এস্তোনীয়রা ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন জাতিগুলির একটি। এরা প্রায় ৫ হাজার বছর ধরে বাল্টিক সাগরের তীরে বসবাস করে আসছে। ১৩শ শতক পর্যন্ত এস্তোনীয়রা একটি স্বাধীন জাতি ছিল। এরপর ক্রমান্বয়ে ডেনমার্ক, জার্মানি, পোল্যান্ড, সুইডেন এবং সবশেষে রাশিয়া দেশটি দখল করে। ১৭২১ সালে সুইডেনের সাথে উসিকাউপুংকি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে এস্তোনিয়া রাশিয়ার অধীনে আসে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রুশ সাম্রাজ্যের পতন হলে এস্তোনিয়া ১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসে নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করে। তার্তুর শান্তিচুক্তিতে রাশিয়া এস্তোনিয়ার স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়।
১৯২০ সালের এস্তোনিয়ার প্রথম সংবিধান গৃহীত হয় এবং এখানে একটি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এস্তোনিয়া আরও প্রায় ২২ বছর স্বাধীন ছিল। স্বাধীন এস্তোনিয়াতে সব ধর্ম ও সংস্কৃতির লোকদের সমান মর্যাদা ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এস্তোনিয়া নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বন করেছিল। কিন্তু ১৯৩৯ সালের মলতফ-রিবেনট্রপ চুক্তির প্রেক্ষিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন বলপূর্বক এস্তোনিয়া দখলে নিয়ে নেয়। এই চুক্তিতে নাৎসি বাহিনী এস্তোনিয়া, লাতভিয়া ও লিথুয়ানিয়াকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে দিয়ে দেয় এবং প্রতিদানে পোল্যান্ডের বেশির ভাগ অংশ নিজের দখলে আনে। ১৯৪০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন এস্তোনিয়াকে নিজের একটি অংশ হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং এর নামকরণ করা হয় এস্তোনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তৎকালীন বিশ্বের অপর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই এস্তোনিয়া, লাতভিয়া বা লিথুয়ানিয়ার উপর সোভিয়েত সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়নি।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এস্তোনিয়ার প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার অধিবাসী বা প্রায় ১৭% লোক মারা যায়। নাৎসিরা বহু ইহুদী এস্তোনীয়কে (মোট ইহুদী এস্তোনীয়-র প্রায় এক-চতুর্থাংশ) হত্যা করে।
১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে মিখাইল গর্বাচফের অধীনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর কড়াকড়ি শিথিল হলে এস্তোনীয়রা স্বাধীকারের উপর সোচ্চার হয়ে ওঠে। ১৯৮৮ সাল নাগাদ হাজার হাজার লোক পূর্বতন জাতীয় গানগুলি গাওয়া শুরু করে। এটি ছিল এস্তোনিয়ার "সঙ্গীত বিপ্লব"।
১৯৮৮ সালের এস্তোনিয়ার সুপ্রীম কোর্ট সার্বভৌমত্বের বিবৃতি পাস করেন। ১৯৯০ সালে এস্তোনিয়া প্রজাতন্ত্র নামটি পুনরায় বহাল করা হয় এবং ১৯৯১ সালের সোভিয়েত ক্যু-র পর এস্তোনিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত সুপ্রীম কোর্ট স্বাধীন এস্তোনিয়াকে স্বীকৃতি দেয়। কোন রক্ত না ঝরিয়েই এস্তোনিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৯১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর এস্তোনিয়া জাতিসংঘের সদস্য হয়। এছাড়াও এটি IAEA, ICAO, UNCTAD, WHO, WIPO, UNESCO, ILO, IMF, WB/EBRD এবং OSCE-র সদস্য।
তিন বছর আলোচনার পর ১৯৯৪ সালের ৩১শে আগস্ট রুশ ফেডারেশনের সামরিক বাহিনী এস্তোনিয়া থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।