ইসলাম |
---|
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
![]() |
'ইসলামিক উত্তরাধিকার আইনশাস্ত্র হলো ইসলামী আইনশাস্ত্রের (আরবি: فقه) একটি ক্ষেত্র। এটি উত্তরাধিকারের সাথে সম্পর্কিত। এ বিষয়টি নিয়ে কুরআনে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এটিকে প্রায়শই মীরাস বলা হয়, এবং এর ইসলামী আইনের শাখাটি কার্যগতভাবে 'ইলম আল-ফারায়িজ (আরবি: علم الفرائض,"নির্ধারিত কোটার বিজ্ঞান") নামে পরিচিত।[১]
কুরআন উত্তরাধিকারের বিষয়ে বিভিন্ন অধিকার ও বিধিনিষেধের প্রবর্তন করেছে, যার মধ্যে ছিল সেই সময়ে নারীদের প্রতি আচরণ ও পারিবারিক জীবনের ক্ষেত্রে সাধারণ উন্নতি।[১] কুরআন উত্তরাধিকার আইন ঠিক করার প্রচেষ্টাও উপস্থাপন করেছে, এবং এভাবেই একটি সম্পূর্ণ আইনি ব্যবস্থা গঠন করেছে। এই বিকাশ ছিল প্রাক-ইসলামী সমাজের বিপরীত; যেখানে উত্তরাধিকারের নিয়মগুলো যথেষ্ট বিসদৃশ ছিল।[১] তবে, সেগুলো মূলত আধুনিক যুগের তুলনায় ভিন্ন হলেও সেই সময় থেকেই চলমান ধর্মনিরপেক্ষ সমতাবাদী উন্নতির থেকেও ভিন্ন ছিল।
এছাড়া, কুরআন প্রাক-ইসলামী যুগে উত্তরাধিকারের অধিকারী না হওয়া আরও উত্তরাধিকারীকে সংযুক্ত করেছে, বিশেষভাবে নয় ধরনের আত্মীয়ের কথা উল্লেখ করেছে যার মধ্যে ছয়জন মহিলা এবং তিনজন পুরুষ। কুরআনের উত্তরাধিকার আইনে অন্যান্য পুরুষ আত্মীয়দেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেমন স্বামী এবং মায়ের পক্ষের সৎ ভাই, যারা পুরানো রীতিনীতিতে উত্তরাধিকারের তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল। কুরআনে উল্লিখিত উত্তরাধিকারীরা হলেন মা, পিতা, স্বামী, স্ত্রী, কন্যা, সহোদর ভাই, একই মা ও বাবার সূত্রে আপন বোন, সহোদর বোন এবং সৎ বোন।[২]
সাধারণভাবে, কুরআন সুস্পষ্ট ভাষায় উত্তরাধিকারের অংশ চিহ্নিত করে নারীদের মর্যাদা উন্নত করেছে। এটি বিধবাদের উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়ার প্রথাকেও সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছিল।[৪:১৯] প্রাচ্যবিদ জোসেফ শ্যাচ বলেছেন যে "এটি একটি সাধারণ আইনী অধ্যাদেশ নয়, বরং এটি মহিলাদের (সামাজিক) অবস্থানের উন্নতির জন্য কুরআনের প্রচেষ্টার অংশ।"[১] কুরআন স্পষ্টভাবে পুরুষ আত্মীয়দের ভাগের কথা উল্লেখ করেনি, যেমন মৃতের ছেলের, কিন্তু নিয়ম বাতলে দিয়েছে যে ছেলের ভাগ মেয়ের ভাগের দ্বিগুণ হতে হবে। মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকরা উত্তরাধিকারের এই দিকটিকে সম্পূর্ণভাবে ইসলামিক আইনের দিকে তাকিয়ে ব্যাখ্যা করেন, যা নারীদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং ভরণপোষণ প্রদানের জন্য পুরুষদের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা তৈরি করে।[কোরআন ৪:৩৪]।[২] কেন একজন মেয়ে ছেলের অর্ধেক উত্তরাধিকার পাওয়ার অধিকারী তার একটি ব্যাখ্যা হলো: ইসলাম এই আদেশ দেয় যে, বিবাহের সময় নারীরা তার স্বামীর কাছ থেকে (তার পিতামাতার দেওয়া কোনো শর্ত ছাড়াও) "মোহরানা" পাওয়ার অধিকারী। এরপরে তার স্ত্রীর যত্ন নেওয়া এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা স্বামীর জন্য একটি বাধ্যবাধকতা এবং তাই "মোহরানা" মূলত তার স্বামীর সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকার অধিকারের অগ্রিম ব্যবস্থা।
উপরের পরিবর্তনগুলো সম্বলিত আয়াত নাজিলের আগে[কোরআন, ৪:১১-১২, ৪:১৭৬], কুরআনে মুসলমানদেরকে একটি অসিয়তনামা লেখার আদেশ ছিল, যেখানে তারা কীভাবে তাদের সম্পূর্ণ সম্পত্তি নিষ্পত্তি করতে চায় তার বিশদ বিবরণ লিখতে হতো।[কুরআন, ২:১৮০-১৮২, ২:২৪০, ৪:৩৩, ৫:১০৬-১০৭] তবে, এখনকার ঐচ্ছিক উইল বা অসিয়তনামায় মুসলমানরদের তাদের সম্পত্তির সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া রয়েছে। বাকি অংশ উত্তরাধিকারের আয়াত অনুসারে বণ্টন করা হবে,[৩] সমস্ত ঋণ পরিশোধের পরে যদি কিছু থাকে তাহলে তা মুক্ত করা হবে, যেহেতু বেশিরভাগ ফকীহ এখন একমত যে অসিয়তের আয়াতগুলি উত্তরাধিকারের আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে।[৪]
সম্পত্তি বণ্টনের সময় মুসলমানরা উপস্থিত থাকলে এতিম ও দরিদ্রদের অর্থ দেওয়ার জন্যও উৎসাহিত করা হয়।[কুরআন, ৪:৮]
কুরআনে মাত্র তিনটি আয়াত রয়েছে [৪:১১, ৪:১২ এবং ৪:১৭৬] যেগুলো উত্তরাধিকার এবং বণ্টনের নির্দিষ্ট বিবরণ দেয়, কিছু আয়াত এর পাশাপাশি অসিয়ত করার ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করে। হাদিসে আরও বলা হয়েছে যে মুহাম্মদ উত্তরাধিকার আইনের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং তাঁর অনুসারীদেরকে সেগুলো শিখতে ও শেখানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।[১] মুসলিম আইনবিদরা এই আয়াতগুলোকে একটি সূচনা বিন্দু হিসাবে ব্যবহার করেছেন উত্তরাধিকারের আইনগুলিকে আরও ব্যাখ্যা করার জন্য হাদিস এবং সেইসাথে কিয়াসের মতো আইনগত যুক্তির পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেছেন। পরবর্তী সময়ে, এই বিষয়ের উপর প্রচুর লেখালেখি হয়েছে।[২]
পুরানো অজ্ঞেয় প্রথা এবং ইসলামী আইনের এই সংমিশ্রণ অনেকগুলো সমস্যা এবং বিতর্কের জন্ম দেয় যা মুসলিম আইনবিদরা বিভিন্ন উপায়ে সমাধান করেছেন।[২] ন্যায়সঙ্গত যুক্তি (কিয়াস) ব্যবহারের মাধ্যমে, মুসলিম আইনবিদরা তিনটি অতিরিক্ত উত্তরাধিকারী যোগ করেছেন: পিতামহ, মাতামহী এবং অজ্ঞেয় নাতনী। এই উত্তরাধিকারীরা, উত্তরাধিকারের অধিকারী হলে, তাদের নির্দিষ্ট অংশ দেওয়া হয় এবং বাকি সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় অবশিষ্টাংশ (‘আসাবা)।[২] এর ফলে সুন্নি মাযহাবের আইনশাস্ত্রের মধ্যে কিছু ছোটখাটো পার্থক্য দেখা দেয়। এছাড়াও, ইসনা আশারিয়া শিয়াদের উত্তরাধিকারের আইন, একই নীতির উপর ভিত্তি করে হওয়া সত্ত্বেও, হাদিসের কিছু বিবরণ প্রত্যাখ্যান করার কারণে এবং প্রাথমিক ইসলামের কিছু ঘটনা সম্পর্কে তাদের বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পার্থক্য থেকে গেছে।[১] অন্যদিকে, খারিজী ইবাদি ও যায়িদের উত্তরাধিকার ব্যবস্থা সুন্নি ব্যবস্থার সাথে প্রায় সাদৃশ্যপূর্ণ।[১] আধুনিক মুসলিম দেশগুলোতে সাধারণত প্রচলিত পদ্ধতিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছাড়াও আইনশাস্ত্রের বিভিন্ন মাযহাবের মিশ্রণ (শিয়া সহ) কার্যকর থাকে। এই ধরনের আধুনিক ব্যবস্থার প্রধান অর্জন ছিল উত্তরাধিকার আইনের বিধিবদ্ধকরণ।[১]
উত্তরাধিকার শরীয়াহ আইনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়। কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী মুসলমানরা একজন থেকে অপরজন উত্তরাধিকার লাভ করে।[কুরআন ৪:৭] সুতরাং, মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের জন্য তার মালিকানা এবং সম্পত্তিতে একটি বৈধ অংশ রয়েছে। উত্তরাধিকারের প্রধান নিয়মাবলী কুরআন, হাদিস ও ফিকহে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।
একজন মুসলমানের মৃত্যু হলে চারটি দায়িত্ব পালন করতে হয়। এগুলো হল:
অতএব, উত্তরাধিকারের অধিকারী মৃতের আত্মীয়-স্বজন এবং তাদের অংশ নির্ধারণ করা আবশ্যক।[২]
অসিয়তকারীর (একজন ব্যক্তি যিনি উইল করেন) উপর আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে এই আইনগুলো ইসলামে বেশি প্রাধান্য পায়। ইসলামি আইন উইলকারীর উপর নিম্নলিখিত ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে।
প্রাথমিক উত্তরাধিকারী হিসাবে উল্লেখ করা উত্তরাধিকারীরা সর্বদা উত্তরাধিকারের একটি অংশের অধিকারী হয়; তারা কখনোই সম্পূর্ণরূপে বাদ পরে না। এই প্রাথমিক উত্তরাধিকারীরা হলো বিধবা স্ত্রী, পিতামাতা উভয়, ছেলে(রা) এবং মেয়ে(রা)। বাকি সব উত্তরাধিকারীকে অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের উপস্থিতির মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, অন্যান্য উত্তরাধিকারীরাও অবশিষ্টাংশ হিসাবে উত্তরাধিকারী হতে পারে, যেমন পিতা, পিতামহ, কন্যা, অজ্ঞেয় নাতনী, একই মা ও বাবার সূত্রে আপন বোন, সৎ বোন এবং মা।[২] যারা উত্তরাধিকারী তাদের সাধারণত তিনটি দলে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:
উত্তরাধিকার নিম্নলিখিত ক্রমে বিতরণ করা হয়:[৬]
মালিকি ও শাফিঈ [৭] মাযহাবের শাস্ত্রীয় অবস্থান হল যে কোনো কোটা বা অবশিষ্ট উত্তরাধিকারী না থাকলে সম্পত্তি সরাসরি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যায়, অর্থাৎ ধাপ (৩) এবং (৪) বাদ দেওয়া হয়। তবে, বায়তুল-মালের অনুপস্থিতি বা অসংগঠিত হওয়ার প্রেক্ষিতে উভয় মাযহাবই উপর্যুক্ত পাঁচটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে হানাফী এবং হাম্বলী[৮] মাযহাবের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে।
ইসলামী আইনে, শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির সাথে বৈধ রক্তের সম্পর্কযুক্ত আত্মীয়রাই উত্তরাধিকারের অধিকারী। এর ফলে অবৈধ সন্তান এবং দত্তক নেওয়া সন্তানদের উত্তরাধিকারে কোন অংশ থাকে না। সাধারণভাবে, একজন একই মা ও বাবার সূত্রের ভাই একই বাবার সূত্রের ভাইকে ("সৎ" ভাই) উত্তরাধিকারের অনুপযোগী করে, কিন্তু একই মায়ের সূত্রের ভাইকে উত্তরাধিকারের অনুপযোগী করে না। যে ক্ষেত্রে একজন মৃত পুরুষ একজন গর্ভবতী মহিলাকে রেখে যান, সেক্ষেত্রে অনাগত সন্তানের অংশ সংরক্ষিত থাকে। এছাড়াও বিবাহ বিচ্ছেদের পর ইদ্দতের সময় একজন মহিলাকে উত্তরাধিকারের উদ্দেশ্যে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[১]
বিভিন্ন আত্মীয়দের বর্জন এবং অন্তর্ভুক্ত করার আরও বিশদ নিয়ম রয়েছে। একমাত্র "ব্যবহারিক পরিস্থিতি" যা অযোগ্যতার কারণ হতে পারে তা হল ধর্ম এবং নরহত্যার পার্থক্য। কিন্তু ইসলামী আইনশাস্ত্রের মাযহাবগুলো একজন মুসলিম একজন অমুসলিম থেকে উত্তরাধিকারী হতে পারে কি না সে বিষয়ে মতপার্থক্য পোষণ করে। সমস্ত ফকীহ একমত যে ইচ্ছাকৃত বা অন্যায্য হত্যা একজন ব্যক্তিকে উত্তরাধিকারের অনুপযোগী করবে।[২]
ইসলামে, নারীরা উত্তরাধিকারের অধিকারী,[৯] যদিও সাধারণত, ইসলাম একই পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারী হলে পুরুষদের জন্য পাওয়া উত্তরাধিকারের অর্ধেক অংশ নারীদের জন্য বরাদ্দ করে। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে মৃত ব্যক্তির ছেলে এবং মেয়ে উভয় সন্তান রয়েছে, সেখানে একজন ছেলের অংশ একজন মেয়ের থেকে দ্বিগুণ।[১০] এমন অন্যান্য পরিস্থিতিতে রয়েছে যেখানে মহিলারা পুরুষদের সমান ভাগ পেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এমন একজন মৃত ব্যক্তির মা এবং বাবার ভাগ, যে সন্তানদের রেখে মৃত্যুবরণ করেছে।[১১] সহোদর ভাইয়ের ভাগ সহোদর বোনের ভাগের সমান; তাদের বংশধরদের ভাগও অনুরূপ।[২]
কেউ কেউ আছেন যারা বলেন ইসলামে নারীরা সমান উত্তরাধিকারের অধিকারী। [১২] [১৩] সপ্তদশ শতাব্দীর উসমানীয় শহরগুলোতে (যেমন বুরসা) উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সাধারণত আদালতে সমাধান করা হতো, যেখানে এমন আসামীরা ছিল যাদের বিরুদ্ধে এমনকি মহিলাদের পরিবারের সদস্য হয়েও ছিল মামলা করা হয়েছিল।[১৪]
কখনো কখনো মহিলারা পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ ভাগ পান; উদাহরণস্বরূপ, যদি শুধুমাত্র মা বাবা এবং একজন স্বামী থাকে, তাহলে স্বামী অর্ধেক পাবে, পিতা পাবে ১/৬ এবং মা ২/৬ পাবে। ইবনে আব্বাস সূরা আন-নিসার ১১, ১২ আয়াতের এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন।[কুরআন ৪:১১,১২]
এমনকি কুরআন কালালাহ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য করে।[১৫] [১৬] কালালাহ বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি পিতা-মাতা বা সন্তানকে রেখে যান না; এর অর্থ একজন মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা এবং সন্তান ব্যতীত সকল আত্মীয়স্বজন, এবং এটি সেই সম্পর্কগুলোকেও বোঝায় যা [মৃত ব্যক্তির] পিতামাতা বা সন্তানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়নি। আলেমরা মনে করেন যে এই পার্থক্যের মূল কারণ হল স্বামী-স্ত্রীর জন্য বরাদ্দ করা দায়িত্ব। ইসলামে একজন স্বামীকে তার পরিবারকে ভরণপোষণের জন্য তার উত্তরাধিকার ব্যবহার করতে হয়, যেখানে একজন স্ত্রীর কোন ভরণপোষণের বাধ্যবাধকতা নেই। এছাড়া, আরব সমাজ ঐতিহ্যগতভাবে যৌতুকের পরিবর্তে পণ বা স্ত্রীধন প্রথা পালন করত; অর্থাৎ, পুরুষ তার স্ত্রী বা তার পরিবারকে বিবাহের সময় উপহার দিতো। এটি বরং বিপরীতভাবে পুরুষদের উপর আর্থিক বোঝা চাপিয়েছে যেখানে নারীর উপর বোঝার কোন অস্তিত্ব ছিল না। এই প্রথা অব্যাহত ছিল কিন্তু ইসলাম দ্বারা তা বস্তুগতভাবে পরিবর্তিত হয়। ঐশ্বরিক আদেশে বলা হয়েছে যে যৌতুক (মোহরানা) শুধুমাত্র স্ত্রীর জন্য; স্ত্রীর পরিবারের জন্য নয়। বিবাহের সময় স্বামী অনুরোধকৃত যৌতুক বহন করতে অক্ষম হলে বোঝা হ্রাস করার জন্য এটির পরিশোধের সময় পিছিয়ে দেওয়া যায়। স্ত্রী একটি নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত তা পিছিয়ে দিতে পারে অথবা স্বামী মারা গেলে সম্পত্তির উপর স্ত্রীর পাওনা সৃষ্টি হতে পারে। আর তাদের মোহরানা স্বেচ্ছায় নারীদের দিয়ে দাও (একটি বাধ্যবাধকতা হিসাবে), কিন্তু তারা যদি নিজের ইচ্ছায়, মোহরানার একটি অংশ মওকুফ করে, তাহলে তোমরা আনন্দের সাথে তা উপভোগ করতে পারবে।[১৭]
উত্তরাধিকারের ইসলামিক আইনটি মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজমি এবং অন্যান্য মধ্যযুগীয় ইসলামী গণিতবিদদের মাধ্যমে বীজগণিতের (ইংরেজি: Algebra; আরবি আল-জাবর থেকে উদ্ভূত) বিকাশের পিছনে একটি প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছিল। আল-খোয়ারিজমির হিসাব আল-জাবর ওয়াল-মুকাবালা হলো বীজগণিতের ভিত্তিমূলক পাঠ; এটি বীজগণিত ব্যবহার করে ইসলামী উত্তরাধিকার সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য এর তৃতীয় এবং দীর্ঘতম অধ্যায়টি উৎসর্গ করেছে। তিনি রৈখিক সমীকরণ হিসাবে উত্তরাধিকারের নিয়ম প্রণয়ন করেছিলেন, তাই দ্বিঘাত সমীকরণ সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান এখানে কাজে লাগাতে হয়নি।[১৮]
আল-হাসার ছিলেন মাগরেব ( উত্তর আফ্রিকা ) এর একজন গণিতবিদ। তিনি দ্বাদশ শতকের ইসলামি উত্তরাধিকার আইনশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি ভগ্নাংশের জন্য আধুনিক প্রতীকী গাণিতিক স্বরলিপি তৈরি করেছিলেন, যেখানে লব এবং হর একটি অনুভূমিক দণ্ড দ্বারা পৃথক করা হয়। তিনি যে "ডাস্ট সাংকেতিক লিপিগুলো ব্যবহার করেছিলেন তা বর্তমান পশ্চিম আরবি সংখ্যাগুলিতে ব্যবহৃত সংখ্যাগুলোর প্রায় অনুরূপ। এই একই সংখ্যা এবং ভগ্নাংশের স্বরলিপি কিছুকাল পরেই ত্রয়োদশ শতকে ফিবোনাচ্চির রচনাকর্মে দেখা যায়। [১৯] [২০] [২১]
পঞ্চদশ শতকে ইসলামিক উত্তরাধিকার আইনশাস্ত্রের একজন বিশেষজ্ঞ আবুল হাসান ইবনে আলি আল-কালাসাদি বীজগাণিতীয় সমীকরণে গাণিতিক স্বরলিপি পদ্ধতি হিসাবে আরবি বর্ণমালার অক্ষর ব্যবহার করেছিলেন।[২২]