কল্পনা চাকমা বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও নারীবাদী ছিলেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর আঞ্চলিক সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।[১] ১৯৯৬ সালের ১১ জুন দিবাগত রাতে, অর্থাৎ ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার লাইল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন তিনি।[১] এই ঘটনাটি বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্বে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর পাশাপাশি মানবাধিকার এবং নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে—এমন সংগঠনগুলোর মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।[২] এই ঘটনার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় এবং সেই বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে।[২]
এই অপহরণের জন্য অপহৃতার পরিবার থেকে বরাবরই অপহরণকারী হিসেবে তৎকালীন সময় সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
কল্পনা চাকমা অপহৃত হওয়ার পর দেশে-বিদেশে সংগঠিত বিভিন্ন জনমত ও আন্দোলনের চাপে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১৯৯৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল জলিলকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়।[৩] একই সাথে সরকার পুলিশ বিভাগের মাধ্যমেও তদন্ত পরিচালনা করে।
১৩ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে রাঙামাটির চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা দেয়া সিআইডির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে না-রাজি দিয়েছেন মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা।[২] শুনানি শেষে বিচারক বিষয়টি নিয়ে ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখ পরবর্তী আদেশ দেয়ার দিন ধার্য করে। এদিন শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা সিআইডির রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা প্রত্যাখ্যান করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ চাইলে আদালতও সিআইডির প্রতিবেদন নিয়ে সংশয়ের কথা জানান এবং উপর্যুক্ত আদেশ দেন।[২][৪]
অপহৃত হওয়ার দীর্ঘ ৩০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও কোনো সন্ধান মেলেনি হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমার। আবার যেহেতু এখনও তদন্তের কাজ শেষ হয়নি, তাই অপহরণের বিচারের কাজও থেমে রয়েছে।[২]
এদিকে কল্পনা চাকমার পরিবার তার সম্পর্কে নিশ্চিত কোন খবর না পাওয়ায় এখনো তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা থেকে বিরত রয়েছে।[২]