কাপিং থেরাপি (Cupping therapy) হচ্ছে একটি বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতি, যেখানে ত্বকের উপর কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে চোষণ বা শোষণ (রক্ত) এর ব্যবস্থা করা হয়। কাপিং থেরাপিকে ছদ্মবিজ্ঞান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।[১] কাপিং থেরাপি যে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তেমন কোন ভাল প্রমাণ পাওয়া যায় নি। সেই সাথে কাপিং থেরাপিতে, বিশেষ করে ফায়ার কাপিং ও ওয়েট কাপিং এর ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকে।
বৈজ্ঞানিক প্রমাণের দ্বারা কাপিং সমর্থিত নয়। কাপিং থেরাপির পক্ষে একটি সাম্প্রতিক প্রমাণের উপর দেয়া ২০১৪ সালের একটি রিভিউতে বলা হয়, " (এই গবেষণার) অযৌক্তিক নকশা ও দুর্বল গবেষণার মানের জন্য বলা যাচ্ছে যে, কাপিং থেরাপির চিকিৎসাশাস্ত্রীয় প্রমাণ খুবই নিম্নমানের"।[২] ২০১১ সালের একটি রিভিউতে বলা হয়, "বেশিরভাগ স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য কাপিং থেরাপির কার্যকারিতা ভালভাবে নথিবদ্ধ নয়", এবং যে রিভিউগুলো ব্যাথার চিকিৎসা হিসেবে কাপিং থেরাপির কার্যকারিতার কথা বলছে সেগুলো "মূলত নিম্ন মানের প্রাথমিক গবেষণার উপর ভিত্তি করে করা"।[৩] আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি থেকে বলা হয়, "কাপিং থেরাপি যে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তা এপর্যন্ত পাওয়া কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সমর্থন করে না", এবং সেই সাথে এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে ত্বকের ফোস্কা পড়ার অল্প ঝুঁকিও থাকে।[৪]
সাইমন সিংহ এবং এডজার্ড আরনেস্ট তাদের ২০০৮ সালের প্রকাশিত গ্রন্থ ট্রিক অর ট্রিটমেন্ট -এ লেখেন, কোন স্বাস্থ্যসমস্যার ক্ষেত্রে যে কাপিং থেরাপির কোন উপকারী ভূমিকা আছে, সেরকম কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই।[৫] বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতির সমালোচকগণ, যেমন হ্যারিয়েট হল এবং মার্ক ক্রিসলিপ কাপিংকে "অর্থহীন ছদ্মবিজ্ঞান" ("pseudoscience nonsense"), বিখ্যাতদের খ্যাপামি ("a celebrity fad") এবং "অর্থহীন কথাবার্তা" ("gibberish") হিসেবে উল্লেখ করেন, এবং তারা পর্যবেক্ষণ করে বলেন, এরকম কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই যে কাপিং প্লাসিবো এর চেয়ে ভাল কাজ করে।[১][৬] ফার্মাকোলজিস্ট ডেভিড কল্কহুওন লেখেন, কাপিং পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যের উপকার হওয়া, একটি "হাস্যকর... এবং চরম মাত্রায় অসম্ভব ব্যাপার"।[৭] চিকিৎসক ডেভিড গরস্কি এই পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে বলেন, "... এটিতে কেবল স্বাস্থ্যঝুঁকিই রয়েছে, কোন স্বাস্থ্যগত উপকারিতা নেই। আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে এর কোন জায়গায় নেই, অথবা অন্তত কোন জায়গা থাকা উচিৎ নয়।"[৮]
অকার্যকারী হলেও, কোন প্রসিক্ষিত পেশাদারের দ্বারা কোন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির উপর এটির প্রয়োগ করা হলে এটি সাধারণত নিরাপদ।[৯] কাপিং এর ফলে কালশিটে দাগ পড়তে পারে, ত্বকে ফোস্কা পড়তে পারে, ব্যাথা হতে পারে, এবং/অথবা ত্বকে সংক্রমণও হতে পারে। আর তাই এই সাইড এফেক্টগুলোর কারণে যেসব ব্যক্তির মধ্যে স্বাস্থ্য সমস্যা আছে তাদের জন্য কাপিং থেরাপি গ্রহণ করা ঠিক নয়।[৯] ২০১৬ সালে কম্বোডিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সতর্ক করা হয় যে, কাপিং থেরাপি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, এটি বিশেষ করে তাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ আছে।[১০]
গবেষকগণ বলেন, কাপিং থেরাপি ক্ষতিকর, বিশেষ করে যারা ক্ষীণকায় বা স্থূলকায়, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর: জ্যাক রাসো (১৯৯৭) এর মতে, কাপিং থেরাপির ফলে রক্তের কৈশিক জালিকা স্ফীত হয়, কলাসমূহে অতিমাত্রা রক্তরস সঞ্চিত হয়, এবং রক্ত নালীগুলো ফেঁটে যায়।[১১]
কাপিং থেরাপি এর ক্ষতিকর প্রভাবসমূহকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে স্থানিক ক্ষতিকর প্রভাব বা লোকাল এডভার্স ইভেন্টস, আরেকটি হল তন্ত্রগত ক্ষতিকর প্রভাব বা সিস্টেমিক এডভার্স ইভেন্টস। স্থানিক ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে দাগ পড়া, ফোস্কা পড়া, ত্বকে সংক্রমণ হওয়া, প্যানিকিউলাইটিস, ফোড়া ওঠা, যেখানে কাপিং করা হয় সেখানে ব্যাথা হওয়া ইত্যাদি রয়েছে। তন্ত্রগত ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে রয়েছে রক্তশূন্যতা, মাথা ঘোরা, ভ্যাসোভেগাল এটাক, মাথা ব্যাথা ও বমি ভাব।[১২]
ফায়ার কাপিং এর ক্ষেত্রে কাপিং এর স্থানে কখনও কখনও কম থেকে চরম মাত্রার ফোস্কা পড়তে পারে, এবং এরফলে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করে আহত স্থানটিকে ঠিক করার জন্য স্কিন গ্রাফটিং করার প্রয়োজনও হতে পারে।[৮][১৩] কাপিং থেরাপিতে অসতর্কতাবশত দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করার কারণে, এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার ও শরীরে ছিটকে পড়ার কারণেও ফোস্কা পড়তে পারে।[১৪][১৫]