কল্পসাহিত্যে যৌনতা |
---|
পুরাণে এলজিবিটি বিষয়বস্তু |
---|
এলজিবিটি ভৌতিক কথাসাহিত্য বা কুয়্যার হরর বলতে সেই সব ভৌতিক কথাসাহিত্যকে বোঝায়, যেগুলিতে এলজিবিটি চরিত্র বা বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে রচিত হয়। এই ধরনের সাহিত্যে এলজিবিটি হিসেবে চিহ্নিত বা খোলাখুলিভাবে এলজিবিটি চরিত্রগুলি থাকতে পারে; আবার এমন বিষয় বা প্লট থাকতে পারে যেগুলি সমকামী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। রচনাকাল অনুসারে এই ধরনের সাহিত্যে যৌনতা, সমকামী কল্পনা, সমকামী প্রেম বা স্নেহ বর্ণিত হয়; অথবা এলজিবিটি ব্যক্তিদের কাছে বিশেষ অর্থবাহী গভীর অনুভূতিগুলি প্রকাশ করে।
৬৬৬৬ভ্যালানকোর্ট বুকসের জেমস জেনকিনস বলেছেন, সমকামী ও ভৌতিক কথাসাহিত্যের যোগসূত্রটি ১৭৯০-এর দশক ও ১৮০০-এর দশকের গোড়ার দিকের গথিক উপন্যাসগুলির মাধ্যমে সাধিত হয়েছিল।[৪] ম্যাথিউ লিউইস, উইলিয়াম টমাস বেকফোর্ড ও ফ্রান্সিস ল্যাথম প্রমুখ অনেক গথিক সাহিত্যকার সমকামী ছিলেন। জেনকিনসের মতে, “সমকামী/ভৌতিক যোগসূত্রের প্রথাগত ব্যাখ্যাটি ছিল এই যে, সেই যুগে তাঁদের পক্ষে সরাসরি সমকামিতা নিয়ে লেখা সম্ভব ছিল না। (বা সেগুলি প্রকাশ করাও সম্ভব ছিল না। কারণ, ‘সমকামিতা’ শব্দটির অস্তিত্বই সেই যুগে ছিল না।) তাই তারা সূক্ষ্মভাবে সেগুলি গ্রহণযোগ্য আকারে প্রকাশ করেন। এই কারণেই তারা ভৌতিক কথাসাহিত্যের মতো একটি প্রথাবহির্ভূত মাধ্যমকে ব্যবহার করেন।”[৪] যেসব বইতে প্রথম সুস্পষ্টভাবে সমকামিতা প্রকাশ পায়, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য লিউইসের দ্য মঙ্ক (১৭৯৬) ও চার্লস ম্যাটারিনের দ্য ফ্যাটাল রিভেঞ্জ (১৮০৭) ও মেলমথ দ্য ওয়ান্ডারার (১৮২০)।[৪] এর কিছুকাল পরে শেরিডন লে ফানুর স্ত্রী-সমকামী ভ্যাম্পায়ার অনু-উপন্যাস কারমিলা (১৮৭২) প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল প্রথম স্ত্রী-সমকামী ভ্যাম্পায়ার বিষয়ের প্রথম রচনা।[১][২][৩] এরপর প্রকাশিত হয় অস্কার ওয়াইল্ডের দ্য পিকচার অফ ডোরিয়ান গ্রে (১৮৯০)। এই উপন্যাসের সমকামী চরিত্রগুলির যৌনক্ষুধার খোলামেলা বিবরণ পাঠকদের চমকিত করে।[৫] এমনকি ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা (১৮৯৭) উপন্যাসেও সমকামিতার একটি আভাস আছে। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রটি নারী ভ্যাম্পায়ারদের সতর্কিত করে জোনাথান হার্কারকে দাবি করে জানায়, “এই মানুষটি আমার!”[৪] কারমিলা উপন্যাসে প্রদর্শিত ভ্যাম্পায়ার ধারার কামোদ্দীপক প্রতীকতত্ত্বটি ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে একাধিক ভ্যাম্পায়ার চলচ্চিত্রের আদর্শে পরিণত হয়। এই সব চলচ্চিত্রে স্ত্রী-সমকামিতার খোলামেলা প্রদর্শন চলতে থাকে।[৬]
জেমস আর. কেলার লিখেছেন, বিশেষত “পুরুষ ও স্ত্রী সমকামী পাঠকেরা সহজেই ভ্যাম্পায়ারের উপস্থাপনাটিকে ধরতে পারেন। কারণ, ভ্যাম্পায়ারের অভিজ্ঞতা প্রথাবহির্ভূত যৌনতার সমান্তরাল পথে চলে।”[৭] রিচার্ড ডায়ার তার চিল্ড্রেন অফ দ্য নাইট নিবন্ধে ভ্যাম্পায়ার কথাসাহিত্যে প্রায়শ উপস্থাপিত সমকামী যৌনতার বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে, “গোপনীয়তার প্রয়োজনীয়তা, নিষিদ্ধ কামনার হাতছানি ও জানাজানি হওয়ার ভয়” এগুলির প্রধান বিষয়।[৭][৮] স্টোকারের ড্রাকুলা উপন্যাসের আগে থেকেই ভ্যাম্পায়ারের ক্রমিক সমকামী ইচ্ছার বিষয়টি সাহিত্য ফুটে উঠেছে। তাই ডায়ার লিখেছেন যে, ঐতিহাসিকভাবে আগেকার ভ্যাম্পায়ারগুলির উপস্থাপনা মূলত ভয় সৃষ্টি করার জন্য হয়েছে। পরের উপন্যাসগুলিতে দেখা গিয়েছে ভয় আনন্দে পরিণত হচ্ছে।[৭][৮] অ্যানি রাইসের বিখ্যাত দ্য ভ্যাম্পায়ার ক্রনিকলস্ গ্রন্থমালায় (১৯৭৬-২০১৪) সমকামী যৌন আভাসটি সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।[৭][৯][১০][১১] এই বইটির প্রকাশনায় "সমকামী ও ভ্যাম্পায়ারের সমান্তরাল অবস্থানটি ব্যাপকভাবে মান্যতা পায়।"[৭]
ঐতিহাসিকভাবে বৃহত্তর প্রকাশকদের হাতে প্রকাশনা শিল্পের নিয়ন্ত্রণ থাকায় ক্রমবর্ধমান উন্মুক্ত সমকামী বিষয় প্রকাশে নানা বাধা আসত।[১২] পাল্প উপন্যাসের আগমনের পর থেকে সমকামী ভৌতিক কথাসাহিত্য প্রকাশনায় জোয়ার আসে।[১৩] এই ধারায় সস্তায় পেপারব্যাক বই ছাপা হত এবং তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেশ জনপ্রিয়তাও লাভ করেছিল।[১৪] ডন হলিডের থ্রি অন আ ব্রুমস্টিক (১৯৬৭) প্রথম যুগের পুরুষ সমকামী ভৌতিক পাল্পের একটি উদাহরণ।[১৩]
১৯৩০ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত মোশন পিকচার প্রোডাকশন কোড চলচ্চিত্রে এলজিবিটি চরিত্র ও বিষয় প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু ড্রাকুলা’জ ডটার (১৯৩৬) ও দ্য হন্টিং প্রভৃতি কিছু চলচ্চিত্র দেখিয়েছিল কীভাবে এগুলি নিয়মের মধ্যে থেকেই উক্ত বিষয় প্রদর্শন করতে পারে। এখানে বলা হয়েছিল, সমকামীরা এই চলচ্চিত্রগুলি দেখতে পারেন; কিন্তু যাঁরা দেখতে চান না, তারা এগুলিকে উপেক্ষা করতে পারেন।[১৫]