কলাম্বিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মিজুরি অঙ্গরাজ্যের একটি শহর ও বুন কাউন্টির সদর দপ্তর। এখানে মিজুরি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।[১] শহরটি ১৮২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কলাম্বিয়া মেট্রোপলিটন এলাকার প্রধান শহর। এটি জনসংখ্যায় মিজুরির চতুর্থ বৃহত্তম শহর। ২০১৯ সালে এর প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১,২৩,১৯৫। এটি মিজুরির সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল শহর।[২][৩]
১৮৩৩ সালে স্টিফেনস কলেজ, ১৮৩৯ সালে মিজুরি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৮৫১ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কলাম্বিয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শুরুতে কৃষিনির্ভর শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও শিক্ষাই এর অর্থনীতির প্রাণ। স্বাস্থ্য, বিমা ও প্রযুক্তি খাত মিজুরির অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শেল্টার ইনস্যুরেন্স,কারফ্যাক্স, ভেটেরানস ইউনাইটেড হোম লোনস-সহ অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় কলাম্বিয়া শহরে অবস্থিত। মিজুরি ঐতিহাসিক সমিতি, শিল্প ও প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর,ট্রু-ফলস চলচ্চিত্র উৎসব, ব্লুজ ও রুটস উৎসব এর গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ।
কেন্টাকি ও ভার্জিনিয়া হতে আগত ব্যক্তিরা ১৮০০ শতাব্দীর দিকে বুনসলিক অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় আদিবাসী আগ্রাসনের ভয়ে কাঠের তৈরি দুর্গাকার ভবন বসবাসের জায়গা হিসেবে নির্মাণ করত; ১৮১৫ সাল পর্যন্ত ভবন নির্মাণের এরূপ ধারা অব্যাহত ছিল। যুদ্ধের পরে বসতি স্থাপনকারীরা পায়ে হেঁটে, ঘোড়ার পিঠে চড়ে ও ওয়াগনে করে এখানে আগমন করে ও বুনসলিক সড়ক সংলগ্ন এলাকায় বসতি স্থাপন করে। তাদের সাথে আফ্রিকান ক্রীতদাসরাও এখানে আগমন করে। ১৮১৮ এর দিকে এই নতুন বাসিন্দাদের সুবিধার্থে কাউন্টি গঠনের প্রয়োজন অনুভূত হয়।
কিছুদিন পরেই স্মিথটন ভূমি কোম্পানি ২,০০০ একর ভূমি ক্রয় করে। সেখানে তারা স্মিথটন গ্রাম প্রতিষ্ঠা করে। এখানে কতগুলো কাঠ-নির্মিত কুটির ছিল, যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল রিচার্ড জেন্ট্রির কুটির। রিচার্ড জেন্ট্রি কলাম্বিয়ার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। ১৮২০ সালে অভিযাত্রী ড্যানিয়েল বুনের নামানুসারে "বুন কাউন্টি" প্রতিষ্ঠিত হয় ও কাউন্টি আসন নির্বাচনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এ কাজে মিজুরি বিধানসভা জন গ্রে, জেফারসন ফুলচার, অ্যাবসালম হিকস, লরেন্স বাস ও ডেভিড জ্যাকসনকে এ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। কিন্তু স্মিথটন গ্রামে কাউন্টি আসন প্রতিষ্ঠা দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়।
এমতাবস্থায়, ১৮২১ সালের বসন্তকালে কলাম্বিয়া শহর প্রতিষ্ঠিত হয়। স্মিথটনের বাসিন্দারা সেখানে দ্রুত স্থানান্তরিত হন। ১৮২০ সালে টমাস ডুলি কলাম্বিয়া শহরের প্রথম বাড়ি নির্মাণ করেন। ১৮২১ সালে শহরটি কাউন্টি আসন হিসেবে নির্বাচিত হয়।
১৮৩৩ সালে এখানে কলাম্বিয়া ব্যাপটিস্ট মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়- যেটি আজকের স্টিফেনস কলেজ। ১৮৩৯ সালে কলাম্বিয়া কলেজ (বর্তমানেও একটি কলাম্বিয়া কলেজ এ শহরে রয়েছে, তবে সেটি ১৮৩৯ সালের কলাম্বিয়া কলেজ নয়) প্রতিষ্ঠিত হয় ও পরবর্তীকালে মিজুরি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়। রাজ্য বিধানসভা যখন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন কলাম্বিয়া প্রতিদ্বন্দ্বী শহরগুলোর চেয়ে তিনগুণ বেশি অর্থ উত্তোলন করে। জেমস এস রোলিন্স বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি দান করেন।
সান্তা ফে ও ওরেগন বালিয়াড়ির ঘোড়ার গাড়ির কোচগুলো এখানে থামত। পাশাপাশি মিজুরি-ক্যান্সাস-টেক্সাস রেলসড়ক-ও এর মধ্য দিয়ে যায়। এর ফলে শহরটি অনেক উপকৃত হয়। ১৮২২ সালে, উইলিয়াম জুয়েল প্রথম হাসপাতাল নির্মাণ করেন। ১৮৩০ সালে শহরের প্রথম পত্রুকা সম্পাদিত হয়। ১৮৩২ সালে প্রথম রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়; ১৮৩৫ সালে রাজ্যের প্রথম কৃষিমেলা কলাম্বিয়া শহরে আয়োজিত হয়।
ক্রীতদাসপ্রথা চালু থাকলেও মিজুরি অঙ্গরাজ্য ইউনিয়নে রয়ে যায়। শহরের অধিকাংশ বাসিন্দাই ইউনিয়ন বাহিনীকে সমর্থন করত।[৪] গৃহযুদ্ধের সময় এর স্থাপনাগুলো অক্ষত থাকে।
পুনর্গঠন যুগের পর মিজুরিতে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের সহিংসতা বাড়তে থাকে। ১৮৮৯ সালে জর্জ বার্ক নামে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীকে জনসমক্ষে হত্যা করা হয়। ১৯২৩ সালের বসন্তে একজন অধ্যাপকের মেয়েকে বলাৎকার করার অভিযোগে জেমস টি স্কট নামক কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীকে জনসমক্ষে হত্যা করা হয়।
কলাম্বিয়া মধ্য-উত্তর মিজুরিতে অবস্থিত। এটি ক্যান্সাস সিটি ও সেন্ট লুইস থেকে ১২০ মাইল দূরে ও জেফারসন সিটি থেকে ২৯ মাইল উত্তরে অবস্থিত। [৫]
যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, কলাম্বিয়ার আয়তন ৬৩.৫ বর্গমাইল। এর ৬৩.৪২ বর্গমাইল স্থল ও ০.০৮ বর্গমাইল জল। [৬]
কলাম্বিয়ার জলবায়ু আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের। বসন্তকালের শেষ অর্ধাংশে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি হয়। প্রতি ঋতুতে গড়ে ১৮ ইঞ্চি তুষারপাত হয়।
২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কলাম্বিয়ার জনসংখ্যা ১,০৮,৫০০। এখানে ২১,৪১৮টি পরিবার বসবাস করে। শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৬৬৪.১ জন। বাসিন্দাদের ৭৯% শ্বেতাঙ্গ, ১১.৩% আফ্রিকান আমেরিকান, ০.৩% আদিবাসী আমেরিকান, ৫.২% এশীয় ও ০.১% প্রশান্ত মহাসাগরীয়। এদের ৩.৪% হিস্পানিক অথবা লাতিনো।
শহরের পরিবারগুলোর গড় আয় ৫২,২৮৮ ডলার। পুরুষদের গড় আয় ৩৪,৭১০ ডলার ও নারীদের গড় আয় ২৬,৬৯৪ ডলার। শহরের মাথাপিছু আয় ১৯,৫০৭ ডলার। ৯.৪% পরিবার ও ১৯.২% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, যাদের ১৪.৮% এর বয়স ১৮ এর নিচে ও ৫.২% এর বয়স ৬৫ এর সমান বা বেশি।