উজির

উসমানীয় উজিরে আজমের সীলমোহর।

উজির (/vɪˈzɪər/, /ˈvɪzjər/;[] আরবি: وزير; Wazeer, ফার্সি: vazīr, তুর্কি: vezir, উর্দু: وزیر‎‎, Vazeer) উচ্চপদস্থ মন্ত্রী বা উপদেষ্টার পদ। আব্বাসীয় খলিফারা মন্ত্রীদেরকে উজির উপাধি দিয়েছিলেন। পূর্বে তাদের কাতিব (সচিব) ডাকা হত।[]

আধুনিক যুগে আরব বিশ্ব, ইরান, তুরস্ক, পূর্ব আফ্রিকা, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তানউজবেকিস্তানে সরকারের মন্ত্রীদের বোঝাতে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে উজিরে আজম শব্দ ব্যবহৃত হয়।

আধুনিক ব্যবহারে, এই শব্দটি মধ্যপ্রাচ্য এবং এর বাইরেও সরকারী মন্ত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

নামের উৎপত্তি

[সম্পাদনা]

উজিরকে একটি ইরানী শব্দ বলে প্রস্তাব করা হয়েছে যা এসেছে এর পাহলভি শব্দমূল vičir থেকে। ডিনকার্ড এর প্রস্তাব অনুযায়ী শব্দটি দ্বারা বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেট বোঝায়। আর্থার জেফরি ‘উজির’ শব্দটিকে একটি "ভাল ইরানী" শব্দ বলে মনে করেন, কারণ আভেস্তান ভাষায় এর একটি সুপ্রতিষ্ঠিত অবস্থান আছে। পাহলভি vičir, আসলে আভেস্তান ভিচিরা থেকে vīčira এসেছে, যার অর্থ সিদ্ধান্ত নেওয়া। এই আবেস্তান মূল শব্দের আধুনিক ফার্সি রূপের পিছনে রয়েছে večer যার অর্থ বিচারক।

আরেকটি সম্ভাবনা হল শব্দটি আরবি ওয়াজারা ("বোঝা বহন করা") থেকে এসেছে, সেমেটিক মূল W-Z-R থেকে। শব্দটিকে মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে হারুনকে মূসার উজির (সহায়ক) হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, সেইসাথে উইজর (বোঝা) শব্দটিও একই মূল থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এটি পরবর্তীতে উপাধি হিসেবে গৃহীত হয়েছিল প্রোটো-শিয়ার নেতা আল-মুখতার এবং আবু সালামা দ্বারা। আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে, শব্দটি "প্রতিনিধি" বা "ডেপুটি" এর অর্থ অর্জন করেছিল।

ঐতিহাসিক মন্ত্রী পদবি

[সম্পাদনা]

প্রথম আব্বাসীয় খলিফার অধীনে উজিরের কার্যালয় উত্থিত হয়েছিল এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।

শাহ কাজার

উজিররা ক্ষমতাসীন এবং প্রজাদের মধ্যের সম্পর্ক বিস্তারকারী মানুষ ছিলেন।১১ শতকের আইনী তাত্ত্বিক আল-মাওয়ার্দি দুই ধরনের উজিরকে সংজ্ঞায়িত করেছেন: উজির আল-তানফিদ ("মৃত্যুদণ্ডের/বিচারের উজির"), যাদের সীমিত ক্ষমতা ছিল এবং খলিফার নীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছিলেন। আরও শক্তিশালী উজির হলো আল-তাফউইদ (" অর্পিত ক্ষমতা সহ উজির"), যাদের বেসামরিক এবং সামরিক বিষয়ে কর্তৃত্ব ছিল এবং উত্তরাধিকারী বা কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয় ব্যতীত খলিফার মতো একই ক্ষমতা ব্যাবহার করতেন। আল-মাওয়ার্দি জোর দিয়েছিলেন দ্বিতীয়টির প্রতি।

ঐতিহাসিকভাবে, শব্দটি দুটি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে: হয় একটি উচ্চপদস্থ পদের জন্য, রাজার সরকারের প্রধানের প্রধানমন্ত্রী (গ্র্যান্ড উজির শব্দটি সর্বদা এই ধরনের একটি পদকে বোঝায়), অথবা একটি ভাগ করা 'মন্ত্রিসভা পদমর্যাদা' হিসেবে '।

ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে এর ব্যাবহার

[সম্পাদনা]
  • ‘উজির’ নামটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল আব্বাসীয় খিলাফতের প্রথম দিকে।
  • মুসলিম পারস্যে, শাহানশাহের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অধীনে প্রধানমন্ত্রীকে সাধারণত ওয়াজির-ই-আজম বলা হতো।
  • আল-আন্দালুসে, কর্ডোবার উমাইয়া খলিফারা আমলাতন্ত্রের বিভাগীয় প্রধান, নির্দিষ্ট কাজের মন্ত্রী এবং রাজকীয় কাউন্সিলর হিসাবে বিভিন্ন সংখ্যক উজির নিয়োগ করেছিলেন। এক সময়ে, ১০০৮ সালে, একই সময়ে ২৯ জন উজির ছিলেন।
  • মুসলিম মিশরে ফাতেমীয়দের সময় উজির উপাধি ছিল।
  • অটোমান সাম্রাজ্যে উজির বলতে প্রধাণমন্ত্রী বা দ্বিতীয় সুলতানকে বোঝানো হতো।
  • তিউনিসিয়ার 'রিজেন্সিতে', হুসাইনিদ রাজবংশের অধীনে, বে-এর বিভিন্ন মন্ত্রী ছিল, যার মধ্যে রয়েছে: ওয়াজির আল-আকবর : 'মহান মন্ত্রী', অর্থাৎ গ্র্যান্ড উজিয়ার, মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী। ওয়াজির আল-আমলা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওয়াজির আল-বাহর : 'সমুদ্রের বা নৌমন্ত্রী', অর্থাৎ নৌবাহিনী/মেরিনের জন্য। ওয়াজির আল-হারব : সেনাবাহিনীর মন্ত্রী বা যুদ্ধের বা রণমন্ত্রী। ওয়াজির আল-ইসতিশারা : মন্ত্রী-কাউন্সেলর। উজির আল-কালাম: কলমের মন্ত্রী। ওয়াজির-উদ-দৌলা : প্রতিমন্ত্রী। উজির উস-শুরা : প্রিভি কাউন্সেলর।
  • ওমানে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্রধাণমন্ত্রীকে উজির বলা হতো।
  • বাঙালি সালতানাতে, আঞ্চলিক অনেক কর্মকর্তাকেই উজির বা ওয়াজির বলা হতো।
  • আফগানিস্তানে, দুরানিদের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রিকে উজির-এ-আজম বা ওয়াজির-ই-আজম বলা হতো।
  • মাতারাম সাম্রাজ্যে, সুলতানের প্রধানমন্ত্রিকে বলা হতো উজির।

ইতিহাসের কয়েকজন বিখ্যাত উজির

[সম্পাদনা]
  • হারুন আল-রশিদের ইয়াহিয়া ইবনে খালিদ ।
  • ইরানের ইতিহাসে কাজার রাজবংশের আমির কবির।
  • ইরানের ইতিহাসে গজনভিদ রাজবংশের উজির হাসানা।
  • কর্ডোবার খিলাফতের আলমানজোর ছিলেন ইসলামিক স্পেনের প্রকৃত শাসক
  • সেলজুক ইতিহাসে মালিক শাহ প্রথম এর সময়কালের নিজাম আল-মুলক।
  • অটোমান সাম্রাজ্যের পারগালি ইব্রাহিম পাশা।
  • অটোমান সাম্রাজ্যের সোকোল্লু মেহমেদ পাশা।
  • অটোমান সাম্রাজ্যের কোপ্রলু মেহমেদ পাশা এবং তার ছেলে কোপ্রলু ফাজিল আহমেদ পাশা।

দাবার উপর প্রভাব

[সম্পাদনা]

শতরঞ্জে, যেখান থেকে আধুনিক দাবা বিকশিত হয়েছিল, আধুনিক দাবা "রাণী"-কে প্রায়শই ওয়াজির বা উজির বলা হত। বর্তমান অবধি, দাবাতে রানী শব্দটিকে এখনও মধ্যপ্রাচ্যের ভাষাতে ওয়াজির (vazīr) এবং এর আরও কিছু রুপে হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Vizier | Define Vizier at Dictionary.com"। Dictionary.reference.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-১২ 
  2. R. A. Nicholson, A Literary History of the Arabs, p. 257
  • Bianquis, Th. (2002). "Wazīr. I. In the Arab World 2. The Fāṭimid caliphate". In Bearman, P. J.; Bianquis, Th.; Bosworth, C. E.; van Donzel, E. & Heinrichs, W. P. (eds.). The Encyclopaedia of Islam, Second Edition. Volume XI: W–Z. Leiden: E. J. Brill. pp. 188–190. ISBN 978-90-04-12756-2.
  • Carmona, A. (2002). "Wazīr. I. In the Arab World 4. Muslim Spain". In Bearman, P. J.; Bianquis, Th.; Bosworth, C. E.; van Donzel, E. & Heinrichs, W. P. (eds.). The Encyclopaedia of Islam, Second Edition. Volume XI: W–Z. Leiden: E. J. Brill. pp. 191–192. ISBN 978-90-04-12756-2.
  • Eddé, Anne-Marie (2002). "Wazīr. I. In the Arab World 3. The Ayyūbids". In Bearman, P. J.; Bianquis, Th.; Bosworth, C. E.; van Donzel, E. & Heinrichs, W. P. (eds.). The Encyclopaedia of Islam, Second Edition. Volume XI: W–Z. Leiden: E. J. Brill. pp. 190–191. ISBN 978-90-04-12756-2.
  • İnalcık, Halil (2002). "Wazīr. III. In the Ottoman Empire". In Bearman, P. J.; Bianquis, Th.; Bosworth, C. E.; van Donzel, E. & Heinrichs, W. P. (eds.). The Encyclopaedia of Islam, Second Edition. Volume XI: W–Z. Leiden: E. J. Brill. pp. 194–197. ISBN 978-90-04-12756-2.
  • Zaman, Muhammad Qasim (2002). "Wazīr. I. In the Arab World 1. The ʿAbbāsids.". In Bearman, P. J.; Bianquis, Th.; Bosworth, C. E.; van Donzel, E. & Heinrichs, W. P. (eds.). The Encyclopaedia of Islam, Second Edition. Volume XI: W–Z. Leiden: E. J. Brill. pp. 185–188. ISBN 978-90-04-12756-2.

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]