এডওয়ার্ড বাইলস কাওয়েল (ইংরেজি: Edward Byles Cowell) (জানুয়ারি ২৩, ১৮২৬ - ফেব্রুয়ারি ৯, ১৯০৩) প্রখ্যাত ভারততত্ত্ববিদ। স্কুল জীবনে স্থানীয় পাঠাগারে স্যার উইলিয়াম জোন্স'এর ফারসি ব্যাকরণ এবং কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলম- এর ইংরাজি অনুবাদ পড়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রাচ্যবিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মাক্সমুলার, আউটফ্রেখট ও উইলসনের সান্নিধ্যে এসে তার এই আকর্ষণ আরও তীব্রতর হয়; অক্সফোর্ডে ছাত্রাবস্থায় কালিদাসের বিক্রমোর্বশী-র ইংরাজি অনুবাদ প্রকাশ করে কাওয়েল সংস্কৃত বিশেষজ্ঞদের কাছে পরিচিত হয়ে পড়েন। ১৮৫৪ সালে তার অনুদিত বররুচির প্রাকৃতপ্রকাশ প্রকাশ পেলে সংস্কৃত পণ্ডিত হিসাবে তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত হন। ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কোলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক, ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ভার্নাকুলার লিটারারি সোসাইটির সম্পাদক এবং ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে কোলকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন।[১] ১৮৭৪ সালে তিনি কেম্ব্রিজের কর্পাস কৃষ্টি কলেজের ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমৃত্যু তিনি এই পদে আসীন ছিলেন।[২]
এডওয়ার্ড বাইলস কাওয়েল ইংলণ্ডের উইপিচে ১৮২৬ সালের ২৩শে জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সকলের বড়। পিতা চার্লস কাওয়েল, ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী, মাতা ম্যারিন্যে ছিলেন হিল হাউেসর (ইপসউইস) বাসিন্দা নাথানিয়েল বাইলস-এর জ্যেষ্ঠ কন্যা; তিনিও একজন সফল ব্যবসায়ী। কাওয়েল মাত্র ৮ বছর বয়সে ইপসউইসের গ্রামার স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৪১ সালে ‘দ্য ইপ্সউইস র্যাডিক্যাল ম্যাগাজিন এ্যান্ড রিভিয়্যু,’ শীর্ষক পত্রিকাটির কয়েকটি সংখ্যার সংকলন করে তার ক্লাসিক্যাল সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের স্বাক্ষর রাখেন। ১৮৪২ সালে পিতার মৃত্যুর পর তিনি স্কুল ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করলেন। পরবর্তী ৮ বছর তিনি ব্যবসায়ে নিমগ্ন থাকার সঙ্গে সঙ্গে ‘ওয়েস্টমিনিস্টার রিভিয়্যু,’ তে প্রাচ্য ও স্প্যানিশ সাহিত্য নিয়ে লিখে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের পরিচয় দেন। এই একই সময়ে তিনি আরবি ও ফার্সি নিয়েও চর্চা শুরু করেন। তার জ্ঞানচর্চা ও মনীষার কারণে তাকে লণ্ডনের কার্লাইল বলা হত। ১৮৪৫ সালে কাওয়েল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ১৮৫০ সালে তার ভাইয়ের উপর পারিবারিক ব্যবসার সমস্ত দায়িত্বভার অর্পণ করে তিনি পুরোপুরি নিজেকে সাহিত্যসেবায় সঁপে দেন।[৩]
কাওয়েলকৃত গ্রন্থাবলীর মধ্যে সম্পাদনা ও অনুবাদের সংখ্যাই বেশি। উল্লেখযোগ্য রচনাগুলির মধ্যে- সর্বদর্শনসংগ্রহ (এ.ই.গফের সহযোগিতায় অনুদিত, ১৮৮২ খ্রিঃ ); 'তত্ত্বমুক্তাবলী' (১৮৮২ খ্রিঃ) ; দিব্যাবদান (আর.এ.নীল-এর সহযোগিতায় সম্পাদিত, ১৮৮৬ খ্রিঃ ); বুদ্ধচরিত (সেকরেড বুকস অফ দি ইস্ট গ্রন্থের ৪৯তম খণ্ড রূপে অনুদিত, ১৮৯৪ খ্রিঃ ); জাতক (৬ খণ্ড, ১৮৯৭ খ্রিঃ ); 'এ ক্যাটালগ অফ বুডিস্ট স্যান্সক্রিট ম্যানুস্ক্রিপ্টস ইন দি পজেসন অফ দি রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি (এগগেলিং-এর সহযোগিতায়, ১৮৭৬ খ্রিঃ )। কাওয়েলের জীবনের শেষ কাজ, কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল- এর ইংরাজি অনুবাদ,(১৯০৩ খ্রিঃ )। এরপরই ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে ৯ই ফেব্রুয়ারি তার জীবনদীপ নিভে আসে।[৪]