ওয়াদি আস সালাম (আরবি: وادي السلام, প্রতিবর্ণীকৃত: Wādī as-Salām, অনুবাদ 'শান্তি উপত্যকা') মুসলিমদের একটি কবরস্থান যা ইরাকের নাজাফ নগরীতে অবস্থিত। এটা পৃথিবীর বৃহত্তম কবরস্থান।[১][২] কবরখানাটির আয়তন ১,৪৮৫.৫ একর (৬০১.১৬ হেক্টর; ৬.০১ বর্গকিলোমিটার; ২.৩২ বর্গমাইল) এবং এখানে ৫০ লাখের বেশি মৃতদেহ সমাহিত আছে।[৩] এখানে প্রতিবছর লাখ লাখ তীর্থযাত্রী আসে।[৪]
শুধু বিশ্বের সর্ববৃহৎ কবরস্থান হিসেবেই না, ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবেও এটি মুসলমানদের কাছে, বিশেষ করে শিয়া মতাবলম্বীদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। এই স্থানেই ইসলামের দুই নবি হুদ ও সালেহ'র কবর আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। এছাড়া ইসলামের চতুর্থ খলিফা এবং শিয়াদের প্রথম ইমাম হযরত আলি এর মাজারও এই কবরস্থানের পাশেই অবস্থিত।[৫]
শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ইব্রাহিম তার পুত্র ইসহাককে সাথে নিয়ে একবার ইরাকের নাজাফে এসেছিলেন। সে সময় এই অঞ্চলে নিয়মিত ভূমিকম্প হতো। কিন্তু তিনি যতদিন এখানে অবস্থান করেছিলেন, ততদিন পর্যন্ত কোনো ভূমিকম্প হয়নি। পরবর্তীতে এক রাতে তিনি পাশের একটি গ্রামে গেলে সেদিনই নাজাফে ভূমিকম্প হয়। তখন এলাকাবাসী তাকে অনুরোধ করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য। তাদের অনুরোধ রক্ষা করতে না পারলেও ইব্রাহিম তাদের কাছে নিজের নামে এক টুকরো জমি ক্রয় করেন। সেই জমির টুকরোটিই বর্তমানে ওয়াদি আস্-সালাম কবরস্থান।[৬] শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ইব্রাহিম ভবিষ্যদ্বাণী করেন, এই স্থানে এক সময় একটি মাজার এবং কবরস্থান গড়ে উঠবে। সেই কবরস্থানে শায়িতদের মধ্যে ৭০,০০০ মানুষ বিনা হিসেবে বেহেশত লাভ করবে।[৭]
শিয়াদের চতুর্থ ইমাম, ইমাম সাজ্জাদের বর্ণনা অনুযায়ী, আলী বলেছিলেন, ওয়াদি আস্-সালাম হচ্ছে বেহেশতের একটি খন্ড। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিশ্বের প্রতিটি মুমিন ব্যক্তি, তিনি যেখানেই মৃত্যুবরণ করেন না কেন, তার রূহ বা আত্মাকে এই কবরস্থানে উপস্থিত করা হবে। এসকল বিশ্বাসের কারণে শিয়াদের কাছে নাজাফ শহরটি এবং এই কবরস্থানটির মর্যাদা অনেক বেশি।[৭]
ওয়াদি আস্-সালামে দাফন করার পূর্বে শিয়ারা কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। মৃতদেহকে গোসল এবং কাফনের কাপড় পরিধান করানোর কাজটি সাধারণত কবরস্থানেই করানো হয়। এরপর আলী'র মাজার সংলগ্ন মসজিদে জানাজার নামাজ পড়ানো হয়। তারপর দাফন করার পূর্বে মৃতদেহ নিয়ে মাজারের চারদিকে তিনবার প্রদক্ষিণ করা হয়।[৭]
১৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে ওয়াদি আস সালামে দৈনিক দাফন চলছে। গোরস্থানটি ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্য অস্থায়ী তালিকায় রয়েছে।[৮] নাজাফের কবরের কথা পার্থিয়ান এবং সাসানিওদের যুগের প্রাথমিক সময় হতে নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার শহরগুলিতে প্রায়শই একই রকম কবরস্থান ছিল।[৯] ধারণা করা হয় ইরাক যুদ্ধের সময় সেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি মৃতদেহ সমাহিত করা হত। ২০১০ সালে এই সংখ্যা ১০০-র কম ছিল। প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ৫০,০০০ নতুন মৃতদেহ এই কবরস্থানে দাফন করা হয়।[১০] বেশিরভাগ ইরাকি এবং অনেক ইরানি শিয়াদের অন্তত একজন আত্মীয়কে এখানে সমাহিত করা হয়েছে।[১১]
ওয়াদি আস্-সালাম কবরস্থানের অধিকাংশ কবরই মূলত পোড়ামাটির ইটের তৈরি। অধিকাংশ কবরের ইটের উপর প্লাস্টার করা এবং তার উপর পবিত্র কুরআন শরিফের বিভিন্ন আয়াতের ক্যালিগ্রাফি খোদাই করা আছে। কবরগুলো বিভিন্ন আকার, আকৃতির এবং উচ্চতার। ব্যক্তিগত একক কবরের বাইরে কিছু আছে পারিবারিক সমাধি কক্ষ, যেগুলোর উপরে সাধারণত গম্বুজ থাকে। কিছু ভূ-গর্ভস্থ সমাধি কক্ষও আছে, যেখানে মইয়ের সাহায্য প্রবেশ করা যায়। এই সমাধি কক্ষগুলোর প্রতিটি ৩০ থেকে ৫০ জনের মৃতদেহ ধারণ করতে সক্ষম। ‘৩০ এবং ‘৪০-এর দশকে নির্মিত কবরগুলোর আবার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। সেগুলোর অধিকাংশই প্রায় ৩ মিটার উঁচু এবং গোলাকার চূড়া বিশিষ্ট, যেন পার্শ্ববর্তী লোকালয়ের উঁচু ভবনগুলোর ছাদ থেকে দেখেও সেগুলোকে চিহ্নিত করা যায়।
কবরস্থানটি চতুর্থ সুন্নি খলিফা এবং প্রথম শিয়া ইমাম আলী ইবনে আবি তালিবের মাজারের কাছে অবস্থিত।
There is also the tradition that Abraham bought land in the Wadi as-Salaam (Valley of Peace) that runs through the present city, predicting that it would be from here that 70,000 of those buried in the valley would be guaranteed entrance into paradise and would then be able to intercede with Allah for others. Imam Ali is reported to have said that Wadi as-Salaam was a part of heaven.
Such burial sites are quite common in ancient Mesopotamian cities, where the accumulation of tombs has created mounds on the outskirts of these early settlements