ওয়ারেন হেস্টিংস

ওয়ারেন হেস্টিংস
ফোর্ট উইলিয়াম প্রেসিডেন্সির গভর্ণর-জেনারেল
কাজের মেয়াদ
২০ অক্টোবর ১৭৭৪ – ১ ফেব্রুয়ারি ১৭৮৫
সার্বভৌম শাসকতৃতীয় জর্জ
উত্তরসূরীSir John Macpherson, Bt
As Acting Governor-General
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৭৩২-১২-০৬)৬ ডিসেম্বর ১৭৩২
চার্চিল, অক্সফোর্ডশায়ার
মৃত্যু২২ আগস্ট ১৮১৮(1818-08-22) (বয়স ৮৫)
ডালেসফোর্ড, গ্লোসেস্টারশায়ার
জাতীয়তাইংরেজ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীওয়েস্টমিনিস্টার স্কুল
ওয়ারেন হেস্টিংস

ওয়ারেন হেস্টিংস (ইংরেজি: Warren Hastings; ৬ই ডিসেম্বর, ১৭৩২ - ২২শে আগস্ট, ১৮১৮) ছিলেন বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল

প্রথম জীবন

[সম্পাদনা]

তার জন্ম ১৭৩২ সালে চার্চিলের অক্সফোর্ডে একটি গরিব পরিবারে হয়েছিল, তার জন্মের কিছু পরেই তার মাতার দেহান্ত হয়।[] সে ওয়েস্টমিনিস্টার বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। ভবিতব্য প্রধানমন্ত্রি লর্ড শেল্বার্ন, পোর্টল্যান্ডের সর্দার আর কবি উইলিয়াম কাউপার তার সহপাঠি ছিলেন।[] ১৭৫০সালে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে যোগ দেন, এবং ভারতের দিকে রওনা দেন। আগস্ট মাসে তিনি কলকাতা আসেন। গভীর অধ্যবসায় ও কর্মের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করে ফেলেন। এমনকি ফাকা সময় তিনি ভারত সম্পর্কে জানা, উর্দু, ফার্সি শেখায় অর্থব্যয় করতেন।[] ১৭৫২ সালে তাকে উইলিয়াম ওয়াটস-এর অধীনে বাংলার কাসিমবাজার নামক এক ব্যস্ত বাণিজ্যস্থলে পাঠানো হয়, যেখানে ভালো কাজের জন্য তিনি পুরস্কৃত হন। কাসিমবাজারে তিনি পূর্ব ভারতের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহল হন।

ব্রিটিশ ব্যবসাস্থলগুলো ব্রিটিশদের অধিনে পরিচালিত হওয়া কালিন নবাব আলিবর্দি খান রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ব্রিটিশদের বাণিজ্য দুর্দম করে তোলে। আলিবর্দি খানের নাতি সিরাজউদ্দৌলা ইউরোপীয়দের ব্যবসা নিরাপত্তাবিহীন করে তুলছিলো, তার পরিচয় ইউরোপীয় বিরোধী হিসাবে গড়ে উঠেছিল। যখন ১৭৫৬ সালে এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ ট্রেন্ডিং পোস্ট-এ আলিবর্দি খানের দেহত্যাগ এ হল, তখন ছোট সেনাদলের মাধ্যমে ব্রিটিশরা দখলদারিতে সক্ষম হয়। তবে তেসরা জুনে একটা বড় দলের মাধ্যমে ঘিরে হেস্টিংস আর তার সহকর্মিদের কে মুর্শিদাবাদে ধরে নিয়ে জেলে ভরে রাখা হয়, এভাবে কলকাতা সাময়িক ভাবে নবাবের অধীনস্থ হয়। হেস্টিংসের সেনাদল আর সহকর্মী মানুষদের একটি অন্ধকূপে ফেলে মারা হয়।

কিছুকালের জন্য হেস্টিংস মুর্শিদাবাদে নবাবের মধ্যস্থতাকারি হিসাবে ছিলেন, তবে প্রাণভয়ে ফুলতা দ্বীপে পালিয়ে যান, সেখানে কলকাতা থেকে আসা আরোও কিছু উদ্বাস্তুও আশ্রয় নিয়েছিল। মেরি বুকানান, যার বর অন্ধকূপ হত্যার এক শিকার, তাকে তিনি বিবাহ ও করেন। কিছুকাল পরে রবার্ট ক্লাইভ তাদের বাঁচিয়ে নিয়ে যান। ক্লাইভ হেস্টিংসের কাজে প্রশংশিত হয়ে তার কাশিমবাদে ফেরার ব্যবস্থা করে দেন।

১৭৮১ সালে ওয়ারেন হেস্টিং কলকাতা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

হেস্টিংসের সংস্কার

[সম্পাদনা]

হেস্টিংস যখন ভারতে আসেন তখন আদর্শ শাসনব্যবস্থার কোনো দৃষ্টান্ত তার কাছে ছিল না। তাই শাসন ও রাজস্ব সংক্রান্ত নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে হেস্টিংসের শাসনকাল অতিবাহিত হয়েছিল। নিজ প্রতিভা ও সাংগঠানিক ক্ষমতার জোরে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন ও রাজস্ব ব্যবস্থার যে রূপরেখা রচনা করে যান, প্রধানত তার উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিশ এক বলিষ্ঠ ও সুষ্ঠু কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। পার্সিভ্যাল ও স্পীয়ারের মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলা যায়, "যদি ক্লাইভ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন, তবে ওয়ারেন হেস্টিংস তাকে সংগঠিত করে একটি কার্যকরী সংস্থায় পরিণত করেছিলেন, আর কর্নওয়ালিশ আপন চিন্তা ভাবনা অনুযায়ী তাকে একটি সুসংহত ও সুনির্দিষ্ট রূপ দান করেছিলেন ।"    ওয়ারেন হেস্টিংস তার আমলে

  • প্রথমেই দ্বৈত-শাসনব্যবস্থা লোপ করা হয় ও শাসনব্যবস্থা কোম্পানির তত্বাবধানে নিয়ে আসেন।
  • উপমহাদেশে সর্বপ্রথম রাজস্ব বোর্ড স্থাপন করেন।
  • রাজস্ব আদায়কারী অত্যাচারী রেজা খাঁ ও সিতাব রায়কে পদচ্যুত করে কালেক্টর নামক এক কেন্দ্রীয় কর্মচারীর হাতে রাজস্ব আদায়ের ভার দেন।
  • রাজকোষের উপর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার জন্য তিনি রাজকোষাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন।
  • হেস্টিংস রাজস্ব বিভাগের কাজকর্ম সম্পর্কে অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘আমিনি কমিশন’ নামে এক সংস্থা স্থাপন করেন। এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি কালেক্টর পদের পুনঃপ্রবর্তন করেন।
  • কোম্পানির কর্মচারীরা যাতে বাদশাহ প্রদত্ত দস্তকের অপব্যবহার ও বিনা শুল্কে ব্যবসা না করতে পারেন সে দিকে হেস্টিংস কড়া নজর রাখতেন।
  • কোম্পানির ব্যয় সংকোচনের জন্য তিনি দিল্লির মোগল বাদশাহ এবং বাংলার নবাবের বার্ষিক ভাতার পরিমাণ হ্রাস করেন। 

  এই ভাবে ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা কলকাতার গভর্নর জেনারেল ও তার সুপ্রীম কাউন্সিলের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, যা ভারতের কেন্দ্রীভূত প্রশাসন ব্যবস্থার সূচনা করে। এছাড়াও নবজাগরনের তার ভূমিকা ছিল ব্যাপক।

ভারতের গভর্নর জেনারেল ১৭৫৭ - ১৮৫৭

[সম্পাদনা]

তিনি ১৭৭২ সালে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বাতিল করেন। বিচার ব্যাবস্থা , দেওয়ানী ও ফৌজদার, আদেশাবলি লিখা, ব্রাহ্মণ ও মুসলিম নিয়মের ইংরেজি অনুবাদ

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Lyall, Sir Alfred (১৯২০)। Warren Hastings। London: Macmillan and Co। পৃষ্ঠা 1। 
  2. Turnbull, Patrick. Warren Hastings. New English Library, 1975. p.17.
  3. Turnbull p.19-21