কাহানি

কাহানি
থিয়েটারে মুক্তির পোস্টারে গর্ভবতী মহিলাকে চিত্রিত করা হয়েছে যিনি দর্শনীয়ভাবে অবাক করে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পটভূমিতে রয়েছে দুর্গাপূজার সময়ে কলকাতা শহর। পোস্টারের নীচে পাঠ্য শিরোনাম, ট্যাগলাইন, নির্মাণ ক্রেডিট এবং মুক্তির তারিখ লেখা রয়েছে।
থিয়েটারে মুক্তির পোস্টার
পরিচালকসুজয় ঘোষ
প্রযোজকসুজয় ঘোষ
কুশল কান্তিলাল গাদা
চিত্রনাট্যকারসুজয় ঘোষ
কাহিনিকারসুজয় ঘোষ
অদ্বৈত কালা
শ্রেষ্ঠাংশেবিদ্যা বালান
পরমব্রত চ্যাটার্জী
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
স্বাস্বত চ্যাটার্জী
সুরকারগান:
বিশাল-শেখর
পটভূমি স্কোর:
ক্লিনটন সেরেজো
চিত্রগ্রাহকসেতু
সম্পাদকনম্রতা রাও
প্রযোজনা
কোম্পানি
পরিবেশকভায়াকম ১৮ মোশন পিকচার্স
পেন ইন্ডিয়া লিমিটেড
মুক্তি
  • ৯ মার্চ ২০১২ (2012-03-09)
স্থিতিকাল১২২ মিনিট[]
দেশভারত
ভাষাহিন্দি
নির্মাণব্যয়₹৮০ মিলিয়ন[]
আয়₹১.০৪ বিলিয়ন[]

কাহানি (আ-ধ্ব-ব: [kəˈɦaːni]; অনু.Story) ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি-ভাষায় নির্মিত একটি ভারতীয় রহস্য থ্রিলার চলচ্চিত্র। ছবিটির সহ-কাহিনীকার, সহ-প্রযোজক এবং পরিচালক সুজয় ঘোষ। অভিনয়ে আছেন দুর্গাপূজার উৎসব চলাকালে কলকাতায় নিখোঁজ স্বামীর খোঁজে আসা এক গর্ভবতী মহিলা বিদ্যা বাগচীর ভূমিকায় বিদ্যা বালান। তাঁকে সহায়তায় ছিলেন সাত্যকি "রানা" সিনহা (পরমব্রত চ্যাটার্জী) এবং খান (নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী)।

 ৮০ মিলিয়ন (ইউএস$ ৯,৭৭,৮৬৪) এর স্বল্প বাজেটের তৈরি কাহানীর মূল ভাবনা ঘোষের এবং কাহিনীর বিকাশ করেছিলেন সহ-রচয়িতা অদ্বৈত কালা। দৃষ্টি আকর্ষণ এড়াতে কলকাতা নগরীর রাস্তায় প্রায়ই গেরিলা-ফিল্মমেকিং কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রে শহরের তাৎপর্যপূর্ণ অংশের চিত্রায়নের জন্য বহু স্থানীয় ক্রু এবং চরিত্র অভিনেতা সদস্যদের ব্যবহারের জন্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল। পুরুষ-অধ্যুষিত ভারতীয় সমাজে নারীবাদ এবং মাতৃত্বের প্রতিপাদ্য বিষয়গুলিকে অনুসন্ধান করা হয়েছিল কাহানী তে। ছবিতে সত্যজিৎ রায় এর বেশ কিছু ছবির ইঙ্গিত লক্ষ্য করা যায় যেমন চারুলতা (১৯৬৪), অরণ্যের দিন রাত্রি (১৯৭০), জয় বাবা ফেলুনাথ (১৯৭৯)।

কাহানি বিশ্বব্যাপী ৯ মার্চ ২০১২ সালে মুক্তি পায়। সমালোচকেরা চিত্রনাট্য, সিনেমাটোগ্রাফি এবং প্রধান অভিনেতাদের অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন। সমালোচিত প্রশংসা এবং মৌখিক প্রচারের পরে চলচ্চিত্রটি ৫০ দিনের মধ্যে বিশ্বব্যাপী  ১.০৪ বিলিয়ন (ইউএস$ ১২.৭১ মিলিয়ন) অর্জন করেছিল। তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং পাঁচটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস সহ ফিল্মটি বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করে। পরবর্তীকালে সেরা পরিচালক (ঘোষ) এবং সেরা অভিনেত্রীর (বিদ্যা) পুরস্কার অন্তর্ভুক্ত হয়। এই ছবির ভাবাত্মক উত্তরসূরি কাহানী ২: দুর্গা রানি সিংহ শীর্ষক চলচ্চিত্রটি ২ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল।

পটভূমি

[সম্পাদনা]

কলকাতা মেট্রোর রেল বগিতে বিষ-গ্যাসের আক্রমণে বেশ কিছু যাত্রী নিহত হয়েছিল। এর দু'বছর পরে গর্ভবতী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যা বাগচী তাঁর নিখোঁজ স্বামী অর্ণব বাগচীর সন্ধানে দুর্গাপূজা উৎসব চলাকালীন লন্ডন থেকে কলকাতায় আসেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা সাত্যকি "রানা" সিনহা সাহায্যের প্রস্তাব দেন। বিদ্যা দাবি করেছিলেন যে অর্ণব ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার (এনডিসি) এর একটি অ্যাসাইনমেন্টে কলকাতায় গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায় যে এই জাতীয় কোনও ব্যক্তি এনডিসি দ্বারা নিযুক্ত ছিলেন না।

এনডিসির মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অ্যাগনেস ডি'মেলো বিদ্যা কে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তাঁর স্বামী সাবেক কর্মচারী মিলান দামজি-র মতো ছিলেন যাঁর ফাইল সম্ভবত পুরানো এনডিসি অফিসে রাখা আছে। অ্যাগনেস আরও সহায়তা দেওয়ার আগেই তাঁকে জীবন বীমা এজেন্ট হিসাবে গোপনে কাজ করা এক ঘাতক বব বিশ্বাস হত্যা করে। বিদ্যা এবং রানা এনডিসি অফিসে প্রবেশ করে দামজি-র ফাইলটি সবেমাত্র খুঁজে পান। আর ঠিক সেই সময়েই একই তথ্যের জন্য অনুসন্ধানে আসা ববের সাথে লড়াইয়ের হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান। ওদিকে দামজির রেকর্ডগুলি পাওয়ার চেষ্টায় ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। আইবি দিল্লির দুই কর্মকর্তা হলেন চীফ ভাস্করন কে. এবং তাঁর ডেপুটি খান। খান কলকাতায় আসেন এবং প্রকাশ করে দেন যে দামজি বিষাক্ত গ্যাস হামলার জন্য দোষী আইবি এজেন্ট ছিলেন। খানের সতর্কতা সত্ত্বেও বিদ্যা তাঁর অনুসন্ধান চালিয়ে যান এই ভয়ে যে দামজির সাথে অর্ণবের সাদৃশ্যই তাঁকে সমস্যায় ফেলবে।

দামজির রেকর্ডের ঠিকানা অনুসারে বিদ্যা এবং রানা একটি জরাজীর্ণ ফ্ল্যাটে গিয়ে পৌঁছান। আশপাশের চা স্টলের একটি ছেলে দামজির ফ্ল্যাটে ঘন ঘন দর্শনার্থী হিসাবে আসা এনডিসি অফিসার আর. শ্রীধরকে শনাক্ত করে। বব বিদ্যাকে হত্যা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তাকে তাড়া করার সময় বব একটি ট্রাকে চাপা পড়ে মারা যায়। ববের মোইল ফোন পরীক্ষা করে বিদ্যা এবং রানা একটি আইপি ঠিকানার সন্ধান পান যেখান থেকে বিদ্যাকে হত্যা করার নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল। উভয়ে সেই আইপি ঠিকানার যাচাই করতে শ্রীধরের অফিসে প্রবেশ করেন। কিন্তু বৈদ্যুতিনভাবে সতর্ক হয়ে শ্রীধর আবার তাঁর অফিসে ফিরে আসে। বিদ্যা দুর্ঘটনাক্রমে শ্রীধরকে গুলিবিদ্ধ করেন এবং শ্রীধর মারা যান। এতে খান মর্মাহত হন কারণ তিনি শ্রীধরকে জীবিত পেতে চেয়েছিলেন।

শ্রীধরের কম্পিউটারের ডেটা কোড থেকে ভাস্করনের ফোন নম্বরের সন্ধান পাওয়া যায়। বিদ্যা ভাস্করানকে ফোন করে বলেন যে তিনি শ্রীধরের অফিস থেকে কিছু সংবেদনশীল নথি পুনরুদ্ধার করেছেন। তিনি ভাস্করনকে নথিগুলির বিনিময়ে স্বামীকে খুঁজে পেতে সহায়তা করার জন্য বলেন। কিন্তু ভাস্করন তাঁকে স্থানীয় পুলিশে যোগাযোগ করতে বলেন। এই সময়ের কিছু পরেই বিদ্যা একটি অজানা নাম্বার থেকে কল পান। তাতে তাঁকে সতর্ক করে বলা হয় যে যদি তাঁর স্বামীকে জীবিত দেখতে চান তবে তাঁর ডকুমেন্ট ঐ ফোন করা ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া উচিত। খান ভাবেন যে এই ফোন কলের ব্যক্তিটি মিলন দামজি স্বয়ং।

বিদ্যা দামজির সাথে দেখা করতে যান। তাঁকে অনুসরণ করেন রানা এবং খান। দামজি যখন সাক্ষাৎটি সংক্ষিপ্ত করে তখন বিদ্যা সন্দেহ প্রকাশ করেন যে সংবেদনশীল ফাইলের বিনিময়ে তিনি তাঁর স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবেন না এবং দামজি তখন চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিদ্যা তাঁকে থামানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষে দামজি তাঁর লক্ষ্য করে বন্দুক চালায়। বিদ্যা তাকে তাঁর কৃত্রিম পেট ব্যবহার করে নিরস্ত্র করেন। আসলে তিনি তাঁর গর্ভাবস্থা নকল করার জন্যই এটা ব্যবহার করেছিলেন এবং তাঁর নিজের বন্দুক দিয়ে গুলি করার আগেই তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর চুলের কাঁটা দিয়েই দামজির গলায় আঘাত করেন। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই বিদ্যা ভিড়ের মধ্যে পালিয়ে যান। রেখে যান রানাটির জন্য একটি ধন্যবাদ নোট এবং শ্রীধরের কম্পিউটার থেকে প্রাপ্ত ডেটা সংবলিত একটি পেনড্রাইভ। এই পেনড্রাইভই ভাস্করনের গ্রেপ্তারের উপযুক্ত প্রমাণ। রানা তখন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোন যে কোনও বিদ্যা বা অর্ণব বাগচীর অস্তিত্ব ছিল না এবং বিদ্যা পুলিশ এবং আইবিকে তাঁর নিজস্ব লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার করে আসছিলেন।

বিদ্যা ছিলেন অরূপ বসুর বিধবা স্ত্রী। আইবি অফিসার অরূপ বসু বিষ-গ্যাসের আক্রমণে নিহত হয়েছিলেন এবং তিনি ছিলেন দামজির সহকর্মী। বিদ্যা তাঁর স্বামীর লাশ দেখে অবিলম্বে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন এবং তার ফলে তাঁর গর্ভপাত ঘটেছিল। তাঁর স্বামী এবং তাঁদের অনাগত সন্তানের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার মিশনে বিদ্যা অবসরপ্রাপ্ত আইবি কর্মকর্তা প্রতাপ বাজপেয়ীর সহায়তা করেছিলেন। বাজপেয়ী কোনও এক শীর্ষ আইবি কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা সন্দেহ করেছিলেন।

মন্তব্য

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Kahaani (15)"British Board of Film Classification। ২ মার্চ ২০১২। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১২ 
  2. "Vidya Balan's Kahaani declared a hit"CNN-IBNIndo-Asian News Service। ১২ মার্চ ২০১২। ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৩ 
  3. "Vidya Balan's Kahaani completes 50 days, grosses Rs. 104 cr worldwide"Hindustan Times। ২৭ এপ্রিল ২০১২। ২৮ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১২