মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
আনু. ১০০,০০০–১২০,০০০[১][২] | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
পাকিস্তান | ৬৪,০০০ (২০১৮) |
আফগানিস্তান | ২১,০০০ (২০১৮) |
তাজিকিস্তান | ২০,০০০ (২০১৮) |
চীন | ১৪,০০০ (২০১৮) |
ভাষা | |
ওয়াখি | |
ধর্ম | |
প্রধানত ইসলাম (ইসমাইলি) | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
অন্যান্য ইরানি জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ওসেটীয় জাতি ও ইঘনোবি |
ওয়াখি জনগোষ্ঠী (ওয়াখি: ښیک مردمِش, শুঘনি: Waxiēn, ফার্সি: مردمان وخی; রুশ: Ваханцы; চীনা: 瓦汗 বা 瓦罕), ওখিক (وخیک) নামেও পরিচিত, [৩] মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার স্থানীয় একটি ইরানী জাতিগোষ্ঠী। তারা আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান এবং চীনে বসবাস করে—বিশেষত আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডোরে এবং তার আশেপাশে অবস্থিত, পাকিস্তানের গিলগিট-বালতিস্তান এবং চিত্রালের উত্তরের অংশ ও তাজিকিস্তানের গর্নো-বাদখশান স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং চীনের শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।[৪] ওয়াখি জনগণ ওয়াখি ভাষার স্থানীয় ভাষাভাষী মানুষ, এটি একটি পূর্ব ইরানি ভাষা।
ওয়াখি জনগোষ্ঠীর লোকেরা নিজেদেরকে খিক বলে অভিহিত করে এবং তাদের ভাষাকে খিক জিক বলে। [৩] প্রতিবেশীদের দেওয়া বহিরাগত নাম "ওয়াখি" এসেছে উক্স-এর থেকে, যা ওয়াখান অঞ্চলের স্থানীয় নাম। এটি অক্সাস নদীর (আমু দরিয়া) পুরানো নাম ওয়াক্সসু থেকে এসেছে। আমু দরিয়া একটি প্রধান নদী, যা তাজিকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমানায় ভাখশ এবং পঞ্জ নদীর মিলনে গঠিত।
ওয়াখি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫০,০০০–৫৮,০০০। এই জনগোষ্ঠী আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান এবং চীনের শিনচিয়াং অঞ্চলে বিভক্ত। ওয়াখি জনগণ হাজার হাজার বছর না হলেও শত শত বছর ধরে এই অঞ্চলগুলিতে বসবাস করে আসছে। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে দ্য গ্রেট গেমের -এর কূটচাল তাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে চারটি দেশের সীমানায় বিভক্ত করে দেয়, ফলে তারা চারটি পৃথক দেশে বাস করতে বাধ্য হয়।
তাজিকিস্তানে, ওয়াখিরা গোর্নো-বাদাখশান স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রোশতকালা জেলা এবং ইশকোশিম জেলায়।
আফগানিস্তানে, ওয়াখি প্রথমে বাদাখশান প্রদেশের ওয়াখান জেলায় বাস করে।
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের গিলগিত-বালতিস্তানে ওয়াখি জনগোষ্ঠী প্রধানত হুনজার উপরের অংশে বসবাস করে, যা জনপ্রিয়ভাবে গোজাল নামে পরিচিত। ওয়াখি ভাষাভাষীরা ঘিজার জেলার ইশকোমান উপত্যকা এবং ইয়াসিন উপত্যকার কিছু গ্রামেও বসবাস করে।
পাকিস্তানে, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চিত্রাল জেলার ব্রোগালেও ওয়াখি বাস করে।
চীনে, ওয়াখিরা তাশকুরগান তাজিক স্বায়ত্তশাসিত জেলার বাসিন্দা যা জিনজিয়াংয়ের কাশগার এলাকার মধ্যে একটি প্রশাসনিক এলাকা, প্রধানত দফদার শহরে অবস্থিত।
চীনে, ওয়াখি জনগণ সারিকোলি জনগণের সঙ্গে "তাজিক" নামে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত এবং তারা জাতিগত সংখ্যালঘু স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা পেয়েছে। আফগানিস্তানে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে "পামিরি" বলা হয়। তাজিকিস্তানে রাষ্ট্র তাদের "তাজিক" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তবে তারা নিজেদেরকে "পামিরি" হিসেবে পরিচয় দেয়। পাকিস্তানে তারা নিজেদেরকে "ওয়াখি," "পামিরি," বা "গুজালি" নামে অভিহিত করে।
ওয়াখিরা প্রধানত নিজারি ইসমাইলি শিয়া ইসলামকে মেনে চলে, যেটিকে তাদের জাতিগত ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তারা আগা খানের অনুসারী। [৩] [৫] [৬]
ওয়াখিরা মূলত যাযাবর, তারা ইয়াক ও ঘোড়ার পালের ওপর নির্ভরশীল। [৭] তাদের সাধারণত দুটি আবাস থাকে—একটি শীতের জন্য এবং একটি গ্রীষ্মের জন্য। তাদের বাড়িগুলি পাথর ও ঘাস দিয়ে নির্মিত। [৩]
অ্যাক্টিভিস্ট ও গবেষকেরা ওয়াখি জনগণের ভাষা সংরক্ষণ ও রেকর্ড করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এবং আরবি, সিরিলিক, ও লাতিন লিপিতে ওয়াখির লিখন পদ্ধতি তৈরি করেছেন। [৪]
১৯৯০ সালে পাকিস্তানের গোজালি ওয়াখিরা স্থানীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ, নথিবদ্ধকরণ এবং প্রকাশনার জন্য ওয়াখি তাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রতিষ্ঠা করে। এই সংস্থাটি একটি লিপি চালু করে, যা ভাষাগত ও সাহিত্যিক পাঠ্যপুস্তকে প্রয়োগ করা হয় এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে। রেডিও পাকিস্তানের রেডিও গিলগিতও বাম-ই দুনিয়া ("বিশ্বের ছাদ") নামে একটি দৈনিক ওয়াখি-ভাষার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। [৮] [৯]