ইসলাম |
---|
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
এই নিবন্ধটি ইসলাম ধর্মে নারী পুরুষের সম্পর্ক ও পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে লিঙ্গের ভূমিকা নিয়ে রচিত। এই সম্পর্কিত বিষয়ে ইসলামে নারীর পোশাক ও লিঙ্গানুসারে বিচার সংক্রান্ত ব্যবধান ব্যাপারে দেখুন ইসলামে নারী
ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে নারী ও পুরুষকে আধ্যাত্মিকভাবে সমানভাবে বিবেবচনা করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে সূরা নিসার ১২৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَمَن يَعْمَلْ مِنَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُو۟لَٰٓئِكَ يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا
অর্থ:- "যে লোক পুরুষ হোক কিংবা নারী, কোন সৎকর্ম করে এবং বিশ্বাসী হয়, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রাপ্য তিল পরিমাণ ও নষ্ট হবে না।"
কিন্তু মুসলিম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের আইনে এই সমঅধিকার প্রতিফলিত হয় না।[১]
নারীদের জন্য লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা কোরআনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা নেই।[২][৩][৪] যদিও,নারী পুরুষের অধিকারে ভিন্নতা এবং ভিন্ন সাংস্কৃতিক আকাঙ্ক্ষা ইসলাম চর্চায় লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা আপনাতেও প্রকাশ করে।
এলাকা, সংস্কৃতি, এমনকি কোরানের বিভিন্ন ব্যাখ্যায় লিঙ্গ ভিত্তিক ভূমিকা ভিন্ন ভিন্নভাবে ফুটে উঠেছে।
সালাফি শব্দের আক্ষরিক অসস্থ "পূর্বপুরুষ অধিকারে"[৫] সর্বপ্রথম মুহাম্মদ আবদুহ কর্তৃক এই ধারনার প্রবরতন হয় যা সপ্তম শোতকে মুহাম্মদের সময়কালীন প্রথম প্রজন্মের মুসলমানদের ইঙ্গিত করে। এটি একটি আরবি শব্দ যা মৌলবাদের সমর্থক।
আব্দুল আজিজ ইবনে বায সালাফি দর্শনের মূল চিন্তাচেতনার প্রবর্তক। বিন বায মনে করতেন, "পুরুষতান্ত্রিকতা"য় অংশগ্রহণ নারীদের স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত আচরণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় যা নারীদের দূর্দশার কারণ। তিনি বিশ্বাস করতেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের অংশগ্রহণ মুসলিম সমাজকে নোটিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত করে এবং ধ্বংসের মুখে নিয়ে ঠেলে দেয়। তিনি এটাও বলেন,একজন নারী ঘরের বাইরে গিয়ে স্রষ্টা কর্তৃক তার উপর যে আচরণ প্রণীত হয়েছে, তার সত্যতা নারী অস্বীকার করছে। পুরুষের সাতজে নারীদের কাজ করাকে তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকারক বলে চিহ্নিত করেন। এতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের মায়েদের থেকে সঠিক শিক্ষা পাবে না বলে অভিহিত করেন।[৬][৭] বিনবায নারীদের শুধুমাত্র কিছু ক্ষেত্রে কাজ করার ব্যাপারে উল্লেখ করেন। তার মতে শুধুমাত্র নারী শিক্ষা, নারী চিকিৎসা এই সংক্রান্ত কাজেই একজন নারী কাজ করতে পারে এবং এই সকল কাজের ক্ষেত্রেও কঠোরভাবে লিঙ্গ পার্থক্য বিবেচনা করা উচিত।
কোরআন ও হাদিস অনুসারে "মধ্যপন্থী" শব্দটি ওয়াসাতি দ্বারা প্রকাশিত হয়। এর দ্বারা "দুই উগ্রপন্থীর মাঝামাঝিতে অবস্থান" এবং "ভারসাম্য রক্ষা করে মধ্যপন্থা" বোঝায়।[৮]
মুহাম্মদ আল-গাজ্জালি এর ধারণা দ্বারা ওয়াসাতি দর্শনের চিন্তা চেতনা বিপুলভাবে প্রভাবিত। তার চিন্তাধারণা আরো কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ইউসূফ আল-কারযাভী , আব্দেল-হালিম আবু শাকুয়া এবং হাসান আল তুরাবী প্রচার করেছেন। এরা সকলে এক সাথে মিলে একটি আধুনিক ধারণার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আল-গাজ্জালির মতে ইসলাম নারী ও পুরুষের মাঝে সমতার বিধান করেছে। তার মতে, স্রষ্টা নয় বরং মানুষই নিজেদের ধর্মীয় অজ্ঞতার কারণে বিভাজনের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। যা সমগ্র মুসলমান সম্প্রদায়ের অবনতির কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। গাজ্জালি জোর দিয়ে বলে, নারীদের সমাজে মত প্রকাশে এবং শুধুমাত্র ঘরের কাজে বাধ্য করা হয়েছে।[৯] তিনি একই সাথে ইসলামিক চিন্তায় পরিবর্তন আনার কথা তুলেন এবং ইসলামী বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে যে ভুল সংস্কৃতি ঐতিহ্য ধরে চলে আসছে তার পুনর্গঠনে জোর দেন।
ফাতেমা মেরনিসি তার লেখায় বলেন, "নারী অধিকার যদি কিছু আধুনিক পুরুষের কাছে সমস্যা বলে মনে হয়, তা কোরআন বা নবী মোহাম্মদের কারণে নয়, ইসলামের ঐতিহ্যের কারণে নয়, বরং শুধুমাত্র তা পুরুষের রাজকীয় জীবন দর্শনের সাথে তা সাংঘর্ষিক বলেই তাদের কাছে নারী অধিকার একটি সমস্যা।" [১০] পরিবারের নারী ঘরের বাইরে কাজ করলে পুরুষের "সম্মানহানি" হওয়ার ব্যাপারে তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পুরুষদের মানসিকতায় সমাজ দুইভাগে বিভক্ত। যেখানে অর্থনৈতিক সমাজের চালিকাশক্তি শুধুমাত্র পুরুষ এবং ঘরোয়া পরিবেশে শুধুমাত্র নারীদের কাজ বিদ্যমান। এই দুই ভিন্ন অঞ্চল তাঁরা কোনভাবেই এক হতে দেয়া উচিত না।
হেবা রা'উফ (জন্ম ১৯৬৫) কোরআন এবং সুন্নাহর (মোহাম্মদের বক্তব্য) নতুন করে ব্যাখ্যা প্রদান করতে জোর দেন। তার মতে, আরব ও মুসলিম সমাজের নারীদের অগ্রগতির জন্য ইসলামিক চিন্তাধারণার সমন্বয় করা আশু প্রয়োজন। তিনি পাশ্চাত্য নারীবাদ থেকে যারা উৎসাহী হচ্ছে তাঁদের ঘোর সমালোচক।[১১]
রা'উফ ইসলাম অনুযায়ী পর্দা মেনে চলেন।[১১] যা ইসলামিক নারীবাদীদের মাঝে বিতর্ক সৃষ্টির কারণ। নাওয়াল এল-সাদাওয়ির মতো অনেক নারীবাদী পর্দাপ্রথার ঘোর সমালোচনা করে বলে, "পর্দা করা ও নগ্ন থাকা একই মুদ্রার দুই পিঠ মাত্র। দুই ভাবেই নারীদের মনস্তত্ব বহির্ভূত শুধুমাত্র শরীর হিসেবে প্রকাশ করা হয়..." [১২] কিন্তু রা'উফের দৃষ্টিতে পর্দা করা স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশঃ "পর্দার মাধ্যমে নারীদের জনপ্রকাশ্যে যৌনবস্তু হিসেবে প্রকাশিত করা থেকে বিরত রাখা হয়, এভাবে তারা প্রকৃত নাগরিক হিসেবে সম্মান পায়।" [১৩]
রা'উফ নারীদের জনসম্মুখে কাজের পক্ষে এবং লিঙ্গের ভিত্তিতে ভূমিকা নির্ধারনের বিরোধীতা করেন।[১৪] তিনি নারীদের ব্যক্তিগত ও সরকারী সব ধরনের কাজে অংশগ্রহণে জোর দেন এবং "ভালো মা এবং স্ত্রী হতে নারীদের আরো বেশি সামাজিক উৎসাহ ও উদ্দীপনা প্রয়োজন" বলে মত ব্যক্ত করেন।[১৪]
ঐতিহ্যগত ভাবে ধর্মীয় নয় এমন দৃষ্টিকোণ থেকেই লিঙ্গের ভূমিকা নির্দ্ধারিত হয়ে এসেছে। সমাজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ভেদে কোরআনের ও ইসলামিক বক্তব্যের ব্যাখ্যার ভিন্নতা দেখা যায়।[১১]
কিছু পুনর্গঠনবাদী ও নারীবাদী মুসলমান সমাজে অভিভাবকত্ব একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গের উপর কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এরূপ ধারণার বিরোধীতা করেন। নারীদের বাধ্য স্ত্রী এবং ঘরে থাকা মায়ের চরিত্রে দেখা যায়। অপরদিকে পরিবারের হর্তাকর্তা চরিত্রে পুরুষদেরই কাম্য করা হয়।[১] যদিও বেশিরভাগ মুসলিম স্কলার বিশ্বাস করেন নারীরা ঘরে থেকে স্বামী ও সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকতে বাধ্য নয়।[১৫][১৬]
১৯৫০ ও '৬০ এর দিকের মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের স্বনামধন্য নেতা,সাইয়েদ কুতুব মনে করেন, কোরআন "পুরুষকে অভিভাবকত্বের অধিকার ও উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছে" যেন দাম্পত্য জীবনে সঙ্ঘাত ও কলহ তৈরি না হয়। এই নিয়মে পুরুষদের অভিভাবকত্বের অধিকার দিয়ে স্রষ্টা সমতা তৈরি করেছেন। কুতুবের এই আদর্শ আজও সমাদৃত। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাশীল নেতা আয়মান জাওয়াহিরি ও ওসামা বিন লাদেন কুতুবের এই আদর্শে অনুপ্রাণিত।[১৭]
কোরআনের একাধিক আয়াতে নারী ও পুরুষের পোশাক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সূরা ২৪, আয়াত ৩০-৩১এ আছে,
"মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের গুপ্তাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য মঙ্গল আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত আছেন।ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের গুপ্তাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত: প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পাদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" সূরা ২৪, আয়াত ৩০-৩১
যদিও, সংযত হয়ে চলার বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কোরআন নারীদের সংযত হয়ে পোশাক পরিধান এবং সেজন্য অন্ততপক্ষে বক্ষ এবং গুপ্তাঙ্গ ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে।[১৮]
হিজাব করার ব্যাপারে উল্লেখ্য যে, এটি নারীরা ঘরের বাইরে গেলে শুধুমাত্র শরীরের কিছু অংশ (মুখমণ্ডল ও হাত) নয় বরং সমগ্র শরীর ঢেকে রাখার কথা বলে।[১৯][২০]
শুক্রবারের প্রার্থনার জন্য ঐতিহ্যগতভাবে নারী, পুরুষ ও শিশুরা আলাদা দলগত ভাবে প্রার্থনা করার নিয়ম রয়েছে। এক সময়ের নারী ও শিশুরা ঘরে দৈনিক পাঁচবার প্রার্থনা করতো। পুরুষরা পার্শ্ববর্তী মসজিদে পাঁচবার নামাজ পড়তো। মোহাম্মদ নারীদের মসজিদে প্রবেশ ও নির্দিষ্টভাবে পুরুষদের পিছনে নামাজ পড়ার ব্যাপারে উল্লেখ করে গেছেন।[২১] মোহাম্মদ বলেছেন, "তোমরা তোমাদের নারীদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে বাঁধা দিও না, যদিও ঘরই তাঁদের জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো।"(Reported by Abu Dawud in al-Sunan, Baab maa jaa’a fee khurooj al-nisaa’ ilaa’l-masjid. See also Saheeh al-Jaami‘, no. 3833).[ভাল উৎস প্রয়োজন]
নারীরা অবশ্য সুরিনামের একটি মসজিদে প্রার্থনা করতে বাধাপ্রাপ্ত এবং তাঁদের জন্য এটা নিষিদ্ধ।[২২]
যৌনতা বিষয়টি ইসলামের বিভিন্ন বক্তব্যে সাধারণত বিষমকামী বিয়ের ব্যাপারে এসেছে। সকল ক্ষেত্রেই সংযম ও সতীত্ব রক্ষার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। বিবাহবহির্ভূত যৌনতা এবং সমকামি যৌনতা সম্পূর্নভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়াও মায়ের স্বাস্থ্যের গুরুতর ঝুঁকি থাকা স্বাপেক্ষেই একমাত্র ভ্রুণহত্যাকে অনুমতি দেয় হয়েছে। আব্দুস-সামাদ ডাইলমির মতে, যৌনতাকে ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যকার যৌনতা, বিবাহ পূর্ব ও বিবাহ পরবর্তী যৌনতা এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।[২৩]
আদিকাল থেকে চলে আসা বিতর্কে দেখা যায়, বিবাহিত নারী হিসেবে স্ত্রীর যৌন অধিকার রয়েছে এবং একজন পুরুষের তা পূরণ করা দায়িত্ব। বলা হয়ে থাকে এভাবেই সমাজের অশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করা যায়, যাকে ফিতনা বলে অবিহিত করা হয়। কেসিয়া আলী অবশ্য দেখিয়েছেন, "আদিকাল থেকে চলে আসা এই বাণীতে নারীর আকাঙ্ক্ষা পূরনের পাশাপাশি স্ত্রীদের প্রতি চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে তাদের বিবাহিত স্বামীর যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরনে সদা প্রস্তুত থাকার জন্য। লেখকেরা নারীর যৌন প্রবৃত্তিকে তাদের বিয়ের মাধ্যমে অধিকার দিলেও নারীর সুখকে অর্গাজম নয় বরং বংশরক্ষা দ্বারা আখ্যায়িত করে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।" [২৪] ক্লাসিকাল লেখকেরা অবশ্য নারীর সতীত্ব রক্ষায় পুরুষদের সংযমী হতে চাপ প্রয়োগ করেছেন এবং এই কারণেই পুরুষের অভিভাবকত্বের চরিত্রে গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
ঐতিহ্যগতভাবে শুধুমাত্র বিষমকামী আচরণ নারী ও পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ক ইসলামে গ্রহণযোগ্য। এই সম্পর্কের অধীনে একজন পুরুষ নারী অপেক্ষা বেশি যৌন অধিকার ভোগের সুযোগ লাভ করে। তিন ধরনের বিষমকামী সম্পর্ক হতে পারেঃ বিবাহ পূর্ব, বিবাহিত ও বিবাহ বহির্ভূত।
বিবাহ পূর্ব যৌনতা: বিবাহ পূর্ব যৌনতা সামগ্রিকভাবে নিন্দনীয়। ইসলামে কঠোরভাবে নারী ও পুরুষ উভয়কেই সতীত্ব রক্ষা করে চলার নির্দেশ দেয়া আছে। শুধুমাত্র বৈবাহিক সম্পর্কের অধীনেই যৌন সম্পর্ক অনুমোদন প্রাপ্ত নতুবা তা জিনা হিসেবে গণ্য। একজন পুরুষকে স্বাক্ষীর সম্মুখে দেনমোহর পরিশোধের বিনিময়ে একজন নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অবশ্য। সাধারণত মুসলিম বিবাহ মসজিদে ইমাম এবং উভপক্ষের অভিভাবকের (সাধারণত নারী অভিভাবক নয়) উপসস্থিতিতে সম্পন্ন হয়। সাদাক পরিশোধের পরেই বিবাহ সম্পন্ন হয়।
বৈবাহিক যৌনতা: শুধুমাত্র বিবাহিত নারী পুরুষের মধ্যেই যৌন সম্পর্ক হওয়া সম্ভব। পুরুষেরা একাধিক স্ত্রী বৈধভাবে রাখতে পারে। সব স্ত্রীকে একই রকমের সাম্য অধিকার বণ্টনে সক্ষম হলে একই সাথে চারজন স্ত্রী রাখার অধিকার একজন পুরুষকে দেয়া হয়েছে। যদিও এই ধরনের সম্পর্ককে পলিগামী বা বহুগামী বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যদিও বহুগামীতা আইনত সিদ্ধ তবে তা ইসলাম অনুপ্রাণিত করে না। যদিও ইসলামিক সংস্কৃতিতে মোহাম্মদের জীবনের উদাহরণ দিয়ে বহুবিবাহের উদাহরণ দেয়া হয়। তবে শুধুমাত্র একজন পুরুষই একাধিক স্ত্রী রাখতে পারে। একজন নারী কখনোই একাধিক স্বামী রাখতে পারেন না।
বিবাহ বহির্ভূত যৌনতা: একাধিক বিবাহিত স্ত্রী ছাড়াও পুরুষেরা যৌনদাসী রাখতে পারে। এর অনুমোদন ইসলামে আছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তবে এক্ষেত্রে একটাই শর্ত পুরুষ কখনোই তার দাসীকে গর্ভাবতী করলে তাকে মা এবং শিশু উভয়ের দায়িত্ব নিতে হবে। অবশয় কোন নারীকে পুরুষ যৌনদাস রাখার অধিকার ইসলামে দেয়া হয় নাই।
ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামিক পাঠশালায় কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে সমকামিতাে শাস্তিযোগ্য পাপ বলে অভিহিত করা হয়েছে। .[২৫] বেশিরভাগ ইসলামী বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে সমকামিতা আইনত নিষিদ্ধ এবং আফগানিস্তান, ইরান, নাইজেরিয়া, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুদান এবং ইয়েমেনে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যদন্ড।[২৬][২৭][২৮][২৯] বেশিরভাগ মুসলিম দেশ সমকামি অধিকার আন্দোলনের বিপক্ষে। তবে আলবেনিয়া, সিয়েরা লিওন এবং মোজাম্বিক এক্ষেত্রে ভিন্ন।[৩০][৩১][৩২][৩৩] আলবেনিয়া, তুরস্ক, বাহরাইন, জর্দান এবং মালিতে সমকামি আচরণ আইনত ভাবে নিষিদ্ধ নয়। এমনকি আলবেনিয়া এবং মোজাম্বিকে সমলৈঙ্গিক বিবাহকে স্বীকৃতি প্রদানের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। যাইহোক, কেউ সমকামি হলে এ ব্যাপারে কিছু করার নেই তবে সমকামি হয়ে সমকামি আচরণ করা নিঃসন্দেহে খারাপ কাজ।[৩২][৩৩][৩৪][৩৫]
উল্লেখযোগ্য, অভিভাবকত্ব, লৈঙ্গিক ভূমিকা, নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব এই সকল ব্যাপার বিষমকামিতাকে স্বাভাবিক করে তুলেছে।[১]
নারী খৎনা মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশেই চালু। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের এবং সাহার অঞ্চলীয় আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই সংস্কৃতি রয়েছে।[৩৬] এই ব্যাপারে মুসলমান সম্প্রদায়ের ভিতরে এবং বাইরে ব্যাপক আলোচনা এবং ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। সুনান আবু দাঊদের কিছু বক্তব্য ইসলামের সাথে নারী খৎনার সম্পর্ক ইঙ্গিত করে।[৩৭]
“মদিনাতে এক নারীর খৎনা করানোর দায়িত্ব পালনকালে নবী তাকে বলেন, "খুব বেশি গভীর করে কেটো না কেননা তা নারীদের জন্য ভালো এবং তার স্বামীর জন্য আরো বেশি আবেদনময়ী।"'”–সুনান আবু দাঊদ, বই ৪১, #৫২৫১
এই বক্তব্য দ্বারা নারী খৎনাকে সিদ্ধ করার চলে এসেছে যেহেতু এখানে মোহাম্মদ নারী খৎনায় বাধা দেয় নি।[৩৭] অবশ্য কোরানে এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ নেই এবং ইসলামী প্রদেশ, অঞ্চল এবং ব্যক্তিভেদে এর চর্চার ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়।
মোহাম্মদের জীবনী অনুসারে এবং হাদিসে ভিত্তিতে মুসলিম সমাজে পুরুষত্ব উঠে আসে।[৩৮] মোহাম্মদ ২৫ বছর শুধুমাত্র তার প্রথম স্ত্রী খাদিজার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। খাদিজার মৃত্যুর পর তিনি আরো চৌদ্দটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তার অন্তত চার জন উপপত্নী ছিল ।[৩৯] সহিহ বুখারীর ৭ঃ৬২ঃ১৪২ এ উল্লেখ আছে, মোহাম্মদ কোন কোন সময় একরাতে সকল পত্নীর সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতেন।[৪০] এবং ১ঃ৫ঃ২৬৮ তে তাকে "ত্রিশ পুরুষের সমতুল্য শক্তির অধিকারী" বলে অভিহিত করা হয়।[৪১] এতদ্বারা মুসলিম সমাজে ঐতিহ্যগতভাবে একজন পুরুষের পৌরুষত্ব নির্নয়ে পুরুষের পুরুষ উত্তরাধিকার সংখ্যা গণনা এবং উচ্চ যৌন ক্ষমতার প্রচলন হয়েছে। .[৩৮] সংস্কৃতিগতভাবে নারীত্বের ধারণা দ্বারা পৌরুষত্বের ধারণা বৃহৎ আকারে প্রভাবিত।[৩৮] শেখ মোহাম্মদ নেফওয়াজী এবং আহমেদ বিন সেলমানের মত বেশ কিছু ক্লাসিক মুসলমান লেখক নারীর যৌন আকাঙ্ক্ষা কখনোই মেটানো সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন।[৩৮] যা মূলত একজন পুরুষ একাধিক নারীকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তাকে অবিশ্বাস্যকরভাবে শক্তিশালী ও পৌরুষত্বে বলীয়ান বলে প্রমাণ করে।[৩৮]
কমপক্ষে অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত, সৌদি আরবের নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল না, এই ধরনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে এটিই ছিল বিশ্বের একমাত্র দেশ।[৪২][৪৩] এবং 'আবায়া' নামে পরিচিত লম্বা কালো আচ্ছ্বাদন পরিহিত ব্যাতীরকে বাইরে যেতে পারে না।[১১] কিছু কিছু এলাকায় নারীদের চুলও ঢেকে রাখার নির্দেশ আছে।[১১] নারীরা শিক্ষার অধিকার এবং পূর্বাপেক্ষা অধিক ধরনের চাকরির সুযোগ পাচ্ছে। তবে শ্রমবাজারে নারীর উপস্থিতি ২০০২ সাল মোতাবেক শতকরা ১০ এর কাছাকাছি।[৪৪]
আশেপাশের অন্য যেকোন দেশে তুলনায় সৌদি আরবে নারীর উন্নতি তুলনামূলকভাবে কম।[১১] ২০০৪ সালের জেদ্দা অর্থনীতি সম্মেলনে লুবনা ওলায়মান বক্তব্য পেশ করেন এবং এর মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো নারীদের উল্লেখ করার মতো কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়।[১১] একই বছরে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ২০০৪ সালের হজ্জ্বে বক্তব্য পেশ করেন, "ইসলাম নারীকে মায়ের চরিত্রে অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ দেয়াতে নারীদের উচিত ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে।" [৪৫]
ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান গত চল্লিশ বছরে নারীর উন্নতি এবং অবনতি উভয়েরই স্বাক্ষী হয়েছে। বিশেষ করে, ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ইরানের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে পরতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে আইন করে নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়। এরমাঝে রয়েছে জনসম্মুখে নারী চলাচলে বাধা এবং কঠোর পর্দা বিধান চালু করা হয়। নারীশিক্ষা নিয়ন্ত্রিত করে নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক পদ এবং চাকুরি করতে নারীদের অনুৎসাহিত করা হয়।[৪৬] ১৯৮৯ সালের সংবিধানের সংশোধনী নারীদের জীবনযাত্রা ও ভবিষ্যৎ সুযোগের বিপুর পরিবর্তন আনে।[৪৬] ইরানের পার্লামেন্টে অধিক নারী নির্বাচিত হয়েছে, নারীরা উচ্চশীক্ষার সুযোগ নিচ্ছে এবং আরো বেশি হারে সরকারি চাকুরিতে যোগ দেয়ার প্রবণতা দেখাচ্ছে।[৪৭]
তালিবানের শাসনামলে নারীদের চাকুরির সুযোগ অত্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল।[৪৮] যেসব নারীদের বাচ্চা ছিল তারা বাইরে কাজ করার অনুমতি পেতোনা এবং সাধারণত নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করতে অনুৎসাহিত করা হত।[৪৮] স্বাস্থ্যক্ষেত্রে শুধুমাত্র রোগীর সেবা করার কাজ করার অধিকার নারীদের ছিল।[৪৮] প্রাথমিকভাবে বিধবারা কাজ না পেলেও ১৯৯৯ সালের নতুন আইনে তাদের সীমিত পরিসরে কাজের অধিকার দেয়া হয়।[৪৮]
তালিবান পতনের পর নারী শিক্ষা ও কর্মের সুযোগের বিস্তার ঘটেছে। নারীরা পুনরায় শিক্ষক, ডাক্তার এবং সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে কাজ করতে পারছেন। নারী উকিলদের অংশগ্রহণে নারীদের সমানাধিকার নিশ্চিতে নারী বিচারক সংঘ গঠন করা হয়েছে। .[৪৮] তবুও, শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। ২০১১ সালের হিসেব মতে মাত্র ৩৭% নারী শিক্ষার্থী এবং মাত্র ১৫% নারী পড়তে ও লিখতে পারে।[৪৯][৫০][৫১] যদিও, দিন দিন আরো অধিক বিদ্যালয় স্থাপন হচ্ছে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য এবং উচ্চ শিক্ষায় নারীদের উপস্থিতি বাড়ছে।
The Majority of Muslim scholars are of the opinion that serving one's husband is not compulsory...Imaams Maalik, Ash-Shaaf`i and Abu Haneefah may Allah have mercy upon them support this. Al-Qayyim may Allah have mercy upon him cited that marriage contract enables a husband to enjoy his wife; it does not enable him to engage her in housework.
...cooking, sewing, cleaning, laundry, etc. These things are not an obligation on her [the wife]
It is necessary for women to cover their whole bodies from strangers except for the face and hands. No special kind and color of dress is recommended; anything with which the body can be covered would be sufficient.