ওজোন স্তর (Ozone layer) হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি স্তর যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। এই স্তর থাকে প্রধানত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে কমবেশি ২০-৩০ কিমি উপরে অবস্থিত। এই স্তরের পুরুত্ব স্থানভেদে এবং মৌসুমভেদে কমবেশি হয়। [১]
বায়ুমণ্ডলে ওজোনের প্রায় ৯০ শতাংশ স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওজোন কেন্দ্রীকরণ প্রায় ২০ এবং ৪০ কিলোমিটার (৬৬,০০০ এবং ১৩১,০০০ ফুট), তারা যেখানে মিলিয়ন প্রতি প্রায় ২ থেকে ৮ অংশ থেকে পরিসীমার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হয়। যদি এই ওজোনের সবটুকু অংশ সমুদ্রতল এর বায়ু চাপ দ্বারা সংকুচিত করা হয় তাহলে এটি শুধুমাত্র ৩ মিলিমিটার (১/৮ ইঞ্চি) পুরু হবে!ওজন গ্যাসের ঘনত্ব মাপা হয় DU(ডবসন ইউনিট )-এ |বিজ্ঞানী ডবসন আবিষ্কৃত স্পেক্ট্রোফটোমেটের এর সাহায্যে এই ঘনত্ব পরিমাপ করা হয় | নিরক্ষীয় গ্যাসের উপর ওজন গ্যাসের ঘনত্ব 150DU, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ওপর 350DU, মেরু ও উপমেয় অঞ্চলের ওপর 450DU| ওজোন স্তরের বিনাশের কারণ:-
বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী 1970 সালের পর থেকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার এর মোট ওজনের প্রায় 4% ধ্বংস হয়েছে| উভয় মেরুর দিকে ধ্বংসের মাত্রা বেশি ওজন স্তর বিনাশের কারণ গুলিকে দুটি স্তরে ভাগ করা হয়| যথা:-1) প্রাকৃতিক ঘটনা:- অগ্নুৎপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনায়়় ওজোন স্তরে প্রাকৃতিক ঘটনায় ওজোন স্তরের কিছুটা নষ্ট হয়|2) অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া :- অতিবেগুনি রশ্মি অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ওজন অণুর ভেঙ্গে অক্সিজেন অণু ও পরমাণু উৎপন্ন করে|3) সূর্য রশ্মির পরিমাণ বৃদ্ধি:- প্রতি 10 থেকে 15 বছর অন্তর সূর্য রশ্মির পরিমাণ বাড়ে |সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গ বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন নাইট্রাস অক্সাইড এ পরিণত হয় |নাইট্রাস অক্সাইড রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্যে ওজন স্তর রক্ষা করে|4)
বায়ু মন্ডলের ঊর্ধ্ব স্তরে বায়ুর সঞ্চালন
-
ফরাসী পদার্থবিদ চার্লস ফ্যব্রি এবং হেনরি বুইসন ১৯১৩ সালে ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আবহাওয়াবিদ জি এম বি ডবসন ওজোনস্তর নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন। ১৯২৮ সাল থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে তিনি ওজোন পর্যবেক্ষণ স্টেশনসমূহের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেন।
ওজোনস্তরে ওজোনের ঘনত্ব খুবই কম হলেও জীবনের জন্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি এটি শোষণ করে নেয়। ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর মধ্যম মাত্রার(তরঙ্গদৈর্ঘ্যের) শতকরা ৯৭-৯৯ অংশই শোষণ করে নেয়, যা কিনা ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থানরত উদ্ভাসিত জীবনসমূহের সমূহ ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম। মধ্যম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সূর্যের এই অতিবেগুণী রশ্মি মানব দেহের ত্বক এমনকি হাড়ের ক্যান্সার সহ অন্যান্য মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টিতে সমর্থ। এই ক্ষতিকর রশ্মি পৃথিবীর জীবজগতের সকল প্রাণের প্রতি তীব্র হুমকি স্বরূপ। বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর প্রতিনিয়তই এই মারাত্নক ক্ষতিকর অতিবেগুণী রশ্নিগুলোকে প্রতিহত করে পৃথিবীর প্রাণিকুলকে রক্ষা করছে।
ওজোন স্তরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ভূমিকার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ওজোন লেয়ার সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখটি মনোনীত করেছে।