ইসরায়েল – সংযুক্ত আরব আমিরাত শান্তি চুক্তি, বা আব্রাহাম অ্যাকর্ড[১] হচ্ছে ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) কর্তৃক ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ এর একটি সম্মতিপ্রাপ্ত চুক্তি। যদি একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, ১৯৭৯ সালে মিশর এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডানের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত হবে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজরায়েলের সাথে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নেয়া তৃতীয় আরব দেশ,[১][২][৩] এবং সেই সাথে প্রথম পারস্য উপসাগরীয় দেশ।[৪][৫] একই সময়ে, ইজরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশ দখল করার পরিকল্পনা স্থগিত করতে সম্মত হয়।[৪][৬] এই চুক্তিটি দীর্ঘদিন ধরে চলা অনানুষ্ঠানিক কিন্তু শক্তিশালী বৈদেশিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক করে।[৭][৮]
১৯৭১ সালের প্রথম দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি স্বাধীন দেশে পরিণত হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ইজরায়েলকে "শত্রু" বলে অভিহিত করেন।[৯] ১৯৯০ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কৌশলগত সম্পর্ক ছিল, ১১ ই সেপ্টেম্বরের হামলার পর আল ধাফ্রা বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন বিমান বাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে।[১০] ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ইজরায়েল ঘোষণা করে যে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি কূটনৈতিক কার্যালয় খুলবে, যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম পারস্য উপসাগরে ইজরায়েলের আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি ছিল।[১১] ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ইরানের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইজরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি প্রকাশ্য ঘোষণা দেন।[১২]
এই চুক্তির কয়েক মাস আগে, ইজরায়েল কোভিড -১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে গোপনে কাজ করছিল। ইউরোপীয় সংবাদ মাধ্যম সংবাদ প্রদান করেছে যে মোসাদ বিচক্ষণতার সাথে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে।[১৩][১৪] ২০২০ সালের জুন মাসের শেষে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে দুই দেশ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করছে এবং মোসাদের প্রধান ইয়োসি কোহেন অসংখ্যবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভ্রমণ করেছেন। যাইহোক, সংযুক্ত আরব আমিরাত কয়েক ঘণ্টা পরে এটি প্রত্যাখ্যান করে প্রকাশ করে যে এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বদলে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি ব্যবস্থা মাত্র।[১৫]
এই চুক্তির ভিত্তি হিসেবে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি রদ করার পর ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে পারমাণবিক বোমার ক্ষমতা উন্নয়নের একটি কর্মসূচী সম্পর্কে ইসরায়েলের ক্রমাগত সন্দেহ কাজ করেছে যা তেহরান অস্বীকার করে আসছে। বর্তমানে ইরান এবং সৌদি আরব সিরিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত প্রক্সি যুদ্ধে বিভিন্ন দলকে সমর্থন করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানের জোটবদ্ধ বাহিনীর বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা জোটকে সমর্থন করছে। [১৬][১৭] সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, দেশগুলোর অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উষ্ণ হয়েছে এবং তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী এবং আঞ্চলিক প্রভাবের বিরুদ্ধে তাদের সাধারণ বিরোধিতার উপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যেই ব্যাপকভাবে একটি অনানুষ্ঠানিক সহযোগিতায় নিয়োজিত রয়েছে।[১৮]
বিশ্বের তিনটি প্রধান আব্রাহামিক ধর্ম - ইহুদিধর্ম, ইসলাম এবং খ্রিস্টধর্মের পিতৃত্ব আব্রাহামের সম্মানে এই চুক্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে "আব্রাহাম চুক্তি" বলা হয়।[১৯]
এই চুক্তি নেতানিয়াহুর জন্য একটি প্রধান নীতি রদবদলের প্রতিনিধিত্ব করে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতির বৃদ্ধির জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল এই অঞ্চল দখল করা। এক্ষেত্রে নেতানিয়াহুকে নমনীয়তা প্রদর্শনের জন্য রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হতে হয়, কারণ সাম্প্রতিক তিনটি নির্বাচনে তাকে জোট সরকার গঠন করতে হয়েছে যেখানে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেনি, সেই সাথে সম্প্রতি তাকে ফৌজদারি মামলার সম্মুখীন হতে হয়। ২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক দশকের আমেরিকান নীতি প্রত্যাহার করে ঘোষণা করে যে পশ্চিম তীরের বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেনি, যা দীর্ঘদিন ধরে ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে স্থায়ী শান্তির চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির সিনিয়র উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার দ্বারা তৈরিকৃত ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্য নীতিটি জানুয়ারী ২০২০ সালে মুক্তি পায়, সেখানে নেতানিয়াহুর বিদ্যমান বসতি দখল করার পরিকল্পনা অনুমোদন লাভ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল ওতাইবা ২০২০ সালের জুন মাসে একটি মতামত লেখেন যে, এই সংযুক্তি ইজরায়েল এবং আরব বিশ্বের মধ্যে সুসম্পর্ককে হুমকির মুখে ফেলবে। সমঝোতাকারীরা চুক্তিতে পৌঁছানোর পর, ট্রাম্প, নেতানিয়াহু এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অব্যবহিত পূর্বে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। [৭][২০][২১][২২][২৩]
১৩ আগস্ট, ২০২০ তারিখে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের চুক্তির কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, তার দেশ দুই-রাষ্ট্র সমাধানের হুমকি মোকাবেলা করতে চায়। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ফিলিস্তিনি এবং ইজরায়েলিদের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি মনে করেন না যে জেরুজালেমে কোন দূতাবাস থাকা উচিত।[২৪] মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মতে, "ইজরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক করবে। তারা দূতাবাস এবং রাষ্ট্রদূত বিনিময় করবে এবং বোর্ড জুড়ে সহযোগিতা শুরু করবে এবং পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা শুরু করবে।"[২৫]
ট্রাম্প, নেতানিয়াহু এবং জায়েদের জারি করা এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে: "এই ঐতিহাসিক কূটনৈতিক সাফল্য মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে শান্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এবং এটি তিন নেতার সাহসী কূটনীতি, দৃষ্টিভঙ্গির এবং সাহসিকতার একটি সাক্ষ্য যা সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইজরায়েল অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনাকে উন্মোচন করবে।"[১৬] সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছে যে তারা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং এই চুক্তি ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা বজায় রাখবে। তবে এই চুক্তি সত্ত্বেও নেতানিয়াহু বলেছেন যে জর্ডান উপত্যকায় ইজরায়েলের সার্বভৌমত্বের দাবি এখনো তাদের বিষয়সূচীতে রয়েছে এবং আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।[১৬]
জায়েদ টুইট করেছেন যে "সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইজরায়েলও সহযোগিতা করতে এবং একটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি রোডম্যাপ নির্ধারণে সম্মত হয়েছে।"[২]
আশা করা হচ্ছে যে সেপ্টেম্বরের শুরুতে হোয়াইট হাউসে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।[২৬]
হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের হানু জুসোলার মতে, এই চুক্তির মানে হচ্ছে যে ফিলিস্তিনিরা মনে করবে যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ফিলিস্তিনিদের আগে তাদের নিজেদের স্বার্থ স্থাপন করবে, যেখানে তারা সবসময় ধরে নিয়েছিল যে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিশ্চিত হওয়ার আগে আরব দেশগুলো ইজরায়েলের সাথে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করবে না।[২৭]
+৯৭২ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা লিসা গোল্ডম্যান বলেছেন যে নেতানিয়াহু "কখনোই পশ্চিম তীরের কিছু অংশ দখল করতে চাননি", কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত "ইজরায়েলের অনেক মূল্যবান নিরাপত্তা সহযোগিতার বিনিময়ে একটি কূটনৈতিক বিজয় দাবি করছে। পুরোটাই যথারীতি ফিলিস্তিনিদের পিঠে ভর করে।"[২৮]
আমিরা হাস লিখেছেন যে এই চুক্তি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের চলমান অবহেলার ফল। হাসের মতে, পিএলওর চেয়ারম্যান মাহমুদ আব্বাসের রাজনৈতিক শত্রু মোহাম্মদ দাহলানের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সুসম্পর্ককে প্রত্যাখ্যান করে পিএলও কর্তৃক ২০১২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শত্রুতা ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত চলতে থাকে, যখন পিএলও কোভিড-১৯ মহামারিতে সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাঠানো সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে, এর কারণ হল এটি আগাম চুক্তি ছাড়াই এবং একটি ইজরায়েলি বিমানবন্দরের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। হাস পিএলওকে রাষ্ট্র পরিচালনার চেয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে অধিক উদ্বিগ্ন বলে চিত্রিত করেছেন, যা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা ও বৈদেশিক সম্পর্কে অবনতিতে অবদান রেখেছে।[২৯]
১৬ আগস্ট, ২০২০ তারিখে ফিনান্সিয়াল টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ড লিখেছে যে শান্তি প্রদানের বদলে এই চুক্তি ফিলিস্তিনিদের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং ভবিষ্যতে আরো সমস্যা রচনা করবে যেহেতু ইজরায়েল এবং মার্কিন সরকার "ফিলিস্তিনি-ইজরায়েলি সংঘাতের ন্যায্য সমাধানে কোন আগ্রহ দেখায়নি"।[৩০]
এই চুক্তি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য একটি বহুল স্বাগত সাফল্য, যিনি কোভিড-১৯ মহামারি এবং আমেরিকায় অর্থনৈতিক পতনের সাথে সংগ্রাম করছিলেন, যেখানে জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে যে ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে তিনি তার প্রেসিডেন্ট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বিডেনকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন।[২০]
Israel had signed peace agreements with Egypt in 1979 and Jordan in 1994. But the UAE, along with most other Arab nations, did not recognize Israel and had no formal diplomatic or economic relations with it until now. It becomes the first Gulf Arab country to reach such a deal with the Jewish state.
If fulfilled, the pact would make the Emirates only the third Arab country to have normal diplomatic relations with Israel along with Egypt, which signed a peace agreement in 1979, and Jordan, which signed a treaty in 1994.
Israel currently has peace deals with only two Arab countries — Egypt and Jordan — where it has fortified embassies. If Israel and the UAE go ahead and sign bilateral agreements, it would be the first time Israel has normalized relations with a Gulf state.