কড়ি হচ্ছে একধরনের ছোট্ট সামুদ্রিক শামুক। তবে কড়ি বলতে এই প্রানীর শরীরের শক্ত আবরণকে বুঝায়। বাংলায় কড়ি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত কপর্দক শব্দটি থেকে। কড়ি দেখতে চকচকে, মসৃন ও দৃষ্টিনন্দন অনেকটা পোর্সালিনের মতো। প্রকৃতপক্ষে পোর্সালিন শব্দটিও এসেছে প্রাচীন ইতালীয় ভাষার porcellana থেকে যার অর্থ কড়ি।[১] প্রাচীনকাল থেকেই শামুকের একটি বিশেষ প্রজাতির দেহাবশেষ বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানেও গহনা তৈরীতে ও অনেক আচার অনুষ্ঠানে কড়ির ব্যবহার দেখা যায়।
কড়ি দেখতে চকচকে, মসৃন ও প্রায় ডিম্বাকৃতির হয়। যার একটি দিক চ্যাপ্টা এবং সেদিকে লম্বাটে খাঁজকাটা মুখ থাকে। কড়ি ৫ সেমি থেকে ১৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। অনেক কড়ির গায়ে দৃষ্টিনন্দন নকশা দেখতে পাওয়া যায়।
উপমহাদেশে মানুষের ব্যবহারের জন্য যে কড়ি তা মূলত মালদ্বীপের সাগরে পাওয়া একপ্রকার ছোট শামুকের খোল। ভারতে ও আফ্রিকায় বিনিময়ের মাধ্য হিসাবে এর ব্যাপক প্রচলন ছিল। দাস ব্যবসায় নিয়োজিত পশ্চিমা জাতির মানুষেরা আফ্রিকায় কড়ির প্রচলন করে। চীন ও ইউরোপেও কড়ির ব্যবহার ছিল।[২] নেপালে কড়ি জুয়া খেলায় ব্যবহৃত হত। মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্যে বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে কড়ির ব্যবহারের উল্লেখ আছে। তখনকার সময়ে শহরে স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন থাকলেও গ্রামাঞ্চলে কড়ির প্রচলনই বেশি ছিল। মুঘল ও সুলতানী আমলে শস্য বা কড়ি যে কোন উপায়ে কর প্রদান করা যেত। সে সময়ে কড়ির হিসাবটি ছিল ৪ কড়ি = ১ গণ্ডা, ২০ গণ্ডা = ১ পণ, ৪ পণ = ১ আনা, ৪ আনা = ১ কাহন, ৪ কাহন = ১ টাকা (২৮,৮৮০ কড়ি)।[৩]
|লেখকগণ=
at position 14 (সাহায্য)