লেখক | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
---|---|
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
ধরন | উপন্যাস |
প্রকাশনার তারিখ | ১৮৬৬ |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রিত গ্রন্থ |
ওসিএলসি | ৪৪৭১৮৯৮ |
এলসি শ্রেণী | PK1718 .C43 1938 |
কপালকুণ্ডলা সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত দ্বিতীয় উপন্যাস। সম্ভবত এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক উপন্যাস। ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। গিরিশচন্দ্র ঘোষ এই উপন্যাসের একটি নাট্যরূপ দেন (১৮৭৩)এবং দামোদর মুখোপাধ্যায় এই উপন্যাসের একটি উপসংহার উপন্যাস রচনা করেন এবং নামকরণ করেন মৃন্ময়ী (১৮৭৪)। [১] এটি বাংলা সাহিত্যের একটি কাব্যধর্মী উপন্যাস।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্থানীয় মন্দিরের অধিকারীর সহায়তায় নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে বিয়ে করে নিজের বাড়ি সপ্তগ্রামে ফিরে আসেন। পথে মতিবিবি বা লুৎফউন্নিসা নামে এক বিদেশী রমণীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়।
কপালকুণ্ডলা বাল্যকাল থেকে জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে কাপালিকের কাছে বড় হওয়ায় স্বাভাবিক সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন। নবকুমারের বাড়িতে তিনি ধীরে ধীরে সমাজের মানুষজন ও তাদের আচারআচরণ সম্পর্কে ধারণা পেলেন। কপালাকুণ্ডলা নাম বদলে তার নাম রাখা হল মৃন্ময়ী।
মতিবিবি বা লুৎফউন্নিসা আসলে নবকুমারের প্রথমা স্ত্রী পদ্মাবতী ছিলেন। পরে সপরিবারে মুসলমান হয়ে আগ্রা চলে যান। পথে নবকুমারকে দেখে তিনি পুনরায় তাকে স্বামীরূপে লাভ করতে উৎসুক হন এবং সপ্তগ্রাম চলে আসেন। পদ্মাবতীর পরিচয় জানার পর নবকুমার তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
এদিকে কাপালিক কপালকুণ্ডলাকে বধ করতে সপ্তগ্রাম চলে আসে। তার হাত ভেঙে যাওয়ায় সে পদ্মাবতীর সাহায্য চায়।
পদ্মাবতী ব্রাহ্মণবেশ ধারণ করে কপালকুণ্ডলাকে সব খুলে বলে এবং নবকুমারকে ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করে। ব্রাহ্মণবেশী পদ্মাবতীর সাথে কপালকুণ্ডলাকে দেখতে পেয়ে নবকুমার তাকে ভুল বুঝে খুব কষ্ট পান। আর কাপালিক সুযোগ বুঝে সুরাপান করিয়ে নবকুমারকে উস্কে দিতে থাকেন।
শেষপর্যন্ত নবকুমার আর কপালকুণ্ডলার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্য দিয়ে উভয়েই জীবনের চরম উপসংহারে উপনীত হয়।[২]
ভবভূতির লেখা সংস্কৃত 'মালতীমাধব' নাটক থেকে 'কপালকুণ্ডলা' নামটি নেওয়া হয়েছে।উপন্যাসের প্রথম খণ্ডের প্রথম পরিচ্ছেদের শুরুতেই উপমাখ্যাত কালিদাসের 'রঘুবংশম' মহাকাব্যের সেই বিখ্যাত উপমা দিয়ে উপন্যাসের প্রারম্ভিক আলোচনা বর্ধিত হয়েছে। ❝দূরাদয়শ্চক্রনিভস্য তন্বী,,,ধারানিবদ্ধেব কলঙ্করেখা।।❞আবার প্রথম খণ্ডের চতুর্থ পরিচ্ছেদে কাপালিক ও নবকুমারের সাময়িক কথোপকথন সংস্কৃত মাধ্যমে অগ্রসর হয়েছে। কাপালিক>কস্ত্বং? নবকুমার>ব্রাহ্মণ। কাপালিক>মামনুসর। ❝ভৈরবীপ্রেরিতোহসি;মামনুসর;পরিতোষঃ তে ভবিষ্যতি।❞ এইভাবে পঞ্চম পরিচ্ছেদে আবার রঘুবংশম থেকে ❝যোগপ্রভাবো ন চ,,,হৈমমিবোপরাগম।❞উক্তি দিয়ে অধ্যায়ের সূচনা করা হয়েছে। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে 'রত্নাবলী',নবম পরিচ্ছেদে 'শকুন্তলা' ছাড়াও 'মেঘদূত','কুমারসম্ভব','রত্নাবলী', প্রভৃতি থেকে উক্তি প্রত্যুক্তি ব্যবহার করার পর উপন্যাসের চতুর্থ খণ্ডের নবম পরিচ্ছেদে এসে আবার সেই উপমাকবি কালিদাসের 'রঘুবংশম' মহাকাব্যের থেকে ❝বপুষা করণোজঝিতেন সা নিপতন্তী,,,সহ দীপ্তার্চ্চিরুপৈতি মেদিনীম।❞এই শ্লোক দিয়ে শেষ পরিচ্ছেদের সূচনা করে উপন্যাসের স্বার্থক সমাপ্তির বীজ বপন করা হয়েছে।
এ উপন্যাসের কিছু অবিস্মরণীয় উক্তি বাংলা ভাষায় সুভাষিত উক্তি রূপে বহুল ব্যবহৃত ও চর্চিত হয়। যেমন:
১৯৩৩ সনে প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর পরিচালনায় কপালকুণ্ডলা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এতে অভিনয় করেন উমাশশী, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, মলিনা দেবী, নিভাননা দেবী, অমর মল্লিক, অমূল্য মিত্র প্রমুখ।[৩]
২০১৯ সালে ভারতের স্টার জলসায় কপালকুণ্ডলা ধারাবাহিকটির সম্প্রচার শুরু হয়। এটি রাজ চক্রবর্তী দ্বারা নির্মিত।