কাসিদা একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ কবিতার ছন্দে কোন প্রিয়জনের প্রশংসা করা।[১] আরবি শব্দ ক্বাসাদ বিবর্তিত হয়ে ফার্সি 'কাসিদা' হয়েছে।[২]
আরবী শব্দ 'ক্কাসদ' (قصد) অর্থ নিরেট ও পরিপূর্ণ; মস্তিষ্ক বা মজ্জা; ইচ্ছে করা; আকাঙ্ক্ষা; প্রত্যাশা।[১] যে কবিতায় প্রিয়জনের প্রশংসা করা হয় তাদেরকে আরবী-পরিভাষায় 'কাসিদা' বলে।[২][৩]
সাহিত্যিক ইবনে কুতাইবাহ কাসিদাকে তিনটি অংশে বিভক্ত করেছেন; নবম শতকে তার লিখিত ‘কিতাব আল-শির ওয়া-আল-শুয়ারা’ (‘Book of Poetry and Poets’)-এ রয়েছে কাসিদার গঠনতত্ত্ব:[১][২]
কাসিদা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে; এগুলোর প্রশস্তিমূলক, দর্শনতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, রমজান উপক্ষে রচিত প্রভৃতি ধরন রয়েছে। কাসিদা সাধারণত: দীর্ঘাকৃতির হয়;[৪] দৈর্ঘ্যে ৬০ হতে ১০০ লাইন; কখনও কখনও তা ২০০ লাইনেরও বেশি হয়।[২]
ফার্সিভাষী মোগলদের মাধ্যমে বাংলা অঞ্চলে কাসিদার প্রচলন ঘটে; আর এই সম্পর্কিত প্রাচীনতম তথ্যটি পাওয়া যায় ১৬০৮ সালে ইসলাম খান চিশতির সাথে নৌ-বহর নিয়ে যশোরে আগত মোঘল সেনাপতি মির্জা নাথানের 'বাহারিস্তান-ই-গায়বি' গ্রন্থে।[২][৫]
বাংলাদেশে, বিশেষত: রাজধানী ঢাকার পুরোনো অংশে রমজান মাসে সাহরী খাবার জন্য পাড়ায় পাড়ায় দলবেঁধে কাসিদা গেয়ে মুসলমানদের ঘুম থেকে উঠার জন্যে ডাকা হয়, যা এখানকার দীর্ঘদিনের একটি ঐতিহ্য। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পুরান ঢাকার কাসিদা ঐতিহ্য।[৬][৭] তবে কখনো কখনো এই দলগুলোর মধ্যে কাসিদা গাওয়া নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও ঘটে থাকে।[৮]
সংযুক্ত আরব আমীরাতে স্কুল পর্যায়ে কাসিদা প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।[৪]