উমর ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মারওয়ান আল-আকতা | |
---|---|
মালাতিয়ার আমির | |
রাজত্ব | ৮৩০ এর দশক - ৮৬৩ |
মৃত্যু | ৩ সেপ্টেম্বর ৮৬৩ পুরসুন |
ধর্ম | ইসলাম |
উমর ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মারওয়ান[১] বা আমর ইবনে উবাইদুল্লাহ ইবনে মারওয়ান,[২] পদবী আল-আকতা, "একহাত বিশিষ্ট" (μονοχεράρης, monocherares, (গ্রীক ভাষায়)), এছাড়াও বাইজেন্টাইন সূত্রে আমির বা আম্ব্রোস (গ্রিক: Ἄμερ or Ἄμβρος),[১] ছিলেন মালাতিয়ার একজন অর্ধ-স্বাধীন আরব আমির। ৮৩০-এর দশক থেকে ৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা সেপ্টেম্বর লালাকাওনের যুদ্ধে নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময় বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে তিনি বাইজেন্টাইনদের একজন শক্ত প্রতিপক্ষ ছিলেন।[৩] আরবি ও তুর্কি মহাকাব্যিক সাহিত্যে তিনি একজন প্রধান ব্যক্তি।
উমর আল-আকতা বনু সুলাইম গোত্রের সদস্য ছিলেন। মুসলিম বিজয়ের সময় এই গোত্র পশ্চিম আল-জাজিরাতে স্থায়ী হয়। মালাতিয়া ও জাজিরার সীমান্ত অঞ্চলে বাইজেন্টাইন এবং ককেসাস সীমান্তে খাজারিদের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[৪] তার পিতা আবদুল্লাহ বা উবাইদুল্লাহর সম্পর্কে বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তবে তার পিতাও মালাতিয়ার আমির ছিলেন। ৮১০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তার পুত্রের মুক্তির জন্য তাকে কামাচার বাইজেন্টাইন দুর্গ ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল।[৫]
৮৩০-এর দশকে উমর মালাতিয়ার গভর্নর হয়ে থাকতে পারেন। খলিফা আল-মুতাসিমের এমোরিয়াম অভিযানের সময় তিনি প্রথম আবির্ভূত হন। তার আগের বছর সীমান্তবর্তী আরব আমিরাতগুলোর বিরুদ্ধে বাইজেন্টাইন সম্রাট থিওফিলোসের অভিযানের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এই অভিযান চালানো হয়। এটি মালাতিয়ার অন্তর্গত ছিল এবং আক্রমণে এই অঞ্চল ধ্বংস ও জনশূন্য হয়ে পড়ে।[৬] এমোরিয়াম অভিযানের সময় ৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে আনজেনের যুদ্ধে সম্রাট থিওফিলোসের বিরুদ্ধে তিনি অংশ নেন। এই যুদ্ধে আরবরা জয় লাভ করেছিল।[১][৬] ৮৪০-এর দশকে তিনি বাইজেন্টিয়াম থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত পলিসিয়ানদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাদেরকে দিভরিগি, আমারা ও আরগাওয়ান দুর্গের আশেপাশে আশ্রয় স্থান বরাদ্দ দেয়া হয়। পলিসিয়ানদের নেতা এসময় আলাদা ক্ষমতা পান এবং বাইজেন্টিয়ামের বিরুদ্ধে অভিযানে উমরকে সহায়তা করেন এবং স্বাধীনভাবে নিজেও অভিযান চালান[৩][৬][৭] ৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দে একটি প্রধান অভিযানের সময় বাইজেন্টাইন প্রধানমন্ত্রী থিওকটিসটসের নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে উমরের বাহিনী মাওরোপোটামাসের যুদ্ধে পরাজিত করে। ৮৪০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি পার্শ্ববর্তী আর্মেনীয় নেতা স্কেলেরোসকে দমন করেন।[১][৮]
৮৫০ এর দশকে বাইজেন্টাইন সম্রাট তৃতীয় মাইকেলের নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে উমর পরাজিত করেছিলেন। এছাড়াও তিনি বাইজেন্টিয়ামে কয়েকটি সফল অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তার মধ্যে একটি অভিযানের সময় তিনি বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনীর ঘাটি বিথিনিয়ার মালাগিনা পর্যন্ত পৌঁছান।[১] তবে ৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে সেনাপতি পেট্রোনাসের পরিচালিত পাল্টা অভিযান থামাতে ব্যর্থ হন। এই অভিযানে বাইজেন্টাইনরা দিয়ারবাকির পর্যন্ত আসে এবং অনেককে বন্দী করে।[৯]
৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে উমর আনাতোলিয়া অভিযান চালান এবং কৃষ্ণসাগরের বন্দর সিনোপ পৌঁছান। এতে প্রায় ১২,০০০টি গবাদিপশু তাদের অধিকারে আসে।[৯][১০] তিন বছর পর তিনি সিলিসিয়ান গিরিপথ দিয়ে আনাতোলিয়া আক্রমণকারী প্রধান আব্বাসীয় বাহিনীতে অংশ নেন। মূল বাহিনী থেকে বের হয়ে তিনি সম্রাট তৃতীয় মাইকেলের বাহিনীকে মারজ আল-উসকুফে প্রতিহত করেন এবং তিনি ও তার সৈনিকরা উত্তরে বন্দর নগরী এমিওসোস দখল করেন। ফিরে আসার সময় বাইজেন্টাইনরা তাকে ঘিরে ফেলে এবং ৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা সেপ্টেম্বর তিনি লালাকাওনের যুদ্ধে তিনি নিহত হন। তার সেনাবাহিনীর একটি অংশ তার পুত্রের নেতৃত্বে ফেরত আসতে সক্ষম হয়। কিন্তু কারসিয়ানন জেলার কমান্ডার তাদের পরাজিত ও বন্দী করেন।[১][৩][১১][১২]আল-তাবারির মত অনুযায়ী উমর ও আরেক গণ্যমান্য নেতা আলি ইবনে ইয়াহিয়া আল-আরমানির মৃত্যুসংবাদ ইরাকে পৌঁছানোর পর বাগদাদ, সামারা ও অন্যান্য শহরে আব্বাসীয় সরকারের অক্ষমতার কারণে জনতার মধ্যে অসন্তোষ দানা বাধে।[১৩]
তার মৃত্যুর পর মালাতিয়া আর বাইজেন্টাইনদের জন্য সামরিক হুমকি ছিল না। তবে এই শহর আরো ৭০ বছর মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। উমরের পুত্র আবু আবদুল্লাহ ও নাতি আবু হাফস ইবনে আমর এরপর তার উত্তরাধিকারী হন। আবু হাফস ৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন সেনাপতি জন কোকোয়াসের কাছে শহরের সমর্পণ করেন।[১][৬][১৪]
আরব-বাইজেন্টাইন যুদ্ধের অন্য অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির মত উমরও আরব ও বাইজেন্টাইন কিংবদন্তিতে স্থান পেয়েছেন। আরবি মহাকাব্যিক সাহিত্য দিলহামাতে তিনি একজন প্রধান চরিত্র। তবে বনু সুলাইমের প্রতিপক্ষ বনু কিলাবের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণে এতে তার ছোট করা হয়েছে।[১৫] তার সংক্রান্ত গল্প আরব্য রজনীর গল্পে উমর ইবনুল নুমান ও তার ছেলের গল্পকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও উমর আল-আকতা তুর্কি মহাকাব্যিক সাহিত্য বাত্তাল গাজিতে স্থান পেয়েছেন। বাত্তাল গাজি উমাইয়া সেনাপতি আবদুল্লাহ আল-বাত্তালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এবং তিনিও দিলহামার একজন প্রধান চরিত্র।[১৬][১৭]
বাইজেন্টাইন সাহিত্যেও উমর আল-আকতার উল্লেখ রয়েছে।[৫][১৮] গ্রীক পণ্ডিত জি. ভেলোডিয়াসের মত হল উমর আল-আকতা সং অফ আরমোরিস এর নামে উল্লেখিত ব্যক্তি। জার্মান পণ্ডিত হান্স-জর্জ বিক ভিন্নমত প্রকাশ করেন তবে তার মতে একই গল্পে উল্লেখিত "স্বল্প অস্ত্রধারী" আরব নেতার কাহিনী উমরের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।[১৯] ১০ম শতাব্দীতে আল-মাসুদি তার মুরুজ আয-যাহাব ওয়া মাআদিন আল-জাওয়াহির গ্রন্থে লিখেছেন যে সম্মান প্রদর্শনের জন্য যেসব মুসলিমের ছবি বাইজেন্টাইন গির্জায় চিত্রায়িত হয়েছিল উমর আল-আকতা তাদের অন্যতম।[৫]
অজ্ঞাত | মালাতিয়ার আমির ৮৩০ এর দশক - ৮৬৩ |
উত্তরসূরী আবু আবদুল্লাহ ইবনে উমর আল-আকতা |