কোনও নির্ধারিত প্রসঙ্গবিন্দু বা প্রসঙ্গতলের (Vertical Datum ভার্টিকাল ডেটাম) সাপেক্ষে কোনও বস্তু বা বিন্দুর উচ্চতা বলতে ঐ প্রসঙ্গবিন্দু বা প্রসঙ্গতল থেকে উপরের দিকে যেকোনও বস্তু বা বিন্দুর উল্লম্ব দূরত্বকে বোঝায়। একে ইংরেজি পরিভাষায় "অ্যালটিচিউড" (Altitude) বা কদাচিৎ "হাইট" (Height) বলে। বিমানচালনা, জ্যামিতি, ভৌগোলিক জরিপ, ক্রীড়া, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লম্ব প্রসঙ্গতলের পছন্দ ও উচ্চতার সংজ্ঞা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত কোনও বস্তু বা বিন্দুর উচ্চতা বলতে সমুদ্রপৃষ্ঠ তথা সমুদ্র সমতল থেকে উচ্চতাকে (Height above sea level) কিংবা ভূপৃষ্ঠকে প্রসঙ্গতল হিসেবে গণ্য করে সেখান থেকে পরিমাপকৃত উচ্চতাকে বোঝায়।
প্রসঙ্গতল থেকে বস্তুর উচ্চতা পরিমাপের জন্য প্রায়শই উচ্চতামাপক যন্ত্র (Altimeter আল্টিমিটার) ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চতামাপক যন্ত্রগুলি বায়ুমণ্ডলীয় চাপের হ্রাস-বৃদ্ধি গণনা করে উচ্চতা নির্ণয় করে, কেননা উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বাতাসের ঘনত্ব ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপ হ্রাস পায়। তবে ভূপৃষ্ঠ বা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেতার তরঙ্গ (রাডার) কিংবা লেজাররশ্মির প্রতিফলন পর্যবেক্ষণ করে এবং কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক বৈশ্বিক দিকনির্ণয় ব্যবস্থা (Global Navigation Satellite System) ব্যবহার করেও উচ্চতা পরিমাপ করা হতে পারে।
ভূগোলবিদ্যায় পৃথিবীর স্থলভাগের কোনও ভৌগোলিক স্থানের উচ্চতা বলতে সমুদ্র সমতল থেকে ঐ ভৌগোলিক স্থানটির উল্লম্ব দূরত্বকে বোঝানো হয়, এবং এটিকে নির্দেশ করতে ইংরেজি পরিভাষায় "এলিভেশন" (Elevation) নামের একটি পৃথক পরিভাষা ব্যবহার করা হয়।
কোনও উল্লম্ব প্রসঙ্গতলের সাপেক্ষে উল্লম্বভাবে নিচের দিকে দূরত্ব বোঝাতে গভীরতা কথাটি ব্যবহার হয়।
বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে, "ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা" পরিভাষাটির অনেক অর্থ হতে পারে; সংশোধক যুক্ত করে অর্থ স্পষ্ট ভাবে (যেমন, "যথার্থ উচ্চতা") বা যোগাযোগ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে অন্তর্নিহিতভাবে। উচ্চতা সম্বন্ধীয় তথ্য আদানপ্রদানের সময়ে, যোগাযোগকারী দুইপক্ষকেই কোন সংজ্ঞাটি ব্যবহার করতে হবে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। [১]
বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে বিমানের উচ্চতা বলতে হয় সমুদ্র সমতল থেকে উচ্চতা (হাইট অ্যাবাভ সি লেভেল বা সংক্ষেপে এইচ.এ.এস.এল) বোঝায় অথবা ভূ-সমতল থেকে উচ্চতা (হাইট অ্যাবাভ গ্রাউন্ড লেভেল বা সংক্ষেপে এইচ.এ.জি.এল) বোঝায়।
বায়ুচাপভিত্তিক উচ্চতাকে (প্রেসার অলটিচিউড) ১০০ ফিট (৩০ মিটার) দিয়ে ভাগ করলে বিমান চলার উচ্চতা পাওয়া যায়, এবং সেটি সঞ্চার উচ্চতা প্রাপ্তির পরই তা ব্যবহৃত হয়। (১৮,০০০ ফুট (৫,৫০০ মিটার) আমেরিকার ক্ষেত্রে, কিন্তু অন্যান্য অধিক্ষেত্রে তা ৩,০০০ ফুট (৯১০ মিটার) পর্যন্তও নিচে হতে পারে); সুতরাং উচ্চতা পরিমাপক যন্ত্রে ১৮,০০০ ফিট দেখানোর অর্থ, বায়ুচাপের সাধারণ মানে, বিমান তখন "বিমান চলার উচ্চতা ১৮০" তে পৌঁছেছে। যখন বিমান সেই উচ্চতায় চলতে থাকে, তখন বিমানের উচ্চতা মাপক যন্ত্র সাধারণ বায়ুচাপ মানে নির্দিষ্ট থাকে (২৯.৯২ বায়ুমন্ডল চাপের একক বা ১০১৩.২৫;প্যাসকেল (একক)).
বিমানে ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা নির্ধারক বায়ুমণ্ডলের চাপ মাপক অলটিমিটার থাকে, যেটি বস্তুত একটি ব্যারোমিটার, যেটির সম্মুখভাগে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ দেখানোর বদলে (ফিট বা মিটার)-এ দূরত্ব দেখায়।
বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের উচ্চতার ব্যবহার আছে :
এই নানা ধরনের উচ্চতাগুলি আরও সহজ ভাবে বলা যায়:
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল অনেকগুলি উচ্চতা অনুযায়ী স্তরে বিভক্ত। বিভিন্ন উচ্চতায় এই স্তরগুলির শুরু এবং শেষ নির্ভর করে ঋতু ও মেরুর থেকে দূরত্বের ওপর। নিম্নলিখিত উচ্চতাগুলি গড় উচ্চতা:[৩]
কার্মান রেখা, সাধারণ ভাবে মানা হয়, সমুদ্র সমতল থেকে ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) ঊর্ধ্বে অবস্থিত, সেটিই হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও মহাশূন্যের মাঝখানের সীমারেখা।[৪] তাপমণ্ডল ও এক্সোমণ্ডলকে (মেসোমণ্ডলের উপরিভাগ সমেত) সাধারণভাবে মহাশূন্যের অংশ হিসাবেই মানা হয়।
পৃথিবীর ওপর (তার বায়ুমণ্ডলের ভিতরে অবস্থিত) যে অঞ্চলগুলি সমুদ্রতল থেকে বেশি উচ্চতায়, সেই স্থানগুলিকে উচ্চতাসম্পন্ন স্থান হিসেবে ধরা হয়। সমুদ্রতল থেকে ২,৪০০ মিটার (৮,০০০ ফুট) উচ্চতাকে অধিক উচ্চতাসম্পন্ন স্থান হিসেবে ধরা হয়।[৫][৬][৭]
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উচ্চতা বাড়ে তত বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কমে যায়। এটি উচ্চতা জনিত ভৌত কারণে হয়: মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে পৃথিবীর তলের কাছাকাছি বায়ুর ঘনত্ব বেশি এবং বাতাসে উত্তাপের কারণে বাতাসের অণুগুলোরও একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কা লাগে ; তার ফলে ছড়িয়ে যাওয়ার পরিমাণও বেশি।[৮]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; MedicalProblems
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি