এস রাজারত্নম | |
---|---|
সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৯৮০ – ১৯৮৫ সাথে ছিলেন গোহ কেং সুই | |
প্রধানমন্ত্রী | লি কুয়ান ইউ |
পূর্বসূরী | গোহ কেং সুই |
উত্তরসূরী | ওং টেং চেওং |
ঊর্ধ্বতন মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৯৮৫ – ১৯৮৮ | |
প্রধানমন্ত্রী | লি কুয়ান ইউ |
পূর্বসূরী | নেই |
উত্তরসূরী | লি কুয়ান ইউ |
শ্রমমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৯৬৮ – ১৯৭১ | |
প্রধানমন্ত্রী | লি কুয়ান ইউ |
পররাষ্ট্রমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৯ আগস্ট ১৯৬৫ – ১ জুন ১৯৮০ | |
প্রধানমন্ত্রী | লি কুয়ান ইউ |
পূর্বসূরী | নেই |
উত্তরসূরী | সুপ্পিয়াহ ধনবলন |
সংস্কৃতি মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৩ জুন ১৯৫৯ – ৯ আগস্ট ১৯৬৫ | |
প্রধানমন্ত্রী | লি কুয়ান ইউ |
পূর্বসূরী | নেই |
উত্তরসূরী | ওসমান ওক |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | চিন্নাতাম্বি রাজারত্নম ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৫ জাফনা, সীলন (এখন শ্রীলঙ্কা) |
মৃত্যু | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সিঙ্গাপুর | (বয়স ৯০)
জাতীয়তা | সিঙ্গাপুরীয় |
রাজনৈতিক দল | পিপলস এ্যাকশন পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | পিরোসকা ফেহের |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | কিংস কলেজ লন্ডন |
চিন্নাতাম্বি রাজারত্নম (২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৫ - ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৬) ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন ১৯৫৯ থেকে '৮৮ সাল পর্যন্ত টানা দীর্ঘমেয়াদী মন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্য। তিনি ছিলেন সিঙ্গাপুর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম কর্ণধার। তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন সিঙ্গাপুর গঠনে। তিনি বই লেখকও ছিলেন। ২০০৭ সালে 'এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ' নামের একটি প্রতিষ্ঠান তার প্রতি সম্মান জানিয়ে খোলা হয়।
চিন্নতাম্বি ছিলেন একজন তামিল। তার পিতার নাম ছিলো সবপতী পিল্লাই চিন্নাতাম্বি এবং মাতার নাম এন আন্নামাহ। বর্তমান শ্রীলঙ্কায় জন্ম নেন চিন্নাতাম্বি এবং পরে মালয় (বর্তমানে মালয়েশিয়া) তে শৈশব এবং কৈশোর কাটান। পড়াশোনাও করেন ওখানে, যদিও সিঙ্গাপুরের র্যাফল্স ইন্সটিটিউশনেও তিনি কিছুকাল পড়েন।[১][২][৩]
১৯৫৪ সালে চিন্নাতাম্বি সিঙ্গাপুরের জাতির পিতা লি কুয়ান ইউ, গোহ কেং সুই, তোহ চিন চিয়ে এবং অন্যান্য সমমনা ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করেন 'পিপলস এ্যাকশন পার্টি' যা চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরকে আজ অবধি শাসন করছে।[৪][৫][৬]
রাজারত্নম সিঙ্গাপুরকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সর্বজাতিবাদী উন্নত রাষ্ট্র গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। উগ্র বামপন্থী বা ডানপন্থী রাজনীতিকে তিনি খুব শক্তভাবে ঘৃণা করতেন। অচিরেই তিনি সিঙ্গাপুরের তামিলভাষী জনগণের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যান, যদিও তিনি সব জায়গায় তার যে কোনো বক্তৃতা ইংরেজি ভাষায় দিতেন। তাকে ১৯৫৯ সালে লি কুয়ান ইউ তার প্রথম মন্ত্রিসভায় রাজারত্নমকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতা লাভের বছরে রাজারত্মমকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানান প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান। ১৯৬৬ সালে রাজারত্নম সিঙ্গাপুর সামরিক বাহিনীর জন্য শপথবাক্য লিখে দেন।
যেহেতু রাজারত্নম সিঙ্গাপুরের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তাই তাকে অনেক দেশ ঘুরে সেগুলোর স্বীকৃতি পাবার ব্যবস্থা করতে হয়েছিলো। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইসরায়েল এবং ভারতের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।[৭]
একটি শক্তিশালী সিঙ্গাপুর সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে রাজারত্নম এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোহ কেং সুই ইসরায়েল সফর করে ওদের সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষকদের সিঙ্গাপুর এসে প্রশিক্ষণ দিতে বলেন এবং তারা তাই করেছিলো, সিঙ্গাপুর সামরিক বাহিনী ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বড় এবং শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।[৮] ১৯৬৭ সালে 'আসিয়ান' নামের প্রতিষ্ঠানটির জন্ম হয় এবং রাজারত্নম এই ধারণার অন্যতম রুপকার ছিলেন।[৪] ১৯৭৮ সালে ভিয়েতনাম সামরিক বাহিনীর কম্বোডিয়া আক্রমণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে কুবুদ্ধি দেন রাজারত্নম।[৫]
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শ্রম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত করেন, রাজারত্নম এ পদে থাকাকালীন শ্রমিকদের জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন, বিদেশী বিনিয়োগ বসানো এবং ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং বার্মা থেকে শ্রমিক তার দেশে এনে কাজ করান।[৩]
১৯৮০ সালে রাজারত্নম সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন, তার সঙ্গে গোহ কেং সুইকেও (যিনি স্বাধীন সিঙ্গাপুরের প্রথম স্বরাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন) একই পদে নিয়োগ দেন লি কুয়ান ইউ।[৯] উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজারত্নম লি কুয়ান ইউ এর অনুপস্থিতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোসহ অনেক বড় বড় কাজের সিদ্ধান্ত (অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক) নিতেন।[১০] ১৯৮৫ সালে রাজারত্নম উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে সিনিয়র মিনিস্টার নামক এক উপদেষ্টার পদ (প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার উপদেষ্টা) পান এবং ১৯৮৮ সালে রাজনীতি থেকে অবসরের আগ পর্যন্ত এ পদে বহাল থাকেন।[১১]
রাজারত্নম লন্ডনে পিরোসকা ফেহের নামের একজনের সাথে প্রেম করা শুরু করেন এবং গোপনে বিয়ে করে ফেলেন ১৯৪৩ সালে।[১২] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে রাজারত্নম তার ভালোবাসার মানুষকে সিঙ্গাপুর নিয়ে আসেন, কিন্তু রাজারত্নমের মাতা-পিতা প্রেম করে বিয়ে করাকে ঘৃণা করতেন এবং পিরোসকার ধর্ম তাদের সাথে মেলেনা বলে এই বিয়ে বাতিল বলে ঘোষণা দেন।[১১] রাজারত্নম পিরোসকাকে কখনোই গর্ভবতী করতে চাইতেননা, পিরোসকা তার মৃত্যু পর্যন্ত (১৯৮৯) রাজারত্নমকে ভালোবাসতেন, রাজারত্নমও তাকে খুব পছন্দ করতেন।[১৩]
২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজারত্নম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার নিজ বাসায় মারা যান।[১৪] সিঙ্গাপুরের সরকারী টিভি মিডিয়া ঐ দিন ১ মিনিট কালো স্ক্রীন বানিয়েছিলো, ২৩ থেকে ২৫ তারিখ সারা সিঙ্গাপুরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।[১৫]