উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | পূর্বস্থলী, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া | ১৯ ডিসেম্বর ১৮৭৩
মৃত্যু | ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬ | (বয়স ৭২)
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় |
পেশা | চিকিৎসক |
দাম্পত্য সঙ্গী | ননি বালা দেবী |
সন্তান | ফনিন্দ্র নাথ, ব্রহ্মচারী নির্মল, কুমার ব্রহ্মচারী। |
স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী (১৯ ডিসেম্বর ১৮৭৩ – ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬) ব্রিটিশ ভারতের একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক এবং বৈজ্ঞানিক ছিলেন। তিনি কালাজ্বরের ওষুধ ইউরিয়া স্টিবামাইন আবিষ্কার করেন।[১]
উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী ডাঃ নীলমণি ব্রহ্মচারী এবং শ্রীমতি সৌরভ সুন্দরী দেবীর ঘরে পূর্বস্থলী, পূর্ব বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের তারিখ ছিল ৭ই জুন, ১৮৭৫।[২] তবে জানা গেছে যে ব্রহ্মচারী তার পরবর্তী জীবনে তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯ ডিসেম্বর, ১৮৭৩ উল্লেখ করেছেন।[৩] তার পিতা নীলমণি ব্রহ্মচারী ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়েজের বেতনভুক্ত চিকিৎসক। তার নিবাস ছিল হুগলির মহেশতলায়।
ব্রহ্মচারীর প্রাথমিক শিক্ষা জামালপুরের ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ হাই স্কুলে হয়। জামালপুর থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, ব্রহ্মচারী হুগলি কলেজে (বর্তমানে হুগলি মহসিন কলেজ) যোগদান করেন, যেখান থেকে তিনি গণিত ও রসায়নে অনার্স সহ ১৮৯৩ সালে বিএ পাস করেন। সেসময় একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে দুটি বিষয়ে অনার্স পড়া সম্ভব ছিল। ব্রহ্মচারী তার বিএ পরীক্ষায় গণিতে মেধার প্রথম হন। যদিও ব্রহ্মচারী গণিতকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন এবং এই বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষতা দেখিয়েছিলেন, তবুও তিনি যথাক্রমে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও রসায়ন পড়ার জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজ এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ১৮৯৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়নে প্রথম শ্রেণীর সাথে এমএ ডিগ্রি পাস করেন।
স্যার আলেকজান্ডার পেডলার এবং আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তাকে রসায়ন বিদ্যা শিখিয়েছিলেন। ব্রহ্মচারী আচার্য রায়ের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিলেন। ব্রহ্মচারীও সমান অধ্যবসায়ের সাথে তার চিকিৎসা পেশা চালিয়েছিলেন। ১৮৯৯ সালে তিনি এল.এম.এস. ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরের বছর তিনি এম.বি. ডিগ্রি নেন। তার এম.বি. পরীক্ষায় ব্রহ্মচারী মেডিসিন এবং অস্ত্রোপচারতে প্রথম হন এবং যার জন্য সন্মানসরূপ তিনি কিছু পদক লাভ করেছিলেন। ১৯০২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। তখনকার দিনে এটি একটি বিরল পার্থক্য ছিল। এছাড়াও তিনি শারীরতত্ত্বে গবেষণার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। তার থিসিসের শিরোনাম ছিল স্টাডিজ ইন হেমোলাইসিস (রক্তের লোহিতকণিকার ভাঙ্গণ), একটি কাজ, যা আজও লোহিত রক্তকণিকার শারীরবৃত্তীয় এবং শারীরসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলির উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও তিনি কোট্স পদক, গ্রিফিথ পুরস্কার ও মিন্টো পদক পান।[১][৪]
১৮৯৯ খ্রিষ্ঠাব্দে তিনি প্রাদেশিক স্বাস্থ্যসেবায় যোগদান করেন। প্রথমে তিনি ঢাকা মেডিকেল স্কুল (বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ) এবং পরবর্তীতে ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে (বর্তমানে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ) চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯০৫ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে ভেষজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে এবং ১৯২৩ থেকে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অতিরিক্ত চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সরকারী কাজ থেকে অবসর নিয়ে কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজে ক্রান্তীয় ভেষজবিজ্ঞানের সাম্মানিক অধ্যাপক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-রসায়নের অধ্যাপক নিযুক্ত হন।[১][৪]
১৯২০ সালে উপেন্দ্রনাথ তৈরি করেন ইউরিয়া স্টিবামাইন। ১৯২২ সালে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চে ৮ জন কালাজ্বর রোগীকে সুস্থ করার বিবরণসহ উপেন্দ্রনাথের আবিষ্কারের কথা প্রকাশিত হয়। তিনি তার গবেষণা পত্রে ওষুধটির বিষাক্ততা সম্পর্কে আলোচনা করেন। ১৯২৩ সালের জুলাই মাসে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেটে ইউরিয়া স্টিবামাইন সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশিত হয়। ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে উপেন্দ্রনাথ আরো কিছু তথ্য প্রকাশ করেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেটে। কালাজ্বর ছাড়াও উপেন্দ্রনাথ ফাইলেরিয়া, ডায়াবেটিস, কুষ্ঠ, মেনিনজাইটিস প্রভৃতি নিয়েও গবেষণা করেছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্বন্ধে রচনাবলীর মধ্যে ট্রিটিজ অন কালাজ্বর বিখ্যাত।[১]
উপেন্দ্রনাথ ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটি অফ মেডিসিনের সভ্য, ইন্দোরে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের (১৯৩৬) সভাপতি এবং নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ব্রহ্মচারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন করে দেশী ওষুধ প্রস্তুত করেন।[১]
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে গ্রিফিথ মেমোরিয়াল পুরস্কারে সম্মানিত করেছিল। স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন তাকে মিন্টো পদক দিয়েছিল। এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল তাকে স্যার উইলিয়াম জোনস পদকে সম্মানিত করেছিল। এছাড়াও তিনি কাইজার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে রায়বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেছিল। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে উপেন্দ্রনাথ ব্র্হ্মচারী নাইট উপাধি পান। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তাকে মেডিসিনে নোবেল পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়েছিল।[৫]