এড ওয়ারেন | |
---|---|
জন্ম | এডওয়ার্ড ওয়ারেন মাইনি ৭ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ ব্রিজপোর্ট, কানেটিকাট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু | ২৩ আগস্ট ২০০৬[১] মনরো, কানেটিকাট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৭৯)
পেশা |
|
প্রতিষ্ঠান | নিউ ইংল্যান্ড সোসাইটি ফর সাইকিক রিসার্চ |
দাম্পত্য সঙ্গী | লরেইন ওয়ারেন (বি. ১৯৪৫) |
সন্তান | ১ |
ওয়েবসাইট | warrens |
লরেইন ওয়ারেন | |
---|---|
জন্ম | লরেইন রিটা মোরান ৩১ জানুয়ারি ১৯২৭ ব্রিজপোর্ট, কানেটিকাট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু | ১৮ এপ্রিল ২০১৯[২] মনরো, কানেটিকাট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৯২)
পেশা | |
প্রতিষ্ঠান | নিউ ইংল্যান্ড সোসাইটি ফর সাইকিক রিসার্চ |
দাম্পত্য সঙ্গী | এড ওয়ারেন (বি. ১৯৪৫; মৃ. ২০০৬) |
সন্তান | ১ |
ওয়েবসাইট | warrens |
স্বভাবাতীত ঘটনাবলী |
---|
বিষয়ক একটি ধারাবাহিকের অংশ |
এডওয়ার্ড ওয়ারেন মাইনি (৭ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ – ২৩ আগস্ট ২০০৬)[১] ও লরেইন রিটা ওয়ারেন (জন্মগত পদবি: মোরান; ৩১ জানুয়ারি ১৯২৭ – ১৮ এপ্রিল ২০১৯)[৩] ছিলেন মার্কিন আধিদৈবিক অনুসন্ধানী ও লেখক দম্পতি। তারা বেশ কিছু বিখ্যাত ও তথাকথিত ভৌতিক উপস্থিতির ঘটনা অনুসন্ধান করেন। এডওয়ার্ড ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত শয়তানবিদ, লেখক ও প্রভাষক। লরেইন ক্লেয়ারভয়েন্ট ও ঈষৎ সম্মোহিত মাধ্যম হিসেবে প্রশিক্ষিত হয়ে তার স্বামী এডওয়ার্ডের সাথে কাজ করতেন।
১৯৫২ সালে ওয়ারেন দম্পতি নিউ ইংল্যান্ডের সবচেয়ে প্রাচীন ভৌতিক ঘটনা অনুসন্ধানী দল “নিউ ইংল্যান্ড সোসাইটি ফর সাইকিক রিসার্চ” (এনইএসপিআর) প্রতিষ্ঠা করেন।[৪] তারা বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা এবং ভৌতিক ঘটনা অনুসন্ধানে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিভিন্ন বই লিখেছেন। দাবি অনুসারে তারা তাদের জীবনে অন্তত ১০,০০০ ঘটনা অনুসন্ধান করেছেন।[৫] অ্যামিটিভিলের ভৌতিক ঘটনার প্রথম দিককার অনুসন্ধানকারীদের মধ্যে তারা অন্যতম। ওয়ারেন দম্পতি, এনইএসপিআরের ওয়েবসাইট, ভিভিগ্লাম মাগাজিন ও অন্যান্য আরও তথ্যসূত্রমতে, এনইএসপিআর তাদের অনুসন্ধানে চিকিৎসক, গবেষক, পুলিশ কর্মকর্তা, সেবিকা, কলেজ শিক্ষার্থী ও ধর্মযাজক প্রভৃতি বিভিন্ন পেশাজীবীর সহায়তা নেয়।[৬][৭][৮]
ওয়ারেন দম্পতির বিখ্যাত বেশকিছু ঘটনা অবলম্বনে কিংবা অনুপ্রাণনায় অনেক চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ধারাবাহিক, তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে অ্যামিটিভিলে হরর ধারাবাহিক ও দ্য কনজ্যুরিং ইউনিভার্সের চলচ্চিত্রসমূহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৯]
ভৌতিক সন্দেহবাদী পেরি ডিঅ্যাঞ্জেলিস ও স্টিভেন নভেলা ওয়ারেন দম্পতির অনুসন্ধানী প্রমাণগুলো পুনর্নিরীক্ষা করেন এবং এগুলোকে “ব্লার্নি” (blarney, আবোলতাবোল কথা) বলে উল্লেখ করেন।[১০] সন্দেহবাদী গবেষক জো নিকেল ও বেঞ্জামিন র্যাডফোর্ড সিদ্ধান্তে আসেন যে অ্যামিটিভিলে ও স্নিডেকার পরিবারের বিখ্যাত দুইটি ভৌতিক ঘটনা সাজানো এবং কখনো ঘটেইনি।[১১][১২][১৩]
ওয়ারেন দম্পতির ভাষ্যমতে, ১৯৬৮ সালে দুইজন তাদের জানায় যে তাদের র্যাগেডি অ্যান পুতুলে অ্যানাবেল হিগিনস নামের এক কমবয়সী মেয়ের আত্মা ভর করেছে। ওয়ারেন দম্পতি জানায় যে তাদের পুতুলটি “কোনো অমানবীয় সত্তা দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে।” পুতুলটি তারা সংগ্রহ করে এবং তাদের পারিবারিক “অকাল্ট জাদুঘর”-এ উঠিয়ে রাখে। এই পুতুলকে উপজীব্য করে দ্য কনজ্যুরিং ইউনিভার্সের একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে এই পুতুলটিকে দেখা গেছে।[১৪]
১৯৭১ সালে ওয়ারেন দম্পতি দাবি করেন যে, রোড আইল্যান্ডের হ্যারিসভিলের পেরন পরিবারের বাড়িতে ভৌতিক কর্মকাণ্ড ঘটতে থাকে। তাদের দাবি অনুসারে উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে ওই বাড়িতে কোনো জাদুকরী ডাইনির বসবাস করতো। ওয়ারেন দম্পতির ভাষ্যমতে, বাথসেবা শেরম্যান ওই ভূ-খণ্ডকে অভিশাপ দিয়েছিল, যার কারণে সেখানে যে-ই থাকতো, তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হতো। এই কাহিনি অনুসারে ২০১৩ সালে দ্য কনজ্যুরিং চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। লরেইন ওয়ারেন এই চলচ্চিত্রে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন এবং ক্ষণিক আবির্ভূত হন। ইউএসএ টুডে-এর এক প্রতিবেদক চলচ্চিত্রের প্রকৃত প্রেক্ষাপট ধারণ করেন।[১৫][১৬]
ওয়ারেন দম্পতি ১৯৭৫ সালে অ্যামিটিভিলের ভৌতিক ঘটনাদির সাথে জড়িত হওয়ার জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত। নিউইয়র্কের অ্যামিটিভিলের এক দম্পতি জর্জ ও ক্যাথি লুৎস তাদের বাড়িতে হিংস্র, শয়তানি কোনো শক্তির উপস্থিতি বুঝতে পারেন। এটি এত শক্তিশালী ছিল যে তারা তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন। দি অ্যামিটিভিলে হরর কনস্পিরেসি গ্রন্থের লেখক স্টিফেন ও রোজেইন কাপ্লান একে “হোক্স” বা “ধাপ্পা” দাবি করে।[১৭] লরেইন ওয়ারেন দি এক্সপ্রেস-টাইমস-এর সাংবাদিকের কাছে দাবি করেন এই ঘটনা মোটেও ধাপ্পা নয়। অ্যামিটিভিলের ঘটনা অনুসারে ১৯৭৭ সালে একটি গ্রন্থ বের হয় এবং একই নামে ১৯৭৯ ও ২০০৫ সালে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। পরবর্তীতে এই ঘটনাকে উপজীব্য করে একটি ধারাবাহিক চলচ্চিত্র-ও নির্মিত হয়। ওয়ারেন দম্পতির বর্ণনা করা মূল ঘটনার অংশবিশেষ ২০১৬ সালের চলচ্চিত্র দ্য কনজ্যুরিং ২-এর শুরুতে দেখানো হয়। বেনজামিন রেডফোর্ডের মতে অ্যামিটিভিলের ঘটনা “প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রামাণিক বিষয়বস্তু দ্বারা প্রমাণিত নয়”।[১২] ১৯৭৯ সালে আইনজীবী উইলিয়াম ওয়েবার বিবৃতি দিয়ে বলেন, যে তিনি, জে অ্যানসন ও অধিবাসীরা আড্ডায় এই গল্প “ফেঁদেছিলেন”।[১৮][১৩]
১৯৭৭ সালে ওয়ারেন দম্পতি লন্ডনের উপকণ্ঠে উৎপাতকারী ভূতের অনুসন্ধান শুরু করেন। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী একে “আদর-চাওয়া” শিশুদের বদবুদ্ধি বলে উড়িয়ে দিলেও, ওয়ারেন দম্পতি এতে শয়তানের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পান। এই অনুসন্ধানের কাহিনি অবলম্বনে পরবর্তী দ্য কনজ্যুরিং ২ চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। তবে সমালোচকদের মতে চলচ্চিত্রে দেখানো গল্পের চেয়ে পরিস্থিতি অনেকটা আলাদ ছিল। ওয়ারেন দম্পতি এই ঘটনায় চলচ্চিত্রের কাহিনিপটের চেয়ে অনেক বেশি জড়িয়ে গিয়েছিলেন; এমনকি তাদের সেই ঘরে ঢুকতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।[১৯][২০][২১]
গাই লিয়ন প্লেফেয়ার নামক জনৈক প্যারাসাইকোলজিস্ট মরিস গ্রোসের সাথে এনফিল্ডের ঘটনার অনুসন্ধান করেন।[২২] তিনিও চলচ্চিত্রে ওয়ারেন দম্পতির অতিরঞ্জিত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এই দম্পতিকে “একবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল” এবং এড ওয়ারেন তাকে বলেছিলেন যে “[ওয়ারেন দম্পতি এই ঘটনা থেকে] অনেক টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হতেন।” তার মতেও এনফিল্ডের ওই বাড়িতে ওয়ারেন দম্পতির “অনাহূত” ছিলেন। এমনকি “[এড ওয়ারেন তার] পরিচয় দেওয়ার আগ পর্যন্ত ওই পরিবারের কেউ তাদের চিনত না।”[২৩][২৪]
১৯৮১ সালে আর্ন চেয়িন জনসনকে তাদের জমিদার অ্যালান বনোকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এড ও লরেইন ওয়ারেন এর পূর্বেই জনসনের বাগ্দত্তার ছোট ভাইয়ের ওপর থেকে শয়তানের প্রভাব দূর করার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। এরপর ওয়ারেন দম্পতি দাবি করতে থাকে জনসনের ওপরও শয়তান প্রভাব বিস্তার করেছে। আদালতে জনসন শয়তানি প্রভাবের অজুহাতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে থাকে, কিন্তু আদালতে এই দাবি প্রমাণযোগ্য না হওয়ায় আমলে আনা হয়নি। জনসনের এই কাহিনি অনুসারে ২০২১ সালে দ্য কনজ্যুরিং: দ্য ডেভিল মেড মি ডু ইট চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়।[২৫] ১৯৮৩ সালে জিরাল্ড ব্রিটল এই ঘটনা অবলম্বনে দ্য ডেভিল ইন কানেটিকাট নামে একটি বইও লিখেন।
১৯৮৬ সালে এড ও লরেইন ওয়ারেন স্নিডেকার হাউজে আসেন এবং এই বাড়িটিতে শয়তানের আধিপত্যের দাবি করেন। এই বাড়িটি পূর্বে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো। এই ঘটনাটি ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ইন অ্যা ডার্ক প্লেস: দ্য ট্রু স্টোরি অব অ্যা ট্রু হন্টিং নামের একটি বইয়ে উল্লেখ করা হয়। এর উপর ভিত্তি করে ২০০২ সালে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়, যা পরবর্তীতে ডিসকভারি চ্যানেলের অ্যা হন্টিং ধারাবাহিকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ঘটনার সাথে সামান্য মিল রেখে পিটার কর্নওয়েলের পরিচালনায় ২০০৯ সালে দ্য হন্টিং ইন কানেটিকাট নামের একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ভৌতিক লেখক রে গার্টন কানেটিকাটের সাউথিংটনের স্নিডেকার পরিবারের গল্প নিয়ে বই লিখেছিলেন। পরবর্তীতে তিনিও এই গল্পের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “একটি পরিবার, যার সদস্যরা কিনা অ্যালকোহল ও মাদকাসক্তির মতো গুরুতর সমস্যায় জর্জরিত, তাদের জীবনগল্পকে ততটাএ সরল রাখতে পারেনি। আমি এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে গেছিলাম। যখন একটি ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকে ভিন্ন কথা বলবে, তখন একটি বাস্তবতানির্ভর বই লেখা খুবই কঠিন হবে।”[১১] আধিবাস্তবিক গবেষক বেঞ্জামিন র্যাডফোর্ডকে তিনি লরেইনের সম্পর্কে বলেন, ‘যদি তিনি (লরেইন) বলেন, “আগামীকাল সকালে সূর্য উঠবে,” তাহলে আমার তাতেও ভিন্ন মত থাকবে।’[২৬]
পেনসিলভানিয়ার অধিবাসী জ্যাক ও জ্যানেট স্মার্ল দাবি করেন যে তাদের বাড়িতে অদ্ভূত শব্দ, গন্ধ ও ছায়ামূর্তির মতো বিভিন্ন আধিবাস্তবিক ঘটনা ঘটতে থাকে। ওয়ারেন দম্পতি এই ঘটনায় যুক্ত হন এবং দাবি করেন এই বাড়িতে চারটি আত্মা এবং একটি শয়তানের বসবাস রয়েছে, যে জ্যাক ও জ্যানেটকে যৌন নিপীড়ন করতো। স্মার্ল পরিবারের এই গল্প নিয়ে ১৯৮৬ সালে দ্য হন্টেড শিরোনামে একটি পেপারব্যাক বই এবং ১৯৯১ সালে রবার্ট ম্যান্ডেলের পরিচালনায় টেলিভিশন চলচ্চিত্র প্রকাশিত হয়।
এড ওয়ারেনের বই গ্রেভইয়ার্ড: ট্রু হন্টিংস ফ্রম অ্যান ওল্ড নিউ ইংল্যান্ড সেমেটারি-এ ইউনিয়ন সেমেটারিতে থাকা সাদা স্ত্রী ভূতের উল্লেখ পাওয়া যায়। এড ওয়ারেন এই আত্মার ভিডিওচিত্র ধারণের দাবি করেন।
ওয়ারেন দম্পতি বেশ কয়েকজন আত্মস্বীকৃত শয়তানবিদকে প্রশিক্ষণ দেন। এদের মধ্যে ডেভ কনসিডাইন[২৭] ও তাদের ভাতিজা জন জাফ্রিস অন্যতম।[২৮]
এড ও লরেইন ওয়ারেন রোমান ক্যাথলিক গির্জার সদস্য ছিলেন।[২৯] ১৯৪৫ সালে তাদের বিয়ে হয়।[৩০] ১৯৪৬ সালের ১১ জানুয়ারি লরেইনের গর্ভে তাদের কন্যাসন্তান জুডি ওয়ারেনের জন্ম হয়।[৩১][৩২]
ওয়ারেন দম্পতির মতে ঈশ্বরে বিশ্বাসের অভাবের কারণে কারও ওপরে শয়তানের নিয়ন্ত্রণ পড়ে।[২৯]
১৯৯৭ সালে কানেটিকাট পোস্ট-এ প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকার অনুসারে স্টিভেন নভেলা ও পেরি ডিঅ্যাঞ্জেলিস নিউ ইংল্যান্ড স্কেপ্টিকাল সোসাইটির (এনইএসএস) পক্ষে ওয়ারেন দম্পতির দাবিকৃত ঘটনাগুলো অনুসন্ধান করেন। তাদের কাছে এই দম্পতিকে অসাধারণ মানুষ বলে মনে হলেও তাদের ভূতশিকারের গল্পগুলোকে “সবচেয়ে ভালো হিসেবে অর্থহীন ভূতের গল্প এবং সবচেয়ে খারাপ হিসেবে ভয়ানক জোচ্চুরি” বলে উল্লেখ করেন। তারা ওয়ারেন দম্পতির কাছ থেকে আত্মা ও ভূতের সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করেন। প্রমাণ হিসেবে ওয়ারেন দম্পতির কাছে থাকা ভিডিও তারা দেখেন। এবং সবশেষে এই উপসংহারে আসেন যে, এই সব কিছুই “মন-ভোলানো গল্প” (blarney)। তারা ফ্ল্যাশ আলোকচিত্র ও ওয়ারেন দম্পতির সংগৃহীত বস্তুতে দুষ্ট কোনোকিছুই খুঁজে পাননি। নভেলার মতে, “তাদের কাছে... থাকা প্রমাণের ব্যাপারে একগাদা অবিশ্বাস্য কাহিনি আছে।... তারা ভালো বৈজ্ঞানিকভাবে অনুসন্ধান চালান না; তাদের অনুসন্ধান সম্পর্কে আক্ষরিকভাবে ও ধর্মীয়ভাবে পূর্বনির্ধারিত উপসংহার আছে, যার সাথেই তারা লেগে থাকেন।” লরেইনের মতে পেরি ও স্টিভের সমস্যা হলো “তারা কোনো কিছুতে ঈশ্বরের ওপর আস্থা রাখে না।” প্রত্যুত্তরে নভেলা বলেন, “আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রকে কাজে লাগাতে ও বাস্তবতাকে তুলে ধরে এমন উপসংহারে পৌঁছাতে দৃঢ়ভাবে চিন্তাভাবনা করে প্রচুর কাজ করতে হবে।... বিজ্ঞানীরা প্রতিদিন এটিই করে চলেছেন এবং সন্দেহবাদীরা এরই পক্ষে কথা বলেন।”[১০]
দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে অতিপ্রাকৃত ঘটনা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো বাস্তবতানির্ভর হয় কি না, তা নিয়ে অনুসন্ধান চালায়, কিন্তু ফলাফলে উল্টোটা দেখা যায়। এখানে নভেলার এই উক্তি তুলে ধরা হয়, “তারা [ওয়ারেন দম্পতি] দাবি করেন, তাদের কাছে ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে। শুনতে মনে হয় এটি একটি পরীক্ষণযোগ্য দাবি, যাতে আমরা অনুসন্ধান চালাতে পারি। কিন্তু আমরা যা পাই, একজন অসাধারণ দম্পতি, কিছু সত্যিকার অর্থেই বাধ্যগত মানুষ ইত্যাদি। কিন্তু কোনো প্রকৃত প্রমাণ আমরা পাই না।...”[৩৩] ডিঅ্যাঞ্জেলিস ও নভেলা বুঝিয়েছিলেন যে তারা বিশ্বাস করতেন ওয়ারেন দম্পতি কারও ক্ষতি করবে না, কিন্তু তারা সবাইকে এই বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ওয়ারেন দম্পতি প্রকৃত বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে জনমনে ভুল ধারণা ও ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছেন।[৩৪]
লরেইন ওয়ারেন অনুসন্ধানের পাশাপাশি তার মেয়ের জামাই টনি স্পেরার সহায়তায় তাদের মনরোর বাড়ির পেছনের দিকে একটি অকাল্ট জাদুঘর পরিচালনা করতে।[৩৫][১৫] জাদুঘরে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের থেকে আনা ও তাদের দাবি করা ভৌতিক বস্তু ও হস্তনির্মিত দ্রব্যাদি প্রদর্শন করা হতো। ওয়ারেন দম্পতির অনেক বিখ্যাত অনুসন্ধানের দ্রব্যাদিও এখানে রাখা ছিল।[৩৬] জাদুঘরটি বর্তমানে বন্ধ আছে।
বছর ধরে ওয়ারেন দম্পতির অনুসন্ধান করা বা তাদের মুখে বর্ণনা করা ঘটনা সম্পূর্ণভাবে বা আংশিক অনুসরণ করে বহু চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিক নির্মাণ করা হয়েছে। তাদের বর্ণনা করা ঘটনা আংশিক অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দি অ্যামিটিভিলে হরর ধারাবাহিকের চলচ্চিত্র দি অ্যামিটিভিলে হরর (১৯৭৯) ও দি অ্যামিটিভিলে হরর (২০০৫)।[৯] ১৯৯১ সালে স্মার্ল পরিবারের ভূত নিয়ে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, যা টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সে মুক্তি পায়। রবার্ট কারেন, জ্যাক স্মার্ল, জ্যানেট স্মার্ল, এড ও লরেইন ওয়ারেনের লেখা চলচ্চিত্রে জ্যাক স্মার্ল চরিত্র অভিনয় করেন জেফরি ডিমুন এবং জ্যানেট স্মার্ল চরিত্রে অভিনয় করেন স্যালি কার্কল্যান্ড।[৩৯] ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র দ্য হন্টিং ইন কানেটিকাট ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন দম্পতির অনুসন্ধান করা স্নিডেকার পরিবারের ঘটনার সাথে সামান্য সম্পর্কযুক্ত।[৪০]
ওয়ারেন দম্পতির অনুসন্ধান করা ঘটনাগুলো অবলম্বনে দ্য কনজ্যুরিং ইউনিভার্স ধারাবাহিকের চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
২০১৩ সালে জেমস ওয়ানের পরিচালনায় চলচ্চিত্র দ্য কনজ্যুরিং মুক্তি পায়। এতে এড ও লরেইন ওয়ারেনের চরিত্রে অভিনয় করেন যথাক্রমে প্যাট্রিক উইলসন ও ভেরা ফারমিগা।[৪১] এরপর ২০১৪ সালে জন আর. লিওনেত্তির পরিচালনায় দ্য কনজ্যুরিং-এর প্রিক্যুয়েল ও স্পিন-অফ অ্যানাবেল মুক্তি পায়। অ্যানাবেল নামের একটি রহস্যময় পুতুলকে ঘিরে এর কাহিনি আবর্তিত হয়। এতে অভিনয় করেন অ্যানাবেল ওয়ালিস, ওয়ার্ড হর্টন ও আলফ্রে উডার্ড। কনজ্যুরিং ইউনিভার্সের পরবর্তী চলচ্চিত্র হলো দ্য কনজ্যুরিং ২, যা ওয়ানের পরিচালনায় ২০১৬ সালে মুক্তি পায়। এখানেও ফারমিগা ও উইলসন লরেইন ও এডের চরিত্রে অভিনয় করেন। এনফিল্ডের উৎপাতকে ঘিরে এর কাহিনি আবর্তিত হয়। ২০১৭ সালে অ্যানাবেল পুতুলের উৎপত্তি নিয়ে একটি প্রিক্যুয়েল অ্যানাবেল: ক্রিয়েশন মুক্তি পায়। এরপর ২০১৮ সালে দ্য কনজ্যুরিং ২-এর খলচরিত্র শয়তান সন্ন্যাসিনী ভালাকের উৎপত্তি নিয়ে স্পিন-অফ দ্য নান মুক্তি পায়। এতে লরেইন ও এড চরিত্রে ফারমিগা ও উইলসনকে ক্ষণিক সময়ের জন্য দেখা যায়। পরবর্তীতেও অ্যানাবেল-এর সিক্যুয়েল অ্যানাবেল কামস হোম এবং দ্য কনজ্যুরিং: দ্য ডেভিল মেড মি ডু ইট-এ তাদের লরেইন ও এডের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়।[৪২]
|প্রকাশিত=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
The Warrens were Roman Catholic, and Ms. Warren said it was her belief that a lack of religion was what often opened the door for malevolent forces to enter a home or a life.