ই. শ্রীধরন | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | এলাট্টুওয়ালাপিল শ্রীধরন ১২ জুন ১৯৩২ কারুকাপুতুর, পোন্নানি তালুক, মালাবার জেলা, মাদ্রাজ, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান পাট্টাম্বি তালুক, পালঘাট জেলা কেরল, ভারত) |
অন্যান্য নাম | মেট্রো ম্যান |
মাতৃশিক্ষায়তন | জিএলপিএস চাতান্নুর গভর্নমেন্ট ভিক্টোরিয়া কলেজ, পালঘাট, কেরল ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং, কাকিনাড়া, অন্ধ্রপ্রদেশ |
পেশা |
|
পরিচিতির কারণ | কোঙ্কণ রেল, দিল্লি মেট্রো, কোচি মেট্রো এবং অন্যান্য সম্পর্কিত রেল উন্নয়ন |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জনতা পার্টি (২০২১–২০২১) |
দাম্পত্য সঙ্গী | রাধা শ্রীধরন |
পুরস্কার |
|
এলাট্টুওয়ালাপিল শ্রীধরন (জন্ম ১২ জুন ১৯৩২), সংক্ষেপ ই. শ্রীধরন, ভারতের কেরল রাজ্য থেকে একজন কারিগর ও রাজনীতিবিদ। তিনি কোঙ্কণ রেল ও দিল্লি মেট্রো নির্মাণের মাধ্যমে ভারতের গণপরিবহনের দিক পরিবর্তনের জন্য পরিচিত। ১৯৯৫ থেকে ২০১২-এর মধ্যে তিনি দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন।[১] মেট্রো ম্যান নামে পরিচিত এই ব্যক্তি ভারত সরকার দ্বারা পদ্মশ্রী (২০০১),[২] পদ্মবিভূষণ (২০০৮)[৩] এবং ফরাসি সরকার দ্বারা শেভালিয়ে দ্য লা লেজিওঁ দনর (২০০৫) পুরস্কারে পুরস্কৃত হন।[২] ২০০৩ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে এশিয়াজ হিরোজ-এর (Asia's Heroes) মধ্যে অন্যতম বলে অভিহিত করা হয়েছে।[৪][৫] ২০১৫ সালে প্রাক্তন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন শ্রীধরনকে তিন বছরের জন্য জাতিসংঘের হাই লেভেল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অন সাস্টেনেবল ট্রান্সপোর্টে (HLAG-ST) মনোনীত করেছিলেন। তিনি মাতা বৈষ্ণো দেবী শ্রাইন বোর্ডের সদস্য।[৬][৭][৮] তিনি কিছুসময়ের জন্য ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জাতীয় এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন, কিন্তু ডিসেম্বর ২০২১-এ সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলেন।[৯]
ই. শ্রীধরন ১২ জুন ১৯৩২-এ বর্তমান ভারতের কেরল রাজ্যের পালঘাট জেলার কারুকাপুতুরে এক হিন্দু মালয়ালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[১০][১১] তাঁর পিতামাতার নাম কিলভিট্টিল নীলকান্ডন মুসাত ও আম্মালুয়াম্মা।[১২]
পালঘাট জেলার পাট্টাম্বির নিকট চাতান্নুরে গভর্নমেন্ট লোয়ার প্রাইমারি স্কুলে শ্রীধরনের প্রাথমিক শিক্ষালাভ। তিনি বাসেল ইভাঞ্জেলিকাল মিশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে তাঁর শিক্ষা সম্পূর্ণ করেছিলেন এবং পালঘাটের ভিক্টোরিয়া কলেজে গিয়েছিলেন। পরে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়ার গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তাঁর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেছিলেন, যা বর্তমানে জওহরলাল নেহেরু টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত।
ডিসেম্বর ১৯৬৪-এ একটি ঘূর্ণিঝড় পামবান সেতুর কিছু অংশকে ধুয়ে দিয়েছিল যা রামেশ্বরমকে তামিলনাড়ুর মূলভূমির সঙ্গে যুক্ত রেখেছিল। সেতুটির মেরামতের জন্য ভারতীয় রেল ছয় মাসের লক্ষ্য স্থির করেছিল কিন্তু শ্রীধরনের বস, যাঁর এক্তিয়ারে সেতুটি ছিল, এর জন্য তিন মাস বরাদ্দ করেছিলেন। শ্রীধরনকে মেরামত দায়িত্বের ভার দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি কেবল ৪৬ দিনের মধ্যে সেতুটির মেরামত করেছিলেন।[১০][১১]
১৯৭০ সালে ই. শ্রীধরন ভারতের সর্বপ্রথম দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা কলকাতা মেট্রোর নকশা, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন।[১০] শ্রীধরন কেবল এই বহুপ্রচারিত প্রকল্পকে সম্পূর্ণই করেননি, তিনি ভারতের আধুনিক পরিকাঠামো কারিগরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি এই পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন।[১৩]
অক্টোবর ১৯৭৯-এ শ্রীধরন কোচিন শিপইয়ার্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১] তখন এটি অনুৎপাদনশীলতার পর্যায়ে ছিল। এর প্রথম জাহাজ এমভি রানি পদ্মিনী দীর্ঘক্ষণ ধরে বিলম্বিত ছিল।[১৩] যখন শ্রীধরন এর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন তিনি শিপইয়ার্ডটির ভাগ্য বদলে দিয়েছিলেন এবং সভাপতি ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর থাকাকালীন যেন শিপইয়ার্ডের প্রথম জাহাজটি তৈরি হয়। ১৯৮১ সালে শ্রীধরনের নেতৃত্বে শিপইয়ার্ডটি তাঁর প্রথম জাহাজ এমভি রানি পদ্মিনী চালু করেছিল।[১৪]
জুলাই ১৯৮৭-এ ই. শ্রীধরনকে পশ্চিম রেলের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল, এবং জুলাই ১৯৮৯-এ তাঁকে রেল বোর্ডের মেম্বার ইঞ্জিনিয়ারিং ও তার পাশাপাশি ভারত সরকারের সচিব পদে উন্নীত করা হয়েছিল।[১১] জুন ১৯৯০-এ তাঁর অবসর গ্রহণের পর সরকার এটি পরিষ্কার করে দিয়েছিল তাদের তখনও শ্রীধরনকে প্রয়োজন এবং ১৯৯০ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেস তাঁকে কোঙ্কণ রেলের সিএমডি পদে মনোনীত করেছিলেন। এই প্রকল্পটি বিভিন্ন দিক থেকে অনন্য ছিল। এটি বিওটি (নির্মাণ, পরিচালনা ও স্থানান্তর) ভিত্তিতে পরিচালিত প্রথম ভারতীয় প্রকল্প।
তৎকালীন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী সাহিব সিং বর্মা ই. শ্রীধরনকে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের (ডিএমআরসি) ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে মনোনীত করেছিলেন, এবং ১৯৯৭-এর মাঝে সমস্ত পরিকল্পিত অংশ লক্ষ্য তারিখ কিংবা তার আগেই তাদের বাজেটের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। দিল্লি মেট্রো নির্মাণে তাঁর চরম সাফল্যের জন্য মিডিয়া শ্রীধরনকে "মেট্রো ম্যান" বলে অভিহিত করতে লাগলেন।[১৫] দিল্লি মেট্রোতে তাঁর উদ্যোগ ভারতের পক্ষে এত সফল ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে ২০০৫ সালে ফরাসি সরকার তাঁকে শেভালিয়ে দ্য লা লেজিওঁ দনর ও ২০০৮ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।[৩] বিভিন্ন রাজনীতিবিদ শ্রীধরনকে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার ভারতরত্নে ভূষিত করার দাবি তুলেছিলেন।[১৬] তিনি তাঁর প্রকল্পকে রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাব থেকে দূরে রাখা এবং প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি লাভ করার জন্য বিশেষ করে পরিচিত।[১৭][১৮]
ই. শ্রীধরন বলেছেন যে তিনি হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টান মেয়েদের "বিয়ের নামে ফাঁসানো"-র বিরোধিতা করেন, এবং তিনি একে "লাভ জিহাদ" বলেছেন।[১৯] এছাড়া তিনি বলেছেন যে তিনি একজন নিরামিষ ও তিনি কোনপ্রকার মাংস গ্রহণের বিরোধিতা করেন।[২০][২১] ২০২১ সালে দ্য ইকোনমিক টাইমস-এর একটি বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন যে নরেন্দ্র মোদী "সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে ভাল প্রধানমন্ত্রী"।[২২]