তালিকার নম্বর | ওএইচ ৫ |
---|---|
প্রচলিত নাম | জিঞ্জ অথবা নাটক্র্যাকার মানব |
প্রজাতি | প্যারানথ্রোপাস বয়েজী |
বয়স | সাড়ে সতের লক্ষ বছর |
আবিষ্কারের স্থান | অলদুভাই গর্জে, তানজানিয়া |
আবিষ্কারের তারিখ | ১৯৫৯, ১৭ জুলাই |
আবিষ্কারক | ম্যারী লিকি |
'ওএইচ ৫ (অলদুভাই হোমিনিড ৫, এটি পরিচিত জিনজানথ্রোপাস অথবা "নাটক্র্যাকার মানব" হিসেবেও। একে কথ্যভাষায় "প্রিয় বালক" বলে[১]) হচ্ছে প্যারানথ্রোপাস বয়েজী প্রজাতির জীবাশ্ম হয়ে যাওয়া ক্র্যানিয়াম। এটি নৃবিজ্ঞানী-প্রত্ননৃবিজ্ঞানী ম্যারী লিকি ১৯৫৯ সালে তানজানিয়ার অলদুভাই গর্জে আবিষ্কার করেন। তার স্বামী ও বিজ্ঞানী লুইস লিকি এই হোমিনিডকে জিনজানথ্রোপাস বয়েজী হিসেবে শ্রেণিবিন্যাসিত করেন। তার মতে এটি আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ; যা আনুমানিক ২০ লক্ষ বছর পূর্বে বিচরণ করত। যদিও এই বিতর্কের অবসান ঘটে কারণ এই বৈশিষ্ট্য পরবর্তীতে স্থুলকায় অস্ট্রালোপিথেসিনের সাথে সাদৃশ্যপুর্ণ ছিল এবং পরবর্তীতে হোমো হাবিলিস আবিষ্কৃত হয়।
ম্যারী এবং লুইস লিকি তানজানিয়ায় ১৯৩০ সাল থেকে খনন কাজ শুরু করেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তাদের সমস্ত কাজই মুলতবী হয়ে পরে। তারা ১৯৫১ সালে পৌছান এবং পরবর্তী কিছু বছরে তারা সুপ্রাচীন দ্বব্য ও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া স্তন্যপায়ীর জীবাশ্ম খুজে পান।[২] ১৯৫৯ সালের ১৭ জুলাই সকালে লুইস অসুস্থ বোধ করতে থাকে তখন ম্যারী একটি গিরিখাতের দিকে যান।[৩] সকাল ১১ টার কাছাকাছি সময়ে হাটাহাটি করতে করতে তিনি হঠাৎ একটা হাড়ের টুকরো দেখেন; যা দেখতে হোমিনিডের মাথার খুলির মত ছিল।[৪]
তিনি উপর থেকে ধুলাবালি সরাতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরপরই বের হয়ে আসলো দুইটি বড় বড় দাঁত ও একটি বাকা চোয়াল। তিনি তাৎক্ষণিক ভাবে ছুটে গেলেন ক্যাম্পে; চিৎকার দিয়ে বললেন, আমি তাকে খুঁজে পেয়েছি।[৫] উভয়েই সেখানে গিয়ে জীবাশ্মের টুকরোর চারপাশে পাথরের একটা দালানের মত তৈরী করেন; যাতে করে খারাপ আবহাওয়া কোনোভাবে তাকে নষ্ট করতে না পারে।[৬] পরদিন তারা অপেক্ষা করতে থাকেন আলোকচ্চিত্রী ডেস বার্লেটের আগমণের জন্য; যাতে করে তাদের কাজের একটা নথি সংগৃহীত থাকে। তার পৌছার পর খুড়াখুড়ি শুরু হয়।[৬] ৬ আগস্ট মাথার খুলির আংশিক অংশ উদ্ধার হয়।[৭]
পরীক্ষা করার পরে লুইস জীবাশ্মের দন্তবিন্যাসের পরে সিদ্ধান্ত নেয়; এই প্রজাতিটি কোনো কিশোরের; একে ম্যারী ডিয়ার বয় বা প্রিয় বালক বলে সম্বোধন করেন।[৮] তিনি আরো বিশ্বাস করেছিলেন এটা আধুনিক মানুষেরই পূর্বপুরুষ তবে অস্ট্রালোপিথেসিন এর উপপরিবার।[৯] গবেষণা সাময়িকীতে লেখার সময় এই প্রজাতির নাম তিনি রেখেছিলেন টিটানহোমো মিরাবিলিস (মানুষের মত চমৎকার টিটান),[১০] কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এর নাম রাখেন জিনজানথ্রোপাস বয়েজী (পূর্ব আফ্রিকার মানব)। জিঞ্জ শব্দটি এসেছে আরবী শব্দ থেকে যার অর্থ পূর্ব আফ্রিকার এলাকা; এন্থ্রোপাস শব্দের অর্থ মানুষের মত বৈশিষ্ট্যসূচক; এবং বয়েজী শব্দটি এসেছে লুইস পরিবারের গবেষণার পৃষ্ঠপোষকতাকারী চার্লস ওয়াটসন বয়েজী নাম থেকে। ওয়াটসন ১৯৪৮ সাল থেকেই লুইস পরিবারের গবেষণার অর্থের যোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন।[১১] প্যারানথ্রোপাস গণের সাথে মিল থাকার কারণে পরবর্তীতে অনেক বিতর্কের পর এর নামকরণ করা হয় প্যারানথ্রোপাস বয়েজী।[১২] ৫ বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে কততম নমুনার সংখ্যা; তা।[১৩]
লুইস খননকার্য সম্পাদনের পরের সপ্তাহে ন্যাচার সাময়িকীর জন্য একটি গবেষণা প্রবন্ধ লিখেন। সে প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল "অলদুভাই থেকে প্রাপ্ত নতুন জীবাশ্মের করোটি"। সেই জীবাশ্মের চারপাশে অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণির জীবাশ্মের প্রাচুর্যতা ছিল।[১৪] ১৯৬০ সালে কারেন্ট এনথ্রোপলজি সাময়িকীতে তার খননকার্যের পুর্ন বিবরণ নিয়ে "মানববিবর্তনের নতুন সংযোগ" শিরোনামে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ফ্রান্সিস ক্ল্যার্ক হাওয়েল লুইস লিকির এই গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশিত হবার পূর্বে তার অন্বেষনকে পুনঃগবেষণা করেন। তিনি লিকির গবেষণাপ্রবন্ধকে সমর্থন করেন।[১৫]
লুইস ১৯৬০ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির জন্য "পৃথিবীর প্রাক মানব অন্বেষণ" শিরোনামেও প্রবন্ধ লিখেন। তার অনুমান ছিল এই জীবাশ্মের বয়স ৬ লক্ষ বছরের পুরনো।[১৬] বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূরসায়নবিদ গার্নিস কার্টিস এবং জ্যাক ইভারন্ডেন পটাশিয়াম-আর্গন ডেটিং এর মাধ্যমে সেই জায়গাটির বয়স পুনঃপরিমাপ করেন। তারা দেখেন, এর বয়স সাড়ে সতের লক্ষ বছরের পুরাতন।[১৭] ভূমির কাল নির্ধারণীর এই কৌশল ছিল অভূতপূর্ব। ওএইচ ৫ ছিল প্রথম হোমিনিন যাদের এভাবে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে।[১৮] একই প্রক্রিয়ায় ওএইচ ৭ নামক হোমো হাবিলিস এর জীবাশ্মের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছিল।[১৮]
বহিঃস্থ চিত্র | |
---|---|
![]() |
ম্যান্ডিবল বিহীন মাথার খুলি পুনঃনির্মাণের পর সমসাময়িক গণমাধ্যম এই প্রজাতিকে বাদামখোর মানব হিসেবে অভিহিত করে। কারণ তার পিছনের দাঁত ও চোয়াল বৃহত্তর ছিল।[১৯] লিকির সহযোগী ফিলিপ টোবাইয়াস এই নামকরণ করেছিলেন।[২০] পাথর দ্বারা তৈরী প্রাকযুগের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সেস্থানে পাওয়া গিয়েছিল।[২১]
লুইস প্রথমদিকে প্যাঃ বয়েজী কে আধুনিক মানুষের সরাসরী পূর্বপুরুষ হিসেবে ভেবে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ও তার স্ত্রী মিলে যখন হোমো হাবিলিস আবিষ্কার করেন; তিনি তার ধারণা পরিবর্তন করেন। হোমো হাবিলিস এর প্যাঃ বয়েজী এর চেয়ে বড় মস্তিষ্ক ছিল।[২২] তারা হোমো হাবিলিসকে দুই বছর পর সেই একই এলাকায় আবিষ্কার করেন।[২৩] ওএইচ৫ লিকিকে প্রখ্যাত করে দেয় এবং প্রত্ননৃবিজ্ঞানের জগতে তিনি সাড়া ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।[২৪] আবিষ্কারের পর এই খুলি কেনিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ১৯৬৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত এটি সেখানেই ছিল। পরবর্তীতে তানজানিয়ার জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়।[২৫] এটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত জিঞ্জানথ্রোপাস নামেই সেখানে রাখা হয়।[২৫]