এসকেপ প্ল্যান | |
---|---|
![]() চলচ্চিত্রের পোস্টার | |
পরিচালক | মিকেল হুফস্ত্রম |
প্রযোজক |
|
চিত্রনাট্যকার | মাইলস চ্যাপম্যান আর্নেল জেস্কো |
কাহিনিকার | মাইলস চ্যাপম্যান |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | অ্যালেক্স হেফিস |
চিত্রগ্রাহক | ব্রেন্ডান গ্যালভিন |
সম্পাদক | এলিয়ট গ্রিনবার্গ |
প্রযোজনা কোম্পানি | অ্যাটমসফিয়ার এন্টারটেইনমেন্ট এমেট/ ফুর্লা ফিল্মস |
পরিবেশক | সামিট এন্টারটেইনমেন্ট লায়ন্সগেট |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১১৫ মিনিট[৩] |
দেশ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণব্যয় | $ ৫ কোটি[৪] |
আয় | $ ১৩ কোটি ৭০ লক্ষ[৫] |
এসকেপ প্ল্যান[৬][৭] (শুরুর দিকে এক্সিট প্ল্যান ও দ্য টুম্ব নামে নামকরণ করা হয়েছিল) ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকশন-থ্রিলার ধাঁচের একটি মার্কিন চলচ্চিত্র। এতে অভিনয় করেছেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন, আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, জিম ক্যাভিজেল, ফিফটি সেন্ট, ভিনি জোনস, ভিনসেন্ট ড'নাফ্রিও, অ্যামি রায়ান সহ আরো অনেকে।[৮] ছায়াছবিটি পরিচালনা করেন সুইডীয় চলচ্চিত্র পরিচালক মিকেল হুফস্ত্রম এবং এর চিত্রনাট্য লেখেন মাইলস চ্যাপম্যান ও আর্নেল জেস্কো (আর্নেল জেস্কো (Arnell Jesko) হল চিত্রনাট্যকার জেসন কেলার (Jason Keller) এর ছদ্মনাম যা আসলে তার নামেরই অ্যানাগ্রাম)।[৯] চলচ্চিত্রটিতে সাবেক আইনজীবী রে ব্রেসলিনকে (সিলভেস্টার স্ট্যালোন) বিশ্বের সবচেয়ে গোপনীয় ও সুরক্ষিত কারাগারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আর অপর এক কারাসঙ্গী এমিল রটমেয়ারের (আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার) সাহায্যে তার সেখান থেকে পালানো নিয়েই কাহিনী আবর্তিত হয়।
চলচ্চিত্রটি ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর[১] ফিলিপাইনে প্রথম প্রদর্শিত হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ১৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায়।
সাবেক আইনজীবী রে ব্রেসলিন (সিলভেস্টার স্ট্যালোন), ব্রেসলিন-ক্লার্ক নামের লস অ্যাঞ্জেলেস-ভিত্তিক একটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের যৌথ কর্ণধার। তার এই প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টিত কারাগারের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করে থাকে। ব্রেসলিন সেসব কারাগারে বন্দী হিসেবে প্রবেশ করে সেগুলোর গঠন প্রকৌশল এবং সেখানে কর্মরত নিরাপত্তা রক্ষীদের আচার-আচরণ ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেখানকার বিভিন্ন দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করে। এরপরে সেসব দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সে কারাগার থেকে পালিয়ে বাইরে আসে। ব্রেসলিন এর আগে যখন আইনজীবী হিসাবে কর্মরত ছিল, তখন এক আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিল। পরবর্তীতে সেই আসামী কারাগার থেকে পালিয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করে। সেই থেকে তার জীবনের লক্ষ্য হল, প্রতিটি কারাগার যেন শতভাগ ত্রুটিমুক্ত হয় যাতে কোন বন্দী এর থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ না হয়।
ব্রেসলিন ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার লেস্টার ক্লার্ক (ভিনসেন্ট ড'নাফ্রিও) এর কাছে সিআইএ এজেন্ট জেসিকা মেয়ার (ক্যায়ট্রিওনা বাল্ফ) একটি লোভনীয় অঙ্কের প্রস্তাব নিয়ে আসে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ব্রেসলিনকে একটি সর্বোচ্চ স্তরের গোপনীয় কারাগারে গিয়ে যাচাই করতে হবে যে সেটি ত্রুটিমুক্ত কিনা। কিন্তু এবারে সে কিংবা তার প্রতিষ্ঠানের কেউই কারাগারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবে না। মেয়ার এই বলে যুক্তি দেখায় যে, ব্রেসলিনের কারাগার থেকে পালানোর ক্ষেত্রে বাইরের সাহায্য নেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করার জন্যই এই শর্তারোপ। যদিও এই শর্ত ব্রেসলিনের নিজস্ব নিয়মের বিরুদ্ধে যায়, তবুও সে রাজি হয়ে যায়। সে "অ্যান্থনি পোর্টস" নামের একজন স্পেনীয় সন্ত্রাসীর পরিচয় ধারণ করে লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্সে নিজেকে ধরা দেয়। এর আগে অবশ্য তার সহকর্মীরা তার হাতে একটি ট্র্যাকিং মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেয় যাতে তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানা যায়। কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায় যখন বন্দীকারীরা তার হাত থেকে সেই চিপটি বের করে নিয়ে তাকে অজ্ঞান করে ফেলে। চিপটি বের করে নেওয়ার ফলে তার সহকর্মীদের কাছে তার অবস্থান অজ্ঞাতই থেকে যায়।
জ্ঞান ফিরে আসার পর ব্রেসলিন নিজেকে একটি স্বচ্ছ কাচে ঘেরা প্রিজন সেলে আবিষ্কার করে। কারাগারটি পুরোপুরিভাবে জানালা বিহীন থাকায়, তার অবস্থান সম্পর্কে জানার কোন সুযোগ ছিল না। ব্রেসলিন কারাগারের জেলার হব্সের (জিম ক্যাভিজেল) সাথে কথা বলে বুঝতে পারে যে তাকে যে জেলারের কথা বলা হয়েছিল সে আর এই ব্যক্তি এক নয়। সে জেলারের কাছে নিজের গোপন কোড দিয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হতে চায় কিন্তু জেলার তা অস্বীকার করে। ব্রেসলিন বুঝতে পারে যে তাকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। কারাগারে তার সাথে এমিল রটমেয়ার (আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার) নামের এক বন্দীর সাথে পরিচয় হয়। রটমেয়ার ভিক্টর ম্যানহেম-এর হয়ে কাজ করত। ভিক্টরকে অনেকটা আধুনিক যুগের রবিন হুড বলা যায়। ব্রেসলিন ও রটমেয়ার একটি সাজানো মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে যাতে করে ব্রেসলিনকে একক বন্দীকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তার উদ্দেশ্য সফল হয়। তাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন হ্যালোজেন বাতি দ্বারা নির্যাতন করা হয়। ব্রেসলিন বুঝতে পারে যে কারাকক্ষের মেঝে অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি কিন্তু মেঝেকে আটকিয়ে রাখা বল্টু গুলো ইস্পাতের। সে রটমেয়ারকে একটি ধাতব পাত যোগাড় করে দিতে বলে। তার কথামত রটমেয়ার জেলারের অফিস থেকে তা সংগ্রহ করে তাকে দেয়। এবার ব্রেসলিন ও রটমেয়ার আরেক মুসলিম কারাবন্দী জাভেদের (ফারান তাহির) সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয় যাতে করে তাদেরকে আবার সেই কারাকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর ব্রেসলিন হ্যালোজেন বাতির আলোকে ধাতব পাতের সাহায্যে প্রতিফলিত করে মেঝেতে থাকা বল্টু গুলোকে গরম করে। তাপে বল্টু গুলো প্রসারিত হয়ে আলগা হয়ে যায়। তখন সে মেঝের পাতটাকে উঠিয়ে ফেলে নিচে একটি চলাচলের পথ দেখতে পায়।
ব্রেসলিন পথ ধরে সামনে এগিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে সে আবিষ্কার করে যে কারাগারটি আসলে একটি পণ্যবাহী জাহাজের ভিতরে। আর জাহাজটি কোন এক সাগরের মাঝখানে ভাসছে যা থেকে পালানো প্রায় অসম্ভব। ব্রেসলিন ও রটমেয়ার তারপরও হাল ছেড়ে না দিয়ে পালানোর পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা নিরাপত্তারক্ষীদের উপর নজর রেখে তাদের দৈনন্দিন কার্যসূচি পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু হব্স ব্রেসলিনের সাথে দেখা করে বলে যে হব্স তার আসল পরিচয় জানে। আর এটাও বলে যে তাকে প্রধান নিরাপত্তারক্ষী ড্রেক (ভিনি জোনস) সবসময়ই কড়া নজরদারীতে রাখছে যাতে করে সে কখনই পালাতে না পারে। ব্রেসলিন হব্সকে বলে যে সে রটমেয়ারের কাছ থেকে ম্যানহেম সম্বন্ধে তথ্য তাকে এনে দিতে পারে যদি সে তাকে মুক্ত করে দিতে রাজি হয়। হব্স তার প্রস্তাব মেনে নেয়।
কথামত ব্রেসলিন হব্সকে ম্যানহেম সম্পর্কে তথ্য দিতে থাকে কিন্তু সেগুলো সবই ভূয়া। এরমধ্যে, ব্রেসলিনের এই কাজের জন্য প্রাপ্ত চেক ফ্রিজ হয়ে যাওয়ায় তার সহকর্মী অ্যাবিগেল রস (অ্যামি রায়ান) ও হাশ (ফিফটি সেন্ট) প্রতিষ্ঠানের আরেক অংশীদার ক্লার্ককে সন্দেহ করে। তারা কিছু হ্যাক করা ডকুমেন্ট থেকে এটা জানতে পারে যে "দ্য টুম্ব" গুপ্ত নামে একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কারাগার আছে যেটা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এদিকে, ক্লার্ক হব্সের সাথে যোগাযোগ করে বলে যে ব্রেসলিন যেন কোন অবস্থাতেই পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে।
জাভেদ হব্সের সাথে দেখা করে বলে যে তাকে যেন রাতের নামাজ আদায় করার জন্য জাহাজের উপরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। হব্স তাতে রাজি হয়। কিন্তু এটা আসলে ব্রেসলিন আর রটমেয়ারের পরিকল্পনারই অংশ ছিল। ব্রেসলিন একটি হাতে তৈরি সেক্সট্যান্ট যন্ত্র গোপনে জাভেদকে দিয়ে দেয়। জাভেদ সেটা নিয়ে জাহাজের উপরে গিয়ে সেখানকার অক্ষাংশ বের করে। জাভেদের নির্ণয় করা অক্ষাংশ আর আবহাওয়ার গতি প্রকৃতি বুঝে ব্রেসলিন অনুমান করে যে তারা মরক্কোর কাছাকাছি আটলান্টিক মহাসাগরে ভাসছে। ব্রেসলিন কারাগার হাসপাতালে ডক্টর কেইরির (স্যাম নিল) সাথে দেখা করে এবং তাকে ও রটমেয়ারকে সেখান থেকে পালাতে সাহায্য করার জন্য তাকে রাজি করিয়ে ফেলে। সেই মোতাবেক ডক্টর কেইরি ম্যানহেইমকে একটি ইমেইল পাঠায়। এদিকে ব্রেসলিন তার সেল থেকে একটি ভুয়া গোপনীয় সংকেত প্রচার করে যে সেল ব্লক সি-তে একটি দাঙ্গা বাঁধাতে হবে। হব্স সেটা দেখতে পেয়ে সেল ব্লক সি-এর নিরাপত্তা জোরদার করে। আর ঠিক এমনটাই ব্রেসলিন চাচ্ছিল। জাভেদ সেল ব্লক এ-তে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেয়। আর সেখানে নিরাপত্তা দুর্বল থাকায় ব্রেসলিন, রটমেয়ার আর জাভেদ নিরপত্তারক্ষীদের বোকা বানিয়ে দ্রুত জাহাজের ডেকে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে হব্স তাদের পরিকল্পনা বুঝে ফেলে জাহাজের উপরে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়।
তাদেরকে আটকানোর জন্য হব্স লোকজন সমেত তাদেরকে খুঁজতে থাকে। এর এক পর্যায়ে ব্রেসলিন ড্রেককে মেরে ফেলে। কিন্তু হব্স ও তার লোকজন জাভেদকে গুলি করে মেরে ফেলে। ব্রেসলিন ইঞ্জিন রুমে গিয়ে জাহাজের ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেম রিবুট করে যাতে রটমেয়ার উপরে যাওয়ার দরজা খুলে ফেলতে পারে। এদিকে ম্যানহেম-এর হেলিকপ্টার জাহাজের কাছে এসে সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়। রটমেয়ার হেলিকপ্টারের উপরে উঠে যায়। আর ব্রেসলিন জাহাজের স্বয়ংক্রিয় পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে জাহাজর নিচে সাগরে ফ্লাশ হয়ে যায়। পরে তাকে হেলিকপ্টারে উঠিয়ে নেওয়া হয়। হব্স তখন তাদের দিকে তাক করে গুলি ছোঁড়ে। ব্রেসলিন তখন জাহাজের উপর হব্সের কাছাকাছি থাকা তেলের পাত্রগুলোকে গুলি করে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাকে মেরে ফেলে।
তারা মরক্কোর একটি সমুদ্র সৈকতে অবতরণ করে। সেখানে রটমেয়ার প্রকাশ করে যে সেই আসলে ম্যানহেম আর মেয়ার তারই মেয়ে। "পোর্টস" আসলে একটা সংকেত ছিল যাতে ম্যানহেম বুঝতে পারে যে ব্রেসলিনকে তাকে পালাতে সাহায্য করার জন্য পাঠানো হয়েছে। আর হব্স প্রথমে ব্রেসলিনের এই নকল পরিচয়টা সম্বন্ধে জানত না। পরবর্তীতে, অ্যাবিগেল ব্রেসলিনকে জানায় যে ক্লার্ককে ঐ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ৫০ লক্ষ ডলার বেতনভুক্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যদি সে দেখাতে পারে যে এই কারাগারটি থেকে পালানো কোনমতেই সম্ভব না। ক্লার্ক এরই মধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু হাশ তাকে মায়ামিতে খুঁজে বের করে। তারপরে সে ক্লার্ককে একটা বাক্সে আটকিয়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলা একটা পণ্যবাহী জাহাজের উপর ফেলে রেখে আসে।
|
|