উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাস |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
ইতিহাস অধ্যয়ন |
তুরস্কের ইতিহাস |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
তুরস্ক প্রবেশদ্বার |
উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম উসমানের দ্বারা। ১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ যখন কনস্টান্টিনোপল জয় করেন তখন রাষ্ট্রটি একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। ১৬শ শতাব্দীতে সুলতান প্রথম সেলিম এর কাছে আব্বাসীয় খলিফা কর্তৃক ইসলামী খেলাফত হস্তান্তর করা হয় শুরু হয় উসমানীয় খেলাফত এবং তার পরে তার ছেলে সুলতান প্রথম সুলাইমানের অধীনে সাম্রাজ্যটি সমৃদ্ধির চূড়ায় পৌছেছিল, তখন এর সীমানা ছিল পূর্বে পারস্য উপসাগর থেকে ইউরোপের বলকান অঞ্চল, উত্তর-পূর্বে হাঙ্গেরি, উত্তর কৃষ্ণ সাগর রাশিয়া,ককেসাস, পশ্চিমে ইরান,মধ্যপ্রাচ্য ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন,লেবানন, জর্ডান, মক্কা, মদিনা এবং দক্ষিণে মিশর থেকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত। এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে মিত্রশক্তির ও ব্রিটিশদের মিত্র আরব জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহীদের কাছে পরাজয়ের মাধ্যমে। ১৯২২ সালে তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের ফলে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি উসমানীয় সাম্রাজ্য ও ইসলামী খেলাফত বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
সেলজুক রুম সালতানাতের পতনের পর আনাতোলিয়া বেশ কিছু স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে যাদেরকে গাজি আমিরাত বলা হত। ১৩০০ সাল নাগাদ দুর্বল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য তুর্কি অধ্যুষিত এই অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা হারায়। কয়েকটি আমিরাতের মাঝে পশ্চিম আনাতোলিয়ার একটি আমিরাত ছিল আরতুগ্রুল গাজীর পুত্র প্রথম উসমানের।[১] তারা নামানুসারেই এই সাম্রাজ্যকে উসমানীয় সাম্রাজ্য বা উসমানীয় সাম্রাজ্য বলা হয়।"উসমানের স্বপ্ন" নামের একটি কিংবদন্তীর কথা বলা হয়ে থাকে যার মাধ্যমে তরুণ উসমান পরবর্তীতে একটি সাম্রাজ্য তৈরি করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিল[২](তার স্বপ্ন অনুসারে, সাম্রাজ্য ছিল একটি বড় গাছ যার শিকড় তিনটি মহাদেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং যার শাখাগুলি আকাশকে আচ্ছাদিত করেছিল)। তার স্বপ্নমতে, উসমানের সাম্রাজ্যটি ছিল সেই গাছ, যার শিকড় থেকে চারটি নদী-টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস, নীল এবং দানিউব জারি করেছিল।[২] উপরন্তু, গাছটি চারটি পর্বতশ্রেণী, ককেসাস, তোরোস, এটলাস এবং বলকান রেঞ্জকে ছায়ায় আচ্ছাদিত করেছে।[২] সুলতান হিসাবে তার রাজত্বকালে, উসমান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রান্ত পর্যন্ত তুর্কি বসতির সীমানা বিস্তৃত করেন।
এই সময়ের মধ্যে, একটি আনুষ্ঠানিক উসমানীয় সরকার তৈরি হয়েছিল যার প্রতিষ্ঠানগুলি সাম্রাজ্যের জীবনের উপর ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হবে।
উসমানের মৃত্যুর পরের শতাব্দীতে, উসমানীয় শাসন পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও বলকান এলাকাগুলিতে বিস্তৃত হতে শুরু করে। উসমানের ছেলে ওরহান ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে বুরসা শহর দখল করেন এবং এটি উসমানীয় রাষ্ট্রের নতুন রাজধানী তৈরি করেন। বুরসার পতনের ফলে উত্তর-পশ্চিম আনাতোলিয়ায় বাইজেন্টাইন নিয়ন্ত্রণ হারায়।
১৩৮৭ সালে ভেনিসিয়ানদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর সেলোনিকা জয় করে নেয়া হয়। ১৩৮৯ সালে কসোভো জয় করার পর অত্র অঞ্চলে সার্বিয়ান শক্তির সমাপ্তি ঘটে ফলে ইউরোপের দিকে উসমানীয়দের অগ্রযাত্রা সহজ হয়।[৩] ১৩৯৬ সালে নিকোপোলিসের যুদ্ধকে মধ্যযুগের শেষ ব্যাপকভিত্তিক ক্রুসেড হিসেবে দেখা হয়। এই যুদ্ধে উসমানীয়রা জয়ী হয়েছিল।[৪] বলকানে তুর্কিদের অগ্রযাত্রার সাথে কনস্টান্টিনোপল জয় করা কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। কনস্টান্টিনোপলের চতুর্পাশ্বের সকল এলাকা এসময় উসমানীয়রা নিয়ন্ত্রণ করত, যেগুলো ছিল সাবেক বাইজেন্টাইন এলাকা। তুর্কি-মঙ্গোলিয়ান সুলতান তৈমুর আনাতোলিয়া আক্রমণ করলে বাইজেন্টাইনরা সাময়িকভাবে উসমানীয়দের হাত থেকে রেহাই পায়। ১৪০২ সালে আঙ্কারার যুদ্ধে তৈমুর লং উসমানীয়দের পরাজিত করেন এবং সুলতান প্রথম বায়েজিদকে বন্দী করা হয়। ফলে সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বায়েজিদের সন্তানরা উত্তরাধিকার দাবি করলে ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ ১৪০২ থেকে ১৪১৩ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। শেষপর্যন্ত প্রথম মুহাম্মদ সুলতান হন এবং উসমানীয়দের ক্ষমতা পুনপ্রতিষ্ঠিত করেন।[৫]
১৪০২ সালে বলকানে কিছু এলাকা যেমন সেলোনিকা, মেসিডোনিয়া ও কসোভো উসমানীয়দের হাতছাড়া হয়। তবে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ ১৪৩০ এর দশক থেকে ১৪৫০ এর দশকের মধ্যে তা পুনরুদ্ধার করেন। ১৪৪৪ সালের ১০ নভেম্বর তিনি পোল্যান্ডের তৃতীয় লাডিস্লো ও জন হানয়াডির অধীন হাঙ্গেরিয়ান, পোলিশ ও ওয়ালিচিয়ান বাহিনীকে ভারনার যুদ্ধে পরাজিত করেন। এটি ভারনার ক্রুসেডের শেষ যুদ্ধ। তবে আলবেনীয়রা স্কেনডারবার্গের অধীনে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখে।[৬][৭] চার বছর পর, তুর্কিদের উপর আক্রমণ করার জন্য জন হানয়াডি হাঙ্গেরিয়ান ও ওয়ালাচিয়ানদের আরেকটি বাহিনী প্রস্তুত করেন তবে ১৪৪৮ সালে কসোভোর দ্বিতীয় যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন।[৮]
দ্বিতীয় মুহাম্মদ, রাষ্ট্র ও সামরিক বাহিনী পুনর্গঠন করেন এবং মাত্র ২১ বছর বয়সে ১৪৫৩ সালের সালের ২৯শে মে কনস্টান্টিনোপল দখল করে তার সামরিক দক্ষতা প্রদর্শন করেন।
১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মদ দ্বারা কনস্টান্টিনোপলে উসমানীয় বিজয়ের ফলে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সর্বাধিক ক্ষমতা ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের। কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর মুহাম্মদ অর্থোডক্স চার্চ প্রধানের সাথে দেখা করে উসমানীয়দের প্রতি আনুগত্যের বিনিময়ে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চকে তার কার্যক্রম চালু রাখার অনুমতি দেয়া হয়।[৯] পশ্চিম ইউরোপের রাজ্যগুলোর সাথে বাইজেন্টাইনদের সম্পর্ক খারাপ ছিল বিধায় অধিকাংশ অর্থোডক্স জনগণ ভেনেসিয়ানদের পরিবর্তে উসমানীয়দের অধীনে থাকাকে সুবিধাজনক মনে করে।[৯]
১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপলকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী বানিয়ে দ্বিতীয় মুহাম্মদ সুলতান-ই-রুম(আক্ষরিক অর্থে রোমের সম্রাট) উপাধি ধারণ করেন। এই দাবিকে বাস্তবে রুপদানের জন্য সাবেক রোমান সাম্রাজ্যের পশ্চিমের রাজধানী রোমকে বিজয় করার উদ্দেশ্যে প্রচারণা শুরু করেন। তার এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি অনেক বছর অতিবাহিত অ্যাড্রিয়াটিক সাগর এর সুরক্ষিত অবস্থানের উপর যেমন আলবেনীয় ভেনেটা, এবং তারপর অব্যাহত রাখেন ২৮ জুলাই ১৪৮০ তে অটরান্টোতে উসমানীয় আক্রমণ এবং এপুলিয়া। তুর্কিরা প্রায় এক বছরের মত অটরান্টো ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করে, কিন্তু ৩ মে ১৪৮১ তে দ্বিতীয় মুহাম্মদ এর মৃত্যুর পর নতুন সৈন্যদল দ্বারা ইতালীয় উপদ্বীপে আরও ভেতরে আক্রমণ করার পরিকল্পনা বাতিল করা হয় এবং অবশিষ্ট উসমানীয় বাহিনী পূর্ব অ্যাড্রিয়াটিক সাগর এ ফিরে আসে।