ওয়াগ্গাগ ইবনে জাল্লু লামতি (আরবি: وجاج بن زلو اللمطي) (মৃত্যু: একাদশ শতাব্দিতে মরক্কোর আগ্লুতে) ছিলেন একাদশ শতাব্দির একজন মরোক্কীয় মালিকি পন্ডিত এবং আইনজ্ঞ। তিনি আবু ইমরান আল-ফাসির ছাত্র ছিলেন এবং সানহাজা-আমাজিগ জাতির লামতা গোত্রের সদস্য ছিলেন। মুরাবিতুন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসিনের ধর্মীয় শিক্ষক ও আধ্যাত্মিক নেতা হওয়ায় মুরাবিতুন রাজবংশের উত্থানে ওয়াগ্গাগের বিশেষ ভূমিকা ছিল। [১][২][৩]
তিনি মরোক্কোর সউস অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন এবং লেখাপড়ার জন্য আল কুয়ারাউইন গমন করেন যেখানে তিনি আবু ইমরান আল-ফাসির অধীনে অধ্যয়ন করেন। সেখান থেকে তিনি সউসে ফিরে আসেন আর বর্তমান তিযনিত শহরের কাছাকাছি একটি গ্রাম আগ্লুতে একটি রিবাত (সামরিক স্বেচ্ছাসেবকদের সাময়িক আবাসনের ছোট দুর্গ) প্রতিষ্ঠা করেন। রিবাতটির নাম ছিল রিবাত আল-মুরাবিতিন যেখানে তিনি ছাত্রদের মালিকি তরিকা শিক্ষা দিতেন। [৪]
শিক্ষক আবু ইমরান আল ফাসির একটি চিঠি পাওয়ার পর ওয়াগ্গাগ দক্ষিন সাহারার সানহাজারের উপজাতিদের ইসলাম শিক্ষার জন্য ছুটে যান। সেখানে তিনি আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসিনকে গুডালা নেতা ইয়াহিয়া ইবনে ইব্রাহিমের সহযোগী হিসেবে মনোনীত করেন। এভাবে ওয়াগ্গাগ ইবনে জাল্লু আমাজিগ জাতির প্রথম নেতার আধ্যাত্মিক গুরু হয়ে ওঠেন।
আমাজিগ আন্দোলনকে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী সামরিক শক্তিতে রুপান্তর করতে কিছু ঐতিহাসিক (যেমন, আল-বকরি, ইবনে আবি যার, কাজী আইয়াদ) ওয়াগ্গাগ ইবনে জাল্লুকে কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন। কারণ ওয়াগ্গাগ, আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসিনকে অবাধ্য লোকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং উত্তরে অগ্রসর হয়ে সিজিলমাসা দখল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকগণ এটাও বলেন যে আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসিনের মৃত্যুর পর একমাত্র ওয়াগ্গাগ ইবনে জাল্লুর ছাত্র ব্যতীত আর কেউ ধর্মীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ছিল না।
ইবনে যাইইয়াত তাদিলি, ওয়াগ্গাগ ইবনে জাল্লুর একটি সন্ত জীবনবৃত্তান্ত লিখেছিলেন। মৃত্যুর পর তাকে মরোক্কোর তিযনিত শহরের কাছে দারুল মুরাবিতিনি রিবাত নামক স্থানে সমাহিত করা হয় যেটি পরবর্তিতে একটি মাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মাজারটিকে সিদি ওয়াগ্গাগ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
মুরাবিতুন রাজবংশের ধর্মীয় নেতা ইবনে ইয়াসিনের উত্তরসূরি দুই ভাই সুলায়মান ইবনে আদ্দু ও আবুল কাসেম ইবনে আদ্দু ওয়াগ্গাগ ইবনে জাল্লুর ছাত্র ছিলেন। [৪]
ওয়াগ্গাগ ইবনে জাল্লু নামটির একাধিক লিপ্যন্তর বিদ্যমান আছে। যেমন ওজ্জাল ইবনে জেলওয়া। এর কারণ হলো ইংরেজি G অক্ষরটির কোনো উচ্চারণ আরবি ভাষায় নেই। পাশাপাশি غ অক্ষরটির উচ্চারণ ইংরেজি G শব্দের উচ্চারণের কাছাকাছি হওয়ায় غউচ্চারণের পরিবর্তে G উচ্চারণ ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে নামটির উচ্চারণ আরবি ভ (জিম) অথবা ك (কফ) শব্দের মত হয়ে গেছে। একইভাবে ইংরেজি u স্বরবর্ণটির উচ্চারণ আরবি و (ওয়াও) বর্ণের উচ্চারণের কাছাকাছি হলেও ওয়াও বর্ণের উচ্চারণ w বর্ণের উচ্চারণের কাছাকাছি হওয়ায় এখানেও লিপ্যন্তর ঘটেছে।