ব্যাংকিং |
---|
আর্থিক সেবা বিষয়ক সিরিজের অংশ |
এটিএম কার্ড (ইংরেজি: ATM card) হচ্ছে এক ধরনের পেমেন্ট কার্ড বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যু করা ডেডিকেটেড পেমেন্ট কার্ড। এই কার্ডের মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার ব্যাংকের অথবা অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে পারে। এছাড়াও, এই কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন কেনাকাটা ও ইউটিলিটি বিল যেমন: গ্যাস বিল, পানি বিল, মুদি দোকানের বিল, ডিপার্টমেন্ট স্টোরের বিল ইত্যাদি মূল্য পরিশোধ করা যায়। সচরাচর ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডকে এটিএম কার্ড বলা হলেও এটি এক নয়। ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড দিয়ে এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করা যায় বিধায় এমনটা প্রচলিত। মূলত ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড এবং এটিএম কার্ড পেমেন্ট কার্ডের তিনটি আলাদা ধরন। এটিএম কার্ড হচ্ছে পেমেন্ট কার্ডের সাইজ এবং স্টাইলের এক ধরনের প্লাস্টিক কার্ড যা একটি চৌম্বকীয় স্ট্রাইপ এবং/অথবা চিপসহ একটি প্লাস্টিকের স্মার্ট কার্ড যাতে একটি অনন্য কার্ড নম্বর এবং কিছু নিরাপত্তা তথ্য যেমন: মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ এবং সিভিভিসি (সিভিভি) উল্লেখ থাকে। এটিএম কার্ড বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন: ব্যাংক কার্ড, ম্যাক (মানি অ্যাক্সেস কার্ড), ক্লায়েন্ট কার্ড, কী কার্ড বা ক্যাশ কার্ড ইত্যাদি। অন্যান্য পেমেন্ট কার্ড, যেমন: ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড এটিএম কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা যায়। তবে চার্জ কার্ড এবং মালিকানাধীন কার্ড এটিএম কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। এটিএম থেকে নগদ অর্থ উত্তোলনের জন্য ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারকে বিক্রয় লেনদেন পয়েন্টে ভিন্নভাবে বিবেচনা করা হয়, সাধারণত, এক্ষেত্রে নগদ উত্তোলনের তারিখ থেকে সুদ চার্জ করা হয়। আন্তঃব্যাংক নেটওয়ার্কের সাহায্যে কার্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য বেসরকারি অপারেটর এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এটিএম থেকে এটিএম কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করা যায়।
১৯৬৭ সালে লন্ডনের বার্কলেস সর্বপ্রথম এটিএম কার্ড ইস্যু করে।[১]
এটিএম কার্ডের আকার আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে (ISO/IEC 7812) অন্যান্য পেমেন্ট কার্ড যেমন: ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের মতই ৮৫.৬০ মিমি × ৫৩.৯৮ মিমি (৩.৩৭০ ইঞ্চি × ২.১২৫ ইঞ্চি) এবং ২.৮৮–৩.৪৮ মিমি ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার কোণ বিশিষ্ট। কার্ডের উপর একটি মুদ্রিত বা এমবসড পেমেন্ট কার্ড নম্বর রয়েছে যা ISO/IEC 7812 নাম্বারিং স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কার্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এটিএমগুলোতে এটিএম কার্ড ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। এক প্রতিষ্ঠানের কার্ড গ্রাহক অন্য প্রতিষ্ঠানের এটিএম মেশিন থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ওই গ্রাহককে একটা নির্দিষ্ট পরিমান চার্জ দিতে হয়। আন্তঃব্যাংক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এইসকল লেনদেনের হিসাব রাখা ও সমন্বয় করা হয়।
দোকানে কেনাকাটা বা রিফান্ডের জন্য এটিএম কার্ডের ব্যবহার শুধুমাত্র পূর্ব-অনুমোদিত খুচরা বিক্রেতাদের জন্য অনুমোদিত। এটি অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না।
অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে টেলিফোন বা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এটিএম কার্ডের ব্যবহার করে লেনদেন করা যেতে পারে। যেমন অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স অনুসন্ধান, ইলেকট্রনিক বিল পেমেন্ট এবং সীমিত কিছু ক্ষেত্রে অনলাইন কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা।[২]
এটিএম কার্ড নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে। ইন্টারলিঙ্ক বা আন্তঃব্যাংক নেটওয়ার্ক অনেকগুলো এটিএম নেটওয়ার্কের একটি উদাহরণ।
কানাডার ইন্টারাক এবং মাস্টারকার্ডের মায়েস্ট্রো হল এটিএম নেটওয়ার্কের উদাহরণ যা পয়েন্ট-অফ-সেল মেশিনের সাথে ব্যাংক হিসাবসমুহ সংযুক্ত করে।
কিছু ডেবিট কার্ড নেটওয়ার্ক যেমন স্টার (ইন্টারব্যাংক নেটওয়ার্ক), ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব সিঙ্গাপুরের (ডিবিএস), নেটওয়ার্ক ফর ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সফার (এনইটিএস) পূর্ণাঙ্গ ডেবিট কার্ড নেটওয়ার্কে পরিণত হওয়ার আগে এটিএম কার্ড নেটওয়ার্ক হিসাবে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল।
ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপসহ কার্ডের অবৈধ অনুলিপি বৃদ্ধির কারণে ২০০৩ সালে ইউরোপীয় পেমেন্ট কাউন্সিল একটি কার্ড জালিয়াতি প্রতিরোধ টাস্ক ফোর্স গঠন করে। টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ অনুসারে ২০১০ সালের শেষ নাগাদ সকল কার্ডে চিপ এবং পিন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয় এবং সকল এটিএম এবং পয়েন্ট-অফ-সেল মেশিন চিপ এবং পিনযুক্ত কার্ড ব্যবহারের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন ও উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দেয়।[৩][৪]