উচ্চশিক্ষায়তনিক সম্মেলন মূলত উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে কর্মরত বিজ্ঞানী ও গবেষকদের (যাদের একাংশ উচ্চশিক্ষায়তনের অন্তর্ভুক্ত নাও হতে পারেন) একে অপরের কাছে গবেষণাকর্ম উপস্থাপন ও আলোচনার স্থান। উচ্চশিক্ষায়তনিক বা বৈজ্ঞানিক গবেষণা সাময়িকীতে প্রবন্ধ প্রকাশের পাশাপাশি এসব সম্মেলন গবেষকদের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। উচ্চশিক্ষায়তনিক সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষকেরা তাদের গবেষণাক্ষেত্রের অন্যান্য কর্মরত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ টিকিয়ে রাখেন এবং সবচেয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হতে পারেন।
উচ্চশিক্ষায়তনিক সম্মেলন এক দিনেই সমাপ্ত হতে পারে বা একাধিক দিন ধরে চলতে পারে। সম্মেলনে সাধারণত একাধিক সংক্ষিপ্ত কিন্তু অর্থবহ মৌখিক উপস্থাপনা থাকে। সাধারণত এর জন্য ১০ থেকে ৩০ মিনিট সময় দেয়া হয়। উপস্থাপনের শেষে আলোচনা থাকে। উপস্থাপিত বিষয়বস্তু পরবর্তীতে লিখিত আকারে গবেষণাপত্র (অ্যাকাডেমিক পেপার) হিসেবে সম্মেলনের কার্যবিবরণী আকারে প্রকাশিত হয়।
সাধারণত একটি সম্মেলনে একজন মূল প্রবন্ধ ("কিনোট" Keynote) পাঠ করেন যিনি মূলত একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর পণ্ডিতব্যক্তি হিসেবে খ্যাত; কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষায়তনের বাইরে থেকেও কাউকে দিয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করানো হতে পারে। সাধারণত মূল প্রবন্ধটি একটু দীর্ঘ হয়: এক থেকে দেড় ঘণ্টার। বিশেষ করে যদি কোনো সম্মেলনে বা নির্বাচিত বক্তাবৃন্দের মধ্যে একাধিক মূল প্রবন্ধ পাঠকারী থাকেন।
মৌখিক উপস্থাপনার পাশাপাশি সম্মেলনে নির্দিষ্ট বক্তাবৃন্দ-ভিত্তিক (প্যানেল) আলোচনা, কর্মশালা ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গোলটেবিল আলোচনা করা হয়।
যারা সম্মেলনে উপস্থাপনা করতে চান, তাদেরকে পূর্বেই তাদের কাজের সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলা হয় যা নিরীক্ষা শেষে উপস্থাপনার জন্য অনুমতি দেয়া হয়। কিছু কিছু বিষয়ে এমনকি ৬-১৫ পৃষ্ঠার প্রবন্ধও জমা দিতে হয় যা পরিকল্পনা সমিতির (প্রোগ্রাম কমিটি) মনোনীত একাধিক নিরীক্ষকদের দ্বারা নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
কিছু কিছু বিষয়ে, যেমন ইংরেজি বা অন্য ভাষায়, প্রবন্ধকারের নির্দিষ্ট লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে উপস্থাপনকারী সাধারণত তার কাজ প্রদর্শনী পর্দা বা ডিসপ্লে-তে দৃশ্যমান করে মূল বিষয়বস্তু ও ফলাফল সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন।
বড় আকারের সভাকে সম্মেলন বলা হয়ে থাকে যেখানে ছোট আকারের একই ধরনের সভাকে বলা হয় কর্মশালা। এসব সম্মেলনে একসাথে যেমন একটি অধিবেশন (সেশন) চলতে পারে, তেমনি একসাথে একাধিক অধিবেশন সমান্তরালভাবে চলতে পারে। সমান্তরাল অধিবশনে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে একাধিক উপস্থাপনাকারী ও শ্রোতা থাকে।
বড় সম্মেলনে সাধারণত চাকুরি ও কর্মজীবন (ক্যারিয়ার) সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করে থাকে।
কিছু কিছু সম্মেলন থেকে সম্মেলনের অংশ হিসেবেই সামাজিক বা বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড যেমন ভ্রমণ বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এসব সম্মেলনে আগ্রহী ব্যক্তি বা দলকে নিয়ে ব্যবসায়িক সভার আয়োজন করাও সম্মেলনের একটি অন্যতম কাজ হতে পারে।
উচ্চশিক্ষায়তনিক সম্মেলনকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
বড় আকারের সম্মেলনে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক (তারহীন ইন্টারনেট সংযোগসেবা) এবং মোবাইল ডিভাইস (বহনযোগ্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র) সরবরাহ করে থাকে। এই কাজটি করা হয় দূরবর্তী শ্রোতাদের জন্য যাতে তারা উপস্থাপিত বিষয় শুনতে পারে ও আলোচনার মাধ্যমে অবদান রাখতে পারে।
অগ্রসরমান প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্মেলনে এমনকি অচেনা ব্যক্তিও আরএফআইডির (বেতার কম্পাঙ্ক শনাক্তকারক) মাধ্যমে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করতে পারে।
মূলত একই বিষয়ে কর্মরত একদল গবেষক কিংবা জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। তবে বড় ধরনের সম্মেলন গবেষক বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পেশাদার সম্মেলন আয়োজনকারীদের দ্বারাও আয়োজিত হতে পারে।[১]
এসব সম্মেলনের শুরুতে প্রবন্ধ বা প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ আহ্বান সংবলিত বিজ্ঞপ্তি সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রচার করা হয়। কীভাবে প্রবন্ধ বা প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ জমা দিতে হবে তার নিয়মকানুন সেখানে থাকে। পাশাপাশি সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু, বিভিন্ন আলোচনার তালিকা এবং কী ধরনের সারসংক্ষেপ কীভাবে, কার কাছে এবং কতোদিনের মধ্যে পাঠানো যাবে তার একটি বর্ণনা সেখানে থাকে। সাধারণত মেইলিং লিস্টে বা বিশেষায়িত কোনো অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে এই বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীরা তাদের প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ অনলাইনে বিশেষায়িত সফটওয়্যারের মাধ্যমে জমা দিয়ে থাকেন।
বেশ কিছু নকল, জাল বা প্রতারণাপূর্ণ সম্মেলনও দেখা যায়।[২][৩]