ইরানে নারীরা ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের আগে পশ্চিমা ভাবধারার পোশাক পরার সুযোগ পেতেন।[৩] কিন্তু ১৯৭৯ সালে বিপ্লব আসার পর ইরানে নারীদের ওপর ইসলামী জীবনধারা চালু হয়।
ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানি নারীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেন, তাদের বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তুমুল মেধার স্বাক্ষর রাখতে দেখা যায়, এসবই সম্ভব হয় ইরানে ইসলামী শাসনের কারণে। ইসলামী বিপ্লব হয়েছিলো ১৯৭৯ সালে, এর ১০ বছরের মাথায় ইরানে নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতি বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ গুণ।[৪] ইরানে নারীদের প্রকাশ্যে রাস্তায় হিজাব পরা বাধ্যতামূলক, রাস্তায় ঘোরাফেরা করার স্বাধীনতা ইরানি নারীদের আছে তবে তাদের মাথায় হিজাব রাখা বাধ্যতামূলক। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের আগে নারীরা পশ্চিমা পোশাক পরতেন যা ছিলো অশালীন কিন্তু ইসলামী শাসন আসার পর থেকে তারা শালীন পোশাক পরা শুরু করেন।[৫]
ইরানে শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। তবে বিদ্যালয় সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের যৌন বিভাজন লক্ষ্য করা যায়, এটা করা হয় ছেলেমেয়েরা যাতে অনৈতিক যৌনকর্মে না জড়ায়, দেশের সব জায়গাতেই লিঙ্গ বিভাজন নীতি রয়েছে; নারী এবং পুরুষের মধ্যকার বন্ধুত্ব ছোটোবেলা থেকেই রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিকভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়, প্রাপ্তবয়স্ক হলে এটার উপরে নিষেধাজ্ঞাও দেখা যায় কঠোরভাবে।[৬][৭] ইসলামী বিপ্লবের আগে ইরানের নারীরা কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে পারতেন খুব কম হারেই, নারীদের মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ ১৯৭০-এর দশকে কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে পারতো, ইসলামী বিপ্লবের পর নারীদের জন্য নতুন নীতি প্রণীত হয়, নারীরা আগের তুলনায় শিক্ষিত এবং কর্মজীবী হবার সুযোগ ভালো করে পেতে থাকেন, ২০০৯ সালে হিসেব অনুযায়ী ইরানের ৩১ শতাংশ নারী কর্মজীবী ছিলেন।[৮] সমাজে প্রেম করে বিয়ে করা যায় তবে বিয়ের আগে প্রেমিক-প্রেমিকারা যৌনক্রিয়ায় জড়ালে জেল-জরিমানার শিকার হতে পারে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়ও আর তাই ইরানের সমাজে প্রেম করে বিয়ে করাটা খুব একটা দেখা যায়না।[৯] পশ্চিমা ধাচে প্রেম করা ইরানে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিকভাবে কড়াকড়িভাবে নিষেধ।[১০]
প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো (যিনি ১৯৮৪ সালে মারা যান) ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে সমর্থন দিয়ে বলছিলেন,
“
ইরানি মেয়েরা পশ্চিমা ভাবধারায় জীবন যাপন করলেও সমাজের কোথাও বিন্দুমাত্র শান্তি ছিলোনা, সব জায়গায় এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজমান ছিলো; ইরানে ইসলামী বিপ্লব ইরানি মেয়েদেরকে এবং গোটা ইরানকে অশান্তির দাবানল থেকে উদ্ধার করেছে
মাহশা আমিনী নামে একজন নারীকে ইরানের ধর্মীয় পুলিশ হিজাব না পরার অপরাধে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশের অধীনে থাকাবস্থায় সে মারা যায়। মাহশাকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পরলে ইরান ও বিশ্বব্যাপী হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনটি সেপ্টেম্বর ২০২২ এর দিকে শুরু হয়, তবে সেপ্টেম্বর ২০২৩ এর দিকে এসে আন্দোলন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।[১৩] এই আন্দোলন ইসলামি শাসনব্যবস্থার ইরানের অন্যতম বড় আন্দোলন ছিলো।[১৪]
↑Mehran, Golnar (২০০৩-০৮-০১)। "The Paradox of Tradition and Modernity in Female Education in the Islamic Republic of Iran"। Comparative Education Review। ৪৭ (৩): ২৬৯–২৮৬। আইএসএসএন0010-4086। ডিওআই:10.1086/378248।