ইশকাশিমি | |
---|---|
škošmi zəvůk | |
দেশোদ্ভব | আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান |
মাতৃভাষী | ১,৫০০ ~ ৩,০০০ (২০০৯)[১]
|
অনুপস্থিত | |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-৩ | isk |
গ্লোটোলগ | ishk1244 [২] |
লিঙ্গুয়াস্ফেরা | 58-ABD-db |
ইশকাশিমি (ইশকাশিমি: škošmī zəvuk/ rənīzəvuk)[৩] একটি ইরানীয় ভাষা, যেটি প্রধানত আফগানিস্তানের বাদাখশন প্রদেশে এবং তাজিকিস্তানের গোর্নো-বাদাখশন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়।[৪]
এই ভাষার প্রায় ২,৫০০ ভাষিকের অধিকাংশই বর্তমানে তাজিকিস্তান এবং আফগানিস্তান এবং আশেপাশের ছোট ছোট গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ইশকাশিমি এই মুহুর্তে বিপন্ন ভাষার মর্যাদাপ্রাপ্ত এবং আগামী ১০০ বছরে অত্যন্ত বিপন্ন হিসাবে পরিণত হতে পারে। তদুপরি, বিস্তৃত ও নিয়মিত পদ্ধতিতে গবেষণার অভাব এবং নিজস্ব লিখন পদ্ধতির অভাবে ইশকশিমি ভাষা সম্পর্কে তথ্য সীমাবদ্ধ।[৫]
এই ভাষার প্রায় ২,৫০০ ভাষিকের মধ্যে ১,৫০০ জন বসবাস করেন ইশকাশিম এবং ওয়াখান জেলা এবং আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের বিভিন্ন গ্রামে এবং ১,০০০ ভাষাভাষী রয়েছে তাজিকিস্তানের গোর্নো-বাদাখশন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে, বিশেষত ইশকশিম শহরে এবং প্রতিবেশী রিন ও সুমজিন গ্রামগুলোতে।[৪][৬]
ইশকাশিমি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর একটি ভাষা। আফগানিস্তানের জেবাকি এবং সাঙলেচি উপভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এটিকে সাম্প্রতিককালেও সাঙলেচি উপভাষার সাথে সাঙলেচি-ইশকাশিমি ভাষাপরিবারে গোষ্ঠীভুক্ত করা হতো। তবে আরও বিস্তৃত ভাষাগত বিশ্লেষণে এই সব ভাষাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা গেছে।[৭] ইশকাশিমি ভাষার শব্দতত্ত্ব এবং ব্যাকরণ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত জেবাকি উপভাষার শব্দতত্ত্ব এবং ব্যাকরণের সাথে সমান।[৮] ১৮ই জানুয়ারি ২০১০-এ মূল সাঙলেচি-ইশকাশিমি ভাষাটি অবসরপ্রাপ্ত হয়েছে, এবং বর্তমানে সাঙলেচি এবং ইশকাশিমি উপভাষাগুলোতে বিভক্ত করা হয়েছে। উপরন্তু এই শাখাকে পামির ভাষাসমূহের একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ওয়াখি, শুঘনি, রুশানি, সরিকোলি, ইয়াজঘুলামি, ইত্যাদি ভাষা এই শাখার অন্তর্ভুক্ত। তবে এই শ্রেণীবিভক্তিটি মূলত ভৌগোলিক।[৯] কিছু আর্থ-সামাজিক প্রশ্নাবলীর মাধ্যমে এটি বিবেচিত হয়েছে যে ইশকশিমি ভাষার একটি আফগান এবং তাজিকি প্রকার রয়েছে এবং এগুলো পারস্পরিকভাবে বোধগম্য।[১০]
ইশকাশিমি এমন একটি বিপন্ন ভাষা যেটি ব্যবহৃত অঞ্চলে সরকারী বা প্রাতিষ্ঠানিক ভাষার মর্যাদা পায়নি।[৪]
ইশকাশিমি ভাষার প্রতি মানুষের ইতিবাচক মনোভাব সত্ত্বেও ভাষাটির জীবনীশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এর কারণ স্থানীয় ভাষিকদের মধ্যে শিক্ষা, ধর্ম, ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে আফগানিস্তানে দারি ভাষা এবং তাজিকিস্তানে তাজিক ভাষার ব্যবহারের বৃদ্ধি।[১০] উদাহরণস্বরূপ, দারি শিক্ষাব্যবস্থার ভাষা হওয়ায় প্রায় সমস্ত ইশকাশিমি ব্যবহারকারী এবং বিশেষত কম বয়সীদের মধ্যে দারি ভাষার উচ্চ দক্ষতা রয়েছে। দুটি ভাষা ব্যবহারের ফলে শিক্ষাদানে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, তাই বিদ্যালয়গুলো দারি ভাষা ব্যবহার করতে পছন্দ করে। নির্দেশাবলীগুলো সম্পুর্ণই দারি ভাষায় দেওয়া হয়ে থাকে, তবে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কোন বিষয় ব্যাখ্যা করার সময়ও খুব কমই ইশকাশিমি ভাষায় কথা বলে থাকেন। বিদ্যালয়ের মতো, ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়, বিশেষত প্রচার ও প্রার্থনার জন্য দারির ব্যবহার ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে। গণমাধ্যম এবং সরকারী ক্ষেত্রে সম্পুর্ণরূপে দারি ভাষাই ব্যবহার হয়। ইতোমধ্যে, ব্যক্তিগতভাবে এবং সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে দারি এবং ইশকাশিমি উভয় ভাষাই সমানভাবে ব্যবহৃত হয়। তাজিকিস্তানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য, এবং বন্ধু এবং সহকর্মীদের মধ্যে ব্যক্তিগত কথোপকথনের জন্য ইশকাশিমি প্রথম পছন্দ, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে তাজিক ও ওয়াখি ভাষার ব্যবহারের ফলে ইশকাশিমির ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে।[৫] ইশকাশিমি ভাষী সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে যে সীমিত ব্যবহারের কারণে ভাষাটির বিলুপ্তির সম্ভাবনার মুখোমুখি হতে পারে।
এই ভাষায় সাতটি স্বরস্বনিম রয়েছে:/a/,/e/,/i/,/o/,/u/,/u/, এবং/ə/।[৩]
এই ভাষায় একত্রিশটি ব্যঞ্জনধ্বনি রয়েছে:[৩]
ওষ্ঠ্য | দন্ত্য/ | মূর্ধন্য | তালব্য | পশ্চাত্তালব্য | অলিজিহ্ব্য |
---|---|---|---|---|---|
m | t | t | y | k | q |
p | d | d | g | x | |
b | c [ts] | ṧ | y | ||
w | j [dz] | žá | |||
f | č | čˊ | |||
f | ǰ | l | |||
s | |||||
z | |||||
š | |||||
ž | |||||
n | |||||
l | |||||
r |
পামির ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত হলেও ইশকাশিমি ভাষায় কোন কণ্ঠনালীয় উষ্ম ধ্বনি নেই। এটি সম্ভবত ভাষাটির বিকাশের সময়কাল জুড়ে ফার্সি এবং ইন্দো-আর্য ভাষাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ফলস্বরূপ ঘটেছে। এছাড়াও এই ভাষাতে [h] ব্যঞ্জনধ্বনিটির ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়, অর্থাৎ এটি ব্যবহার না হলেও শব্দের অর্থের পরিবর্তন হয় না।[৩]
একাধিক অক্ষরযুক্ত শব্দে শ্বাসাঘাত সর্বশেষ অক্ষরের উপর পড়ে। তবে এই নিয়মের অনেকগুলো ব্যতিক্রম রয়েছে। কখনও কখনও, বাক্যাংশের ছন্দের ফলস্বরূপ, শ্বাসাঘাত অবাধে শেষের অক্ষরটি বাদে অন্য অক্ষরের দিকে চলে যেতে পারে।[৩]
ক্রিয়া | পরসর্গ | উদাহরণ |
---|---|---|
বহুবচন | -ও | ওলাখ়-ও (পর্বত) |
অনির্দিষ্ট নির্দেশক | -(য়)ই | |
শিক্ষাদীক্ষা | -দোন, -দোর, -বোন |
ব্যক্তিবাচক সর্বনাম | ||||
---|---|---|---|---|
একবচন | বহুবচন | |||
আমি | আমরা | আপনি | তারা | |
আজ়(ই) | মেখ়(ও) | তেমেখ়(ও) | তে |
বানান | মান |
---|---|
উক (উগ) | ১ |
দে(উ) | ২ |
রু(ই) | ৩ |
চেফুর | ৪ |
পুঞ্জ | ৫ |
খুল/লা | ৬ |
উভদ | ৭ |
আত | ৮ |
নাভ | ৯ |
দা | ১০ |
শব্দমূল | গঠন | উদাহরণ |
---|---|---|
বর্তমান | ব্যক্তিবাচক বিভক্তি | |
অতীত | পরিবর্তনশীল বিভক্তি | ঘ়াঝ়দ্-এম ("আমি বলেছিলাম") |
পুরাঘটিত | পরিবর্তনশীল বিভক্তি | ঘ়াঝ়-এম ("আমি বলি") |
ইশকাশিমিতে পদক্রম কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া, তবে তথ্য কাঠামোর বিভিন্নতার দ্বারা এই ক্রমটি প্রভাবিত হতে পারে।[১১]
ইশকাশিমি শব্দভাণ্ডারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশে অন্যান্য ভাষা থেকে ধার করা শব্দ এবং বাক্য গঠন কাঠামো রয়েছে। এর কারণ হলো অন্যান্য ভাষার সাথে ইশকাশিমি ভাষিকদের নিয়মিত এবং ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।[১১] উদাহরণস্বরূপ, "ফকত্" (কেবলমাত্র) আলোকনধর্মী অব্যয়টির ইতিহাসে দেখা যায় যে এটি ফার্সি ভাষা থেকে ধার করা হয়েছিল, যা পুর্বে ফার্সি দ্বারা আরবি থেকে ধার করা হয়েছিল।
প্রাচীন কথাসাহিত্যের ব্যবহার এবং অন্যান্য ভাষাগুলোর শব্দগুলোর থেকে ব্যুৎপত্তির ফলে প্রায়শই তাদের অর্থ এবং উচ্চারণ পরিবর্তনের ফলে ইশকাশিমি ভাষায় নিষিদ্ধ শব্দের গঠন এবং সংযোজন ঘটে। কিছু নিষিদ্ধ ইশকশিমী শব্দ, যা একইভাবে অন্যান্য পামির ভাষায় নিষিদ্ধ হিসাবে দেখা যায়:[১২]
ইশকাশিমির নিজস্ব কোন লিখন পদ্ধতি বা সাহিত্য নেই এবং পূর্ববর্তী শতাব্দীতে কিছু পরম্পরাগত লোককথার লেখার জন্য এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকারী ফার্সি ভাষা ব্যবহৃত হত।[১০] তবে বিংশ শতাব্দীর শেষে সিরিলীয় বর্ণমালার উপর ভিত্তি করে একটি লিখন পদ্ধতি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করা হয়েছিল।
ইশকশিমি ভাষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও সংগঠিত করার জন্য ভাষাতত্ত্ববিদদের প্রথম প্রয়াস ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে হয়েছিল এবং পরে টি. পাখালিনার মতো রুশ এবং ইশকাশিমি ভাষাতত্ত্ববিদরা এই প্রয়াশ চালিয়ে গিয়েছিলেন।[১৩] ইশকাশিমি ভাষার কোনও প্রণালীবদ্ধ বিবরণ বা নথিবদ্ধকরণের আগে গবেষকরা এলোমেলো কিছু শব্দভাণ্ডারের উদাহরণ সংগ্রহ করেছিলেন এবং ইরানীয় ভাষা সম্পর্কিত রচনায় এই ভাষার উল্লেখ করেছিলেন।[১০] কেবল বিংশ শতাব্দীর শেষে ভাষাতত্ত্ববিদরা ইশকাশিমি ভাষার আরও বিস্তৃত বিবরণ তৈরি করেছিলেন।