এই নিবন্ধটিকে উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে এর বিষয়বস্তু পুনর্বিন্যস্ত করা প্রয়োজন। (জানুয়ারি ২০২০) |
ইসরায়েল-গাজা বিরোধ দ্বারা মূলত ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ট দেশ ইসরাইল এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ ফিলিস্তিনের মধ্যকার বিরোধকে বুঝায়। এটি মূলত শুরু হয় ১৯৪৮ সালে ১৪ই মে ডেভিড বেনগুরিয়ন কর্তৃক ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে।
মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তৎকালীন বিশ্ব পরাশক্তিধর দেশ ফ্রান্স,বৃটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করে। এতে আরববিশ্বের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। আসলে খ্রিস্টান জগতে ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা না ঘটিয়ে মুসলিম জাহানে ইসরাইল নামক একটি রাষ্ট্র স্থাপন করার পেছনে ছিল একটি সুদূর প্রসারী চক্রান্ত। সেটি হল, মুসলিম জাহানের বুক চিরে একটি বৃহত্তর ইহুদী রাস্ট্র গঠনের চক্রান্ত। এই বৃহত্তর ইহুদী রাষ্ট্রের চিন্তা সর্ব প্রথম যার মাথায় এসেছিল তার নাম থিওডর হার্জ। তিনি এমন একটি ইসরাইল রাষ্ট্রের কল্পনা করেছিলেন যেটি বিস্তৃত হবে মিশরের নীল নদ থেকে ইরাকের ফোরাত নদী পর্যন্ত।
১৯৪৮ সালের ১৪ মে ডেভিড বেনগুরিয়ন ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। একই সাথে তিনি নিজেকে ইসরাইল নামক একটি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। অথচ ঐ দিন এই রাষ্ট্রটির কোন সীমানা ছিল না, ছিল না কোন পূর্ণাঙ্গ সরকার, ছিল না কোন ভূখণ্ড, ছিল না কোন সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী। অথচ ১৫ মে তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁদ্রে গ্রোমিকোর উদ্যোগের ফলে আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং সোভিয়েট ইউনিয়ন সহ ৩৩ টি দেশ ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেয়। স্বীকৃতি পাওয়ার পর তারা শুরু করে তাদের অাসল খেলা। ১৫ মে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের সাথে যুদ্ধ করে ইসরাইল পশ্চিম জেরুজসালেম দখল করে নেয়। অার এ যুদ্ধে তাদের কে সহায়তা করেছিল তা বলে না দিলেও চলবে।
১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় আরব ইসরাইলী যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এই যুদ্ধে ইসরাইল মিসরের সিনাই এলাকা দখল করে। ১৯৬৭ সালে ৬ দিন ব্যাপী তৃতীয় আরব ইসরাইলী যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এই যুদ্ধে ইসরাইল মিসরের নিকট থেকে গাজা দখল,সিরিয়ার নিকট থেকে গোলান মালভূমি,জর্ডানের নিকট থেকে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম এবং ওল্ড সিটি বা প্রাচীন নগরী দখল করে নেয়।
১৯৭৩ সালের ‘ইয়ম কিপুর’ দিবসের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইলিরা।
১৯৯৩ সালের জুলাইতে, এক সপ্তাহ ধরে ইজরায়েল লেবাননে অ্যাটাক চালায়, লেবাননের শিয়া হিজবুল্লাহ পার্টিকে দুর্বল করে দিতে যাতে লেবানন তাদের বিপক্ষে হুমকী হয়ে না দাড়াঁতে পারে। ১৯৯৬ সালের ইসরাইলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নেতানিয়াহু জিতেন, আর হামাস বোমা চালায় গাজায় তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য। একই বছর সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনি দাঙ্গায় ৮০ জন মারা যায়।যার নেপথ্যে ছিল ইসরাইল। ১৯৯৯ এর জুলাইয়ে ইসরাইলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক জিতে যান। কিন্তু ২০০১ সালে নির্বাচনে জিতেন এরিয়েল শ্যারন। তিনি ২০০২ সালে পশ্চিম তীরে ব্যারিয়ার বানানো শুরু করলেন। এর প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের গাজা থেকে সেখানে মরটার হামলা হতে লাগল। আর লেবানন থেকে হিজবুল্লার আক্রমণ অব্যাহত ছিল।
ফলে ২০০৪ সাল থেকে একদম পুরোদমে গাজায় প্রতিশোধ নিতে নামে ইজরায়েল। চলতে থাকে অপারেশন।নিহত হয় বহু বেসামরিক জনগণ,ধ্বংস হয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম।
এখানে বলে রাখা ভাল ফিলিস্তিনিদের নিধনের জন্য ইসরাইল ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠা করে যা সুন্নি মতাদর্শী সামরিক বাহিনী।
২০০৬ সালে ফিলিস্তিনে জিতে আসে হামাস, এসেই তারা ইসরাইলের সাথে শান্ক্তিতি বাতিল করে দেয়। এমনকি ইজরাইল এর প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা থেকে তারা সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের ইহুদী গণহত্যাকে জায়োনিস্টদের বানানো মিথ বলেও প্রচার করে বসে।
২০০৬ সালে শ্যারন স্ট্রোক করায় প্রধানমন্ত্রী হন এহুদ ওলমার্ট।ঔ ববছরের ১৪ মার্চ এক ফিলিস্তিনি জেলে অপারেশন চালায় ইজরায়েল। জুন মাসে ফিলিস্তিনের হামাস গাজা বর্ডার ক্রস করে ট্যাঙ্ক অ্যাটাক করে ইজরায়েলি সেনাকে ধরে নিয়ে আসে। লেবাননের সামরিক বাহিনী হিজবুল্লাও প্রায় একই কাজ করে, দুজন ইসরাইলী সেনা ধরে নিয়ে আসে। ফলে ইজরায়েল দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধ শুরু করে দেয়।
২০০৭ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হামাস। সেপ্টম্বরে ইজরায়েলি এয়ারফোর্স সিরিয়ার নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর ধ্বংস করে দেয়।
২০০৮ সালে হামাসকে শায়েস্তা করতে গাজায় অভিযান চালায় ইজরায়েল। ২০০৯ সালে নেতানিয়াহু ক্ষমতায় আসেন, এবং এখনো আছেন। ২০১১ সালে হামাস আর ইজরায়েলের চুক্তি হয়, যার ফলে সেই কিডন্যাপ করা ইজরায়েলি সেনার বিনিময়ে ইসরায়েল ১০২৭ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেয়। ২০১২ সালের নভেম্বরে হামাস নেতা আহমেদ জাবারিকে হত্যার অজুহাতে ইসরায়েল আবার গাজায় হামলা শুরু করে দেয়।
এরপর ২০১৪ সালের ৮ জুলাই হামাসের রকেট হামলার উত্তরে ইসরায়েল গাজা এলাকায় বড় আকারের আক্রমণ শুরু করে। প্রায় দুইমাসের কাছাকাছি চলা এ যুদ্ধে প্রায় শতাধিক বেসামরিক নারী ও শিশু নিহত হয়।এসময় পুরো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও নেতারা এর তীব্র নিন্দা করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও ইসরাইল তাদের আক্রমণ চালিয়ে যায়। সম্প্রতি (২০১৭ সালের ডিসেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দেন। ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হলেও তাদের দাবিকৃত জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে কোনো রাষ্ট্রই স্বীকৃতি দেয়নি। কারণ জেরুজালেম, মুসলিম ও ইহুদি তথা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য পবিত্র জায়গা। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক সমালোচিত হয়েছেন। এদিকে ইসরাইল এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে।