এস এম সুলতান | |
---|---|
![]() আশির দশকে সুলতান | |
জন্ম | লাল মিয়া ১০ আগস্ট ১৯২৩ মাসিমদিয়া, নড়াইল, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১০ অক্টোবর ১৯৯৪ | (বয়স ৭১)
সমাধি | নড়াইল, খুলনা, বাংলাদেশ ২৩°০৯′২৯″ উত্তর ৮৯°৩০′০৩″ পূর্ব / ২৩.১৫৮১৭৯৬° উত্তর ৮৯.৫০০৯৪৮৫° পূর্ব |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯২৩–১৯৪৭) পাকিস্তানি (১৯৪৭–১৯৭১) বাংলাদেশী (১৯৭১–১৯৯৪) |
মাতৃশিক্ষায়তন | কলকাতা আর্ট স্কুল |
পরিচিতির কারণ | চিত্রাঙ্কন, অঙ্কন |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | প্রথম বৃক্ষরোপণ (১৯৭৫) জমি চাষ (১৯৮৬) |
আন্দোলন | বাংলাদেশে আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলন |
পিতা-মাতা |
|
পুরস্কার | একুশে পদক ১৯৮২ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৯৩ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
অন্যান্য নাম | শেখ মোহাম্মদ সুলতান |
পেশা | চিত্রশিল্পী |
কর্মজীবন | ১৯৪৬-১৯৯৪ |
পরিচিতির কারণ | চিত্রাঙ্কন |
শেখ মোহাম্মদ সুলতান, (১০ আগস্ট ১৯২৩ - ১০ অক্টোবর ১৯৯৪) যিনি এস এম সুলতান নামে সমধিক পরিচিত, ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপনিবেশিক এবং আভঁ-গার্দ চিত্রশিল্পী।[১][২] তিনি বাংলাদেশে আধুনিকতার অন্যান্য পথিকৃৎ।[৩][৪] বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে কয়জন শিল্পী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, সুলতান তাদের মধ্যে অন্যতম ৷[৫] তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একজন হিসেবে বিবেচিত।[১] তার কাজের মধ্যে ল্যান্ডস্কেপ, প্রতিকৃতি এবং আত্মপ্রতিকৃতি অন্তর্ভুক্ত, যার অধিকাংশই বাংলার কৃষক এবং কৃষিজীবনের চিত্রায়ন। তার চিত্রের পেশীবহুল কৃষক এবং তাদের জীবনসংগ্রামের প্রতিফলন বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পে অভিব্যক্তিবাদের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তার শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। যেখানে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণিদ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। তার চিত্রকর্মে বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের চিত্রকলাকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকায় তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[৬] তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে প্রথম বৃক্ষরোপণ (১৯৭৫), চরদখল (১৯৭৬), জমি চাষ (১৯৮৬), এবং মাছ ধরা-৩ (১৯৯১)। তিনি ছিলেন একজন সুরসাধক এবং বাঁশিবাদক।
১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া খেতাব লাভ করেন। একই বছর শিল্পকলায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় চিত্রশালা (বাংলাদেশ), এস.এম. সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সহ সহ দেশে-বিদেশের বিভিন্ন সর্বজনীন এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহে তার চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে।[৭]
সুলতানের কাজ তার জীবনের শেষ দশকে সমালোচকদের শিল্পগত মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করে। মৃত্যুর পর, তার শিল্পকর্ম ও জীবনাচার জনসাধারণের কল্পনায় এক ভুল বোঝা প্রতিভার প্রতীক হিসেবে স্থান পায়, যার জন্য বাংলাদেশের তৎকালীন শিল্পবোদ্ধা এবং সমালোচকরা অনেকাংশে দায়ী ছিলেন। তার কাজ পরবর্তী কয়েক দশকে ব্যাপক সমালোচনামূলক এবং বাণিজ্যিক সফলতা অর্জন করে।
শেখ মোহাম্মদ সুলতান ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব বাংলা, ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৮][৯] তার পৈতৃক ভিটা পুরুলিয়া গ্রামে।[১০] তার জন্ম হয়েছিল দরিদ্র কৃষক-পরিবারে।[৮] তার মায়ের নাম মোছাম্মদ মেহেরুননেসা। তার বাবা শেখ মেছের মিয়া[১১] পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রী।[১২][১৩] সুলতানে একমাত্র বোন ফুলমণি। তবে কৃষিকাজই ছিল তার বাবার মূল পেশা, পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য ঘরামির কাজ করতেন।[১৪] সুলতান ছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান।[৯][১৫] শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে লাল মিয়া বলে ডাকতো।[৮][১৬] বিদ্যালয়ে পড়ানোর মত সামর্থ্য তার পরিবারের না থাকলেও ১৯২৯ সালে পাঁচ বছর বয়সে রূপগঞ্জ বাজারের জি টি স্কুলের নিকট একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে তাকে ভর্তি করানো হয়।[১৭] সে বছরই আজানা অসুখে সুলতানের মা মারা যান।[১৭] এ সময় পিতার রাজমিস্ত্রির কাজের সহকারি হিসেবে অবসরে ছবি আঁকতেন সুলতান। ছবি আঁকার প্রতিভার কারণে শৈশব থেকেই তিনি এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের স্নেহভাজন হয়ে উঠেন।[১৮] ধীরেন্দ্রনাথের ভাইয়ের ছেলে অরুণ রায় তখন কলকাতা আর্ট স্কুলের ছাত্র। সুলতানের আঁকা দেখে শিল্পী অরুণ রায় তাকে ছবি আঁকতে অনুপ্রেরণা যোগান এবং তিনি সুলতানকে ছবি আঁকা শিখাতে শুরু করেন।[১৯] সুলতানকে তিনি কলকাতা থেকে ছবি আঁকার সরঞ্জাম সরবরাহ করতেন।[১৭] বাল্যবয়সেই অরুণ রায়ের মাধ্যমে পুরানো মাস্টারপিস চিত্রকর্মগুলি দেখার সুযোগ ঘটেছিল সুলতানের।[২০] ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে সুলতান প্রথম স্থান অর্জন করেন।[২১] ১৯৩৪ সালে, সুলতান নড়াইলে ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন।[২১][৮][১৪] সে বছর রাজনীতিবিদ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে শিক্ষাবিদ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি নড়াইলে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন। সে সময় তিনি নড়াইলে ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে এলে সুলতান তার একটি পেন্সিল স্কেচ আঁকেন।[২২][১৮] শাম্যপ্রসাদ তার আঁকা পেন্সিল স্কেচ দেখে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং এই পেন্সিল স্কেচের মাধ্যমেই শিল্পী হিসেবে সুলতানের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে।[১৩][২৩] ১৯৩৪ সালে সুলতানের বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করেন। এরপর সৎমায়ের পরামর্শে তাকে নাকসী এ বি এস জুনিয়র মাদ্রাসায় পুনরায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। তবে মাদ্রাসা শিক্ষায় সুলতানের মন বসত না।[২৪] এসময় ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিল্পী কৃষ্ণনাথ ভট্টাচার্যের সাথে সুলতানের সাক্ষাত ঘটে। এরপর তিনি আবার ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।[২৫] এসময় বাবার ইমারত তৈরির কাজ সুলতানকে প্রভাবিত করে এবং তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজের ফাঁকে আঁকাআঁকি শুরু করেন। কাঠকয়লা দিয়ে আঁকার প্রতিটি সুযোগ তিনি কাজে লাগান।[২৬] তার বাবার এই পেশাই সুলতানের ভেতরে শিল্পীসত্তার জন্ম দেয়।[২৭] সুলতানের বাল্যবয়সের চরিত্র-গঠন সম্পর্কে আহমদ ছফা লিখেছেন: "কোনো কোনো মানুষ জন্মায়, জন্মের সীমানা যাদের ধরে রাখতে পারে না। অথচ যাদের সবাইকে ক্ষণজন্মাও বলা যাবে না। এরকম অদ্ভুত প্রকৃতির শিশু অনেক জন্মগ্রহণ করে জগতে, জন্মের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য যাদের রয়েছে এক স্বাভাবিক আকুতি। ...শেখ মুহাম্মদ সুলতান সে সৌভাগ্যের বরে ভাগ্যবান, আবার সে দুর্ভাগ্যের অভিশাপে অভিশপ্ত।"[২৮][১০] ১৯৩৭ সালে অষ্টম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনাথ ভট্টাচার্যের সাথে সুলতান কলকাতা ভ্রমণে যান।[২৯] গতানুগতিক পড়াশোনার প্রতি সুলতানের আগ্রহ না থাকায় ১৯৩৮ সালে তিনি বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।[৩০] একইবছর ছবি আঁকা শেখার জন্য কলকাতায় পাড়ি জমান।[৮] ১৯৩৮ সালে, বয়স কম হবার কারণে সুলতান কলকাতা স্কুল অব ফাইন আর্টসে ভর্তি হতে পারেননি। কলকাতায় ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়িতে, তার ভাই সত্যেন রায়ের বাড়িতে, কখনো তাদের অন্যান্য ভাইদের বাড়িতে থেকে সুলতান তিনবছর ছবি আঁকার চর্চা করেন।[১৩][৩১] খরচ মিটানোর জন্য তিনি ভবানীপুরের রুবি সাইন আর্ট সেন্টারে ৩০ টাকা মাসিক বেতনে সাইনবোর্ড লেখা, পোস্টার ও রিকশা চিত্র অঙ্কনের কাজ নেন।[৩২]
১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় অংশ নেয়া চারশো ছেলেমেয়েকে পনেরো মিনিটে ভেনাস মিলোর ছবি আঁকতে দেয়া হয়। সুলতান প্রথম হন, কিন্তু প্রবেশিকা পাশ না থাকার কারণে তার ভর্তি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। তখন ধীরেন্দ্রনাথ রায় বিষয়টা অবগত করেন শিল্প ইতিহাসবিদ ও সমালোচক হাসান শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীকে, যিনি তখন কলকাতা আর্ট স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য।[১০] তার সাহায্যে সুলতান ১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন।[৪] তিনিই সুলতানকে পরামর্শ দেন ভর্তি হবার সময় কাগজপত্রে লাল মিয়া না লিখে শেখ মোহাম্মদ সুলতান লিখতে। সুলতানকে সোহরাওয়ার্দী সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন।[২৬] তার অসাধারণ সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার সুলতানের জন্য সব সময় উন্মুক্ত ছিল। কিছুকাল তার বাসায় ও তার ভাই শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বাসায় থেকে সুলতান পড়াশোনা করেন।[৩৩] কলকাতা আর্ট স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মুকুলচন্দ্র দের অধীনে, স্কুলটি পুরনো শিল্পগুরুদের অনুকরণকে গুরুত্বহীন করে তোলে এবং ভারতীয় পৌরাণিক, রূপক এবং ঐতিহাসিক বিষয়গুলিকে ছাড়িয়ে যায়। সেসময় শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মৌলিক বিষয়বস্তুর মাধ্যমে সমকালীন দৃশ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতে উৎসাহিত করা হত।[৩]
কলকাতা আর্ট স্কুলে র অন্যান্য ক্লাসে তখন জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদ, রাজেন তরফদার, আনওয়ারুল হকের মত মানুষেরা পড়াশোনা করতেন। ফলে তাদের সাথে সুলতানের যোগাযোগ ঘটে। ছাত্র হিসেবে সুলতান ভাল ছিলেন, এর পাশাপাশি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেও প্রশংসা অর্জন করেন।[৩৪] আর্ট স্কুলে পড়ার সময় সুলতান রাজেন তরফদার পরিচালিত উর্মিলা নামের একটি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছিলেন।[৩৫] আর্ট স্কুলে সুলতান প্রথম বছরের পরীক্ষায় দ্বিতীয় এবং পরের দুই বছর পর-পর প্রথম হয়েছিলেন৷ যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাঁধাধরা জীবন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার কঠোর রীতিনীতি সুলতানের জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। সে সময় তিনি জলধর সেনের ভ্রমণ কাহীনী পড়ে ভ্রমণের প্রতি আকৃষ্ট হন।[৩৬] ১৯৪৩ সালে সুলতান ব্রিটিশ ভারতে ইনায়েতউল্লাহ খান মাশরিকির খাকসার আন্দোলনে যোগ দেন।[৮][১৮] ১৯৪৪ সালে, চতুর্থ বর্ষে উঠে সুলতান তার ছয় বছরের চারুকলা কোর্স অসমাপ্ত রেখে আর্ট স্কুল ছেড়ে দেন।[৩৭][৩৮][৩৯][৪০]
আর্ট স্কুল ছাড়ার পর সুলতান ভারত ভ্রমণে বের হন।[৮] প্রথমে তিনি আগ্রায় যান, সেখানে বুক ইন্সট্রেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানে মাসিক কুড়ি টাকা বেতনে এক মাস চাকরি করেন।[৩৬] কিছুদিন বিভিন্ন স্থানে ঘুরে তিনি কাশ্মীরে এক আদিবাসী দলের সাথে থাকতে শুরু করেন। তিন বছর তাদের সাথে থাকার সময় সুলতান কাশ্মীরেরে প্রকৃতি এবং আদিবাসি জীবনের অসংখ্য ছবি আঁকেন। কাশ্মীরে ভ্রমণ তার উপর একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রাখে, যা কয়েক দশক পরে তৈরি করা তার চিত্রকর্মগুলিতে দেখা যায়।[৪] পরে দিল্লি, আগ্রা, লাহোর, এবং কাঘান উপত্যকা ভ্রমণ করেছিলেন।[৪১] তিনি ছিলেন বোহেমীয় জীবনাচারের অনুসারী। চেতনায় তিনি ছিলেন স্বাধীন এবং প্রকৃতিগতভাবে ছিলেন ভবঘুরে এবং ছন্নছাড়া। প্রকৃতিকে তিনি সবসময় রোমান্টিক কবির আবেগ দিয়ে ভালোবেসেছেন। আবার যান্ত্রিক নগরজীবনকে সেরকমই ঘৃণা করেছেন। মোস্তফা জামান তার "লাল মিয়ার রূপকল্প পুনর্বিবেচনা" শিরোনামে লিখেছেন: "তার সাবলীল গতিবিধি নানা সামাজিক ভূগোলের মধ্য দিয়ে এবং কিছু অনন্য ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য, আল্লামা মাশরিকির খাকসার আন্দোলনের সাথে তার সম্পৃক্ততা, যা 'স্ব' এবং 'মুসলিম সামাজিকতাকে' সংগঠিত করে উপনিবেশ মুক্তির ভিত্তি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল; এবং আমেরিকা ও ইউরোপে তার ভ্রমণ তাকে তার ক্যানভাসের জন্য প্রস্তুত করেছিল, যা শীঘ্রই শক্তিশালী পুরুষ ও মহিলাদের দ্বারা পূর্ণ হতে থাকে।[৪২] এগুলো স্পষ্টতই সেই কৃষক জনসংখ্যার প্রতিফলন ছিল যার সাথে তিনি একাত্ম হয়ে উঠেছিলেন।"[৪৩] এর অব্যবহিত পরেই বেরিয়ে পড়েন এবং উপমহাদেশের পথে পথে ঘুরে তার অনেকটা সময় পাড় করেন। তখন ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ভারতে সে সময় অনেক মার্কিন ও ব্রিটিশ সৈন্য আবস্থান নিয়েছিল। তিনি ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে ঘুরে-ঘুরে ছবি এঁকে তা পাঁচ-দশ টাকার বিনিময়ে সৈন্যদের কাছে বিক্রি করতেন। মাঝে-মাঝে তার চিত্রকর্মের প্রদর্শনীও হয়েছে।[২৩] এর মাধ্যমে তিনি শিল্পী হিসেবে কিছুটা পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু সুলতানের চরিত্রে পার্থিব বিষয়ের প্রতি যে অনীহা এবং যে খামখেয়ালীপনা ছিল তার কারণে সেই চিত্রকর্মগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সেগুলোর কোনো আলোকচিত্রও এখন আর পাওয়া যায় না। এছাড়া তিনি কখনও একস্থানে বেশিদিন থাকতেন না। তিনি বলেন:[১২]
“ | একেক জায়গায় এভাবে পড়ে আছে সব। শ্রীনগরে গেলাম। সেখানকার কাজও নেই। শ্রীনগরে থাকাকালীন পাকিস্তান হয়ে গেলো। '৪৮-এ সেখান থেকে ফিরে এলাম। কোনো জিনিসই তো সেখান থেকে আনতে পারিনি। একটা কনভয় এনে বর্ডারে ছেড়ে দিয়ে গেলো। পাকিস্তান বর্ডারে। আমার সমস্ত কাজগুলোই সেখানে রয়ে গেলো। দেশে দেশে ঘুরেছি। সেখানে এঁকেছি। আর সেখানেই রেখে চলে এসেছি। | ” |
তবে এটুকু জানা গেছে যে, সেসময় তিনি প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতেন। এসময় তিনি শিমলা যান। এরই মধ্যে শিল্পী হিসেবে তিনি কিছুটা পরিচিতি অর্জন করেন ৷ ১৯৪৬ সালে কানাডিয় শিল্পপ্রেমী মিসেস হাডসন শিমলায় সুলতানের আঁকা ছবির প্রথম একক প্রদর্শনী করেন।[১৮][৩৯] এই প্রদর্শনীর বেশিরভাগই ছিল বাংলা ও কাশ্মীরের ভূদৃশ্য৷ কাপুরথালার মহারাজা সেই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন।[১০] পরে মহারাজার সঙ্গে সুলতানের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে এবং তিনি শিমলা ও জলন্ধরে মহারাজার ব্যক্তিগত অতিথি হয়ে উঠেছিলেন। পরে তিনি কাঘান উপত্যকা সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং এর পরিশ্রমী মানুষের কঠোর জীবনচিত্র আঁকতে ব্যস্ত ছিলেন।[৪১] ১৯৪৬ সালে, তিনি কাশ্মিরে যান এবং সেখানে তিনি প্রাকৃতিক দৃশ্য এঁকেছেন এবং কাশ্মিরের সংগ্রামী মানুষদের স্কেচ করেছেন।[৪১]
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারতের জন্ম হয়। এই বিভক্তির পর সুলতান কিছুদিনের জন্য নিজ দেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। সেবছরের শেষের দিকে তাকে শ্রীনগর থেকে লাহোরের উদ্দেশ্যে একটি শরণার্থী ট্রাকে দ্রুত পালিয়ে যেতে হয়েছিল। তার আঁকা চিত্রকর্মগুলি সেখানেই ফেলে আসেন তিনি। লাহোরে তিনি শিল্প সমালোচক আমজাদ আলির সাথে দেখা করেন। পরে আমজাদ আলির সুলতানকে উপমহাদেশের আরেকজন উজ্জ্বল শিল্পী— আব্দুর রহমান চুঘতাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে, আমজাদ আলি এবং চুঘতাই সহ অন্যান্যদের সহায়তায় লাহোরে সুলতানের একটি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন স্যার মালিক ফিরোজ খান নুন, যিনি পরবর্তীতে পাকিস্তানের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।[৪১] পরের বছর, ১৯৪৯ সালে তিনি করাচিতে চলে যান। সেখানে পারসি স্কুলের শিল্প শিক্ষক হিসেবে দুই বছর কর্মরত ছিলেন। পাকিস্তানে আমজাদ, চুঘতাই, শাকির আলীর এবং কয়েকজনের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি একটি বড় একক প্রদর্শনী করেন, যা উদ্বোধন করেন মোহতারমা ফাতিমা জিন্নাহ।[৪১] চিত্রকর্ম সংরক্ষণের ব্যাপারে সুলতানের উদাসীনতার কারণে তার এই সময়ের কোনো শিল্পকর্মই বর্তমানে টিকে নেই।[৮][৪৪] পঞ্চাশের দশকে ফোর্ড এবং রকফেলার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে, নিউ ইয়র্কের ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন তাদের আন্তর্জাতিক শিল্প কর্মসূচির মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী অসাধারণ প্রতিশ্রুতিশীল বিদেশি শিল্পীদের যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক সপ্তাহের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দিত। এই শিল্পীদের নির্বাচন করা হত মার্কিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের যৌথ উদ্যোগে। উক্ত কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাদুঘর পরিদর্শন, একটি স্কুলে সৃজনশীল কাজ বা অধ্যয়নের সময়কাল, আমেরিকার নেতৃস্থানীয় শিল্পীদের সাথে পরামর্শ এবং দর্শকদের কাজের প্রদর্শনী।[৪৫][৪৬][৪৭] ১৯৫০ সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময় প্রোগ্রামের অধীনে চিত্রশিল্পীদের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে সুলতান যুক্তরাষ্ট্রে যান।[টীকা ১][৪৮] সেখানে তিনি গ্যালারি এবং জাদুঘর পরিদর্শন করেন, ছবি আঁকেন, প্রদর্শনী করেন এবং বিভিন্ন সভায় বক্তব্য রাখেন।[৪১] এই সফরে নিউ ইয়র্কের ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের, ওয়াশিংটন, ডি.সি.র ওয়াইএমসিএ,[৪৯] বস্টন, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল হাউস এবং অ্যান আর্বারের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হয়। এই সফরকালে সুলতানকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য টেলিগ্রাফ, টাইমস, গার্ডিয়ান, ল্য মোঁদসহ বিভিন্ন বিখ্যাত সংবাদপত্রে তার কাজের প্রশংসামূলক সমালোচনা প্রকাশিত হয়।[৪১] তিনি ভার্মন্টেও বেশকয়েক সপ্তাহ কাটিয়েছেন।[৪৮] পরে তিনি ইংল্যান্ডে যান, যেখানে তিনি লন্ডনর হ্যাম্পস্টেডের ভিক্টোরিয়া বাঁধ গার্ডেনে বার্ষিক ওপেন-এয়ার গ্রুপ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন।[৪৮] সেখানে পাবলো পিকাসো, সালভাদোর দালি, জর্জেস ব্রাক, পল ক্লির মতো আধুনিক চিত্রশিল্পীদের সাথে সুলতানের চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছিল।[৪৮] সে সময়ে ইউরোপজুড়ে তার কুড়িটির মতো চিত্রপ্রদর্শনী হয়।[২৭] সুলতানের জীবনমুখী ও বাংলার রূপের সেসব চিত্রকর্ম আলোড়িত এবং প্রশংসিত হয়েছিল।[১০]
কাশ্মীরে কিছুকাল বসবাস ও ছবি আঁকার পর, ১৯৫৩ সালের অক্টোবরে তিনি আবার নড়াইলে ফিরে আসেন।[৮] তিনি চিত্রা নদীর তীরে একটি জমিদার বাড়ির পরিত্যক্ত শিবমন্দিরে বসতি স্থাপন করেছিলেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন পোষাপ্রাণীর একটি সারগ্রাহী সংগ্রহ নিয়ে থাকতেন।[৫০] এর কিছুদিন পর শিবমন্দির ত্যাগ করে সুলতান মাছিমদিয়া গ্রামের আরেকটি পরিত্যক্ত দুতলা জমিদারবাড়িতে এসে উঠলেন৷ পরবর্তী তেইশ বছর তিনি মাটির কাছাকাছি বাইরের শিল্পজগত থেকে দূরে থাকতেন, ফলে একজন বিচ্ছিন্ন এবং বোহেমিয়ান হিসেবে তার পরিচিত ঘটে।[২৬][৫১] তার কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন চাঁচুড়ী পুরুলিয়াতে। সেখানকার পরিত্যক্ত কৈলাসটিলা জমিদারবাড়ি পরিষ্কার করে সেখানে তিনি নন্দনকানন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নন্দনকানন স্কুল অব ফাইন আর্টস প্রতিষ্ঠা করেন।[২৩] সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে তিনি কোন পারিশ্রমিক নিতেন না৷[৫] যদিও চারুকলা বিদ্যালয়টি পরে বন্ধ হয়ে যায়। নন্দনকানন প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরে চাচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। চারুকলা বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে অনেকটা অভিমান নিয়েই সুলতান আবার নড়াইলে ফিরে আসেন।[২৭] এবার এসে তিনি শিশুশিক্ষার প্রসারে কাজ শুরু করেন। শেষবয়সে তিনি নড়াইলে শিশুস্বর্গ এবং যশোরে চারুপীঠ নামে দুটি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।[২৩] ১৯৬৯ সালে ২০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা ক্লাবে সুলতানের একটি একক প্রদর্শনী হয়।[৬][৫২]
সত্তরের দশকের শুরুর দিকে তিনি নড়াইল জেলার পুরুলিয়া গ্রামে থাকতেন। সুলতান তার সেরা কিছু কাজ ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে তৈরি করেন। এসময় তিনি তার সবচেয়ে পরিচিত চিত্রকর্ম প্রথম বৃক্ষরোপণ (১৯৭৫) আঁকেন।[৫৩] সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তার কিছু শুভানুধ্যায়ী তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এখানে এসে তিনি কিছু চিত্রকর্ম আঁকেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকায় ১ম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে (দলগত প্রদর্শনী) তার কাজের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়।[৫২] ১৯৭৬ সাল অবধি ঢাকায় আধুনিক চিত্রশিল্পের বিকাশের সময়টায় তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান।[৮][২৩] ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তার পঁচাত্তরটিরও বেশি চিত্রকর্ম নিয়ে একটি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে, এবং এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।[৮][১৪][৩৯] এটি ছিল একইসাথে তার প্রথম বড় প্রদর্শনী এবং ঢাকায় তার প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী।[৩][৫০]
আশির দশক থেকে তিনি আবার নড়াইলেই থাকতে শুরু করেন। তার কাছে যেসব মানুষ এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছিল তাদের জন্য তিনি নিজের ঘর ছেড়ে দেন। জীবজন্তুর প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি একটি অভয়ারণ্য তৈরি করেন। সেখানে তিনি তার পোষা বিড়াল, কুকুর, বেজি এবং বানরের সাথে বাস করতেন—এছাড়াও তার একটি সাপ ছিল।[৫৪] সুলতান শিশুদের চিত্রাঙ্কন শেখানোর জন্য নড়াইল শহরের উপকণ্ঠে কুড়িগ্রামে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন "শিশুস্বর্গ"।[৫৫] ১৯৮১ সনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে তিনি আন্তর্জাতিক জুরী কমিটির সদস্য মনোনীত হন৷[৫] ১৯৮৪ সালেে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাকে আজীবন শিল্পী হিসেবে নিয়োগ দেয়। এর অধীনে সরকারি সহায়তায় আর্থিক ভাতা প্রদান এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে সুলতানের থাকার ব্যবস্থা করা হয়, যার বিনিময়ে শিল্পকলা একাডেমিকে বছরে তাকে ছয়টি ছবি এঁকে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে দুই বছরের জন্য এই চুক্তি হলেও, পরবর্তীতে সুলতানের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তই তা বহাল ছিল ৷ ১৯৮৬ সালে তার তেলরঙে আঁকা ধান-মাড়াই (মতান্তরে ধান ঝাড়াই) শিরোনামের চিত্রকর্মগুলোতে মোটাদাগে গ্রামবাংলার চিত্র ফুটে উঠেছে। যেখানে পেশীবহুল কৃষক, গ্রামীণ নারীর দেহসৌষ্ঠব, গবাদি পশু, দোচালা খড়ের ঘর, গোলাঘর আর মাঠ-ঘাট-নদী-গাছপালার সৌন্দর্য ধরা পরে।[৫৩] ১৯৮৭ সালে ঢাকার জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শতাধিক চিত্রকর্ম নিয়ে তার একক প্রদর্শনী হয়। এই প্রদর্শনীর ক্যাটালগে তার চিত্রকর্মের বিষয়বস্তুগুলোকে তিনি কীভাবে দেখতেন তার বর্ণনা করা হয়েছিল:
এই মানুষগুলো, যারা মাটির কাছাকাছি জীবনযাপন করত এবং যাদের কাঁধে সভ্যতার বোঝা ছিল, সুলতানের কাছে তারা দুর্বল, অবসন্ন বা করুণার যোগ্য ক্ষুধার্ত প্রাণী বলে মনে হয়নি। বরং বিপরীতভাবে, তিনি তাদের ফুলে ওঠা পেশী, সবল দেহ, তেজস্বী প্রাণশক্তি, সুগঠিত নিতম্ব এবং স্ফীত বক্ষ দেখেছিলেন, যারা জীবনের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত ছিল।
— জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকা, ১৯৮৭
প্রদর্শনী পরিদর্শন শেষে ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা জেভিটস বলেছিলেন, 'এই উপমহাদেশের গুটিকয় অসামান্য শিল্পীর মাঝে সবচাইতে জমকালো সুলতান৷ তিনি এশিয়ার কন্ঠস্বর৷" এই প্রদর্শনীর কিছুদিন পরেই শিল্পকলা একাডেমির সাথে চুক্তি সাঙ্গ করে সুলতান আবার নরাইল ফিরে যান। তার চিত্রকর্মের নায়ক ছিল বাংলার কৃষকেরা, তিনি তার শিল্পে তাদের স্থান বর্ণনা করেছিলেন:
“ | আমার চিত্রকর্মের বিষয়বস্তু শক্তির প্রতীক নিয়ে। পেশী সংগ্রামের জন্য ব্যবহার হচ্ছে, মাটির সাথে সংগ্রামে। সেই বাহুর শক্তি হালকে মাটিতে প্রবাহিত করে এবং ফসল ফলায়। শ্রমই ভিত্তি, এবং আমাদের কৃষকদের সেই শ্রমের কারণে এই ভূমি হাজার হাজার বছর ধরে টিকে আছে।[৫২] | ” |
১৯৯২ সালে তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে শিশুদের জন্য সুন্দরী কাঠ দিয়ে ৬০ বাই ১৫ ফুট (১৮.৩ বাই ৪.৬ মিটার) বিশিষ্ট দ্বিতলা নৌকা "ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ" তৈরি করেছিলেন।[২৩][৫৬] তার ইচ্ছা ছিল শিশুরা নৌকায় চড়ে সমুদ্র পরিভ্রমণে বের হবে আর শিল্পচর্চার উপকরণ খুঁজে পাবে।[১২] আশির দশকের শেষদিকে তার স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি টোনে তার সর্বশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।[১৪] সে বছরেরই আগস্ট মাসে শিল্পকলা একডেমির উদ্যোগে নড়াইলে তার ৭০তম জন্মদিন পালন করা হয়।
সুলতান সাধারণত দীর্ঘ কালো কুর্তা, এবং একটি স্কার্ফ পরিধান করতেন। তিনি ছিলেন একজন সুরসাধক এবং বাঁশিবাদক। রাতের বেলা চিত্রা নদীর তীরে তিনি বাঁশি বাজাতেন।[১] এছাড়াও বাজাতেন তবলা। মাঝে মাঝে শাড়ি পরে পায়ে ঘুঙুর পায়ে নাচতেন।[১০] তিনি বিষেষভাবে বিড়ালদের সঙ্গ পছন্দ করতেন।[১] তিনি মুঘল সম্রাটদের নামে তার বিড়ালদের নাম রেখেছিলেন। ১৯৯২ সালে দিকে তার পাচটি বিড়ালের নাম জানা যায়, যথাক্রমে জাহাঙ্গীর, দারাশিকো, সাজাহান, বাবর এবং আওরঙ্গজেব।[৫৭] নিজের সৃষ্টিকর্মের বিষয়ে তার ছিল নির্মোহ দৃষ্টি। তার জীবনের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল শহরকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অনীহা।[৫৮]
ব্যক্তিজীবনে সুলতান ছিলেন অবিবাহিত। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি নড়াইলের মাছিমদিয়ায় নিজ বাসস্থানে পালিত কন্যা নীহার বালাকে নিয়ে বাস করেতেন।[৫৯][৬০] সুলতান ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[৮][২] জীবনের শেষসময় পর্যন্ত তিনি শিশুদের আঁকা শেখাতেন।[৬১]
সুলতানের প্রথমদিকের চিত্রকর্মগুলো পশ্চিমা কৌশল এবং গঠন, বিশেষ করে অন্তর্মুদ্রাবাদ দ্বারা প্রভাবিত। তেলেরঙে তিনি ভিনসেন্ট ফন গখের ইম্পাস্টো কৌশল ব্যবহার করতেন। ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একজন হিসেবে তার তার অন্তর্মুদ্রাবাদী চিত্রকর্ম, তুলির তেজ ও নড়াচড়া, অবয়বের লাবণ্যতা, তাদের জাগতিকতা এবং কামুক সৌন্দর্য সম্পূর্ণরূপে মুক্ত নান্দনিকতার অন্তর্নিহিত যুক্তি প্রদান করতে সক্ষম।[১] তার জলরঙের চিত্রগুলো ছিল প্রধানত প্রাকৃতিক দৃশ্য, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।[৮][৬২] তার চিত্রকর্মের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবন।[৮] তার চিত্রকর্মের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল প্রাণবন্ত রঙের যথেষ্ট ব্যবহার।[৬১] ১৯৫২ সালে ত্রৈমাসিক পাকিস্তানে লেখক এস. আমজাদ আলী সুলতানকে "ল্যান্ডস্কেপ শিল্পী" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তার দৃশ্যপটে থাকা মানবচরিত্রগুলো ছিল গৌণ। আলীর মতে, সুলতান স্মৃতি থেকে আঁকতেন এবং তার শৈলী ছিল এমন যা নির্দিষ্ট কোনো পরিচয় বা উৎসের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না।[৬২] পাকিস্তানে আমলে তিনি কিছু বিমূর্ত ছবি এঁকেছেন, যদিও পরে তা আর দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এর পেছনে একটি কারণ হতে পারে মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধের পরে, আমি সাধারণ মানুষ এবং কৃষকদের আঁকার টান অনুভব করেছি। তাদের অবদানই শহরটিকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, এবং সেই কারণেই তাদের দৈহিক দেহ আমাকে আন্দোলিত করেছিল।"[২০]
পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছিল। অনেক শিল্পীই সেখানে নতুন শৈলী, গড়ন এবং মিডিয়া নিয়ে উপস্থিত হচ্ছিলেন। কিন্তু সুলতান সেসময়ও গ্রামীণ জীবনের প্রতি তার চিরন্তন আকর্ষণ এবং সহমর্মিতার ফলে নড়াইলে থেকে যান, অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। নড়াইলে থাকার সময় তিনি কিছু ড্রয়িং করেছিলেন, যেখানে তিনি প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের ছবি এঁকেছেন।[৬৩] তার শিল্পকর্মের স্বরূপ খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে। একজন আভঁ-গার্দ শিল্পী হিসেবে, সুলতান কৃষকদের তার প্রেরণা হিসেবে বেছে নেন।[৬৪] তার কাজগুলোতে কৃষকদের দৃঢ় সাহস, টিকে থাকার শক্তি এবং জমির প্রতি অবিরাম প্রতিশ্রুতি চিত্রিত হয়েছে।[৬৪] তার সেসময়কার চিত্রকর্মগুলোতে গ্রামীণ কৃষকদের দেখা যায় পেশীবহুল এবং বলশালী হিসেবে। এবিষয়ে তার বক্তব্য হল:[১২]
“ | আমাদের দেশের মানুষ তো অনেক রুগ্ন, কৃষকায়। একেবারে কৃষক যে সেও খুব রোগা, তার গরু দুটো, বলদ দুটো -সেটাও রোগা...। [আমার ছবিতে তাদের বলিষ্ঠ হওয়াটা] মনের ব্যাপার। মন থেকে ওদের যেমনভাবে আমি ভালোবাসি যে আমাদের দেশের কৃষক সম্প্রদায়ইতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গড়েছিল। অর্থবিত্ত ওরাই তো যোগান দেয়। ...আর এই যত জমিদার রাজা মহারাজা আমাদের দেশের কম কেউ না। সবাই তো কৃষিনির্ভর একই জাতির ছেলে। আমার অতিকায় ছবিগুলোর কৃষকের অতিকায় অতিকায় দেহটা এই প্রশ্নই জাগায় যে, ওরা কৃশ কেন? ওরা রু্গ্ন কেন- যারা আমাদের অন্ন যোগায়। ফসল ফলায়।[১০] | ” |
সুলতানের পুরুষদের চিত্রে পেশীবহুল আধিক্য চিত্রিত করার প্রবণতার কারণে, কিছু শিল্প বিশেষজ্ঞ তার রচনাগুলিতে ইউরোপীয় রেনেসাঁ শিল্পের প্রভাব খুঁজে পান।[৬১] ১৯৭৬ সালে তার আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রদর্শনীতে তার চিত্রকর্মের মহিমা নতুন করে প্রস্ফুটিত হয়। এই চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে গ্রাম আর সেই কেন্দ্রের রূপকার কৃষককে আপন মহিমায় সেখানে অধিষ্ঠিত দেখা যায়। গ্রাম ও গ্রামের মানুষ ছিল তার শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা আর উপকরণ ছিল কৃষক এবং কৃষকের জীবন চেতনা। বিদ্যালয় জীবনে সুলতান কয়লা দিয়ে ছবি আঁকতেন।[৬৪] পরিণত বয়সে তিনি তেলরঙ এবং জলরঙে চিত্রকর্ম আঁকতেন৷ পাশাপাশি এঁকেছেন রেখাচিত্র। আঁকার জন্য তিনি একেবারে সাধারণ কাগজ, রঙ এবং চটের ক্যানভাস ব্যবহার করেছেন। এজন্য তার অনেক চিত্রকর্মই রঙ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, যদিও এসবের প্রতি তিনি তেমন ভ্রূক্ষেপ করতেন না। নড়াইলে থাকাকালীন সময়ে তিনি অনেক চিত্রকর্ম কয়লা দিয়ে একেছিলেন তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়৷ সুলতান তার সমাপ্ত চিত্রকর্মগুলোর সামান্যই যত্ন নিতেন, ফলে সেগুলির অধিকাংশ হারিয়ে যায়। চিত্রকর্ম সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে এমন উপকরণ ব্যবহারেও তিনি নির্লিপ্ত ছিলেন।[১] ফলে জীবিতকালে তিনি নিজের শিল্পকর্ম সংরক্ষণে কোন তাগিদ দেখাননি।[৬৫]
পঞ্চাশ দশকের শেষের দিকে, অর্থাৎ ১৯৫৯ সালে তার পেন্সিলে আঁকা কয়েকটি রেখাচিত্রে পাশ্চাত্যের রোমান্টিকতার প্রভাব লক্ষ্যণীয়। তবে, তার পরবর্তী কাজগুলিতে বিশেষত, ১৯৭৬ সালে প্রদর্শিত কাজগুলিতে, তার শিল্প কৌশল এবং গঠনগুলিকে উপনিবেশিত করার একটি ধ্রুবক প্রলোভন দেখা যায়।[৬৬] সুলতানের ক্যানভাসে হাল চাষ, রোপণ, মাড়াই এবং মাছ ধরার মতো দৈনন্দিন কাজে কৃষিশ্রমিকরা ভূমিকা পালন করতেন। প্রাকৃতিক দৃশ্য—ফসলের জমি, নদী, গ্রাম—তখন কেবল পটভূমি হিসেবে ছিল। তার আঁকা চরিত্রগুলোর, যেমন ১৯৭৬ সালের চরদখল চিত্রকর্মের, বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের অতিরঞ্জিত পেশীবহুল গঠন। এইভাবে, তিনি বাংলাদেশের সমর্থ, পরিশ্রমী কৃষকদের আভ্যন্তরীণ শক্তি ফুটিয়ে তোলেন, যারা জাতির মেরুদণ্ড, যা আরও বাস্তবধর্মী চিত্রায়ণে হয়তো লুকায়িত থেকে যেত।[৩][৫][৪৪] তার চিত্রকর্মে গ্রামীণ রমণীদের দেখা যায় সুডৌল ও সুঠাম গড়নে। নারীর মধ্যে উপস্থিত চিরাচরিত রূপলাবণ্যের সাথে তিনি শক্তির সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন। একই সাথে তার এ চিত্রকর্মগুলোতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের শ্রেণী-দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির কিছু ক্রূর বাস্তবতা উঠে এসেছে। তার এরকম দুটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম হচ্ছে হত্যাযজ্ঞ (১৯৮৭) এবং চরদখল (১৯৮৮)।[৮] ১৯৮৭ সালের ৬ মে সাপ্তাহিক প্রহরের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সুলতান তার চিত্রকর্মে পেশীবহুল কৃষকদের চিত্রায়নের পেছনের অনুপ্রেরণার কথা তুলে ধরেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, "কৃষকরাই আমাদের দেশের প্রকৃত নায়ক, কোনও নায়ক কি কখনও দুর্বল হতে পারে? তারা আমাদের অস্তিত্বের মূল চালিকা শক্তি, তাই তাদের সবসময় সবল হিসেবে চিত্রিত করা উচিত। তারা কঠিন মাটিতে লাঙল চালিয়ে ফসল ফলায়, অথচ প্রায়ই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটায়। বাস্তবতা হলো, আমাদের টিকে থাকা তাদের শ্রমের উপর নির্ভর করে। বাস্তব জীবনে তাদের কৃশতা ও বঞ্চনা সত্ত্বেও আমি তাদের শক্তির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। আমি আশা করি, এই উপস্থাপনা তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি সমৃদ্ধি ও শ্রদ্ধার এক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করবে।[৬] তার চিত্রকর্মে পুরুষদের তুলনায় নারীদের কোমলভাবে চিত্রায়িত করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে নারীদের ভালোবাসা ও মমতায় পূর্ণ ভূমিকা তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।[৬] চিত্রকর্মে তার নারীরা- কোমল-স্তনবিশিষ্ট এবং তাদের লাবণ্য প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের অন্তর্গত।[৬১]
সুলতানের চিত্রকর্মে কখনো নগর উপাদান বা আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি কিছুই অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যা তিনি আমদানিকৃত মনে করতেন। এগুলো আধুনিক শিল্প হিসাবে গণ্য করা যায় কারণ তিনি অতীতের শিল্পকর্মের রীতিকে ভেঙে দিয়েছেন, কিন্তু এগুলো রূপবাদী শিল্প ছিল যা একটি বর্ণনা ধারণ করে। তিনি বিমূর্ত শিল্পের প্রতি তেমন আগ্রহী ছিলেন না।[৩][৬২] সুলতান আধুনিকতার একটি নিজস্ব সংজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। তার তেমন কোনো অনুসারী ছিলনা যারা একই সংজ্ঞা মেনে শিল্পচর্চা করতেন। একারণেই তার প্রতিষ্ঠিত আধুনিকতার স্বরূপ নিয়ে নতুন কোনো ধারার সৃষ্টি হয়নি। কেউ তার মত করে আধুনিকতার ব্যাখ্যাও দেননি। এছাড়া তার মত মাটির জীবন তখনকার কোনো শিল্পী যাপন করেননি। তার কাছে আধুনিকতার সংজ্ঞা কেমন ছিল তা বলতে গিয়ে বাংলাপিডিয়ায় তার জীবনীর লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন:[৮]
তাঁর কাছে অবয়বধর্মিতাই প্রধান। তিনি আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেননি; তাঁর আধুনিকতা ছিল জীবনের শাশ্বত বোধ ও শিকড়ের প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ফর্মের নিরীক্ষাকে গুরুত্ব দেননি, দিয়েছেন মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং ঔপনিবেশিক সংগ্রামের নানা প্রকাশকে তিনি সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন। এটাই তাঁর কাছে ছিল 'আধুনিকতা', অর্থাৎ তিনি ইউরো-কেন্দ্রিক, নগর নির্ভর, যান্ত্রিকতা-আবদ্ধ আধুনিকতার পরিবর্তে অন্বেষণ করেছেন অনেকটা ইউরোপের রেনেসাঁর শিল্পীদের মত মানবের কর্মবিশ্বকে।
শিল্প সমালোচকদের মতে, সুলতান সম্ভবত সমসাময়িক বাংলাদেশের সবচেয়ে রহস্যময় চিত্রশিল্পী ছিলেন।[৬৭] তার চিত্রকর্ম অতি সরল কিন্তু অত্যন্ত দার্শনিকতাপূর্ণ।[১] আহমদ ছফার মতে সুলতানের কর্ম রেনেসাঁর চিত্রকর্মের যথেষ্ট সাক্ষ্য বহন করে।[১] পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সুলতান বেশিরভাগই বাংলা ও কাশ্মীরের ল্যান্ডস্কেপ একেছেন।[৪৮] কাশ্মীরে, যখন তিনি তার স্মৃতি থেকে বাংলার চিত্র আঁকলেন, তখন সেগুলো ছিল জলরঙে আঁকা, যাতে ছিল পাম গাছ ও নৌকা।[৫৪] তিনি তার চিত্রকর্মের বিষয় হিসাবে কৃষকদের বেছে নিয়েছিলেন। তার চিত্রকর্মগুলি কৃষকদের বীরত্ব, বেঁচে থাকার শক্তি এবং ভূমির প্রতি অবিরাম প্রতিশ্রুতিকে চিত্রিত করেছে।[১] সুলতানের চরিত্র ছিল কৃষক, গ্রামীণ নারী, শিশু, পশু এমনকি পোষা প্রাণী।[১] তিনি বাড়িতে তৈরি মাটির রং ব্যবহার করে বড় পাটের ক্যানভাসে ছবি আঁকতেন।[১] তার জলরংয়ে আঁকা চিত্রকর্মগুলিতে তিনি উজ্জ্বল-প্রাণবন্ত এবং গ্রামীণ জীবনের মনোরম দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন। সুলতানের অনেক আকর্ষণীয় তৈলচিত্র গ্রামজীবনের সংগ্রাম এবং স্থিতিস্থাপকতার মহাকাব্যিক আখ্যান তৈরি করে। তিনি কোনো ফাঁকা স্থান না রেখেই পুরো ক্যানভাস জুড়ে আঁকতেন। সুলতানের অক্ষত থাকা অনেক চিত্রকর্মে প্রাকৃতিক দৃশ্য, শান্ত প্রাণী, প্রাণবন্ত পুরুষ এবং স্বেচ্ছাচারী নারীদের চিত্রায়ন দেখা যায়।[৪] আধুনিক ইতিহাস গবেষণার পথিকৃৎ সিরাজুল ইসলাম এক প্রদর্শনী দেখে লিখেছিলেন, "এখানে এই অর্থে পার্থক্য সহ একটি প্রদর্শন রয়েছে যে এত বড় ক্যানভাসে এবং এত বড় পরিসরে এর আগে কোনও শিল্পী নিপুণ স্ট্রোক চালানোর সাহস করেননি। … এস এম সুলতান তার অসাধারণ শক্তিশালী চিত্রকর্মগুলিতে একটি নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক স্পর্শ প্রদান করেছেন।"[১০]
শিল্পসমালোচক মারিও পালমা তার "টেলস অব অ্যান আর্ট লাভার" গ্রন্থে সুলতান সম্পর্কে লিখেছেন, "আমার মতে, সুলতান হলেন বাংলাদেশের মাটি ও আত্মার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার... তার চিত্রকর্মগুলি সমসাময়িক শিল্পের দৃশ্যে সত্যিই আকর্ষণীয় এবং অনন্য।"[১] বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সুলতানের উপর তার দেশজ আধুনিকতা : সুলতানের কাজ (১৯৯৯) বইয়ে বলেছেন, "তাহলে সুলতান আসলে কে? একজন লুকানো পিকাসো? একজন অনাবিষ্কৃত ভিনসেন্ট ফন গখ? নিজের মধ্যে, সুলতান উভয়কে একত্রিত করেছেন। হয়তো আরও বেশি..."।[১] তবে ১৯৮৭ সালের ৬ মে, সাপ্তাহিক প্রহারের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে, সুলতান স্পষ্টভাবে পিকাসোর সাথে তার শৈলীগত তুলনা নিশ্চিত বা অস্বীকার করেননি।[১] সুলতান বলেছিলেন, "পিকাসো এবং আমার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। পিকাসো আলংকারিক শিল্প থেকে নন-ফিগারেটিভ শিল্পে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন এবং আমি নন-ফিগারেটিভ আর্ট থেকে আলংকারিক শিল্পে স্থানান্তরিত হয়েছি। পিকাসো তার গের্নিকা (১৯৩৭) চিত্রকর্মে সংঘটিত সহিংসতার একটি ছবি এঁকেছিলেন। আমি একটি বলিদানের ছবি এঁকেছিলাম।"[১] আহমদ ছফা, দৈনিক যুগান্তরে লিখেছেন "সুলতানের চিত্রকর্মে অনন্তকাল এবং উজ্জ্বলতা রয়েছে যা অন্য শিল্পীদের মধ্যে খুব কমই পাওয়া যায়। জয়নুল আবেদিনও একজন প্রখ্যাত শিল্পী ছিলেন, কিন্তু সুলতানের সার্বজনীনতাই তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ শিল্পীর মধ্যে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি অনুপস্থিত।"।[৬৮]
সুলতান শেষজীবনে বলে গিয়েছেন:[১২]
“ | আমি সুখী। আমার কোনো অভাব নেই। সকল দিক দিয়েই আমি প্রশান্তির মধ্যে দিন কাটাই। আমার সব অভাবেরই পরিসমাপ্তি ঘটেছে। | ” |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধাপক লালা রুখ সেলিম, বাংলাদেশের আধুনিকতার চারজন অগ্রদূতের মধ্যে একজন হিসেবে সুলতানকে বর্ণনা করেছেন, যাদের মধ্যে জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দীন আহমেদ, এবং কামরুল হাসানও রয়েছেন।[৩] লেখক আহমদ ছফা তার বিশ্লেষণমূলক লেখায় সুলতান সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, "সুলতানের চিত্রে যে মানুষগুলো ফুটে উঠেছে, তারা যদিও বাংলাদেশের, আসলে তারা পৃথিবীরই সন্তান… তিনি তুলনাহীন, কারণ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যামিনী রায়, নন্দলাল বসু, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, আব্দুর রহমান চুঘতাই কিংবা আহমেদ সাঈদ নাগীর মতো খ্যাতিমান শিল্পীদের মতো উপমহাদেশীয় আদর্শ ও ধাঁচের বাইরে বেরিয়ে এসে তিনি নিজেকে মহাকাব্যিক সৃষ্টিকারী হিসেবে প্রমাণ করেছেন।"[৪১]
১৯৫০-এর দশকে শিকাগো ক্রনিকলে সুলতানকে 'মানবতাকে উপড়ে ফেলা' একজন ভালো শিল্পী হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছিল।[৫৪] ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাকে আজীবন শিল্পী হিসেবে নিয়োগ দেয়, যা তার শিল্পের অবিচল প্রভাব ও শিল্পজগতে তার সম্মানিত অবস্থানের প্রতিফলন।[৭০][২৭][৬] সুলতানের চিত্রকর্ম জমি চাষ (১৯৮৬) বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের "১০০টি প্রসিদ্ধ বস্তুর" তালিকায় ৯৩তম স্থানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।[৭১][৭২] ২০২৪ সালে তার জন্ম শতবর্ষে সুলতান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যাপন কমিটি গঠিত হয়েছিল।[৬৫]
সাহিত্যিক হাসনাত আব্দুল হাই সুলতানের জীবন নিয়ে সুলতান (১৯৯১) নামে একটি গবেষণামূলক উপন্যাস লিখেছেন,[১৮] যে বিষয়ে কবি শামসুর রাহমান তার "সুলতান তার সুলতানাত ছাড়েননি" প্রবন্ধে সুপারিশ করেছিলেন।[৪১] ২০০৫ সালে আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন গুরু নামে একটি বই প্রকাশ করেন, যাতে সুলতানের ৬৮টি আলোকচিত্র রয়েছে। এই ছবিগুলো ১৯৭৮ সালে সুলতানের সাথে নাসির আলী মামুনের প্রথম সাক্ষাতে সময় থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোলা সহস্রাধিক ছবির মধ্যে থেকে বাছাইকৃত হয়েছে।[৭৩]
সুলতানের স্মৃতিসংগ্রহ সুলতান কমপ্লেক্স চিত্রা নদীর তীরে নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া এলাকায় মনোরম পরিবেশে প্রায় ২৬ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এখানে চিত্রশিল্পী সুলতানকে সমাহিত করা হয়েছে। সমাধির সামনে সুলতানের আদি বাসভবনের একটি ছোট অংশ রয়েছে। লাল সিরামিক দিয়ে মোড়ানো কমপ্লেক্সটি শান্ত, নির্জন এবং চমৎকার সব চিত্রকর্ম সুলতান কমপ্লেক্সের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। কমপ্লেক্সের পাশে চিত্রা নদীর পাড়ে সংরক্ষিত হয়েছে সুলতানের তৈরি "শিশুস্বর্গ"।[৭৪] এই কমপ্লেক্সে শিশুদের জন্য সুলতানের তৈরি নৌকা "শিশুস্বর্গ" সংরক্ষিত আছে।[৫৯]
নড়াইলের মাছিমদিয়ায় চিত্রা নদীর পারে সরকারি উদ্যোগে ২০১৬ সালে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করা হয়।[৭৫] দোতলা জাদুঘরটি শিল্পীর স্মৃতিতে পূর্ণ, যা তার শিল্পকর্মের সমৃদ্ধ স্মারক বহন করে। যদিও কিছু জিনিসপত্র সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে, তারপরও সুলতানের কিছু ব্যক্তিগত সামগ্রী এখনও রয়েছে - যার মধ্যে রয়েছে কুরআন, পোশাক, রং-তুলি, ক্যানভাস, বাদ্যযন্ত্র, লাঠি, টর্চ, আয়না, ফুলদানি, ছবি এবং আরও অনেক কিছু। এই সংগ্রহশালায় সুলতানের ৭৭টি শিল্পকর্ম রয়েছে যার মধ্যে একটি অসম্পূর্ণ।[৫৯]
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি "সুলতান স্বর্ণ পদক" নামে একটি পুরস্কার চালু করেছে। সুলতানের নামে নামকরণ করা এই পুরস্কারটি প্রতি বছর তার জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে একজন বিশিষ্ট শিল্পীকে প্রদান করা হয়।[৭৬] ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, মুর্তজা বশীর, আমিনুল ইসলাম, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, মাহমুদুল হক, আব্দুস শাকুর শাহ্, আবুল বারাক আলভী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, আবু তাহের, হামিদুজ্জামান খান, মনিরুল ইসলাম, মনসুর উল করিম, কালিদাস কর্মকার, আব্দুল মান্নান, হাশেম খান, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, মোস্তফা মন্ওয়ার এবং ফরিদা জামান।[৭৬]
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদ, সুলতানের জীবন ও কাজের উপর ভিত্তি করে আদম সুরত নামে ৫৪ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রায় সাত বছর ধরে সুলতানের সাহচর্যে থেকে মাসুদ এটি নির্মাণ করেন।[৪] এই প্রামাণ্যচিত্রে সুলতানের দৈনন্দিন কর্মজীবনের পাশাপাশি বাংলার সংস্কৃতি এবং কৃষিচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।[৭৭] মাসুদের মতে, প্রাথমিক অবস্থায় স্বভাববশত সুলতান গণমাধ্যম বা ক্যামেরার সামনে আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও পরে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছিলেন কেবল এই শর্তে যে "... আমি বরং নিমিত্ত, আমাকে উপলক্ষ করে আপনারা বাংলার কৃষকের ওপর ছবি বানান। আমি আপনাদের সঙ্গে ক্যাটালিস্ট হিসেবে থাকব।"[৭৮]
সুলতানের জীবন এবং কর্মের ওপর ২০১০ সালে ফাহিম মিউজিকের ব্যানারে লাল মিয়া নামে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন আমিরুল ইসলাম। এতে সুলতানের স্মৃতিবিজড়িত নড়াইলের বিভিন্ন স্থান, চিত্রা নদী, শিশুস্বর্গ, বিভিন্ন সময়ে সুলতানের আঁকা চিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্র সংকলিত হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সুলতানের পাঁচ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকার।[৭৯]
স্বাধীন বাংলাদেশে সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে মাত্র দুটি শিল্প প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমটি ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এবং দ্বিতীয়টি ১৯৮৭ সালে জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (বর্তমানে গ্যোটে ইনস্টিটিউট)।[৬৮]
সুলতানের জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পর দেশে-বিদেশে তার বহু একক চিত্রপ্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে।[১৩] এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে তার ১৭টি একক প্রদর্শনী হয়েছিল।[৫]
বছর | স্থান | তথ্যসূত্র |
---|---|---|
১৯৪৬ | সিমলা, ভারত | প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন কাপুরথালার মহারাজা[৮][১৩] |
১৯৪৮ | লাহোর, পাকিস্তান | প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন পাকিস্তানের ৭ম প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুন[১৩] |
১৯৪৯ | করাচি, পাকিস্তান | প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ফাতেমা জিন্নাহ[১৩] |
১৯৫০ | ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র | [১৩] |
ওয়াইএমসিএ, ওয়াশিংটন, ডি.সি. | [৪৯] | |
বোস্টন, যুক্তরাষ্ট্র | [১৩] | |
ইন্টারন্যাশনাল হাউজ, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র | [১৩] | |
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যান আর্বার, মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র | [১৩] | |
২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ | খুলনা ক্লাব, খুলনা, পূর্ব পাকিস্তান | [৬][৫২] |
৫-১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ | বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, বাংলাদেশ | বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর সুলতানের প্রথম একক প্রদর্শনী[১৩] |
১৯৮১ | এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী, ফুকুওকা জাদুঘর, জাপান | [৫] |
১৯৮৭, এপ্রিল-মে | গ্যোটে ইনস্টিটিউট, ঢাকা, বাংলাদেশ | [৮][১৩] |
১৯৯৪ | গ্যালারি টোন, ঢাকা, বাংলাদেশ | [১৪] |
২১ সেপ্টেম্বর - ১১অক্টোবর ২০১৩ | বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইনার্টস, ঢাকা | [৮০] |
বছর | স্থান | তথ্যসূত্র |
---|---|---|
১৯৫৬ | ভিক্টোরিয়া এম্ব্যাঙ্কমেন্ট গার্ডেন, হ্যামস্টেড, লন্ডন, যুক্তরাজ্য | পাবলো পিকাসো, সালভাদোর দালি, জর্জেস ব্রাক, পল ক্লী, জন মার্টিন প্রমুখের সাথে যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।[১৩][৪][৪৮] |
১৯৭৫ | জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, বাংলাদেশ | [১৩] |
১৯৭৬ | জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, বাংলাদেশ | [১৩] |
তিনি ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার গ্রহণ করেন।[১৩] তিনি ১৯৫১ সালে নিউ ইয়র্কে, ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন৷ এছাড়াও ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে আন্তর্জাতিক জুরী কমিটির অন্যতম সদস্য মনোনীত হন৷[৫] কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে "ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট" সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি বলছেন, "শিল্পের কখনো পুরস্কার হয় না। শিল্পের ভার তো প্রকৃতি স্বীয় হাতে প্রদান করে।"[১০]
বছর | পুরস্কার | আয়োজক | টীকা |
---|---|---|---|
১৯৮২ | "ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট" খেতাব | কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় | [১০] |
"ম্যান অব এশিয়া" খেতাব | এশিয়া উইক | [৮১] | |
একুশে পদক | বাংলাদেশ সরকার | চারুকলায় অবদান[৮২] | |
১৯৮৪ | "আর্টিস্ট অব রেসিডেন্ট" | বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি | [২৭] |
১৯৮৬ | বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মান | বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ | [৪][১৩] |
চাঁদের হাট পদক | [৮১] | ||
১৯৯৩ | স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার | বাংলাদেশ সরকার | চারুকলায় অবদান[৫] |