করণ জোহর | |
---|---|
करण जौहर | |
জন্ম | করণ ধর্ম কাম জোহর মে ২৫, ১৯৭২ মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
অন্যান্য নাম | কেজো |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | এইচ.আর. কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৯৫–বর্তমান |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | কুচ কুচ হোতা হ্যায় (১৯৯৮) কভি খুশি কভি গম... (২০০১) মাই নেম ইজ খান (২০১০) |
টেলিভিশন | কফি উইথ করণ |
মেয়াদ | ২০০৪-বর্তমান |
পিতা-মাতা |
|
আত্মীয় | যশ চোপড়া (মামা) |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
সম্মাননা | পদ্মশ্রী (২০২০)[১] |
স্বাক্ষর | |
করণ জোহর (হিন্দি: करण जौहर, জন্ম: করণ ধর্ম কাম জোহর মে ২৫, ১৯৭২);[২] অনানুষ্ঠানিকভাবে কেজো হিসাবে ডাকা হয়[৩] একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক চিত্রনাট্যলেখক, পরিচ্ছদ ডিজাইনার, অভিনেতা, এবং টেলিভিশন উপস্থাপক। তিনি হিরো জোহর এবং যশ জোহরের পুত্র।[৪][৫] এছাড়াও তিনি প্রযোজনা সংস্থা ধর্ম প্রডাকশন্সের প্রধান। ভারতে এবং বিদেশে কিছু সংখ্যক সর্বাধিক আয়কৃত বলিউড চলচ্চিত্র প্রযোজনার জন্যে পরিচিত। তার পরিচালিত চারটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান, যা বৈদেশিক বাজারে সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জনকারী ভারতের চলচ্চিত্র।[৬]
করণ জোহর ভারতের মুম্বইয়ে জন্ম নেন। তার বাবা বলিউড চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ধর্ম প্রোডাকশন্সের প্রতিষ্ঠাতা যশ জোহর এবং মা হিরো জোহর। তিনি মুম্বইয়ের গ্রিনলন হাই স্কুলে এবং এইচ.আর. কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স-এ পড়াশোনা করেন। তিনি ফরাসি বিষয়ে স্নাতোকোত্তর লাভ করেন।[৭]
ছেলেবেলায় তিনি ভারতীয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তিনি অনুপ্রেরণা হিসাবে রাজ কাপুর, যশ চোপড়া এবং সুরজ বারজাত্যার কাছ থেকে শিখেছেন।[৫][৮] একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, জোহর সংখ্যাবিজ্ঞানে অনুসরণ করতে শুরু করেন, এবং প্রথম শব্দ "কে" দিয়ে শুরু এধরনের শিরোনামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে লাগলেন। ২০০৬ সালে লাগে রাহো মুন্না ভাই, যেখানে সংখ্যাবিজ্ঞান সম্পর্কে সমালোচনা করা হয়েছে, চলচ্চিত্র দেখার পর তিনি এই চর্চা বন্ধ করেন।[৯]
জোহর আদিত্য চোপড়ার সহকারী হিসেবে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে (১৯৯৫) দিয়ে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। পরে তার পরিচালনায় অভিষেক হয় রোমান্সধর্মী কুচ কুচ হোতা হ্যায় (১৯৯৮) দিয়ে। ছবির প্রথম অর্ধেকে তিনজন কলেজ শিক্ষার্থীর - একটি খামখেয়ালীপূর্ণ যুবক (শাহরুখ খান), তার টমবয়ের মত দেখতে বান্ধবী (কাজল দেবগন) ও কলেজ অধ্যক্ষের সুন্দরী কন্যা (রাণী মুখার্জী) মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক দেখানো হয় এবং দ্বিতীয় অর্ধেকে দেখানো হয় সদ্য বিপত্নীক সেই যুবক তার বান্ধবীর সাথে পুনরায় যোগাযোগের চেষ্টা করেছে তার অন্য আরেকজনের (সালমান খান) সাথে বিয়ে আংটি বদল হয়েছে। ছবিটি ব্লকবাস্টার হিট হয় এবং সমালোচকদের ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে।[১০] ছবিটি সুস্থ বিনোদন প্রদানকারী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে এবং ৪৪তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও চারটি অভিনয়ের পুরস্কার লাভ করে।
জোহরের দ্বিতীয় পরিচালনা ছিল একাধিক তারকা সংবলিত পারিবারিক নাট্যধর্মী কভি খুশি কভি গম... (২০০১)। এতে একজন অহমিকাসম্পন্ন ধনী শিল্পপতি চরিত্রে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন, তার স্ত্রী চরিত্রে জয়া বচ্চন, তাদের দুই ছেলের চরিত্রে শাহরুখ খান ও হৃতিক রোশন, এবং নিচু-শ্রেণির পরিবারের দুই মেয়ে ও শাহরুখ ও হৃতিকের প্রেমিকা চরিত্রে অভিনয় করেন কাজল দেবগন ও কারিনা কাপুর। এই ছবিটিও বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার হিট হয় এবং সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। সমালোচক তরণ আদর্শ মন্তব্য করেন যে জোহর নিশ্চিত করল চলচ্চিত্র অঙ্গনে তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। ছবিটির গল্প সরল কিন্তু এর গল্প বলার ধরন সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।[১১]
জোহরের তৃতীয় পরিচালিত চলচ্চিত্র একাধিক তারকা সংবলিত রোম্যান্টিক নাট্যধর্মী কভি আলবিদা না কেহনা (২০০৬)। ছবিতে দেখা যায় দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে যাওয়া একজন অ্যাথলেট (শাহরুখ খান) তার স্ত্রীর (প্রীতি জিনতা) পেশাদারী সাফল্যে কিছুটা নিরাশ। এর ফলে তারই পারিবারিক এক বন্ধুর (রাণী মুখার্জী) সাথে পরকীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যে তার বাল্যবন্ধুকে (অভিষেক বচ্চন) বিয়ে করে সুখী নয়। ছবিটি ভারতে ব্যবসায়িক সফলতা লাভ করে, পাশাপাশি দেশের বাইরেও সফল হয়। সমালোচকগণ জোহরের পূর্বের দুই চলচ্চিত্র থেকে এই চলচ্চিত্রের পরিচালনার ধরনে পরিবর্তন আনায় এর প্রশংসা করেন। সমালোচক রাজিব মসন্দ মন্তব্য করেন করণের মত অল্প সংখ্যক লেখকের চিত্রনাট্যে এমন নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অল্প সংখ্যকই বর্ণনার জটিলতা অনুধাবন করতে পারে।[১২] ছবিটির কাহিনী যৌথভাবে লিখেন করণ। একাধিক সমালোচক এর প্রশংসা করেন এবং একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস-এ এটি নথিভুক্ত করার আমন্ত্রণ আসে।
জোহর পরিচালিত চতুর্থ চলচ্চিত্র সন্ত্রাসবাদ বিরোধী নাট্যধর্মী মাই নেম ইজ খান (২০১০)। এতে দেখা যায় একজন মুসলমান ব্যক্তি (শাহরুখ খান) ও তার স্ত্রী (কাজল দেবগন) সান ফ্রান্সিসকোতে বসবাস করে এবং ৯/১১ এর হামলার পর ধর্মীয় রোষানলে পরে তাদের পুত্রকে হারায়। এই ছবিটিও ব্যবসায়িকভাবে সফল হয় এবং জোহরের গতানুগতিক পরিচালনার বাইরে এই পরিচালনার ধরন ইতিবাচক সমালোচনা লাভ করে। সমালোচক সুভাষ কে. ঝা মন্তব্য করেন ছবিটি বিষয়বস্তু, প্রকৃতি ও পরিচালনায় সুনিপুণ।[১৩] এই চলচ্চিত্রের জন্য করণ জোহর তার দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কার লাভ করেন।
তার পরবর্তী চলচ্চিত্র স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার (২০১২)। জোহর এতে কোন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী না নিয়ে তিনজন নবাগত শিল্পী – সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, বরুণ ধবন, ও আলিয়া ভাটকে নিয়ে কাজ করেন। এতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের একটি দল স্টুডেন্ট অব দি ইয়ার খেতাব পাওয়ার জন্য তৎপর। ছবিটি পরিমিত ব্যবসা করে এবং সমালোচকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে। কেউ কেউ এটিকে খুবই বিনোদন প্রদানকারী ও উপভোগ্য বলে বিবেচনা করেন আবার কেউ একে গল্পহীনতায় ভুগছে বলে উল্লেখ করেন।[১৪]
জোহর পরে জোয়া আখতার, অনুরাগ কশ্যপ ও দিবাকর ব্যানার্জির সাথে যুক্ত হয়ে বোম্বে টকিজ (২০১৩) নির্মাণ করেন। এটি বলিউডের শতবর্ষ উৎযাপন উপলক্ষে মুক্তিপ্রদানকারী সংকলিত চলচ্চিত্র। প্রত্যেকজন পরিচালক একটি করে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন একটি বড় সংকলন নির্মাণের লক্ষ্যে। জোহরের গল্পে দেখা যায় একজন ম্যাগাজিন সম্পাদক (রাণী মুখার্জী) তার অফিসের এক ইনটার্নের (সাকিব সলীম) মাধ্যমে আবিষ্কার করে তার স্বামী (রণদীপ হুদা) একজন সমকামী। ছবিটি বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করতে পারে নি, কিন্তু সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।
২০১৬ সালে জোহর রোম্যান্টিক নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র এ দিল হ্যায় মুশকিল নির্মাণ করেন। এতে অভিনয় করেন রণবীর কাপুর, অনুষ্কা শর্মা ও ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন।[১৫] ছবিটি ব্যবসায়িক সফলতা লাভ করে এবং সমালোচকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া অর্জন করে।
জোহরের বোম্বে টকিজ ব্যতীত সবগুলো চলচ্চিত্র তার বাবা যশ জোহর প্রতিষ্ঠিত ধর্ম প্রডাকশন্সের ব্যানারে নির্মিত হয়। ২০০৪ সালে তার বাবার মৃত্যুর পরে জোহর এর দায়িত্ব লাভ করেন। তার নিজের পরিচালনার বাইরেও ধর্ম প্রডাকশন্সের ব্যানারে অন্যান্য পরিচালকের চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হল কাল হো না হো (২০০৩), দোস্তানা (২০০৮), আই হেট লাভ স্টোরিজ (২০১০), অগ্নিপথ (২০১২), ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি (২০১৩), টু স্টেটস (২০১৪), হাম্পটি শর্মা কি দুলহানিয়া (২০১৪), ও কাপুর অ্যান্ড সন্স (২০১৬)।
সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি জোহর দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে (১৯৯৫) চলচ্চিত্রে শাহরুখ খানের চরিত্রের বন্ধু হিসেবে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তিনি ওম শান্তি ওম (২০০৭), ফ্যাশন (২০০৮), ও লাক বাই চান্স (২০০৯) চলচ্চিত্রে ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেন।
তিনি পূর্ণ অভিনেতা হিসেবে অনুরাগ কশ্যপ পরিচালিত বোম্বে ভেলভেট (২০১৫) চলচ্চিত্র রণবীর কাপুর ও অনুষ্কা শর্মার সাথে অভিনয় করেন। এতে তিনি মূল খল চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করতে পারে নি, কিন্তু জোহরের অভিনয় প্রশংসিত হয়। সমালোচক সরিতা এ. তানবার মন্তব্য করেন এই চলচ্চিত্রের একমাত্র সান্ত্বনা হল করণ জোহর যিনি তার খাম্বাত্তা চরিত্রের সম্মান বজায় রেখেছেন, যা সম্পূর্ণ তার আয়ত্বের বাইরে ছিল।[১৬]
জোহর দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে (১৯৯৫), দিল তো পাগল হ্যায় (১৯৯৭), ডুপ্লিকেট (১৯৯৮), মোহাব্বতে (২০০০), ম্যায় হুঁ না (২০০৪), বীর-জারা (২০০৪), ও ওম শান্তি ওম (২০০৭) চলচ্চিত্রের শাহরুখ খানের পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেন।
জোহর সেলিব্রিটি টকশো কফি উইথ করণ-এর উপস্থাপক। এতে তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রের অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক, প্রযোজক, ও অন্যান্য কলাকুশলীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকেন। প্রথম মৌসুম প্রচারিত হয় ২০০৪ থেকে ২০০৫ সালে, দ্বিতীয় মৌসুম প্রচারিত হল ২০০৭ সালে, তৃতীয় মৌসুম প্রচারিত হয় ২০১০ থেকে ২০১১ সালে, চতুর্থ মৌসুম প্রচারিত হয় ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে, এবং পঞ্চম মৌসুম ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর থেকে প্রচারিত হচ্ছে।[১৭]
২০১২ সাল থেকে তিনি মাধুরী দীক্ষিত ও রেমু ডিসুজার সাথে রিয়েলিটি নৃত্য অনুষ্ঠান জলক দিখলা জা[১৮] এবং মালাইকা অরোরা খান, কিরণ খের ও ফারাহ খানদের সাথে আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান ইন্ডিয়া গট ট্যালেন্ট-এর বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন।[১৯]
স্কুল জীবনে করণ টুইঙ্কল খান্না কে পছন্দ করতেন[২০] যিনি সত্তরের দশকের অভিনেতা রাজেশ খান্নার মেয়ে ছিলেন, টুইঙ্কল নিজেও পরে অভিনেত্রী হন এবং ২০০১ সালে অক্ষয় কুমারকে বিয়ে করেন। করণ পরে নিজেকে সমকামী দাবী করেন,[২১] এবং ২০১৭ সালে করণ 'গর্ভভাড়া'র মাধ্যমে দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন।[২২]