ধর্ষণ |
---|
ধারার একটি অংশ |
কারাধর্ষণ হচ্ছে জেল, কয়েদখানা বা কারাগারের অভ্যন্তরে সংগঠিত ধর্ষণ। শব্দটি সাধারণত কোন বন্দী দ্বারা অন্য কোন বন্দীকে ধর্ষণ করা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রায়শই কারাগারের কর্মীদের দ্বারা কারাবন্দীদের ধর্ষণের জন্য এবং কদাচিৎ কারাবন্দীদের দ্বারা কর্মীদের ধর্ষণের জন্যও ব্যবহৃত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারাধর্ষণের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন পুরুষরা জড়িত থাকে যারা অন্য পুরুষদের দ্বারা ধর্ষিত হয়।[১][২]
কিছু এখতিয়ারে, কারাগারের কর্মীদের দ্বারা বন্দীদের সাথে সম্মতি বা অসম্মতিক্রমে নির্বিশেষে সকল যৌন সম্পর্ক অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৩]
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিবিসি নিউজ চীনের শিনচিয়াং বন্দী শিবিরে উইঘুর নারীদের নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ধর্ষণের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ প্রকাশ করে।[৪][৫]
শিনচিয়াং পুনর্শিক্ষা শিবিরে পূর্বে আটককৃত একাধিক নারী প্রকাশ্যে ধর্ষণসহ নিয়মতান্ত্রিক ভাবে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন।[৪] শিবিরে কাজ করতে বাধ্য হওয়া একজন শিক্ষক সায়রাগুল সায়ুৎবে বিবিসিকে বলেন, যে পুনর্শিক্ষা শিবিরে তাকে আটক করে তার কর্মচারীরা তাকে গণধর্ষণ করে। তিনি বলেন, শিবির রক্ষীরা "তাদের পছন্দমতো মেয়ে ও তরুণীদের তুলে নিয়ে যায়"। তিনি বিবিসিকে একটি সংগঠিত গণধর্ষনের কথাও বলেন, যেখানে ২১ বছর বয়সী এক নারী শিবিরে আটক আরও ১০০ জন নারীর ভিড়ের সামনে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হন, এর আগে সমবেত জনতার সামনে একাধিক পুলিশ তাকে ধর্ষণ করে। নয় মাস ধরে পুনর্শিক্ষা শিবিরে আটক থাকা তুর্সুনাই জিয়াউদুন বিবিসিকে বলেন, চীনা পুরুষদের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার জন্য নারীদেরকে "প্রতি রাতে" তাদের কক্ষ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং আটক থাকাকালীন তার সঙ্গে তিনটি পৃথক গণধর্ষনের ঘটনা ঘটে। জিনজিয়াং-এর উজবেক নারী কিলবিনুর সেদিক বলেছেন, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতনের সময় চীনা পুলিশ বন্দীদেরকে যৌন নির্যাতন করেছে। তিনি বলেন, "চার ধরনের বৈদ্যুতিক শক ছিল... চেয়ার, দস্তানা, হেলমেট, এবং লাঠি দিয়ে পায়ুপথে ধর্ষণ"।
ইরানে রাজনৈতিক বন্দীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা প্রচলিত।[৬] এটি কারা কর্তৃপক্ষের দ্বারা উপেক্ষা করা হয় বা এমনকি সুবিধাও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।[৭]
জাতিসংঘে জারি করা এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে কয়েক দশক ধরে ইরানে জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বন্দীদের ধর্ষণ করে আসছেন।[৮] ১৯৮০-এর দশকে, ইরানি ইসলামিক বিপ্লবের পর, নারী রাজনৈতিক বন্দীদের ধর্ষণ এতটাই প্রচলিত ছিল যে এটি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির তৎকালীন ডেপুটি হুসেইন-আলি মোন্তাজারিকে ১৯৮৬ সালের ৭ অক্টোবর তারিখে একটি চিঠিতে খোমেনি বরারর নিম্নলিখিত বাক্যগুলো লিখতে প্ররোচিত করেছিল: "আপনি কি জানতেন যে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের কয়েকটি কারাগারে যুবতীরা ধর্ষিত হয়?"[৯] ইরানের মানবাধিকার সম্প্রদায়ের দুই বিশিষ্ট সদস্য, নারীবাদী আইনজীবী ও সাংবাদিক শাদি সদর এবং ব্লগার ও সক্রিয়কর্মী মোজতাবা সামিনেজাদ ইরানের অভ্যন্তর থেকে অনলাইনে প্রবন্ধ প্রকাশ করে বলেছেন, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে কারাগারে ধর্ষণের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।[৯]
২০০৯ সালে ইরানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিক্ষোভে বিরোধী দলগুলো[কে?] জানিয়েছে, সারা দেশের কারাগারে হাজার হাজার লোককে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়েছে। প্রাক্তন বন্দীরা কাহরিজাক এবং এভিনের মতো কারাগারে ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডস কর্তৃক পুরুষ, নারী ও শিশুদের গণধর্ষনের অভিযোগ করেছে।[১০][১১]
২০০৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর ইরানের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী মেহেদি কাররুবি বলেন, এভিন কারাগারে আটক বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে অসভ্যভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও ধর্মযাজক আকবর হাশেমি রাফসানজানিকে লেখা এক গোপন চিঠিতে এ কথা বলা হয়েছে।[১২] কাররুবি বলেছিলেন যে এটি তার কাছে থাকা প্রমাণের একটি "খণ্ড"এবং যদি অস্বীকার করা বন্ধ না হয় তবে তিনি আরও বেশিকিছু প্রকাশ করে দেবেন।[১৩][১৪]
২০০৯ সালের ৯ আগস্ট ইরানের এক্সপিডিয়েন্সি ডিসের্নমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে লেখা এক চিঠিতে মেহেদি কাররুবি ইরানের কারাগারে সম্ভাব্য নির্যাতন এবং বিশেষ করে পুরুষ ও নারীদের যৌন হয়রানির জন্য তদন্ত দাবি করেন।[১৫][১৬] ১৯ আগস্ট তিনি সংসদ স্পিকার আলী লারিজানিকে চিঠি লিখে তার সাথে দেখা করতে বলেন| রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমাদিনেজাদ, বিচার বিভাগের প্রধান আয়াতুল্লাহ সাদেক লারিজানি, সাবেক রাষ্ট্রপতি আকবর হাশেমি রাফসানজানি এবং রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটরকে তিনি বলেন "ব্যক্তিগতভাবে কিছু কারাগারে বিশেষ করে কাহরিজাক কারাগারে যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে আমার নথিপত্র এবং প্রমাণ উপস্থাপন করুন।"[১৭] আলী লারিজানি এবং সাদেক লারিজানি (বিচার বিভাগ কর্তৃপক্ষ) উভয়ই আনুষ্ঠানিকভাবে তার দাবি প্রত্যাখ্যান করেন এবং আলী খামেনির প্রতিনিধিরা এবং সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান কাররুবিকে গ্রেপ্তারের দাবি করেন।[১৮]
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উভয়ই তুরস্কে একাধিক দশক ধরে ব্যাপক ধর্ষণ এবং বন্দীদের নির্যাতনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।[১৯][২০] কুর্দি বন্দীদেরও বিশেষভাবে ধর্ষণ এবং অন্যান্য ধরনের যৌন সহিংসতার জন্য টার্গেট করা হয়েছে।[২১]
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে কারাগারে নিয়মিত ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সংযুক্ত আরব আমিরাত,[২২][২৩] সৌদি আরব[২৪] এবং বাহরাইন[২৫][২৬] পরিচালিত কারাগারে আটক নারী, শিশু ও পুরুষদের উপর যৌন নির্যাতন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাধারণ কারাধর্ষণ সম্পর্কে জনসচেতনতা একটি তুলনামূলকভাবে নতুন বিষয়, এবং এর ব্যাপকতার অনুমান কয়েক দশক ধরে ব্যাপকভাবে বৈচিত্র্যময়। ১৯৭৪ সালে কার্ল ওয়েইস এবং ডেভিড জেমস ফ্রিয়ার লিখেছিলেন যে ৪৬ মিলিয়ন আমেরিকানকে একদিন কারাগারে রাখা হবে; এই সংখ্যার মধ্যে তারা বলেছিল যে ১০ মিলিয়ন ধর্ষিত হবে।[২৭]
কয়েদখানা ও কারাগারে যৌন নিপীড়ন শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: "২০১১-১২ সালে আনুমানিক ৫.০% রাষ্ট্রীয় ও ফেডারেল কারাগারের বন্দী এবং ৩.২% জেলবন্দী গত ১২ মাসে অন্য বন্দী বা কারাকর্মীদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের এক বা একাধিক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে।"[২৮] যাইহোক, উকিলরা সংখ্যার নির্ভুলতা নিয়ে বিতর্ক করেছে, তারা দাবি করেছে যে তারা কারাগারে বিশেষ করে কিশোরদের মধ্যে যৌন নিপীড়নের প্রকৃত সংখ্যা কম দেখিয়ে রিপোর্ট করেছে বলে মনে হচ্ছে।[২৯]
ফেডারেল ব্যুরো অফ প্রিজনস থেকে ১৯৯২ সালের একটি অনুমান ছিল যে ৯% থেকে ২০% বন্দী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে।[২৭] ১৯৮২ এবং ১৯৯৬ সালের গবেষণায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে এই হার ১২% থেকে ১৪% এর মধ্যে কোথাও ছিল। ড্যানিয়েল লকউডের ১৯৮৬ সালের একটি গবেষণায় নিউ ইয়র্কের সর্বোচ্চ নিরাপদ কারাগারের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ২৩% বলা হয়েছে।[২৭] এর বিপরীতে, ক্রিস্টিন সাউমের ১৯৯৪ সালে ১০১ জন বন্দীর উপর করা জরিপে দেখা যায় যে ৫ জন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে।[২৭]
২০০৩ সালের কারাগার ধর্ষণ নির্মূল আইন ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন যা বিশেষভাবে বন্দীদের যৌন নিপীড়নের সাথে সম্পর্কিত। বিলটি ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সালে আইন হিসেবে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।[৩০]