টিয়ার গ্যাস বা কাঁদানে গ্যাস (ইংরেজি: Tear gas) এর অন্য নাম(ক্লোরোপিকরিন) কয়েক ধরনের রাসায়নিক যৌগের একীভূত নামকরণ। প্রকৃতপক্ষে এটি কোন গ্যাস নয়।[১] মিহি গুড়ো পাউডার কিংবা তরলের অতি ক্ষুদ্রকণার সমষ্টি নিয়ে এ গ্যাস গঠিত। গুড়োয় ক্ষারজাতীয় রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে। এর প্রভাবে চোখে প্রচণ্ড জ্বালা-যন্ত্রণার উপস্থিতি ঘটায়। সাময়িকভাবে টিয়ার গ্যাসের প্রভাবে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চোখ অন্ধত্বের পর্যায়ে উপনীত হয়। অন্যতম রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে পরিচিত টিয়ার গ্যাসের প্রভাবে মনুষ্য চক্ষুর কর্নিয়ার স্নায়ুগুলো আক্রান্ত হয়। এরফলে অঝোর ধারায় কান্না, ব্যথা, এমনকি অন্ধ হয়ে যাবারও সমূহ সম্ভাবনা থাকে। ওসি, সিএস, সিআর, সিএন বা ফিনাসিল ক্লোরাইড, ননিভ্যামাইড, ব্রোমোয়াসিটন, জাইলিল ব্রোমিড, পেঁয়াজ থেকে সংগৃহীত সাইন-প্রোপ্যানেথিয়াল-এস-অক্সাইড যৌগের সম্বন্বয়ে টিয়ার গ্যাস তৈরী করা হয়।
১৯১৪ সালে জাইলিল ব্রোমাইড জনপ্রিয় টিয়ার গ্যাসের উপাদানরূপে ব্যবহৃত হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও এর প্রয়োগ হয়েছে। অশ্রুনিঃসারক উপাদানই পুলিশ বাহিনীতে প্রায়শঃই দেখা যায়।[২] এ গ্যাস সাধারণতঃ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ কর্তৃক দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ, বিক্ষুদ্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গের জন্যে ব্যবহার করে থাকে। ফিনাসিল ক্লোরাইড এবং সিএস গ্যাস দুটিকে প্রায়শঃই কাঁদানে গ্যাসে ব্যবহার করতে দেখা যায়। পিপার স্প্রে আরেক ধরনের রাসায়নিক উপাদান যা বর্তমানে টিয়ার গ্যাসের স্থান দখল করছে। ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় কিছু কিছু দেশে মেস নামীয় উপাদান ব্যবহার করতে দেখা যায় যা সিএনের সমতুল্য এবং আত্মরক্ষামূলক অস্ত্র হিসেবে বিবেচ্য। জাইলিল ব্রোমাইড, সিএন এবং সিএস প্রাচীনতম উপাদান। কিন্তু সিএসের ব্যবহার বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত।
বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রেক্ষাপটে অন্যান্য রাসায়নিক অস্ত্রের ন্যায় কাঁদানে গ্যাসের ব্যবহারও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।[৩] এপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ দেশ সাক্ষরও করেছে। কিন্তু পুলিশ বাহিনী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে আত্মরক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎযোগ্য নয়। সামরিক বাহিনীতে গ্যাসের মুখোশ পরিধান করে অনুশীলন কর্মকাণ্ডেসহ দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।