কার্গিল যুদ্ধ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ | |||||||||
![]() একটা ভারতীয় বোফোর্স ১৫৫ মিলিমিটার হাওইটজার ফিল্ড গান যুদ্ধকালে স্থানান্তরিত হচ্ছে। | |||||||||
| |||||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||||
![]() ভারত |
![]() পাকিস্তান | ||||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||||
![]() |
![]() | ||||||||
শক্তি | |||||||||
৩০,০০০-৪০,০০০ | ৫,০০০ | ||||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||||
ভারত সরকার প্রদত্ত তথ্য: ৫২৭ জন নিহত,[২][৩][৪] ১,৩৬৩ জন আহত [৫] ৫ জন যুদ্ধবন্দী |
পাকিস্তানের অনুমান: |
কার্গিল যুদ্ধ বা কার্গিল সংঘর্ষ (I) ১৯৯৯ সালের মে-জুলাই মাসে কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত একটি সশস্ত্র সংঘর্ষ। পাকিস্তানি ফৌজ ও কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামি যুদ্ধারা উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে ডি ফ্যাক্টো সীমান্তরেখা হিসেবে পরিচিত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অফ কন্ট্রোল পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়লে এই যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে।[৯] যুদ্ধ চলাকালীন ও যুদ্ধের অব্যবহিত পরে পাকিস্তান এই যুদ্ধের দায় সম্পূর্ণত কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামি যুদ্ধাদের উপর চাপিয়ে দেয়। তবে যুদ্ধের পর ফেলে যাওয়া তথ্যপ্রমাণ এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের পরবর্তীকালের বিবৃতি থেকে স্পষ্টতই জানা যায় যে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনীও এই যুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।এমনকি যুদ্ধের পরে নিহত এবং চিহ্নিত পাকিস্তান সেনাদের মরদেহ নিতে অস্বীকার করে পাকিস্তান সরকার, ফলে সেই সকল মৃত পাকিস্তানি সৈনিকদের ইসলামি রীতি অনুযায়ী কবর দিতে হয় ভারতকেই।[১০][১১] [১২] এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেনারেল আশরাফ রাশিদ।[১৩] ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি ফৌজকে আক্রমণ করে। পরে সেনাবাহিনীকে সহায়তা দান করে ভারতীয় বিমানবাহিনীও। অবশেষে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমর্থনের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানকে ফৌজ প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়।
কার্গিল যুদ্ধ সুউচ্চ পার্বত্য এলাকায় যুদ্ধের সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। উচ্চতার কারণে দুই দেশকেই রসদ সরবরাহ ও সেনাবাহিনীর অভিযান চালাতে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও কার্গিল যুদ্ধ হল পারমাণবিক শক্তিধর দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত দ্বিতীয় তথা সাম্প্রতিকতম প্রত্যক্ষ যুদ্ধ। এই ধরনের প্রথম যুদ্ধটি ছিল ১৯৬৯ সালের সিনো-সোভিয়েত সীমান্ত সংঘর্ষ। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই পারমাণবিক অস্ত্রপরীক্ষণ চালায়। যদিও ভারতের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রপরীক্ষাটি ঘটানো হয় ১৯৭৪ সালে।পাকিস্তান প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রপরীক্ষা কার্যকর্ম চালায় ১৯৯৮ সালে। এই যুদ্ধের ফলে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয় এবং তার ফলস্রুতিতে ভারতে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়ানো হয়। পাকিস্তানে এই যুদ্ধের ফলে সরকার ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে অস্থিরতার সৃষ্টি হয় এবং ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেনাপ্রধান পারভেজ মুশাররফ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে কার্গিল ছিল লাদাখের বালটিস্তান জেলার অংশ। এই অঞ্চলটিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি না হলেও বিভিন্ন ভাষাগত, জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায় বিশ্বের কয়েকটি উচ্চতম পর্বত কর্তৃক বিভাজিত এই অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন উপত্যকাগুলিতে বসবাস করত। প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধের (১৯৪৭-৪৮) ফলস্রুতিতে সৃষ্ট নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) বালটিস্তান জেলাটিকে দ্বিধাবিভক্ত করে। কার্গিল জেলা ও কার্গিল শহরটি ভারতীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের মধ্যে।[১৪] ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর দুই দেশের মধ্যে সাক্ষরিত শিমলা চুক্তি অনুযায়ী এই সীমান্তকে সম্মান জানিয়ে কোনো রকম সশস্ত্র সংঘাতে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।[১৫]
শ্রীনগর শহর থেকে ২০৫ কিলোমিটার (১২০ মাইল) দূরে[১৬] নিয়ন্ত্রণ রেখার উত্তরাংশের সম্মুখভাগে কার্গিল শহরটি অবস্থিত। হিমালয়ের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই কার্গিলের জলবায়ুও নাতিশীতোষ্ণ ধরনের। এখানে গ্রীষ্মকাল শীতল এবং গ্রীষ্মের রাতগুলি হিমশীতল। শীতকাল দীর্ঘ ও অতিশীতল। শীতের তাপমাত্রা মাঝেমধ্যেই -৪৮° সেন্টিগ্রেট ( -৫৪° ফারেনহাইট)-এ নেমে যায়।[১৭]
শ্রীনগর থেকে লেহগামী ১ নং জাতীয় সড়ক কার্গিলের উপর দিয়ে গিয়েছে। যে অঞ্চলে এই অনুপ্রবেশ ও সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে তা ছিল উক্ত জাতীয় সড়কের ঊর্ধ্বে স্থিত একটি ১৬০ কিলোমিটার প্রসারিত শৈলশ্রেণী।[৯] জাতীয় সড়কের উপর শৈলশ্রেণীতে অবস্থিত সামরিক আউটপোস্টগুলি প্রায় ৫,০০০ মিটার (১৬,০০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত ছিল; কোনো কোনোটি আবার ৫,৪৮৫ মিটার (১৮,০০০ ফুট) উচ্চতাতেও অবস্থান করছিল।[১৮] জেলা সদর কার্গিল ছাড়া ফ্রন্ট লাইনের নিকটস্থ জনবহুল অঞ্চলগুলি ছিল কার্গিলের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মুশকো উপত্যকা ও দ্রাস শহর এবং কার্গিলের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাটালিক সেক্টর ও অন্যান্য অঞ্চল।
কার্গিলকে টার্গেট করার অন্যতম কারণ এই যে কার্গিল সংলগ্ন অঞ্চলটি মুক্ত সামরিক অবস্থানের জমিদখলমূলক যুদ্ধের জন্য আদর্শ অঞ্চল ছিল।[১৯] শৃঙ্গগুলির উপর সুপরিকল্পিতভাবে সুরক্ষিত পোস্টগুলির কৌশলগত গুরুত্বের কারণে প্রতিরক্ষাকারীর একটি দুর্গের সুযোগসুবিধা ভোগ করা সম্ভবপর ছিল এখানে। পার্বত্য যুদ্ধে উচ্চভূমি থেকে প্রতিরক্ষাকারীর প্রতি শানিত যে কোনো আক্রমণ চালাতে গেলে আক্রমণকারীর উচ্চতার অনুপাত প্রতিরক্ষাকারীর অনেক বেশি হওয়া প্রয়োজন।[২০] তার উপর অতিরিক্ত উচ্চতা ও হিমশীতল তাপমাত্রা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।[২১]
পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের স্কারডু শহর থেকে কার্গিলের দূরত্ব মাত্র ১৭৩ কিলোমিটার (১০৮ মাইল)। এখান থেকে পাকিস্তানি যোদ্ধাদের যুদ্ধের রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা খুবই সহজ ছিল।
যুদ্ধ প্রবল আকার ধারণ করলে পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চায়। কিন্তু ভারতীয় অংশ থেকে পাকিস্তান সেনা না সরালে রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন কোনো রকম মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
অতপর ৪ঠা জুলাই ১৯৯৯ এর ওয়াশিংটন সমঝোতা অনুসারে পাকিস্তান সেনা সরিয়ে নিতে রাজি হয়। যদিও ইউনাইটেড জিহাদ কাউন্সিলএর সমর্থনে কিছু পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। ভারতীয় সেনা কার্গিল পাহাড়চূড়ায় যেতে সক্ষম হয় এবং সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের নিহত করে সেই পাহাড় চূড়ায় পুনরায় তাদের কর্তৃত্ব স্হাপন করে।
১৯৯৯ এর ২৬শে জুলাই চূড়ান্তভাবে ও আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের সমাপ্তি হয়। ১৯৭২ এর সিমলা চুক্তি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ রেখার দক্ষিণ ও পূর্বের সমগ্র অংশে ভারতের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়।
৫২৭ জন সৈনিক মারা যায়।
দ্রষ্টব্য (I): যুদ্ধের নাম: এই যুদ্ধটি একাধিক নামে পরিচিত। কার্গিলে মূল যুদ্ধটি চলাকালীন ভারত সরকার অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে "যুদ্ধ" ("war") শব্দটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন। বরং এটিকে বলা হতে থাকে "যুদ্ধ-সমতুল পরিস্থিতি" ("war-like situation")। যদিও দুই রাষ্ট্রই ইঙ্গিত করেছিল যে তারা "যুদ্ধ পরিস্থিতি"র ("state of war") মধ্য দিয়ে চলেছে। এই কারণেই কার্গিল "সংঘর্ষ", কার্গিল "ঘটনা" বা সামরিক অভিযানের সরকারি নাম "অপারেশন বিজয়" বহুলভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। যদিও সরকারিভাবে কোনোরূপ যুদ্ধের ঘোষণা করা না হলেও যুদ্ধ সমাপ্তির পর অবশ্য ভারত সরকার অধিক থেকে অধিকতর ক্ষেত্রে এই সংঘাতকে "কার্গিল যুদ্ধ" ("Kargil War") নামে অভিহিত করতে থাকেন। অন্যান্য কম জনপ্রিয় নামগুলির মধ্যে "তৃতীয় কাশ্মীর যুদ্ধ" ("Third Kashmir War") ও পাকিস্তান প্রদত্ত অনুপ্রবেশের সাংকেতিক নাম "অপারেশন বদর" ("Operation Badr") উল্লেখযোগ্য।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |