ওডেওন্সপ্লাৎস (ইংরেজি: Odeonsplatz) জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের মধ্যবর্তী মিউনিখের অবস্থিত একটি বৃহদাকার চত্বর। উনিশ শতকের প্রথম দিকে লিও ভন ক্লেঞ্জ চত্বরটি নির্মাণ করেছেন। বিখ্যাত রাস্তা লুডউইগসট্রেসের দক্ষিণদিকের শেষে চত্বরটি অবস্থিত। রাস্তাটি ও চত্বরটি একই সময়ে তৈরি করা হয়েছিল। ওডেওন্সপ্লাৎস নামটি এসেছে ওডেওন শব্দ থেকে। ওডেওন একটি কনসার্ট হলের নাম, আর এই কনসার্ট হলটি চত্বরটির উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। ১৯২৩ সালে এই চত্বরে একটি বন্দুকযুদ্ধ হয়।
ওডেওন্সপ্লাৎস পুরনো শহরের উত্তর দিকে অবস্থিত। এটি আলস্তাদ-লেহেল (পূর্ব দিকে) ও ম্যাক্সভোরস্তাদের (পশ্চিম দিকে) সীমান্তে অবস্থিত। চত্বরটির উত্তর দিকে রয়েছে ওডেওন্স ভবন (১৮২৬-১৮২৮, বর্তমানে বাভারিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবন), এরপর পেলেস লিউছেনবার্গ (১৮১৭-২১, বর্তমানে বাভারিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়), এই দুটো ভবনই রোমের পালাজো ফার্নেসের নকশাশৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে। দুটো ভবনের মাঝখান দিয়ে একটি নাম না জানা রাস্তা পেলেস লুডউইগ ফারদিনান্দ (১৮২৫-২৬, বর্তমানে সিমেন্স কোম্পানির সদরদপ্তর) পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। চত্বরটির পূর্ব দিকে রয়েছে ক্লেঞ্জের বাজার ভবন, এর সাথে ক্যাফে তামবোসি লাগানো।
ফিল্ডারহলটি ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত লোগগিয়া দ্যা লেঞ্জি ভবনের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে।
ওডেওন্সপ্লাৎসে একই নামে ইউ-বান রেল পরিসেবা চালু রয়েছে, এবং বাস চলাচলের রূটে চত্বরটি মিউজিয়াম লাইন (জাদুঘর রেখা) নামে পরিচিত। ১৯৭২ সাল থেকে, চত্বরের দক্ষিণ অংশটি কেন্দ্রীয় মিউনিখ পথচারী অঞ্চলের অংশ ছিল।
১৭৯০ সালের দিকে, মিউনিখের পুরনো শহরের দেয়ালগুলি অপসারণের মাধ্যমে স্কোয়াবিং ফটককে একটি নতুন চত্বরের সাথে প্রতিস্থাপন করার জন্য এবং রেজেইডিজ থেকে ন্যুমফুয়েনবার্গ প্রাসাদ (ফ্রুস্তেন্ভেওয়েগ, বর্তমান রাস্তাটির শুরুতে) আরো চিত্তাকর্ষক করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বাভারিয়ার প্রথম রাজা লুডউইগ, ক্লেঞ্জকে নিয়োগ দেন লুডউইগসট্রেস রাস্তার সাথে একটি চত্বর তৈরি করার জন্য। সেই নকশা অনুসারেই রাস্তা ও চত্বরটি তৈরি করা হয়। প্রথমেই ইতালিয়ান স্তাপত্যে তৈরি পেলেস লিউছেনবার্গ তৈরি করা হয়। অবশ্য ক্লেঞ্জ, লুডউইগের নকশায় খানিকটা ভিন্নতা এনেছিলেন।[১][২] ১৮৬২ সালে চত্বরের মুখেই প্রথম রাজা লুডউইগের ঘোড়ায় চড়া মূর্তি স্থাপন করা হয়। মূর্তিটি ওডেওন ও লিউছেনবার্গ পেলেসের মধ্যখানে অবস্থিত। মূর্তিটি তৈরি করেন লুডউইগ ভন সোয়ানথালের এবং উদ্বোধন করেন ম্যাক্স ভন ওয়ান্ডমান।[৩][৪]
ওডেওন্সপ্লাৎস বিভিন্ন কুচকাওয়াজ ও অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হয়। ১৯৮৮ সালে ফ্রাঞ্জ জোসেফ স্ট্রশের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফ্রাঞ্চ-রাশিয়ার যুদ্ধে যেসকল যোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে একটি বিজয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয় যা লুডউইগসট্রেস রাস্তা ধরে চত্বরের শেষ মাথায়, ফিল্ডারহলে গিয়ে শেষ হয়। কুচকাওয়াজের সময় বক্তৃতা মঞ্চ লুডউইগ ১ম এর মূর্তির পাশেই স্থাপন করা হয়। মিউনিখের অন্যতম আকর্ষণ অক্টোবরফেস্টের বার্ষিক কুচকাওয়াজও চত্বরের মধ্য দিয়েই অতিক্রম করে।
১৯২৩ সালে চত্বরটিতে একটি বন্দুকযুদ্ধ সংগঠিত হয়। এতে চারজন পুলিশ অফিসার এবং ষোল জন নাৎসি সৈনিক নিহত হয়।
হিটলারের ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবির বিষয়বস্তু ছিল ওডেওন্সপ্লাৎস।[৫] মারিনপ্লাৎজের মতো, চত্বরটি অনেক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে।