কালিহাতী | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে কালিহাতী উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°২২′৫২″ উত্তর ৯০°০′৩১″ পূর্ব / ২৪.৩৮১১১° উত্তর ৯০.০০৮৬১° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ঢাকা বিভাগ |
জেলা | টাঙ্গাইল জেলা |
সংসদীয় আসন | টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ / স্বতন্ত্র) |
আয়তন | |
• মোট | ৩০১.২২ বর্গকিমি (১১৬.৩০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০০১)[১] | |
• মোট | ৩,৭৬,৪০৭ |
• জনঘনত্ব | ১,২০০/বর্গকিমি (৩,২০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৮% [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ১৯৭০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৯৩ ৪৭ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
কালিহাতী উপজেলা বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। টাঙ্গাইল জেলা সদরের নিকটবর্তী এই উপজেলাটি পোড়াবাড়ীর চমচম ও তাঁতের শাড়ির জন্য বিখ্যাত।
কালিহাতী উপজেলার স্থানাঙ্ক ২৪°২৩′০০″ উত্তর ৯০°০০′৩০″ পূর্ব / ২৪.৩৮৩৩° উত্তর ৯০.০০৮৩° পূর্ব। কালিহাতি উপজেলার উত্তরে ভূঞাপুর উপজেলা ও ঘাটাইল উপজেলা, দক্ষিণে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা ও বাসাইল উপজেলা, পূর্বে সখিপুর উপজেলা, পশ্চিমে যমুনা নদী, সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ও বেলকুচি উপজেলা।
কালিহাতী থানা গঠিত হয় ১৯২৮ সালে এবং থানাটিকে ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।[২] কালিহাতী উপজেলার কৃতি সন্তান সাহিত্যিক ডঃ আশরাফ সিদ্দিকীর লিখিত অভিমত অনুসারে কীল্লা-ই-হাতী এ শব্দটির অপভ্রংশ কালিহাতী। কালিহাতীসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ পাঠান শাসন আমলে থাকাকালে ঝিনাই নদী প্রকাশ ফটিকজানী নদীর তীরে অবস্থিত পুরাতন থানার স্থানে একটি সেনা ছাউনী বসানো হয়। সৈন্যদের ব্যবহারের জন্য ছিল অশ্ব এবং হাতী। তাই হাতীর কীল্লা বা কীল্লা-ই-হাতী নামে এ সেনা ছাউনী পরিচিতি লাভ করে। এ শব্দই কালক্রমে এ স্থানটির নামরূপে কালিহাতীতে পরিণত হয়। কালিহাতী সদরবাসীদের নামকরণের ব্যপারে অভিমত হল কালিহাতী সদরে অবস্থিত বর্তমান বৃহৎ কালী মন্দিরটি পার্শ্ববর্তী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। সংলগ্ন বর্তমান সাপ্তাহিক বৃহৎ হামিদপুর হাটটি শতাধিক বর্ষপূর্বে কালীর হাট নামে পরিচিত ছিল। ঐ সূত্রে স্থানটির নাম লোকমুখে হয় কালিহাটী। অবশেষে কালিহাটী রূপান্তরিত হয় কালিহাতীতে।[১]
কালিহাতী উপজেলায় প্রায় ৫০০০০টি তাঁত রয়েছে। অঞ্চলটি বল্লা তাঁতের শাড়ী বিখ্যাত। এছাড়া এখানে বাঁশশিল্প, বেতের কাজ, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ, সেলাই কাজ, স্বর্ণশিল্প, বিড়ি তৈরি শিল্প প্রভৃতি রয়েছে। এই উপজেলায় বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।[২]
কালিহাতী উপজেলায় রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, টিন ফ্যাক্টরি,বরফকল রয়েছে।[২]
বর্তমান কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেগম রুমানা তানজিন অন্তরা। উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আনছার আলী, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আখতারুজ্জামান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিনা পারভীন।
পৌরসভা ২টি-
কালিহাতী উপজেলায় মোট ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। এগুলো হল-
কালিহাতীর মোট জনসংখ্যা ৩৭৬৪০৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১৯৩৯৬৭ জন এবং মহিলা ১৮২৪৪০ জন।
মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৩৪৫৫৮৭ জন মুসলিম, ৩০৭৬৪ জন হিন্দু, ২৪ জন বৌদ্ধ এবং ৩২ জন অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।[২]
কালিহাতীর শিক্ষার হার ৩৭.৬%। শিক্ষিতদের মধ্যে পুরুষ ৪২.৩%, মহিলা ৩২.৭%। উপজেলায় ৮টি কলেজ, ৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৯টি মাদ্রাসা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
৫৮ নং ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ফুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
রানী হাঁটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
জয়নাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
খরুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বানিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
হাসড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
৮১নং বলধী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। কালিহাতী উপজেলার অর্থনীতি নিম্নোক্ত খাতের উপর নির্ভর করে-
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, আলু, বেগুন, পিঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, শাকসবজি। উপজেলার প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, কলা, পেঁপে, তরমুজ। তাছাড়াও এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে। উপজেলাটির প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কলা, পিঁয়াজ, রসুন, আলু, পেঁপে, আদা, কাঁঠাল।
কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে ভূমিমালিক ৫৬.৬৯%, ভূমিহীন ৪৩.৩১%। শহরে ৪৫.১১% এবং গ্রামে ৫৭.৮০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।[২]
১৯৭১ সালে ১৯ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের লড়াইয়ে ১ জন মেজরসহ প্রায় ৩৫০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ১১ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর ভারতীয় ছত্রী সেনাদের আক্রমণে ৩৭০ জন পাকসেনা নিহত, শতাধিক আহত ও প্রায় ৬০০ জন বন্দি হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্ররা যদি অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করে থাকে তবে তাদের নেতৃত্বের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ বই পরিষদের চার নেতা আ. স. ম. আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নুরে আলম সিদ্দিকী ও শাহাজাহান সিরাজ। ১৯৯৭ সালের ৩ মার্চ পল্টনের জনসভায় উপস্থিত হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা ও কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। ঘোষণাটি পাঠ করেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে শাজাহান সিরাজ যিনিও একজন কালিহাতীর সন্তান। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যাদের অবদান ছিল অতুলনীয়। তারা হলেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী ও নাম না জানা আরও অনেকে। তাঁরা সবাই ছিলেন কালিহাতীর সন্তান।
এ উপজেলার সবকটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে মাত্র ৪০.৪২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস হিসাবে নলকূপ ৯৩.৫৪%, পুকুর ০.১৬%, ট্যাপ ০.৬১% এবং অন্যান্য ৫.৬৯% ব্যবহার করা হয়।
এ উপজেলার ৩৭.৯৪% (গ্রামে ৩৬.৪৬% ও শহরে ৫৩.৩৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৯.৮১% (গ্রামে ৫১.৫৮% ও শহরে ৩১.৩২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১২.২৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জনপদ কালিহাতী উপজেলা আবহমান বাংলার স্বরূপ তুলে ধরে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে কালিহাতী দৃশ্যমান। কালিহাতী উপজেলার ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান এই উপজেলার মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতিগঠনে ভূমিকা রেখেছে।[১]
কালিহাতী উপজেলায় ৪টি লাইব্রেরি, ১৮৯টি ক্লাব, ৫টি থিয়েটার গ্রুপ, ১০টি সিনেমা হল, ২২টি মহিলা সমিতি, ৩৪টি খেলার মাঠ, ৩টি সংগীত একাডেমি, ৬টি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে।[২]
ধলেশ্বরী নদী গোহালিয়াবাড়ী ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। প্রতিবছর অনেক ঘরবাড়ী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে এই দুই ইউনিয়নের জনসাধরন ব্যপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কালিহাতী উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত উল্লেখযোগ্য নদীসমূহ হল-
টাঙ্গাইল থেকে কালিহাতীর দুরত্ব মাত্র ২০ কি.মি.। অতি সহজে টাঙ্গাইল নতুন বাসস্টান্ড থেকে জামালপুর, গোপালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ রোডে যাতায়াত করে সে সকল বাসে কালিহাতী আসা যায়। এছাড়া সিএনজি যোগেও কালিহাতি আসা যায়।
উপজেলায় ১৩০.৮১ কিমি পাকারাস্তা এবং ১১৩.২৯ কিমি কাঁচারাস্তা রয়েছে।
সড়ক | পাকা | কিমি | কাঁচা | কিমি |
---|---|---|---|---|
মহা সড়ক | পাকা | ১৯.০০ | ||
উপজেলা সড়ক | পাকা | ৮১.৪৭ | কাঁচা | ৩১.১৪ |
ইউনিয়ন সড়ক | পাকা | ৩০.৩৪ | কাঁচা | ৮২.১৫ |
গ্রামের রাস্তা- এ ক্লাস | পাকা | ২৫.৮৯ | কাঁচা | ২৯৯.৫৩ |
গ্রামের রাস্তা- বি ক্লাস | পাকা | ২.৫০ | কাঁচা | ১২৪.৮৭ |
প্রাচীনকাল থেকেই কালিহাতী উপজেলার জনেগাষ্ঠী ক্রীড়ামোদী। এখানে প্রতিবছরই বিভিন্ন টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এখানকার জনপ্রিয় খেলার মধ্যে বর্তমানে ক্রিকেট ও ফুটবলের আধিপত্য দেখা গেলেও অন্যান্য খেলাও পিছিয়ে নেই। কালিহাতীতে বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ রয়েছে। এর মধ্যে কালিহাতী আরএস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়,কালিহাতী এবং শামছুল হক কলেজ, এলেঙ্গা-শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। প্রতি বছর এ খেলার মাঠে ক্রিকেট ও ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।[২]
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায়। ১৯৯৬ সালে টর্নোডোতে এ উপজেলার ৫২৩ জন প্রাণ হারায়, ৩০ হাজার লোক আহত হয় এবং ৬৭ টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
উপজেলায় একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১১টি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ২টি বেসরকারি স্বাস্থ্য ও দাতব্য চিকিৎসালয়, ১০টি মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং ৫২টি ক্লিনিক রয়েছে।
কালীহাতি উপজেলায় নিম্নোক্ত এনজিও কাজ করে থাকে-