এই নিবন্ধটি উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে পরিচ্ছন্ন করা প্রয়োজন। মূল সমস্যা হল: রচনাশৈলী। |
ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম |
---|
ইব্রাহিমীয় ধর্ম |
অন্যান্য ধর্ম |
ইসলাম এবং... |
ইসলাম |
---|
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
কয়েক শতাব্দী ধরে ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন সময় মুসলিম শাসক, ওলামা এবং সাধারণ মুসলিমরা অন্যান্য ধর্ম ও সম্রদায়ের ব্যাপারে নানাবিধ ধারণা পোষণ করেছেন। সময়ের পরিক্রমায় এই ধারণাগুলি পরিবর্তিত হয়েছে।
ইসলাম (আরবি: الإسلام) শব্দটি এসেছে আরবি س-ل-م থেকে যার তিনটি অর্থ।
বলা হয় ইসলাম হলো শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এক ও অদ্বিতীয় মহাপ্রতিপালক (আল্লাহ)-এর সমীপে সার্বিক দিক থেকে আত্মসমর্পণ করা।
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বলা যায়:- ইসলাম সত্য ও ন্যায়বিচারের ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে ধর্ম।
ইসলামের আক্বীদা বা ঈমানই ইসলামকে অন্যান্য ধর্ম থেকে পৃথক করে। আক্বীদার অন্যতম বিশ্বাসগুলি হলো তওহীদ, ফেরেশতা, কিতাব, নবী-রাসূল, আখিরাত, ত্বকদীর -এর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
তাওহীদ (আরবি: توحيد) ইসলাম ধর্মে এক ঈশ্বরের ধারণাকে বোঝায়। তাওহীদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ৷ ইসলামী পরিভাষায় তাওহীদ হল সৃষ্টি ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করা, সকল ইবাদাত-উপাসনা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য করা, অন্য সবকিছুর উপাসনা ত্যাগ করা, আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও সুউচ্চ গুণাবলীকে তার জন্য সাব্যস্ত করা এবং দোষ ত্রুটি থেকে আল্লাহকে পবিত্র ও মুক্ত ঘোষণা করা।
কুরআনে বলা হয়েছে,
"..কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।"[কুরআন 42:11]
কুরআনের অন্যস্থানে বলা হয়েছে,
"বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর কোনো সমকক্ষও নেই।"[কুরআন 112
ফিরিশতা বা ফেরেশতা(আরবি: ملاءكة)(ইংরেজি: Angels) ইসলামী বিশ্বাসমতে স্বর্গীয় দূত। আরবিতে ফেরেশতাদের একবচনে মালাইকা ও বহুবচনে মালাক বলে। বলা হয় এদেরকে আল্লাহ নূর বা আলো দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। ফেরেশতারা সর্বদা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তারা আল্লাহর অবাধ্য হয় না।[১] তারা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে না।
আসমানী কিতাব বা ঐশ্বরিক গ্রন্থ বলতে এমন কতকগুলো গ্রন্থকে বোঝানো হয়, ইসলাম ধর্মমতে মুসলমানগণ যে গ্রন্থগুলোকে ঈশ্বরপ্রদত্ত গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করেন।
মুসলিম বিশ্বাস মতে, আসমানি কিতাবের সংখ্যা ১০৪ খানা। যা বিভিন্ন সময় আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবী বা সংবাদ বাহকের মাধ্যমে মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ করা হয়।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জেনে রাখো যে, আল্লাহর জ্ঞান অনুসারেই তা (কুরআন) অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন উপাস্য নেই, তাহলে তোমরা মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) হবে কী?’ (সূরা হূদ- ১১/১৪)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, ‘পরম করুণাময়, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করার ভাষা।’ (সূরা আর রহমান- ৫৫/১-৪)
আনাস ইবনু মালিক রাঃ বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম (নর-নারীর) উপর ফরজ। (ইবনে মাজাহ্, হাঃ ২২৪, মিশকাত, হাঃ ২১৮)
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই নিরক্ষরদের মাঝে তাদের মধ্য হতে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদের শিক্ষাদেন কিতাব (কুরআন) ও হিকমাহ (সুন্নাহ)।’ (সূরা জুমুআহ-৬২/২)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, আমি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব (কুরআন) ও হিকমাহ (সুন্নাহ) শিক্ষা দেয় আর তোমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দেয় যা তোমরা জানতে না। (সূরা বাকারা-২/১৫১)
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির জন্য একজন বা একাধিক মানুষকে নবী বা রাসূল (বার্তাবাহক) পাঠিয়েছেন। তারা মানুষকে সৎ ও ন্যায়ের দিকে আহ্বান করেন এবং মানুষকে তার কর্মফলের ভিত্তিতে পরকালে পুরষ্কারের সুসংবাদ দেন ও শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেন।
আমি তোমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছি সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপে; এমন কোন সম্প্রদায় নেই যার নিকট সতর্ককারী প্রেরিত হয়নি। (আল কোরআন - ২:২৫৬)
নবী রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) তিনটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে।
(ক) মানুষকে কুরআনের আয়াত পাঠ করে শোনানো। (খ) উম্মতকে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করা। অর্থাৎ কুফর, শিরক ও জুলুম পবিত্র করা। (গ) কিতাব ও হিকমা শিক্ষা দেওয়া। এখানে কিতাব বলতে পবিত্র কুরআন এবং হিকমা বলতে রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত উক্তিগত ও কর্মগত শিক্ষাসমূহ বুঝানো হয়েছে।
মুসলিম ধর্ম বিশ্বাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে আখিরাত তথা পরকালের প্রতি বিশ্বাস। আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাসই মানুষকে সৎকর্মে অনুপ্রেরণা জোগায় এবং যাবতায় মন্দ কর্ম হতে নিভৃত রাখে। আখিরাতে বিশ্বাস মানে হলো মৃত্যুর পর পুনরায় অনন্ত জীবন লাভ করা। এই জীবনের সকল কর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার ও যথাযথ ভালো বা মন্দ ফল প্রাপ্তি এবং পরিণাম হিসেবে জান্নাত ও জাহান্নাম ভোগ করা। বিশ্বাসীদের পঞ্চ বৈশিষ্ট্যের অন্যতম হলো আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
মানবজীবন পরিক্রমা চারটি জগতে পরিব্যাপ্ত। যথা: আলমে আরওয়াহ, আলমে দুনিয়া, আলমে বারজাখ ও আলমে আখিরাত। মানুষ হলো রুহ, নফস ও দেহের সম্মিলিত রূপ। আলমে আরওয়াহ বা রুহের জগতে শুধু রুহ ছিল, সঙ্গে ছিল নফস। এটি মানবজীবন চক্রের প্রথম জগৎ। আলমে দুনিয়া বা দুনিয়ার জগতে রুহ ও নফসের সঙ্গে দেহ বা শরীর যোগ হয়েছে, মৃত্যুর মাধ্যমে এই জগতের পরিসমাপ্তি হবে। এটি মানবজীবন চক্রের দ্বিতীয় জগৎ।
মৃত্যুর মাধ্যমে রুহ ও নফস দেহ ছেড়ে আলমে বারজাখে পাড়ি দেয়। এটি হলো ব্যক্তির কিয়ামত বা ব্যক্তির জাগতিক জীবনের পরিসমাপ্তি।
হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘যখন কারও মৃত্যু হয়, তখন তার কিয়ামত সংঘটিত হয়।’ আলমে বারজাখ বা বারজাখ জগতে (মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত তথা হাশর-নশরের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে) রুহ ও নফস ইল্লিন বা ছিজ্জিনে অবস্থান করবে এবং দেহ হয়তো বিলীন হয়ে যাবে, নয়তো সুরক্ষিত থাকবে। দ্বিতীয় কিয়ামত তথা শিঙায় প্রথম ফুত্কারে বড় কিয়ামত তথা সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রলয় বা ধ্বংস সংঘটিত হবে।
কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এ জগতে যা কিছু আছে সবই লয়প্রাপ্ত হবে, শুধু আপনার রবের অস্তিত্বই টিকে থাকবে।’ (সুরা-৫৫ আর রহমান, আয়াত: ২৬-২৭)। মৃত্যু বা প্রথম কিয়ামতের পর থেকে এবং দ্বিতীয় কিয়ামত বা শিঙায় প্রথম ফুত্কারের পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত আলমে বারজাখ বা বারজাখ জীবন। এটি মানবজীবন চক্রের তৃতীয় জগৎ। তৃতীয় কিয়ামত, অর্থাৎ শিঙায় দ্বিতীয় ফুত্কারের পর হাশর ও নশর তথা পুনরুত্থান ও মহামিলন বা মহাসম্মিলন অনুষ্ঠিত হবে। এটিই চূড়ান্ত কিয়ামত। এই দিনই বিচারের দিন এবং আখিরাত বা পরকালের অনন্ত জীবনের সূচনা এদিন থেকেই হবে, যে জীবনের আর কোনো শেষ নেই, নেই কোনো সীমা। এটি মানবজীবন চক্রের চতুর্থ বা শেষ জগৎ। এই জগতের কোনো পরিসমাপ্তি নেই।
আখের অর্থ শেষ বা চূড়ান্ত। আখিরাত মানে পরকাল বা ভবিষ্যত্কাল ও অনাগতকাল। আখিরাত বা পরকালীন জীবনের প্রতি বিশ্বাস মানবজীবনাচার সুসংযত ও সুসংহত করে। কারণ, এর সঙ্গে বিচার ও কর্মফল জড়িত। জান্নাত-জাহান্নাম এরই সঙ্গে সম্পর্কিত। বলতে গেলে পরকালে বিশ্বাসই ইমানের তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘ইমান আশা ও ভয়ের মধ্যে অবস্থান করে।’ আর আশা ও ভয় হলো পরকালের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়।
আশা মানুষকে সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করে, ভয় মানুষকে অন্যায় কর্ম থেকে বিরত রাখে। আশা না থাকলে ইহকালীন ও পরকালীন কোনো উন্নতিই সম্ভবপর নয়; ভয় না থাকলে সংযম ও সংযত আচরণ অসম্ভব প্রায়। আখিরাত সম্পর্কে কোরআনে বহু আয়াত রয়েছে। যেমন: ‘আর অবশ্যই আপনার জন্য প্রথম জগৎ দুনিয়া অপেক্ষা আখিরাতই উত্তম বা শ্রেয়। অচিরেই আপনার রব আপনাকে দান করবেন, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।’ (সুরা-৯৩, ওয়াদ-দুহা, আয়াত: ৪-৫)।
মোমিন হলো দুনিয়াতে পরবাসী। আখিরাত বা পরকাল হলো মোমিন বা বিশ্বাসীদের আপন বাড়ি। আল্লাহ তাআলা আদি পিতা-মাতা হজরত আদম ও হজরত হাওয়াকে সৃষ্টি করে জান্নাতেই রেখেছিলেন। কুদরতের হেকমতে বা কৌশলগত কারণে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। আর বলে দিয়েছেন, তোমরা আমার হিদায়াত ও পথনির্দেশ অনুসরণ করলে আবার এখানেই ফিরে আসবে। আল্লাহ তাআলা মহানবী হজরত মুহাম্মাদকে মিরাজ রজনীতে এই জান্নাত দেখিয়ে এনেছেন, যাতে তিনি উম্মতকে এ বিষয়ে জানাতে পারেন। জান্নাত বা পরকালের আটটি বাড়ি হচ্ছে জান্নাতুল ফিরদাউস, জান্নাতুল মাওয়া, জান্নাতুল আদন, দারুণ নাঈম, দারুস সালাম, দারুল কারার, দারুল মাকাম বা দারুল মুকাম,
দুনিয়ায় মানুষ হলো প্রবাসী বা পরবাসী। প্রবাসকালীন জীবনে প্রবাসী সব সময় আপন বাড়ির স্মরণ করে। এই স্মরণই তাকে উপার্জনে ও সঞ্চয়ে উৎসাহিত করে; কষ্টসহিষ্ণু, সংযমী ও আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলে। এভাবেই প্রবাসজীবন শেষে একটি স্থিতিশীল, সুখী, সমৃদ্ধিশালী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনে সক্ষমতা লাভ করে।
পরকালীন নিবাস সম্পর্কে কোরআন কারিমে বহু আয়াত রয়েছে। যেমন: ‘হে রাসুল (সা.), আপনি বলুন! হে আমার জাতি, তোমরা তোমাদের অবস্থান থেকে সামর্থ্যমতো সৎকর্ম করো, আমিও করছি; অচিরেই তোমরা জানতে পারবে পরিণতির শুভ নিবাস কাদের জন্য।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৩৫)। ‘তোমাদের প্রতি শান্তি! যেহেতু তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ, পরিণতি জান্নাতের বাড়ি কত না উত্তম। (সুরা-১৩ রাআদ, আয়াত: ২৪)। ‘যারা সৎকর্ম করবে, তারা দুনিয়াতেও কল্যাণ লাভ করবে, পরকালের নিবাস অতি উত্তম; মুত্তাকিদের নিবাস কত না উত্তম।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৩০)। ‘নিশ্চয়ই পরকালের নিবাস চিরস্থায়ী, যদি তারা জানত।’ (সুরা-২৯ আনকাবুত, আয়াত: ৬৪)। ‘নিশ্চয়ই আখিরাত হলো স্থিতিশীল স্থায়ী নিবাস।’ (সুরা-৪০ মোমিন, আয়াত: ৩৯)।
ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সর্বশেষ তাকদীর তথা ভালো-মন্দ নির্ধারণে বিশ্বাস। তাকদীরের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, এই বিশ্বাস করতে হবে যে, সবকিছুকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, সেগুলি সৃষ্টি হওয়ার আগেই তিনি সে সম্পর্কে জানেন, তিনি তা লাওহে মাহফূযে লিখে রেখেছেন এবং সবকিছু তার ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে,
"তুমি কি জান না যে, আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, আল্লাহ তা জানেন? নিশ্চয় তা একটি কিতাবে রয়েছে। অবশ্যই এটা আল্লাহর জন্য অতি সহজ।"
"আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন।"
হাদীসে বলা হয়েছে,
"...যদি সমগ্র উম্মত তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার (তাকদীরে) লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার (তাকদীরে) লিখে রেখেছেন। কলমসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং খাতাসমূহ (তাকদীরের লিপি) শুকিয়ে গেছে।"
— তিরমিযী ২৫১৬ (হাসান সহীহ)[২]
শর্ত
ইমান ভঙ্গের কারণ
ওযু করার পর কিছু কাজ করলে যেমন ওযু নষ্ট হয়ে যায়, ঠিক তেমনি ঈমান আনার পর কিছু কথা, কাজ ও বিশ্বাস আছে, যা সম্পাদন করলে বা পোষণ করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো মূলত ৩ প্রকার। বিশ্বাসগত, কর্মগত এবং উক্তিগত। আলিমগণ এ ব্যাপারে অনেক বিশদ আলোচনা করেছেন। ইমামুদ দাওয়াহ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আবদিল ওয়াহহাব সেগুলোকে দশটি পয়েন্টে সাজিয়েছেন।
এক. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে অংশীদার করা ক্ষমা করেন না। তা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন; এবং যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে সে এক মহাপাপ করে।’ [সুরা নিসা ৪ : ৪৮]
‘কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৭২]
দুই. আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে কাউকে মধ্যস্থতাকারী বানানো
‘তারা আল্লাহকে ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বল, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরিক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।’ [সুরা ইউনুস, ১০ : ১৮]
‘জেনে রাখ, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে, ইহারা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে।’ তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে আল্লাহ তার ফয়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ [সুরা যুমার, ৩৯ : ৩]
তিন. মুশরিক-কাফিরদের কাফির মনে না করা
এমন কাফির, যার কুফরির ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ একমত। সেটা আসলি কাফির হতে পারে—যেমন ইহুদি, খৃস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়—আবার মুরতাদ, যিনদিকও হতে পারে, যেমন প্রকাশ্যে আল্লাহ, রাসুল বা দীনের কোনো অকাট্য ব্যাপার নিয়ে কটূক্তিকারী; যাদের কুফরির ব্যাপারে হকপন্থি আলিমগণ একমত।
চার. নবির ফয়সালার তুলনায় অন্য কারও ফয়সালাকে উত্তম মনে করা
‘আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা দাবি করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে, আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি। তারা বিচার-ফয়সালা নিয়ে যেতে চায় তাগুতের কাছে, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদের প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৬০]
পাঁচ. মুহাম্মাদ আনীত কোনো বিধানকে অপছন্দ করা
‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক বলে মনে না করে। এরপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৬৫]
ছয়. দীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা
“তুমি তাদের প্রশ্ন করলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম।’ বলো, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসুলকে বিদ্রুপ করছিলে?’ তোমরা অযুহাত দেয়ার চেষ্টা করো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরি করেছ।” [সুরা তাওবা, ৯ : ৬৫-৬৬]
সাত. জাদু করা
‘সুলাইমান কুফরি করেনি, কুফরি তো করেছিল শয়তানরাই। তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত…।’ [সুরা বাকারা, ২ : ১০২]
আট. মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাইও যদি ঈমানের বিপরীতে কুফরিকে বেছে নেয়, তবে তাদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।’ [সুরা তাওবা, ৯ : ২৩]
‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খৃস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৫১]
নয়. কাউকে দীন-শরিয়তের ঊর্ধ্বে মনে করা
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৩]
দশ: দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া
‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি দ্বারা উপদিষ্ট হয়েও তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার অপেক্ষা অধিক অপরাধী আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।’ [সুরা সাজদা, ৩২ : ২২]
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ধর্ম একমাত্র ইসলাম’ (সূরা আলে-ইমরান-১৯)। কোরআনের পরিভাষায় ‘দ্বীন’ সেসব মূলনীতি ও বিধিবিধানকে বলা হয় যা হজরত আদম থেকে শুরু করে হজরত মুহাম্মদ পর্যন্ত সব নবীর মধ্যে সমভাবেই বিদ্যমান রয়েছে। এতে বোঝা যায়, সব নবীর দ্বীনই এক ও অভিন্ন ছিল। সাধারণত ওই দ্বীন ও শরিয়তকেই ‘ইসলাম’ বলা হয়, যা নিয়ে সবার শেষে হজরত মুহাম্মদ আগমন করেছেন এবং বিগত সব শরিয়তকে রহিত করে দিয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যে দ্বীন কায়েম থাকবে। তাই রসুল ইসলামের ব্যাখ্যায় বলেন, এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, হজরত মুহাম্মদ আল্লাহতায়ালার রসুল, নামাজ কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, রমজান শরিফের রোজা রাখা, সম্পদ থাকলে হজ করা। এ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি জিব্রাইলের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে (বুখারি ও মুসলিম)। রসুল আরও বলেন, এখন হজরত মূসা (আ.) জীবিত থাকলে আমার অনুসরণ ছাড়া তার গত্যন্তর ছিল না (বায়হাকি)। এ অর্থের দিক দিয়ে ‘ইসলাম’ শব্দটি দ্বীনে মুহাম্মদী ও উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার এক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। মোট কথা এই যে, প্রত্যেক পয়গাম্বরের আমলে তার আনীত দ্বীনই ছিল দ্বীনে ইসলাম এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য। পরে এগুলো একের পর এক রহিত হয়েছে এবং দ্বীনে মুহাম্মদী ‘ইসলাম’ নামে অভিহিত হয়েছে। যা কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম থাকবে। সুতরাং উল্লিখিত আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত হয়, একমাত্র ইসলাম ছাড়া এই পৃথিবীতে তথাকথিত যত ধর্ম ও মতবাদ আছে কোনোটাই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যারা ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ভ্রান্ত ধর্ম অবলম্বন করে সফল হতে চায় তাদের সম্পর্কে অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম সন্ধান করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত’ (সূরা আলে ইমরান-৮৫)।
ইসলামের পরিপূর্ণতা পবিত্র কোরআনে বারবার ঘোষিত হয়েছে। অতএব, যারা ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামকে মানতে রাজি অথচ সমাজ ও জাতীয় জীবনে ইসলামের প্রতিফলন দেখতে নারাজ তারা ইসলামের কিছু অংশের প্রতি বিশ্বাস করে আর কিছু অংশের প্রতি অবিশ্বাস করে, আল্লাহতায়ালার কাছে খণ্ডিত ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয়। মহানবী ইরশাদ করেন, প্রতিটি মানুষের কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে— ১. তোমার রব কে? ২. তোমার দ্বীন কী? ৩. এই ব্যক্তি কে? যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। যে ব্যক্তি জবাবে বলবে, আমার প্রভু আল্লাহ! আমার ধর্ম ইসলাম। তিনি হলেন মহানবী (সা.)! সে ব্যক্তিই সেদিন মুক্তি পাবে। আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো পথ অন্য কোনো মতাদর্শ গ্রহণ করেছিল তারা কবরে জবাব দিতে হবে।
‘আল্লাহর কাছে যে ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয়’- কথাটি শুনতেই যেন কেমন লাগে। ‘ইসলাম’ নামে এমন কোনো আলাদা জীবন ব্যবস্থা আছে কি? যা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ‘না’, এমন কোনো জীবন ব্যবস্থা নেই। তাহলে এমনটি বলার উদ্দেশ্য কী?
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘ইসলাম-ই আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবন ব্যবস্থা। আর তা তখনই মানুষের জীবনে বাস্তবায়িত হয়, যখন মানুষ পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পিত করে।
বর্তমান সময়ে একদল লোক দেখা যায়, যারা ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝার চেষ্টা করে না। তারা ইসলামকে নিতান্তই ব্যক্তিগত বিষয় মনে করে। প্রকৃতার্থে ইসলাম এমন জীবন ব্যবস্থা নয়।
বরং ইসলাম হলো পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। যেখানে কোনো বিষয়ের ঘাটতি নেই। যা মানুষকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অথনৈতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জীবন পরিচালনায় তার বিধান বা জীবন ব্যবস্থা পেশ করে। ইসলাম এমনই এক জীবন বিধান, যা-> পূর্ণ পরিণত> যুক্তিসঙ্গত> বাস্তবের অগ্নি পরীক্ষায় বার বার পরীক্ষিত জীবন বিধান।
মানব জীবনের এমন কোনো দিক বা বিষয় নেই, যা ইসলামের আওতাধীন নয়। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইসলাম মানুষের জীবনের সেই পরিপূর্ণতার কথা বার বার ঘোষণা করে।
এখন প্রশ্ন হলো, ‘আল্লাহর কাছে কোন ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয়?’> যারা ব্যক্তি জীবনে ইসলামকে মানতে রাজি কিন্তু সমাজ ও জাতীয় জীবনে ইসলামের বিধান প্রতিফলন, বাস্তবায়ন দেখতে নারাজ।- যারা ইসলামের কিছু অংশের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মেনে নেয় আর কিছু অংশের প্রতি অবিশ্বাস করে এবং জীবনে বাস্তবায়ন কিংবা মেনে নিতে চায় না।
আল্লাহ তাআলার কাছে এ রকম খণ্ডিত ইসলাম কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামের কিছু বিধান খুব মন দিয়ে মেনে নেবে আর কিছু অংশ ছেড়ে দেবে। এ ধরনের ইসলাম পালন কোনোভাবেই আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য নয়।
বরং যদি কেউ ইসলামের কোনো বিষয়ে আপত্তি করে কিংবা মেনে নিতে না পারে; সে ব্যক্তির ঈমানদার হওয়ার ব্যাপারেই প্রশ্ন এসে যায়।
সুতরাং সাবধান!বর্তমান সময়ে আধুনিকতার নামে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে কোনো মুসলমানের সেকুলারিজম তথা ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।
মনে রাখতে হবেইসলাম গ্রহণকারী মুসলিম আল্লাহর বিধানের বাইরে অন্য কারো কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। ইসলামকে একমাত্র জীবন বিধান ঘোষণার পর আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে ঘোষণা করেন-‘তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আর আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে স্বেচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক সবই আল্লাহর অনুগত হয়েছে আর তার দিকেই ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৩)
সুতরাং পরিপূর্ণ, যুক্তিসম্মত ও বাস্তবের অগ্নি পরীক্ষায় প্রমাণিত ইসলামের প্রতি নিজেদের নিয়োজিত রাখতে কুরআনের এ নির্দেশ মতো জীবন গঠন করা মুসলিম উম্মাহর জন্য একান্ত আবশ্যক। আর তাহলো-‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো আর যে কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক।’ (সুরা হাশর : আয়াত ৭)
তাই ইসলামের একান্ত দাবি হলো- মানুষের ব্যক্তি, পরিবার সমাজ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করবে। কেননা জীবন পরিচালনায় ইসলামের বাইরে কোনো কাজই আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। ইসলাম বহির্ভূত যে কোনো কাজ বা বিষয়কে পরিহার করার তাওফিক দান করুন।
ইসলাম অনুসারে যেকেউ ইসলাম গ্রহণ করে ধর্মান্তরিত হতে পারে। অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানানো ইসলামে পূণ্যের কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়।
কুরআনে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি দিয়ে বলা হয়েছে,
"যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে, যাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে। কারণ তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দানে সক্ষম। যাদেরকে তাদের নিজ বাড়ী-ঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বের করে দেয়া হয়েছে যে, তারা বলে, ‘আমাদের রব আল্লাহ’। আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা দমন না করতেন, তবে বিধস্ত হয়ে যেত খৃস্টান সন্ন্যাসীদের আশ্রম, গির্জা, ইয়াহূদীদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী। তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।"
তবে যারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করেনা তাদের সাথে ভাল আচরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করছেন না বলে কুরআনে বলা হয়েছে,
"দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করছেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। আল্লাহ কেবল তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন, যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে ও তোমাদেরকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেছে। আর যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তারাই তো যালিম।"
কুরআনে জোর পূর্বক ধর্মান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি কিংবা বাধ্যবাধকতা নেই। নিশ্চয়ই ভ্রান্তি হতে সুপথ প্রকাশিত হয়েছে। অতএব যে তাগুতকে অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে দৃঢ়তর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরলো যা কখনও ছিন্ন হবার নয় এবং আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
— অনুবাদ: মুজিবুর রহমান
অনেক ইসলামের সমালোচকই বলে থাকেন যে ইসলাম ধর্ম ত্যাগকারীকে ইসলামে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও মুসলিম পন্ডিতদের মতে, ইসলামে ধর্ম ত্যাগকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় না, যদি না তারা ধর্ম ত্যাগ করার পর ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ রটায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ইসলামে কিছু বিধানের ক্ষেত্রে আহলে কিতাবরা (ইহুদি, খ্রীস্টান, এবং অন্যান্য) অন্য অ-মুসলিমদের থেকে ভিন্ন। যেমন মুসলিম পুরুষেরা আহলে কিতাবের মহিলাদের বিয়ে করতে পারবে। যদিও, মুসলিম মহিলারা আহলে কিতাবের পুরুষদের বিয়ে করতে পারে না।
উনিশ ও বিশ শতকে, বেশির ভাগ ইসলামী রাষ্ট্র শ্লথগতি হয়ে যায় ইউরোপীয় কলোনিয়াল ব্যবস্থার সাথে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, কলোনিয়াল শাসনব্যবস্থায় পূর্বের মুসলিম শাসিত দেশগুলি পুনরায় অ-মুসলিমদের ওপর নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়।