কালীকৃষ্ণ মিত্র (১৮২২ - ১৮৯১) একজন বাঙালি সমাজসংস্কারক, শিক্ষাবিদ। তিনি স্ত্রী শিক্ষার উন্নতিকল্পে, বিধবা বিবাহ প্রচলন ও মাদকসেবন নিবারণ আন্দোলনে ব্রতী ছিলেন।
কালীকৃষ্ণ দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ অধ্যাবসায়ে বৃত্তি লাভ করে শিক্ষা সম্পন্ন করেছিলেন। হেয়ার স্কুলের শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন হিন্দু কলেজে। অধ্যক্ষ ডেভিড লেস্টার রিচার্ডসনের অন্যতম প্রিয় ছাত্র ছিলেন তিনি।
কালীকৃষ্ণের কৃষিবিদ্যার প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। পাশ্চাত্যের উন্নততর যন্ত্রের মাধ্যমে এদেশের কৃষকদের কৃষিকাজ শেখানোর জন্যে বারাসাতে একটি কৃষি উদ্যান ও কৃষি ভাণ্ডার স্থাপন করেছিলেন।[১] তার জীবনের সেরা কীর্তি মহিলা বিদ্যালয় স্থাপন। বারাসত শহরে তিনি, তার দাদা নবীনকৃষ্ণ মিত্র ও খ্যাতনামা শিক্ষক প্যারীচরণ সরকারের সহায়তায় ১৮৪৭ সালে মেয়েদের একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল অবিভক্ত বাংলার মতান্তরে ভারতের, মিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, ধর্মনিরপেক্ষ প্রথম মহিলা বিদ্যালয়।[২] এই কাজের জন্যে শিক্ষাবিরোধী সমাজপতিদের বাধাবিপত্তি এমনকি সমাজচ্যুত পর্যন্ত হতে হয় কালীকৃষ্ণ মিত্র ও অন্যান্য শুভানুধ্যায়ীদের। নবীনকৃষ্ণ মিত্রের মেয়ে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্নেহধন্যা কুন্তীবালা এই স্কুলের প্রথম ছাত্রী হিসেবে যোগ দেন। এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটনকে উৎসাহিত করেছিল। তিনি এর দুই বছর পর বেথুন স্কুল স্থাপন করেন।[৩][৪] স্ত্রী শিক্ষার কাজ ছাড়াও কালীকৃষ্ণ উদ্ভিদবিদ্যা, যোগশাস্ত্র, থিওসফির চর্চা করতেন। মাদক সেবন নিবারণে ও বিধবা বিবাহ দানে অগ্রণী ছিলেন তিনি।[১]