উকাশা ইবনে মিহসান ছিলেন ইসলামের নবী মুহাম্মদ স. এর একজন সাহাবা যিনি মুহাম্মদের জীবদ্দশায় নাখালা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।[১] তিনি উকাশা বিন আল-মিহসানের অভিযান বলে পরিচিত অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন।[২] যা উদরাহ ও বালি গোত্রের বিরুদ্ধে ৯ম আরবি হিজরি সাল এবং ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে সংঘটিত হয়।[২][৩]
উকাশার ডাক নাম আবু মিহসান। তার পিতা মিহসান ইবন হুরসান। উকাশা হিজরতের পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং অন্যদের সঙ্গে মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে যান।
উকাশা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে তার হাতের তরবারিটি ভেঙ্গে যায়। রাসুল সা: তাকে একটি খেজুরের ডাল দান করেন এবং তা দিয়েই তিনি সূচালো ছুরির মত শত্রুর ওপর আক্রমণ চালান। যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তিনি এ ছড়ি দিয়েই লড়ে যান। [৪]
উকাশা বদর, উহুদ, খন্দকসহ সকল প্রসিদ্ধ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। ৭ম হিজরী সনের রাবীউল আউয়াল মাসে তাকে বনী আসাদের মোকাবিলা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মদীনার পথে ‘গামার’ কূপের আশে পাশে বনী আসাদের বসতি ছিলো। তিনি চল্লিশ জনের একটি বাহিনী নিয়ে দ্রুত সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান বনী আসাদের লোকেরা ভয়ে পূর্বেই সে স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। উকাশা কাউকে না পেয়ে তাদের পরিত্যক্ত দুশো উট ও কিছু ছাগল বকরী মদীনায় নিয়ে আসেন।
রাসূলে কারীম সা: একবার বলেন, সত্তর হাজার মানুষ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। উকাশা প্রশ্ন করেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি? বললেন, তুমিও তাদের মধ্যে। অত:পর দ্বিতীয় এক ব্যক্তি নিজের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তখন রাসূল সা: বললেন, উকাশা তোমার থেকে এগিয়ে গেছে। এই ঘটনার পর রাসুল সা: এর এই বাক্যটি প্রবাদে পরিণত হয়। কেউ কোন ব্যাপারে কাউকে ছাড়িয়ে গেলে বলা হয়, অমুক উকাশার মত এগিয়ে গেছে।
১২ হিজরী সনে খলীফা হযরত আবু বকর খালিদ ইবনুল ওয়ালীদকে ভন্ডনবী তুলাইহা আসাদীর বিদ্রোহ দমনের নির্দেশ দেন। খালিদের বাহিনীর দুজন অগ্র সৈনিক উকাশা ও সাবিত ইবন আরকাম ছিলেন। তারা বাহিনীর অগ্রভাগে ছিলেন। হঠাৎ শত্রু সৈন্যর সাথে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। শত্রু সৈনিকদের মধ্যে তুলাইহা ও তার ভাই সালামাও ছিল। তুলাইহা উকাশাকে আক্রমণ করে এবং সালামা সাবিতের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। সাবিত শাহাদাত বরণ করেন। অন্যদিকে উকাশা তুলাইহাকে পরাস্ত করে ফেলে এমন সময় তুলাইহা চেচিয়ে ওঠে সালামার সাহায্য চায়। দুই ভাই এক সাথে উকাশাকে আক্রমণ করে হত্যা করে। তাদের দুজনকে রক্ত ভেজা কাপড়েই মরুভূমির বালুতে দাফন করা হয়।