উমেশচন্দ্র ব্যানার্জী | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২১ জুলাই ১৯০৬ | (বয়স ৬১)
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | ওরিয়েন্টাল সেমিনারি হিন্দু স্কুল |
পেশা | আইনজীবী |
পরিচিতির কারণ | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
দাম্পত্য সঙ্গী | হেমাঙ্গিনী মতিলাল (বি. ১৮৫৯) |
উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (অথবা উমেশ চন্দ্র ব্যানার্জী বাঙালি নামগুলির বর্তমান ইংরেজি বানানবিধি দ্বারা; ২৯ ডিসেম্বর ১৮৪৪ – ২১ জুলাই ১৯০৬) ভারতীয় ব্যারিস্টার ছিলেন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি ছিলেন।
উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৪৪ সালে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়, জন্মগ্রহণ করেন।[১] তিনি একটি রাঢ়ী শ্রেণীর কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান৷ এই ব্রাহ্মণ পরিবারের আদিবাস অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার বাগাণ্ডা৷ উমেশচন্দ্রের পিতামহ পীতাম্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম কলকাতায় বসতি গড়েন৷ উমেশচন্দ্র তাঁর মায়ের বংশের দিক থেকে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ত্রিবেণীর বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের বংশধর৷[২]
উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ওরিয়েন্টাল সেমিনারী এবং হিন্দু স্কুলে পড়াশোনা করেন।[১] ১৮৫৯ সালে তিনি হেমঙ্গিনী মতিলালের সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। ১৮৬২ সালে কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নিদের সংস্থা ডাব্লিউ পি গিল্যান্ডার্সে, একজন করণিক হিসাবে যোগ দেন। এই পদে থাকাকালীন তিনি আইনের ভাল জ্ঞান অর্জন করেছিলেন, যা তার পরবর্তী পেশায় তাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছিল। ১৮৬৪ সালে বোম্বের আরজে জিজিবাইয়ের থেকে বৃত্তি লাভের মাধ্যমে তাকে ইংল্যান্ডে পাঠান হয়।[১] যেখানে তিনি মিডল টেম্পলে যোগ দেন এবং ১৮৬৭ সালের জুন মাসে আদালতে ডাক পান।[৩] ১৮৬৮ সালে কলকাতায় ফিরে আসার পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার-এ-আইন, স্যার চার্লস পলের পৃষ্ঠপোষকতা পান।[১] আরেকজন ব্যারিস্টার, জে. পি. কেনেডিও তাকে একজন আইনজীবী হিসেবে, তার খ্যাতি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছিলেন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি হাইকোর্টে ব্যারিস্টারের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। তিনি স্থায়ী পরামর্শ হিসাবে কর্মরত প্রথম ভারতীয় ছিলেন, সেই ক্ষমতাবলে যথাক্রমে ১৮৮২, ১৮৮৪, ১৮৮৬–৮৭ ও ১৮৮৩ সালে তিনি চারবার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি কলকাতা হাইকোর্টে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে রক্ষা করেছিলেন, যখন তার বিরুদ্ধে বিখ্যাত আদালত অবমাননা মামলা হয়েছিল। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী ছিলেন এবং সেখানকার আইন অনুষদের সভাপতি ছিলেন[১] এবং এই পদে প্রায়ই এটি আইন পরিষদের প্রতিনিধিত্ব করেন।[৩] ১৯০১ সালে তিনি কলকাতা আদালত থেকে অবসর গ্রহণ করেন।[১] তাঁর কন্যা জানকী ব্যানার্জী ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউহাম কলেজে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা ও শারীরবৃত্তবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন।[৪]
১৮৮৫ সালে[৩] ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত্য তিনি মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন, যে সভায় ৭২ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। [৫] ১৮৮৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে দাদাভাই নওরোজির সভাপতিত্বে তিনি প্রতিটি প্রদেশে কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যাতে তার কাজ আরও ভালোভাবে সমন্বয় করা যায় এবং এই উপলক্ষ্যে তিনি প্রস্তাব রাখেন, যে কংগ্রেসের উচিত শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে নজর সীমাবদ্ধ করা, অন্যান্য সংস্থার উপর সামাজিক সংস্কারের সমস্যার দায়ভার রেখে। ১৮৯২ সালে এলাহাবাদে তিনি আবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন[৩] যেখানে তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য ভারতের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে এই অবস্থানকে অস্বীকার করেছিলেন।[৬] এরপর তিনি ব্রিটেনে চলে যান এবং প্রিভি কাউন্সিলে প্র্যাকটিস শুরু করেন।[৩] তিনি লন্ডনে কংগ্রেসের ব্রিটিশ সমিতি এবং তার জার্নালের অর্থায়ন করেন।[৩] ১৮৬৫ সালে দাদাভাই নওরোজি লন্ডন ইন্ডিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং উমেশচন্দ্রকে তার সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৮৬৬ সালের ডিসেম্বরে, নওরোজি সমিতি বন্ধ করে দিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন।[৭] যখন উমেশচন্দ্র, কংগ্রেসের সভাপতি হন, নওরোজী তার সাথে ছিলেন, তখন ইয়ার্ডলি নর্টন এবং উইলিয়াম ডিগবি লন্ডনে কংগ্রেসের একটি শাখা দ্য কংগ্রেস পলিটিক্যাল এজেন্সি খোলেন।[৭] তিনি ক্রোয়েডনে বসবাস করতেন এবং তার জন্মস্থান খিদিরপুরের পরে তার বাসভবনের নামকরণ করেন।[৭] ১৮৮৫ সালে ৪ আগস্ট ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন উমেশচন্দ্র।[৮] ১৮৯২ সালে লিবারেল পার্টি তাকে ব্যারো-ইন-ফার্নেস আসনের প্রার্থী করে। উমেশচন্দ্রকে পরাজিত করেন চার্লস কায়জার নামক একজন টরি প্রার্থী। একই নির্বাচনে নওরোজী ফিনসবারি কেন্দ্রীয় নির্বাচনী এলাকা জিতেছিলেন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে কেবল ৫ ভোটের অতি অল্প তফাতে পরাজিত করেছিলেন। নওরোজি ব্রিটিশ সংসদের প্রথম ভারতীয় সদস্য হলেন। ১৮৯৩ সালে, নওরোজি, উমেশচন্দ্র এবং বদরুদ্দীন তায়াবজি ইংল্যান্ডের ভারতীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করেন।[৭]
পূর্বসূরী (কেউ) |
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ১৮৮৫ |
উত্তরসূরী দাদাভাই নওরোজি |
পূর্বসূরী আনন্দচারলু |
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ১৮৯২ |
উত্তরসূরী দাদাভাই নওরোজি |