এম এ ওয়াজেদ মিয়া

এম এ ওয়াজেদ মিয়া
জন্ম(১৯৪২-০২-১৬)১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২
মৃত্যু৯ মে ২০০৯(2009-05-09) (বয়স ৬৭)
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাপরমাণু বিজ্ঞানী
দাম্পত্য সঙ্গীশেখ হাসিনা
সন্তানসজীব ওয়াজেদ জয়
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
পিতা-মাতা
  • আব্দুল কাদের মিয়া (পিতা)
  • ময়েজুন্নেসা (মাতা)

এম এ ওয়াজেদ মিয়া (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ - ৯ মে ২০০৯)[] বাংলাদেশের একজন পরমাণু ও পদার্থ বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি পদার্থ বিজ্ঞান ও রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কিত একাধিক বইয়ের প্রণেতা। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী।

জীবনী

[সম্পাদনা]

তার ডাক নাম সুধা মিয়া। তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল কাদের মিয়া এবং মাতা ময়েজুন্নেসা। তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। তিনি চককরিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। মানসম্মত লেখাপড়ার জন্য তাকে রংপুর জিলা স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকেই তিনি ডিসটিনকশনসহ প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন।

১৯৫৬ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টেল, এখানে থেকেই পড়াশোনা করেছেন এম এ ওয়াজেদ মিয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পড়ার সময় থেকেই ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট হতে শুরু করেন রাজনীতির সাথে। ১৯৬১ সালে ফজলুল হক হলের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাশ করার পর ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে আণবিক শক্তি কমিশনে চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরে একই বছরের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে তিনি বিয়ে করেন। স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের কারণে তিনি কিছুদিন কারাবরণ করেন। ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং এর আগে ও পরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯৯ সালে অবসর নেন।

২০০৯ সালের ৯ই মে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যাসহ হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টে ভুগে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ৬৭ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।[]

লেখালিখি ও প্রকাশনা

[সম্পাদনা]

এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্নাতক পর্যায়ের বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইংরেজিতে লেখা গ্রন্থদ্বয়ের নাম ফান্ডামেন্টাল অব থার্মোডায়নামিক্স এবং ফান্ডামেন্টাল অব ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক্স। তার অন্যতম গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে বাংলাদেশের বহু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। তার আরেকটি গ্রন্থের নাম বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র । এটি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড কর্তৃক ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।[]

স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠান

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রাণপুরুষ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে তার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।[] বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিজ্ঞানাগার, এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।[]

নাটোরে প্রস্তাবিত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তার নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তার নামে ২০১০ সালে এ.কে.এম ফরহাদুল কবির বাংলাদেশ সরকার থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত সামাজিক সেবা মুলক সংগঠন ড.এম এ ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এ ফাউন্ডেশন থেকে প্রতিবছর ড এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্বর্নপদক প্রদান করা হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "রংপুর জেলাপ্রশাসনের তথ্যতীর্থ"। ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১১ 
  2. বিডিনিউজ২৪ ডট কম[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. দৈনিক কালেরকণ্ঠ, ১৪ নভেম্বর, ২০১১, মুক্তধারা, পৃ. ১৭, মুদ্রিত সংস্করণ
  5. দৈনিক সমকাল, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, মুদ্রিত সংস্করণ

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
  1. রংপুর জেলার দাপ্তরিক ওয়েব ওয়াজেদ মিয়া
  2. সাপ্তাহিক একুশে পত্রিকায়