কারায় ভাষা

কারায় ভাষা
къарай тили
karaj tili
দেশোদ্ভবক্রিমিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড
জাতি২৭০ কারায় (২০১৪)[]
মাতৃভাষী
৮০ (২০১৪)[]
সিরিলীয় লিপি, লাতিন লিপি, হিব্রু লিপি
সরকারি অবস্থা
সংখ্যালঘু ভাষায় স্বীকৃত
ভাষা কোডসমূহ
আইএসও ৬৩৯-৩kdr
গ্লোটোলগkara1464[]

কারায় ভাষা (ক্রিমীয় উপভাষা: къарай тили, ত্রাকাই উপভাষা: karaj tili কারায় তিলি, ধ্রুপদীয় হিব্রু নাম לשון קדר লাশন কেদার "যাযাবরদের ভাষা")[] ইদিশ বা লাদিনোর মতো হিব্রু প্রভাব সহ একটি তুর্কীয় ভাষা। এটি লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড এবং ইউক্রেনের ক্রিমিয়া এবং গালিসিয়াতে কয়েক ডজন ক্রিমীয় কারাইতে দ্বারা ব্যবহৃত হয়। এই ভাষার তিনটি প্রধান উপভাষাগুলি হল ক্রিমীয়, ত্রাকাই-ভিলিনিয়াস এবং লুতস-হালিচ যার প্রত্যেকটিই গুরুতরভাবে বিপন্ন। কারায়ের লিথুয়ানীয় উপভাষাটি মূলত ত্রাকাই (বা ত্রোকি) শহরে ১৪শ শতকের পর থেকে বসবাসকারী একটি ছোট্ট সম্প্রদায় দ্বারা ব্যবহৃত হয়।

সরকারী সহায়তার ফলে এবং ত্রাকাই দ্বীপের কেল্লায় ভ্রমণকারী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের ফলে ত্রাকাই অঞ্চলে ভাষাটি বেঁচে থাকার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে ক্রিমীয় কারাইতেদের দুর্গের প্রাচীন রক্ষাকারী হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ক্রিমিয়া এবং লিথুয়ানিয়ায় কারায় জাতি

[সম্পাদনা]

ক্রিমিয়ায় বসবাসরত কারাইতেদের উৎস নিয়ে অনেক বিতর্ক এবং অসঙ্গতি আছে। তাদের ইতিহাস পুনর্গঠনে অসুবিধা এই জনসংখ্যা সম্পর্কিত নথির অভাব থেকে উদ্ভূত। প্রায় সমস্ত ইতিহাস ১৭শ থেকে ১৯শ শতকে কারাইতে এবং অন্যান্য জনসংখ্যার মধ্যে চিঠিপত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাতার খানাতের রাজধানী বাখছিসারাইয়ে ১৭৩৬ সালে রুশ আগ্রাসনের সময় ক্রিমীয় কারাইতে জনসংখ্যার সাথে সম্পর্কিত প্রচুর নথি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।[]

কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন যে ক্রিমিয়ার কারায়রা সেই কারাইতে বণিকদের বংশধর যারা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য থেকে ক্রিমিয়ায় চলে এসেছিলেন।[] একটি বিশেষ ঘটনায়, ইস্তানবুল থেকে ক্রিমিয়ায় কারাইতেদের স্থানান্তরিত হওয়ার ঘটনাটি ১২০৩ সালে কনস্টান্টিনোপলের ইহুদি কোয়ার্টারে আগুনের সূত্রপাত হিসাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে (তসোফার ২০০৬)।[] তুর্কো-মঙ্গোল আগ্রাসনের পরে, ক্রিমিয়া থেকে চীন এবং মধ্য এশিয়া পর্যন্ত সক্রিয় বাণিজ্যপথ ক্রিমিয়াতে ১৩শ এবং ১৪শ শতকে বণিকদের বসতি গড়তে উৎসাহিত করেছিল।[]

অন্যদিকে, অনেক পণ্ডিত কারায়দের খাজারদের এবং পরে পোলোভতসি (বা কিপচাক) উপজাতি (যারা কারায়েতে রূপান্তরিত হয়েছিল) তাদের বংশধর হিসাবে বিবেচনা করেন।আইআইসিকে ২০০৭ কেভিন অ্যালান ব্রুক খাজারদের সাথে এই সংযোগটিকে ঐতিহাসিকভাবে ভুল এবং অসম্ভব বলে বিবেচনা করেছিলেন, এবং তালমুদীয় ইহুদিদের (বিশেষত আশকেনাজ) খাজার উত্তরাধিকারের প্রকৃত সংরক্ষণক হিসাবে দাবী করেছিলেন।[]

তৃতীয় অনুমান অনুযায়ী কারায়রা এক (৭২০ খ্রিস্টপূর্ব) আসিরীয় রাজার দ্বারা প্রথম নির্বাসিত ইস্রায়েলের উপজাতির বংশধর। কারায় পণ্ডিত আব্রাহাম ফিরকোভিচ রুশ জারের সামনে এই তত্ত্বের পক্ষে যুক্তি দিয়ে দলিল সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি অভিমত দিয়েছিলেন যে ইস্রায়েলীয়রা আসিরিয়া থেকে উত্তর ককেশাসে এবং সেখান থেকে অশূররাজের অনুমতি নিয়ে ক্রিমীয় উপদ্বীপে প্রবেশ করেছিল। তিনি দাবি করেছিলেন যে য়িৎজাক হা-সাঙ্গারির এবং তার স্ত্রীর সমাধি প্রস্তর পেয়েছিলেন, যাদের তিনি কারায় বলে দাবি করেছিলেন। ফিরকোভিচ সমাধিপাথরের কয়েকটি শিলালিপি এবং পান্ডুলিপি জাল করেছেন কিনা তা বিতর্কিত।[১০]

লিথুয়ানিয়ায় কারায়দের উৎস সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে এখনও সম্পূর্ণ ঐক্যমত্য হয়নি। লিথুয়ানীয় কারায় ঐতিহ্য অনুসারে তারা ১৩৯২ সালে ক্রিমিয়া থেকে এসেছিল যখন লিথুয়ানিয়ায় গ্র্যান্ড ডিউক ভিতাউতাস হোয়াইট হোর্ড তাতারদের সাথে তোখতামিশের মৈত্রী করিয়েছিলেন এবং ৩৩০ কারাইতে পরিবারকে লিথুয়ানিয়ায় স্থানান্তরিত করেছিলেন।[] যদিও ভাষাতাত্ত্বিকভাবে সুদৃড়, এবং লিথুয়ানীয় তাতারদের ঐতিহ্যের সাথে একমত হয়ে ভেঙে পড়া গোল্ডেন হোর্ড থেকে তাদের উৎসের দাবি,[১১] কিছু আধুনিক ঐতিহাসিক এই ধারণাটিতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।[১২][১৩] তবুও, কারায়রা তাদের তাতার ভাষা বজায় রেখে প্রাথমিকভাবে ভিলনিউস এবং ত্রাকাইয়ে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছিল। বির্জাই, পাসভালিস, নাউইয়ামিয়েস্তিস এবং উপিতেতে আরও ছোটখাটো বসতি ছিল। ১৬শ এবং ১৭শ শতকের রোগ, দুর্ভিক্ষ এবং হত্যাকান্ডের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও, লিথুয়ানিয়া আশেপাশের অঞ্চলের তুলনায় এইরকম অশান্তির দ্বারা কিছুটা কম প্রভাবিত হয়েছিল। ফলস্বরূপ, এই বছরগুলিতে লিথুয়ানীয় কারায়দের মধ্যে আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা ছিল এবং তারা স্থানীয় ভাষার জন্য তুর্কি ভাষা ত্যাগ করার পরিবর্তে দলবদ্ধভাবে পৃথকীকরণ বজায় রেখেছিল।

কারায় ভাষায় বংশগত সম্বদ্ধীকরণ

[সম্পাদনা]

কারায় ভাষা ইউরেশিয়ার ঐতিহাসিকভাবে যাযাবরদের দ্বারা ব্যবহৃত বিভিন্ন ভাষা দ্বারা গঠিত তুর্কীয় ভাষাপরিবারের অংশ। তুর্কীয় ভাষাপরিবারের মধ্যে এই ভাষাটি কিপচাক ভাষাসমূহের অন্তর্গত, যেটি নিজে তুর্কীয় ভাষাপরিবারের পশ্চিমি শাখার সদস্য।[১৪] এই পশ্চিমি শাখার মধ্যে ভাষাটি পন্টো-কাস্পীয় গোষ্ঠীর অংশ।[১৫] এই উপ-পরিবারের অন্যান্য ভাষাগুলি হলো ইউক্রেন এবং উজবেকিস্তানের ক্রিমীয় তাতার ভাষা, এবং রাশিয়ার কারাচায়-বালকার এবং কুমুক ভাষা। লিথুয়েনীয় কারায়দের ক্রিমিয়াতে সূচনার ফলে কারায়ের সাথে কিপচাক এবং ক্রিমীয় তাতারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বুঝতে সুবিধা হয়।

একটি অনুমান অনুযায়ী খাজার অভিজাতরা ৮ম শতাব্দীর শেষের দিকে বা ৯ম শতাব্দীর প্রথম দিকে কারাইতে ইহুদী ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছিল এবং সাধারণ জনগণের একটি অংশ তাদের অনুসরণ করেছিল। এটি পরবর্তী সময়ে মঙ্গোল শাসনামলে, বাইজান্টিয়ামের লোকদের আগমনকালেও ঘটতে পারে।[১৬]

অন্যান্য তুর্কীয় ভাষার মতো, কারায় একটি সংযোগাত্মক ভাষা এবং স্বরসঙ্গতি প্রদর্শন করে। সাধারণ শব্দভাণ্ডার এবং ব্যাকরণের উপর ভিত্তি করে তুর্কীয় ভাষা পরিবারে কারায় ভাষার অন্তর্ভুক্তির জন্য ভাষাবংশগত প্রমাণগুলি অবিতর্কিত। কারায় ভাষায় পদক্রম কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া, উপসর্গীয় সংযোজন প্রক্রিয়া ব্যাপক, স্বরসঙ্গতির উপস্থিতি, এবং বিশেষ্যর লিঙ্গ এবং শ্রেণীর অভাব। লিথুয়ানীয়, রুশ এবং পোলিশ ভাষার পরিবেশে লিথুয়ানীয় কারায়ের ছয় শতাধিক বছরের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও এটি এই সব তুর্কীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকাংশই বজায় রেখেছে।

কারাইম ভাষার বেশিরভাগ ধর্মীয় শব্দের ব্যুৎপত্তি হলো আরবি, যেটি থেকে মধ্য প্রাচ্যে কারায় সংস্কৃতির উৎস প্রদর্শিত হয়।[১৭] কারায়ের শব্দভান্ডারে প্রাথমিকভাবে প্রভাব ফেলেছিল আরবি এবং ফার্সি ভাষা। পরবর্তীকালের ইতিহাসে রুশ, ইউক্রেনীয় এবং পোলীয় ভাষাগুলি রাশিয়া, ইউক্রেন, পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ায় বসবাসরত কারায়দের শব্দভান্ডারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।

ভাষা পরিবেশ

[সম্পাদনা]

কারায়ভাষীর বন্টন

[সম্পাদনা]

বর্তমানে ক্রিমিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ডে কারায়ভাষী রয়েছে। তবে, লিথুয়ানিয়ায় কেবল ২০০ কারায়ভাষী বাস করে, যার মধ্যে এক চতুর্থাংশই ওই ভাষায় দক্ষ।[১৮]

কারায় ভাষা তিনটি উপভাষায় বিভক্ত। বিলুপ্ত পূর্ব উপভাষা, যেটি ক্রিমীয় কারায় নামে পরিচিত, ক্রিমিয়াতে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক অবধি ব্যবহৃত হয়েছে। উত্তরপশ্চিমা উপভাষা, বা ত্রাকাই উপভাষা, লিথুয়ানিয়ায়, প্রধানত ত্রাকাই এবং ভিলনিয়াস শহরগুলিতে ব্যবহৃত হয়। ইউক্রেনে ব্যবহৃত দক্ষিণপশ্চিমি উপভাষা, বা লুৎস্ক বা হালিচ উপভাষা, ২০০১ সাল অবধি মাত্র একটি শহরে ছয়টি ভাষিকের বিলুপ্ত-প্রায় ভাষায় পরিণত হয়েছিল।[১৮]

ভাষাসংযোগ

[সম্পাদনা]

তার দীর্ঘ ও জটিল ইতিহাস জুড়ে কারায় বিভিন্ন ভাষার সংস্পর্শে এসেছে। মেসোপটেমিয়ায় উদ্ভূত অতীত এবং আরব বিশ্বের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার ফলে সম্ভবত মেসোপটেমিয়া থেকে কারাইতেদের অভিপ্রয়াণের মাধ্যমে আরবি শব্দের প্রবেশ ঘটেছে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনামলে ক্রিমিয়ায় কারায় ভাষা বলা হত, তাই তুর্কি ভাষার পরিবারে দূর সম্পর্কের আত্মীয় তুর্কি ভাষার সাথে সংযোগের একটি উল্লেখযোগ্য ইতিহাস রয়েছে। সব শেষে, অন্যান্য যে সমস্ত অঞ্চলে কারায়রা বাস করতেন এবং সেই অঞ্চলের প্রভাবশালী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষাতে কথা বলতেন, সেখানে কারায় ভাষার ছড়িয়ে পরেছিল, এবং লিথুয়ানীয়, পোলিশ, ইউক্রেনীয় এবং রুশ ভাষাগুলির সাথে সংখ্যালঘু ভাষা হিসাবে এই ভাষার সহাবস্থান ছিলো।

কারায়ভাষীদের মধ্যে বুলি-অনুলেপনের প্রবল প্রবণতা আছে।[১৮] বুলি-অনুলেপনের থেকে বুলি-পরিবর্তনের পার্থক্য এই যে বুলি-অনুলেপনের ক্ষেত্রে বক্তা কেবল একটি ভাষা থেকে অন্য ভাষায় পরিবর্তন করেন না, বরং আভিধানিক পদ এবং ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্যগুলি এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় স্থানান্তর করা হয়, যেটি একক উদাহরণের জন্যও হতে পারে, আবার দীর্ঘস্থায়ী ভাষাগঠনগত প্রভাব থাকতে পারে।[১৮] অতি মাত্রায় বুলি-অনুলেপন কারায়ভাষীদের সদা সঙ্কুচিত জনসংখ্যার (এবং ফলস্বরূপ অপর্যাপ্ত কারায় শব্দভান্ডার এবং রুশ, পোলীয় এবং স্লাভোনীয় ভাষাগুলির সাথে অত্যধিক শব্দ ঋণ) এবং যে অঞ্চলগুলিতে কারায় ভাষা বলা হয় সেখানে উচ্চস্তরের ভাষা সংযোগের নির্দেশক।

বহুভাষিকতা

[সম্পাদনা]

খুব কম সংখ্যক কারায়ভাষিক এবং সাধারণভাবে লিথুয়ানিয়ায় উচ্ছস্তরীয় বহুভাষিকতার কারণে, কারায়দের মধ্যেও উচ্চস্তরের বহুভাষিকতা রয়েছে। কারায়ভাষিদের লিথুয়ানীয়, পোলিশ এবং রুশ ভাষা সহ তাদের নিজ অঞ্চলের প্রভাবশালী ভাষার মাধ্যমেও যোগাযোগ করে। কারও কারও হিব্রুতে ধর্মীয় জ্ঞান আছে।[১৮] বহুভাষিকতা কারায় বক্তাদের কাছে প্রয়োজনীয়তা, কারণ অন্যান্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষা ছাড়া তারা এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে না।[১৮]

ভাষা সাস্থ্য

[সম্পাদনা]

কারায়ের অধিকাংশ উপভাষাই এখন বিলুপ্তপ্রায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সোভিয়েত শাসনের অধীনে কারায়ভাষীদের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়া এবং অনর্গলভাষীর সংখ্যাল্পতা এবং বার্ধক্যের কারণে লিথুয়ানিয়ায় কারায় ভাষার রক্ষণাবেক্ষণ এখন বিপন্ন।[১৮] কারায়দের বংশধরেরা লিথুয়ানীয়, পোলিশ বা রুশ ভাষায় কথা বলে এবং কেবল প্রবীনতম প্রজন্মুই এখনও কারায় ভাষায় কথা বলেন।

ধ্বনিতত্ত্ব

[সম্পাদনা]

ব্যঞ্জনধ্বনি

[সম্পাদনা]
ওষ্ঠ্য দন্তৌষ্ঠ্য দন্তমূলীয় পশ্চাদ্দন্তমূলীয় তালব্য পশ্চাত্তালব্য অলিজিহ্ব্য
নাসিক্য m n
স্পৃষ্ট অঘোষ p t k
ঘোষ b d ɡ
উষ্ম অঘোষ f s ʃ χ
ঘোষ v z ʒ ɣ
নৈকট্য w j
কম্পনজাত r

স্বরধ্বনি

[সম্পাদনা]
  সম্মুখ কেন্দ্রীয় পশ্চাৎ
অকুঞ্চিত কুঞ্চিত
সংবৃত i y ɯ u
সংবৃত-মধ্য e ø o
বিবৃত ɑ

ধ্বনিসংযোগ প্রক্রিয়া

[সম্পাদনা]

তুর্কীয় পরিবারের অন্যান্য ভাষায় তালব্য স্বরসঙ্গতি থাকলেও ত্রাকাই কারায়তে ব্যঞ্জনধ্বনির তালব্যীভবনের সঙ্গতি দেখতে পাওয়া যায়। তাই যে কোন শব্দে হয় তালব্য অথবা অতালব্য ধ্বনি দেখতে পাওয়া যায়।[১৯] সম্মুখ স্বরধ্বনির উপস্থিতিতে তালব্যধ্বনি এবং পশ্চাত স্বরধ্বনির উপস্থিতিতে অতালব্য ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হয়। অধিকাংশ তুর্কীয় ভাষার মতো, করায়ের কার্যত সমস্ত ব্যঞ্জনধ্বনিরই তালব্য এবং অতালব্য রূপ আছে, যা এই ভাষার বংশগত সম্পর্ক প্রমাণিত করে।[২০] তবে, এইটুকু ধারণা গ্রহণের ক্ষেত্রেও অবশ্যই যত্নবান হওয়া উচিত, কারণ কারায় ভাষা কয়েকশ বছর ধরে লিথুয়ানিয়ায় লিপকা তাতার ভাষার সংস্পর্শে ছিলো।

কারায় ভাষা স্বরসঙ্গতিও প্রদর্শন করে যার ফলে উপসর্গীয় স্বরধ্বনি পদমূলের স্বরধ্বনির সম্মুখতার ভিত্তিতে সঙ্গতি স্থাপন করে।[১৭]

পদগঠন

[সম্পাদনা]

কারায় পদগঠন প্রক্রিয়া পরসর্গীয় এবং অত্যন্ত সংযোগাত্মক। কারায় ভাষায় উপসর্গ ব্যবহার হয় না, তার পরিবর্তে পরসর্গীয় পদ ব্যবহার হয়। বিশেষ্যে সাতটি বিভক্তি দেখা যায়, কর্তৃ কারক, কর্ম কারক, সম্বন্ধ পদ, সম্প্রদান কারক, অপাদান কারক, অধিকরণ কারক এবং করণকারক, যেটি অন্যান্য তুর্কীয় ভাষায় বিরল। কারায় ক্রিয়াবিভক্তির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সংক্ষিপ্ত রূপের সম্ভাবনা, যেমন নিচে আল [ał] "গ্রহণ করা" ক্রিয়ার ক্ষেত্রে দেখানো হলো।[১৯][২১]

মূল রূপ সংক্ষিপ্ত রূপ
আমি (উত্তম, একবচন) ał-a-myn (আল-আ-মিন) ał-a-m (আল-আ-ম)
তুমি (মধ্যম, একবচন) ał-a-syn (আল-আ-সিন) ał-a-s (আল-আ-স্)
সে (প্রথম, একবচন) ał-a-dyr (আল-আ-দির) ał-a-d ~ ał-a-dy (আল-আ-দ্) ~ (আল-আ-দি)
আমরা (উত্তম, বহুবচন) ał-a-byz (আল-আ-বিজ)
তোমরা (মধ্যম, বহুবচন) ał-a-syz (আল-আ-সিজ)
তারা (প্রথম, বহুবচন) ał-dyr-łar (আল-দির-লার) ał-d-łar ~ ał-dy-łar (আল-দ্-লার) ~ (আল-দি-লার)

বাক্যগঠন

[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিকভাবে, কারায়ে পদক্রম ছিল তুর্কীয় কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া। তবে, ব্যাপক ভাষাসংযোগের ফলে এটি কিছুটা স্বাধীন পদক্রম অর্জন করেছে বলে মনে হয়, এবং বর্তমানে কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া পদক্রমের পক্ষপাতী।[১৮] কারাইম রূপচর্চনের আগ্রাসনমূলক প্রকৃতির কারণে, মূল ক্রিয়াটির অনুক্রমের ক্ষেত্রে একই তথ্য ইতিমধ্যে উপস্থাপিত হওয়ায় সর্বনাম বিষয়গুলি প্রায়শই বাদ দেওয়া হয়। করিম হেড-ফাইনাল এবং পোস্টিংস ব্যবহার করে। কারায়ের মূলরূপের সংযোজনমূলক প্রকৃতির কারণে মূল ক্রিয়াপদের সাধিত রূপেই কর্তৃবাচক সর্বনামের তথ্য প্রদর্শন করার ফলে এই সর্বনামকে প্রায়শই বাদ দেওয়া হয়। কারায় ভাষাটির শীর্ষান্ত্য বাক্যগঠন অনুসরণ করে এবং অনুসর্গ ব্যবহার করে।

কারায় বাক্যগঠন প্রক্রিয়া বুলি-অনুলেপনের একাধিক উদাহরণ প্রদর্শন করে, যার মাধ্যমে প্রবল ভাষাসংযোগের কারণে কারায় ভাষার ব্যবহারের অঞ্চলে অন্যান্য ভাষার বাক্যগঠন বৈশিষ্ট্যের সাথে একত্রিত হয়। এই জাতীয় ভাষাসংযোগের প্রভাব কারায় শব্দভান্ডারে ব্যাপক শব্দঋণ থেকেই সুস্পষ্ট।[১৭] আরও আধুনিক সময়ে এই ব্যাপক শব্দঋণের ফলে শব্দভান্ডারের অপ্রতুলতা বোঝা যায়।[২২]

লিখন পদ্ধতি

[সম্পাদনা]

কারাইতেদের হিব্রু বর্ণমালা ভিত্তিক পরম্পরাগত লিপিটি ২০শ শতক অবধি ব্যবহৃত হয়েছিল। বর্তমানেও বহু কারাইতে পরিবারে হিব্রু অক্ষরে হস্তলিখিত বহুবিধ বিষয়ের চিঠি বা "মিয়েদজুমা" দেখতে পাওয়া যায়। বিংশ শতাব্দী জুড়ে, কারাইতে সম্প্রদায়গুলি লাতিন (ইয়াঙালিফ বর্ণমালা, লিথুয়ানীয় এবং পোলীয় বর্ণমালা) এবং সিরিলীয় লিপির বিভিন্ন রূপ ব্যবহার করতো।

ক্রিমিয়ার কারাইতেদের লাতিন লিপি ভিত্তিক বর্ণমালা (ইয়াঙালিফ)[২৩]
A a B ʙ C c Ç ç D d E e F f G g
H h I i J j Q q Ƣ ƣ L l M m N n
Ꞑ ꞑ O o Ɵ ɵ P p S s Ş ş Ь ь K k
U u V v Y y R r T t X x Z z Ƶ ƶ

আধুনিক লিখন পদ্ধতি

[সম্পাদনা]

লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ডে কারায় লেখার জন্য লাতিন লিপির একটি পরিবর্তিত রূপ ব্যবহার করা হয়, তবে ক্রিমিয়া এবং ইউক্রেনে এটি লেখার জন্য সিরিলীয় লিপি ব্যবহৃত হতো। ১৭শ শতাব্দী থেকে ১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত হিব্রু অক্ষর ব্যবহৃত হতো।

ক্রিমিয়ার কারাইতেদের সিরিলীয় লিপি ভিত্তিক বর্ণমালা
А а Б б В в Г г Гъ гъ Д д Дж дж Е е
Ж ж З з И и Й й К к Къ къ Л л М м
Н н Нъ нъ О о Ӧ ӧ П п Р р С с Т т
У у Ӱ ӱ Ф ф Х х Хъ хъ Ц ц Ч ч Ш ш
Щ щ Ъ ъ Ы ы Ь ь Э э Ю ю Я я
  • Е, Ю and Я অক্ষরগুলি শুধুমাত্র Л অক্ষরের পরে ব্যবহার হয়, ধ্বনির কোমলতাসূচক হিসাবে
  • Ж and Ц অক্ষরগুলি শুধুমাত্র রুশ ভাষা থেকে ঋণ নেওয়া শব্দগুলিতে ব্যবহার হয়
লিথুয়ানিয়ার কারাইতেদের লাতিন লিপি ভিত্তিক বর্ণমালা
A a B b C c Ch ch Č č D d D' d' Dž dž
E e Ė ė F f G g H h I i Y y J j
K k L l L' l' M m N n Ń ń O o Ö ö
P p R r S s Ś ś Š š T t T' t' U u
Ü ü V v Z z Ž ž Ź ź

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. এথ্‌নোলগে কারায় ভাষা (১৮তম সংস্করণ, ২০১৫)
  2. "Law of Ukraine "On Principles of State Language Policy")"Document 5029-17, Article 7: Regional or minority languages Ukraine, Paragraph 2। Verkhovna Rada। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১৪ 
  3. "To which languages does the Charter apply?"European Charter for Regional or Minority Languages। Council of Europe। পৃষ্ঠা 3। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "Karaim"গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট। 
  5. Tatiana Schegoleva. Karaites of Crimea: History and Present-Day Situation in Community.
  6. Akhiezer 2003
  7. Schur 1995
  8. Tsoffar 2006
  9. The Jews of Khazaria, by Kevin Alan Brook, 2nd ed, p228-232 (that the Crimean and Lithuanian Kariates are not descended from the Khazars), p226-227 (that the Ashkenazic Jews are partially descended from the Khazars).
  10. Barry Dov Walfish, and Mikhail Kizilov, Bibliographia Karaitica: an Annotated bibliography of Karaites and Karaism. Karaite Texts and Studies, pub BRILL, 2010, আইএসবিএন ৯০০৪১৮৯২৭০, p198.
  11. «Polish heirs of Tokhtamysh» Daily News 12/4/2009
  12. Ahiezer, G. and Shapira, D. 2001.'Karaites in Lithuania and in Volhynia-Galicia until the Eighteenth Century' [Hebrew]. Peamin 89: 19-60
  13. "Tatiana Schegoleva. Karaites of Crimea: History and Present-Day Situation in Community"। ৪ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১৯ 
  14. Dahl et al. 2001
  15. Ethnologue 2007
  16. Tütüncü et al. 1998
  17. Zajaczkowski 1961
  18. Csató 2001
  19. Németh 2003
  20. Hansson 2007
  21. Jones, Mari C.; Esch, Edith (২০০২-০১-০১)। Language Change: The Interplay of Internal, External and Extra-Linguistic Factors (ইংরেজি ভাষায়)। Walter de Gruyter। আইএসবিএন 9783110892598 
  22. The Circum-Baltic languages. Volume 1, Past and present : typology and contact। Dahl, Östen., Koptjevskaja-Tamm, Maria.। Amsterdam: John Benjamins Pub। ২০০১। আইএসবিএন 1588110206ওসিএলসি 302343232 
  23. J. Şamaş (১৯২৯)। Qrьmda qaraim вalalarь ycyn ana tilinde alefвet ve oquv kitaвь। Aqmeçed: Qrьm devlet neşrijatь। 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]
  • Akhiezer, Golda. 2003. “The history of the Crimean Karaites during the sixteenth to eighteenth centuries.” pp. 729–757 in Polliack, Meira (ed.). Karaite Judaism: A Guide to its History and Literary Sources. Boston: Brill.
  • Astren, Fred. 2004. Karaite Judaism and Historical Understanding. Columbia, SC: University of South Carolina Press.
  • Csató, Éva Ágnes, Nathan, D., & Firkavičiūtė, K. (2003). Spoken Karaim. [London: School of Oriental and African Studies].
  • —— 2001. “Syntactic code-copying in Karaim.”
  • Dahl, Östen and Maria Koptjevskaja-Tamm. 2001. Circum-Baltic Languages.
  • Gil, Moshe. 2003. “The origins of the Karaites.” pp. 73–118 in Polliack, Meira (ed.). Karaite Judaism: A Guide to its History and Literary Sources. Boston: Brill.
  • Hansson, Gunnar Ólafur. 2007. “On the evolution of consonant harmony: the case of secondary articulation agreement.” Phonology. 24: 77-120.
  • Khan, Geoffrey. 2000. The Early Karaite Tradition of Hebrew Grammatical Thought. Boston: Brill.
  • Kocaoğlu, T., & Firkovičius, M. (2006). Karay: the Trakai dialect. Languages of the world, 458. Muenchen: Lincom Europa. আইএসবিএন ৩-৮৯৫৮৬-৪৯০-০
  • Paul Wexler, 1980. The Byelorussian Impact on Karaite and Yiddish
  • Németh, Michał. 2003. “Grammatical features.” Karaimi. <https://web.archive.org/web/20110716080739/http://www.karaimi.org/index_en.php?p=301>.
  • Nemoy, Leon. 1987. “Karaites.” In Mircea Eliade, ed., The Encyclopedia of Religion. New York: MacMillan.
  • Oesterley, W. O. E. and G. H. Box. 1920. A Short Survey of the Literature of Rabbinical and Mediaeval Judaism. Burt Franklin: New York.
  • Schur, Nathan. 1995. “Karaites in Lithuania.” in The Karaite Encyclopedia. <https://web.archive.org/web/20071228105622/http://www.turkiye.net/sota/karalit.html>.
  • Tsoffar, Ruth. 2006. Stains of Culture: an Ethno-Reading of Karaite Jewish Women. Detroit: Wayne State University Press.
  • Tütüncü, Mehmet and Inci Bowman. 1998. “Karaim Homepage.” <https://web.archive.org/web/20071126131635/http://www.turkiye.net/sota/karaim.html>.
  • Zajaczkowski, Ananiasz. 1961. Karaims in Poland.

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:ইহুদি ভাষাসমূহ