ওয়াল্টার হাউজার ব্র্যাটেইন | |
---|---|
জন্ম | ফেব্রুয়ারি ১০, ১৯০২ |
মৃত্যু | ১৩ অক্টোবর ১৯৮৭ | (বয়স ৮৫)
জাতীয়তা | মার্কিন |
মাতৃশিক্ষায়তন | হুইটম্যান কলেজ ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | ট্রানজিস্টর |
পুরস্কার | স্টুয়ার্ট ব্যালেনটিন পদক (১৯৫২) পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (১৯৫৬) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | পদার্থবিজ্ঞান, ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | হুইটম্যান কলেজ বেল গবেষণাগার |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | জন টরেন্স টেট, সিনিয়র |
ওয়াল্টার হাউজার ব্র্যাটেইন (ফেব্রুয়ারি ১০, ১৯০২, শিয়ামেন, চীন - অক্টোবর ১৩, ১৯৮৭, সিয়াটল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) একজন মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী যিনি বিখ্যাত বেল গবেষণাগারের গবেষক ছিলেন। তিনি আরও দুই মার্কিন বিজ্ঞানী উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড শক্লি এবং জন বারডিনের সাথে যৌথভাবে ১৯৫৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ট্রানজিস্টর নামক ইলেকট্রনীয় কলকৌশল উদ্ভাবন ও সেটি গঠনকারী অর্ধপরিবাহী উপাদানগুলির ধর্ম নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁরা এই পুরস্কার লাভ করেন।[১] তাঁদের উদ্ভাবিত ট্রানজিস্টর বিভিন্ন ইলেকট্রনীয় কাজে অপেক্ষাকৃত স্থূলাকার নির্বাত নলকে প্রতিস্থাপিত করে এবং অতিক্ষুদ্র ইলেকট্রনীয় যন্ত্রাংশগুলির অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। ব্র্যাটেইন তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কঠিন পদার্থের পৃষ্ঠতলীয় ধর্মের গবেষণা করে কাটিয়েছেন।
ওয়াল্টার ব্র্যাটেইন চীনের শিয়ামেন (তৎকালীন নাম "আময়") শহরে ১৯০২ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তবে শৈশবের পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের স্প্রিংফিল্ড শহরে এবং ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে অতিবাহিত করেন। তার বাবা রস আর ব্র্যাটেইন এবং মা অটিলি হাউজার ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে একটি গবাদি পশুর খামারের মালিক ছিলেন। এ কারণে তার শৈশব-কৈশোর এখানেই কেটেছে। তিনি ওয়াশিংটনের ওয়ালা ওয়ালা শহরে অবস্থিত হুইটম্যান কলেজ থেকে ১৯২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত বিষয়ে স্নাতক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯২৬ সালে ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলাবিদ্যায় স্নাতকোত্তর উপাধি অর্জন করেন। সেখান থেকে পূর্বাঞ্চলের দিকে চলে যান এবং ১৯২৯ সালে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ সময় তার উপদেষ্টা ছিলেন জন টরেন্স টেইট, সিনিয়র। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভ ছিল পারদ বাষ্পের উপর ইলেকট্রনের প্রভাব নিয়ে। ১৯২৮ এবং ১৯২৯ সালে তিনি ওয়াশিংটন ডি.সি.-র "ন্যাশনাল ব্যুরো অভ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি" (জাতীয় আদর্শমান ও প্রযুক্তি সংস্থা) প্রতিষ্ঠানের বেতার বিভাগে পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন। ১৯২৯ সালেই তিনি বেল টেলিফোন গবেষাণাগারে গবেষণার কাজে নিযুক্ত হন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বেল গবেষণাগারে ব্র্যাটেইনের গবেষণার বিষয় ছিল টাংস্টেনের পৃষ্ঠতলীয় পদার্থবিজ্ঞান। পরবর্তীতে তিনি কপার (২) অক্সাইড এবং সিলিকন অর্ধপরিবাহীর পৃষ্ঠতল নিয়েও গবেষণা করেন। কোনও কঠিন উপাদানের পৃষ্ঠতলীয় পারমাণবিক কাঠামো সেটির অভ্যন্তরীণ পারমাণবিক কাঠামো অপেক্ষা সাধারণত ভিন্ন হয়ে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্র্যাটেইন মার্কিন জাতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা পরিষদের সাথে চুক্তি মোতাবেক কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ডুবোজাহাজ নির্দেশক পদ্ধতির বিকাশ সংক্রান্ত গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন।
ব্র্যাটেইন যুদ্ধের পর আবার বেল গবেষণাগারে ফিরে আসেন এবং গবেষণাগারটির নব-প্রতিষ্ঠিত অর্ধপরিবাহী বিভাগে কাজ শুরু করেন। এই বিভাগটি নতুনভাবে সংগঠিত কঠিন অবস্থার পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণাগারগুলির অন্তর্ভুক্ত ছিল। উইলিয়াম শকলি ছিলেন অর্ধপরিবাহী বিভাগের প্রধান এবং ১৯৪৬ সালে তিনি অর্ধপরিবাহী বিষয়ক একটি নতুন ধরনের গবেষণার কাজ শুরু করেন। ব্র্যাটেইনের গবেষণার মূল বিষয় ছিল অর্ধপরিবাহী পদার্থের পৃষ্ঠতলের ধর্মাবলী। ব্র্যাটেইন যে বিশেষ ধর্মটির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন, তা হল অর্ধপরিবাহীর উপাদানের একটি সংযোগস্থলে (জাংশন) পরিবর্তী বিদ্যুৎপ্রবাহের একমুখীকরণ ঘটে। ব্র্যাটেইন এই ধর্মটি ব্যবহার করে সংকেত বিবর্ধন অর্জনের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। তার ইচ্ছা ছিল একটি ব্যবহারোপযোগী কঠিন অবস্থার বিবর্ধক (অ্যামপ্লিফায়ার) উদ্ভাবন। ব্র্যাটেইন তাঁর সহযোগী জন বার্ডিনের সাথে একত্রে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখেন। প্রথমে তাঁরা সিলিকনকে তড়িৎবিশ্লেষ্যে নিমজ্জিত করে দেখেন। পরবর্তীতে জার্মেনিয়াম অর্ধপরিবাহীতে স্বর্ণের সংযোগস্থল স্থাপন করেন। তাঁরা শেষ পর্যন্ত ১৯৪৭ সালে জার্মেনিয়াম ব্যবহার করে ট্রানজিস্টর নামের একটি ক্ষুদ্র ইলেকট্রনীয় কলকৌশল উদ্ভাবন করেন; এটিতে ১৮ গুণ বিবর্ধন অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। ১৯৫২ সাল নাগাদ এই ট্রানজিস্টর ভ্রাম্যমাণ বেতার যন্ত্র, শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র ও অন্যান্য যন্ত্রে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ১৯৫৬ সালে এই গবেষণাকর্মের জন্য ব্র্যাটেইন বার্ডিন ও শকলির সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে বেল গবেষণাগার ত্যাগ করার পর তিনি হুইটম্যান কলেজের সংযুক্ত অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন এবং সেখানে ফসফোলিপিডের উপর কাজ করেন। ১৯৭২ সালের পরে তিনি মহাবিদ্যালয়টির অবসরোত্তর সাম্মানিক তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ অব্যাহত রাখেন।