উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যাকারি | |
---|---|
![]() জেসি হ্যারিসন হোয়াইটহার্স্টের আঁকা ম্যাকপিস থ্যাকারির চিত্র, ১৮৫৫ | |
স্থানীয় নাম | William Makepeace Thackeray |
জন্ম | কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত | ১৮ জুলাই ১৮১১
মৃত্যু | ২৪ ডিসেম্বর ১৮৬৩ লন্ডন, যুক্তরাজ্য | (বয়স ৫২)
পেশা | ঔপন্যাসিক, কবি |
জাতীয়তা | ইংরেজ |
সময়কাল | ১৮২৯–১৮৬৩ (মরণোত্তর প্রকাশিত) |
ধরন | ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | |
দাম্পত্যসঙ্গী | ইসাবেলা গেথিন শ |
সন্তান | ৩, অ্যান ইসাবেলা (১৮৩৭–১৯১৯)-সহ |
স্বাক্ষর | ![]() |
উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যাকারি (ইংরেজি: William Makepeace Thackeray, /ˈθækəri/; ১৮ জুলাই ১৮১১ - ২৪ ডিসেম্বর ১৮৬৩) ছিলেন একজন ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও চিত্রকর। তিনি ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার ব্যঙ্গধর্মী কর্ম, বিশেষ করে ভ্যানিটি ফেয়ার (১৮৪৮) এবং দ্য লাক অব ব্যারি লিন্ডন (১৮৪৪) উপন্যাসের জন্য প্রসিদ্ধ। তাকে চার্লস ডিকেন্সের পর ভিক্টোরীয় যুগের দ্বিতীয় সেরা প্রতিভাধর ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখক বলে গণ্য করা হয়।
উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যাকারি ১৮১১ সালের ১৮ই জুলাই ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।[ক][১] তিনি তার পিতামাতার একমাত্র সন্তান। তার পিতা রিচমন্ড থ্যাকারি (১ সেপ্টেম্বর ১৭৮১ - ১৩ সেপ্টেম্বর ১৮১৫) সাউথ মিমসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ১৭৯৮ সালে ষোল বছর বয়সে একজন লেখক (সরকারি কর্মকর্তা) হিসেবে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে যোগ দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। পরে তিনি এই কোম্পানির কর বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেছিলেন। রিচমন্ডের বাবার নামও ছিল উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যাকারি।[২] তার পিতামহ ছিলেন হ্যারো স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পাদ্রী টমাস থ্যাকারি (১৬৯৩-১৭৬০)।[৩] রিচমন্ডের সারা রেডফিল্ড (জ. ১৮০৪) নামে এক কন্যা ছিল, যার মা ছিলেন রিচমন্ডের ইউরেশীয় গৃহপরিচারিকা শার্লট সোফিয়া রুড। তার উইলে তাদের দুজনেরই নাম ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের এমন সম্পর্ক সে সময়ে প্রচলিত ছিল, এবং পরবর্তী কালে উইলিয়ামের মায়ের সাথে তার বিবাহে সময়ে তেমন জটিলতা দেখা দেয়নি।[৪]
উইলিয়ামের মাতা অ্যান বেচার (১৭৯২-১৮৬৪) সে সময়ের অন্যতম সুন্দরী ছিলেন। তিনি ছিলেন হ্যারিয়েট বেচার ও জন হারমান বেচারের দ্বিতীয় কন্যা। হারমানও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সহকারী কর্মকর্তা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার কালেক্টর ছিলেন।[৫] হারমান ১৮০০ সালে মারা গেলে অ্যান বেচার, তার বড় বোন হ্যারিয়েট ও তাদের বিধবা মা তাদের মাতামহীর কাছে ইংল্যান্ডে ফিরে যান। কিন্তু তার মাতামহী অ্যান বেচার তাদেরকে ১৮০৯ সালে ভারতে পাঠিয়ে দেন। অ্যানের মাতামহী তাকে জানান যে তিনি ১৮০৭ সালে বাথে এক অ্যাসেম্বলি বল নৃত্যে অংশগ্রহণ কালে হেনরি কারমাইকেল-স্মিথ নামে যে বঙ্গ প্রকৌশলীর সাথে পরিচিত হয়েছিলেন ও তাকে ভালোবেসেছিলেন, তিনি মারা গেছেন। অন্যদিকে কারমাইকেল-স্মিথকে জানানো হয়েছিল যে অ্যান আর তার প্রতি আগ্রহী নয়। মূলত দুটি বক্তব্যই মিথ্যা ছিল। যদিও কারমাইকেল-স্মিথ এক প্রখ্যাত স্কটিশ সামরিক পরিবারের সন্তান ছিলেন, অ্যানের মাতামহী তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে দিতে চাননি। তাদের পারিবারিক চিঠি থেকে জানা যায় যে তিনি তার নাতনীর জন্য আরও ভালো পাত্রের সন্ধান করছিলেন।[৬]
অ্যান বেচার ও রিচমন্ড থ্যাকারির বিয়ে হয় ১৮১০ সালের ১৩ই অক্টোবর কলকাতায়।[১] এক বছর পর ম্যাকপিস থ্যাকারির জন্ম হয়। জর্জ চিনারি আনুমানিক ১৮১৩ সালে মাদ্রাজে দুই বছর বয়সী উইলিয়াম ও অ্যান বেচারের একটি সুন্দর চিত্র একেছিলেন। ইতোমধ্যে, ১৮১২ সালে রিচমন্ড থ্যাকারি যখন কারমাইকেল-স্মিথকে নৈশভোজনে আমন্ত্রণ জানান, তখন অপ্রত্যাশিতভাবেই অ্যানের পরিবারের মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশিত হয়। রিচমন্ড ১৮১৫ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করলে অ্যান পরের বছর তার পুত্রকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেন।[৭] এবং তিনি ব্রিটিশ ভারতে থেকে যান। থ্যাকারি যে জাহাজে করে যাচ্ছিলেন সেই জাহাজটি সেন্ট হেলেনা দ্বীপে স্বল্প সময়ের জন্য থেমেছিল, সেখানে তাকে নির্বাসিত নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে দেখানো হয়েছিল। ইতোমধ্যে, অ্যান ১৮১৭ সালের ১৩ই মার্চ তার প্রাক্তন প্রেমিক কারমাইকেল-স্মিথকে বিয়ে করেন এবং ১৮২০ সালে তারাও ইংল্যান্ড চলে যান।[৭]
ম্যাকপিস থ্যাকারি ইংল্যান্ডে সাউদাম্পটন ও চিসউইকের বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু এই সময়ে তার মায়ের থেকে দূরে থাকার কারণে কিশোর থ্যাকারি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন, যা তিনি তার রাউন্ডঅ্যাবাউট পেপারস-এর "অন লেটস্স ডায়েরি"তে আলোকপাত করেন। ১৮২২ সালে চার্টারহাউজ স্কুলে ভর্তি হন, যেখানে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন জন লিচ। থ্যাকারি চার্টারহাউজকে অপছন্দ করতেন,[৮] এবং তার কথাসাহিত্যে একে ব্যঙ্গ করে "স্লটারহাউজ" বলে উল্লেখ করেন। তথাপি, চার্টারহাউজ চ্যাপেল থ্যাকারির স্মরণে তার মৃত্যুর পর একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। তিনি ১৮২৮ সালে ট্রিনিটি কলেজ, ক্যামব্রিজে ভর্তি হন, কিন্তু অধ্যয়নে মনোযোগ না থাকায় ১৮৩০ সালে কোন ডিগ্রি না নিয়েই তিনি ক্যামব্রিজ ত্যাগ করেন। কিন্তু তার কয়েকটি প্রারম্ভিক রচনা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাক্ষিক পত্রিকা দ্য স্নোব ও দ্য গাউনসম্যান-এ প্রকাশিত হয়েছিল।[৯] তিনি ১৮৩১ থেকে ১৮৩৩ সালে তিনি মিডল টেম্পল, লন্ডনে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন।[৭] কিন্তু এই পড়াশোনাও সমাপ্ত করতে পারেননি।
১৮৩২ সালে তার ২১ বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পর তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে তার পিতার £২০,০০০ মূল্যমানের সম্পত্তি লাভ করেন।[৭] কিন্তু তিনি জুয়া খেলে এবং দ্য ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ও দ্য কনস্টিটিউশনাল নামক দুটি অসফল সংবাদপত্রে বিনিয়োগ করে অধিকাংশ অর্থ খরচ করে ফেলেন। তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন এই দুটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে তিনি তার লেখনী চালিয়ে যাবে। এছাড়া দুটি ইন্ডিয়ান ব্যাংকে ধসের কারণেও তিনি অনেক সম্পত্তি হারান। নিজের ভরণপোষণের জন্য কোন পেশা বেছে নিতে তিনি প্রথম শিল্পকলার কথা ভাবেন, এবং তিনি প্যারিসে শিল্পকলা নিয়ে পড়াশোনা করতে যান। ১৮৩৬ সালের ২০শে আগস্ট থ্যাকারি প্যারিসে অধ্যয়ন কালে ইসাবেলা গেদিন শ'কে (১৮১৬-১৮৯৪) বিয়ে করেন। ইসাবেলা ছিলেন আইরিশ কর্নেল ম্যাথু শ ও ইসাবেল ক্রেগ শ'য়ের দ্বিতীয় কন্যা। থ্যাকারি দম্পতির তিন কন্যা ছিল, তারা হলেন অ্যান ইসাবেলা থ্যাকারি রিচি (১৮৩৭-১৯১৯), জেন (আট মাস বয়সে মারা যায়), এবং হ্যারিয়েট ম্যারিয়ান (১৮৪০-১৮৭৫), যিনি সম্পাদক, জীবনীকার ও দার্শনিক স্যার লেসলি স্টিফেনকে বিয়ে করেছিলেন।
থ্যাকারির প্রারম্ভিক সাহিত্যকর্মের একটি হল টিমবুক্টু (১৮২৯)। এটি ক্যামব্রিজ চ্যান্সেলরের ইংরেজি পদ্যের পদক (টিমবাক্টু রচনার জন্য এই প্রতিযোগিতা জিতেছিলেন টেনিসন) নিয়ে রচিত বারলেস্ক। ১৮৩০-এর দশকের শেষভাগে থ্যাকারি তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং সে সময়ে নতুন মাসিক পত্রিকা ফ্রেজার্স-এ বিভিন্ন বিষয়াবলি নিয়ে নিবন্ধ লিখতে শুরু করেন। তার লেখনীসমূহ বেনামে অথবা মিস্টার মাইকেল অ্যাঞ্জেলো টিটমার্শ, ফিট্জ-বুডল, দ্য ফ্যাট কনট্রিবিউটর, বা আইকি সলোমন্স নামে প্রকাশিত হত।[৭] ১৮৩৭ থেকে ১৮৪০ সালে তিনি দ্য টাইমস-এ বইয়ের পর্যালোচনা লিখতেন।[১০] এছাড়া তিনি দ্য মর্নিং ক্রনিকল ও দ্য ফরেন কোয়ার্টারলি রিভিউ-এ নিয়মিত লিখতেন। ফ্রেজার্স পত্রিকায় তার শিল্প সমালোচনা, ছোট কল্পিত স্কেচ ও দুটি দীর্ঘ কল্পিত রচনা প্রকাশিত হয়। ১৮৩৭ সালের শুরুতে থ্যাকারির ব্যঙ্গধর্মী স্কেচের ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়, যা বর্তমানে দ্য ইয়েলোপ্লাশ পেপারস নামে পরিচিত। এটি একজন তরুণ লন্ডনী খানসামার স্মৃতিকথা ও দিনলিপি।
১৮৩৯ সালের মে থেকে ১৮৪০ সালে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত থ্যাকারির প্রথম উপন্যাস হিসেবে গণ্য ক্যাথরিন ধারাবাহিকভাবে ফ্রেজার্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।[১১] মূলত অপরাধমূলক ও নিম্ন শ্রেণির জীবন নিয়ে নিউগেট ধারার ব্যঙ্গধর্মী রচনা হলেও এর সমাপ্তি ঘটে পিকারেস্ক বা ভবঘুরে ও দুষ্ট চরিত্রে অভিযান নিয়ে রচিত গল্প হিসেবে। একই সময়ে তিনি আরেকটি উপন্যাস রচনা শুরু করেন, যা তার জীবদ্দশায় সমাপ্ত করতে পারেননি এবং সেটি আ শ্যাবি জেন্টিল স্টোরি নামে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮৪৪ সালে ফ্রেজার্স পত্রিকায় তার রচিত আরেকটি দীর্ঘ উপন্যাস দ্য লাক অব ব্যারি লিন্ডন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এটি চমৎকার, দ্রুত, ও ব্যঙ্গধর্মী বর্ণনামূলক এবং সমাপ্তি ঘটে দুঃখ ভারাক্রান্ত দৃশ্যের অবতারণার মধ্য দিয়ে।
পরবর্তী কালে তিনি চিত্রশিল্পী জন লিচের সাথে তার পরিচয়ের সূত্রে নতুন পত্রিকা পাঞ্চ-এ লেখা শুরু করেন। এই পত্রিকায় তিনি ১৮৪৬ থেকে ১৮৪৭ সালে দ্য স্নব পেপারস প্রকাশ করেন, যা পরে ১৮৪৮ সালে দ্য বুক অব স্নবস নামে সংকলিত করে প্রকাশ করা হয়। এটি লন্ডনের কয়েকটি চরিত্রের স্কেচ সংকলন এবং এর মধ্য দিয়ে থ্যাকারির দ্রুত চরিত্র-অঙ্কনের কলাসিদ্ধি দেখা যায়। এই সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে "স্নব"-এর আধুনিক অর্থ জনপ্রিয়তা লাভ করে, যার অর্থ হল যে ব্যক্তি বিত্ত ও সামাজিক মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে কিংবা বিত্ত ও সামাজিক মর্যাদাহীনতাকে অবজ্ঞা করে।[১২] ১৮৪৩ থেকে ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত থ্যাকারি পাঞ্চ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন।[১৩]
থ্যাকারির স্বনামে প্রকাশিত প্রথম রচনা হল ভ্যানিটি ফেয়ার। এটি ১৮৪৭ থেকে ১৮৪৮ সালে ১৯ খণ্ডে প্রতি মাসে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের রিজেন্সি সময়কালের পটভূমিতে রচিত উপন্যাসটিতে দুজন ভিন্ন মতের নারী অ্যামেলিয়া সেডলি ও বেকি শার্পের ভাগ্য পরিক্রমা চিত্রিত হয়েছে। দ্বিতীয় চরিত্রটি এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র এবং সম্ভবত থ্যাকারির সৃষ্ট সবচেয়ে স্মরণীয় চরিত্র।[৭] উপন্যাসটির উপ-শিরোনাম ছিল "আ নভেল উইদাউট আ হিরো", থ্যাকারির ভাষ্যমতে এই উপন্যাসের উপজীব্য হল "এই বিষয়টি বর্ণনা করা যে আমার অধিকাংশ ক্ষেত্রে বোকা ও স্বার্থানেষী এবং সকলেই আত্মশ্লাঘার প্রতি আগ্রহী।" ১৮৫৫ সালে থ্যাকারির ক্রিসমাস বই দ্য রোজ অ্যান্ড দ্য রিং প্রকাশিত হয়।
তার পরবর্তী সাহিত্যকর্ম হল পেনডেনিস, এটি ১৮৪৮ থেকে ১৮৫০ সালে মাসিক কিস্তিতে প্রকাশিত হয়।[১৪] এটি আর্থার পেনডেনিসের বয়স পরিক্রমার গল্প, এবং এতে থ্যাকারির বিপরীত অহংবোধ চিত্রিত হয়েছে। বিভিন্ন রকমের অসুস্থতা এবং ১৮৪৯ সালে প্রায়-মারাত্মক একটি অসুখের কারণে পেনডেনিস লেখা ব্যহত হয়েছিল। তিনি এই সময়ে দুইবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি লন্ডনে অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজি হাস্যরসবিদের উপর এবং প্রথম চারজন হ্যানোভারীয় শাসকদের উপর বক্তৃতা দেন। পরের ধারাবাহিকটি দ্য ফোর জর্জস নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।[৩]
১৮৫৭ সালের জুলাইয়ে থ্যাকারি অক্সফোর্ড শহরে লিবারেল পার্টি থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু জয়ী হতে পারেননি।[৩] যদিও তিনি তুখোড় কর্মী ছিলেন না, তবে তিনি রাজনীতিতে সবসময় লিবারেল পার্টির সমর্থক ছিলেন, এবং তিনি তাদেরকেই ভোট দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। এছাড়া তিনি ত্রৈবার্ষিক সংসদেও যেতে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি কার্ডওয়েলকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিলেন, যিনি থ্যাকারির ১,০০৫ ভোটের বিপরীতে ১,০৭০ ভোট পেয়েছিলেন।[৩]
১৮৬০ সালে থ্যাকারি নব্য প্রতিষ্ঠিত কর্নহিল পত্রিকার সম্পাদক হন,[১৫] কিন্তু তিনি এই কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না, এবং পত্রিকায় লেখক হিসেবে "রাউন্ডঅ্যাবাউট পেপারস" লিখতেই বেশি পছন্দ করতেন।
১৮৫০-এর দশকে থ্যাকারির স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে এবং মূত্রনালীর সংকোচনের ফলে তাকে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় শোয়ে থাকতে হত। এছাড়া তার মনে হচ্ছিল যে তিনি তার সৃজনশীল প্রতিভা হারিয়ে ফেলছেন। তিনি অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ও মদ্যপান করে এবং ব্যায়াম না করে তার শারীরিক অবস্থা আরও অবনতির দিকে নিয়ে যান, যদিও তিনি ঘোড়ায় চড়তেন। তাকে সাহিত্যিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেটুক বলে অভিহিত করা হত। লেখনী ব্যতীত তার প্রধান কাজ ছিল "খাওয়া ও জাবর কাটা"।[১৬]
১৮৬৩ সালের ২৩শে ডিসেম্বর নৈশভোজের পর বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে তার স্ট্রোক হয়। পরের দিন সকালে তাকে বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ৫২ বছর বয়সে তার মৃত্যু অপ্রত্যাশিত ছিল, এবং তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও পাঠকদের মর্মাহত করে। কেনসিংটন গার্ডেনসে তার শেষকৃত্যে প্রায় ৭,০০০ মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। তার মরদেহ ২৯শে ডিসেম্বর কেনসাল গ্রিন সেমাটেরিতে সমাহিত করা হয়। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে মারোচেটির নির্মিত একটি আবক্ষ স্মৃতিস্তম্ভ দেখা যায়।[৩]
ভিক্টোরীয় যুগে লেখনীর প্রতিভা ও বুদ্ধিদীপ্ততায় চার্লস ডিকেন্সের পরপরই তার অবস্থান ছিল,[১৭] কিন্তু তার বই অনেক কম পঠিত হয় এবং শুধু ভ্যানিটি ফেয়ার উপন্যাসের জন্যই পরিচিত ছিলেন। এটি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্সে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং এটি অবলম্বনে একাধিক চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক নির্মিত হয়েছে।
ভ্যানিটি ফেয়ার উপন্যাসের ভূয়সী প্রশংসা করে ঔপন্যাসিক শার্লট ব্রন্টি ১৯৪৮ সালে তার জেন আইয়ার উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ থ্যাকারির নামে উৎসর্গ করেন।[১৮]
১৮৮৭ সালে রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টস লন্ডনের ২ প্যালেস গ্রিনে থ্যাকারির সম্মানার্থে একটি নীল স্মৃতিস্মম্ভ উন্মোচন করে।[১৯] এর বর্তমান অবস্থানে ইসরায়েলি দূতাবাস অবস্থিত।[২০]
কেন্টের টানব্রিজ ওয়েলসে অবস্থিত থ্যাকারির প্রাক্তন বাড়িটি এখন একটি রেস্তোরাঁ, যার নামকরণ করা হয়েছে এই লেখকের নামে।[২১]
থ্যাকারি অক্সফোর্ডের অ্যানশিয়েন্ট অর্ডার অব ড্রুইডসের অ্যালবিয়ন লজের সদস্য ছিলেন।[২২]
গ্রন্থাগার সংরক্ষণ সম্পর্কে উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যাকারি |