কে জানত। ২০০২ সালে মাত্র ২৫,০০০ ইরাকি ইন্টারনেট ইউজার ছিল। তার পতনের পর ইন্টারনেটের ব্যবহার সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়। উরুকলিংক, মুলত একমাত্র ইরাকি ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী সংস্থা, তাকে এখন প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপিয়ান ভি-স্যাট হাবের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে।[১০]
২০১০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রধান পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ছিল:[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
২০০৯ সালের আগস্টে অপেন নেট ইনিশিয়েটিভ চারটি ক্ষেত্রের (রাজনৈতিক, সামাজিক, দ্বন্দ্ব/নিরাপত্তা এবং ইন্টারনেট সরঞ্জাম) মধ্যে কোন ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট নজরদারির প্রমাণ পায় নি।[১২]
ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন ধরনের সরকারী বিধিনিষেধ নেই। বিচার বিভাগের নিরর্দেশন ছাড়া ই-মেইল বা ইন্টারনেট চ্যাট রুমে কোন ধরনের নজরদারি করার কথাও সরকার স্বীকার করে না। তবে এনজিওসমূহের প্রতিবেদন অনুসারে সরকার স্থানীয় ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিণ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ই-মেইল ও চ্যাটের উপর ব্যাপক নজরদারি রাখে।[১৩]
যুদ্ধ পরবর্তী সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো পুনির্মাণ কর্মসূচির অংশ হিসাবে ডাক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ইরাকি ডাক ব্যবস্থা সুসংগঠিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]