কিউলেক্স | |
---|---|
![]() | |
Culex pipiens স্ত্রী | |
![]() | |
Culex sp. পুরুষ | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস ![]() | |
জগৎ/রাজ্য: | অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) |
পর্ব: | আর্থ্রোপোডা (Arthropoda) |
শ্রেণি: | ইনসেক্টা (Insecta) |
বর্গ: | ডিপ্টেরা (Diptera) |
পরিবার: | Culicidae |
উপপরিবার: | Culicinae |
গোত্র: | Culicini |
গণ: | Culex Linnaeus, 1758 |
আদর্শ প্রজাতি | |
Culex pipiens Linnaeus, 1758 | |
বৈচিত্র্য | |
১,০০০ এরও বেশি প্রজাতি |
কিউলেক্স মশা বা কুলেক্স মশা হলো মশার একটি গণ, যার মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি পাখি, মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বিভিন্ন রোগের বাহক হিসাবে কাজ করে। এরা যে রোগগুলো ছড়ায় তার মধ্যে রয়েছে আর্বোভাইরাস সংক্রমণ (যেমন ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস, জাপানি এনসেফালাইটিস, বা সেন্ট লুইস এনসেফালাইটিস), গোদ রোগ এবং এভিয়ান ম্যালেরিয়া। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের চরম উত্তরাংশ ব্যতীত এদের সমগ্র বিশ্বজুড়েই পাওয়া যায় এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো কিছু প্রধান মার্কিন শহরে সবচেয়ে বেশি কুলেক্স মশা দেখা যায়।
কার্ল লিনিয়াস এই গণের নামকরণ করার সময় একটি অস্পষ্ট ল্যাটিন শব্দ "কিউলেক্স (culex)" ব্যবহার করেছিলেন, যা দ্বারা মাঝারি আকারের মাছি বা মশাকে বোঝায়।[১]
কুলেক্স মশার প্রাপ্তবয়স্কদের আকার প্রজাতির উপর নির্ভর করে ৪–১০ মিমি (০.২–০.৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে। মশা নেমাটোসেরা উপশ্রেণীর অন্তর্গত, তাই এর দেহ স্পষ্টভাবে তিনটি অংশে বিভক্ত: মাথা, বক্ষ এবং পেট/উদর। বিশ্রামের সময়, মশার দুটি সামনের ডানা পেটের উপরে আনুভূমিকভাবে থাকে। ডিপ্টেরা গোষ্ঠীর অন্যান্য উড়ন্ত সদস্যদের মতো, মশার দ্বিতীয় জোড়া ডানা ক্ষুদ্র ও অস্পষ্ট হ্যালটিরে রূপান্তরিত হয়।
মশা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রজাতি নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য দেহের বিভিন্ন অনুপাত সাবধানে পরিমাপ করা এবং বিভিন্ন রোম বা অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।[২]
ক্ষেত্রপর্যায়ে, মশা কোন গোষ্ঠীর - এনোফিলাইন নাকি কিউলিকাইন - তা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ভালো অবস্থায় থাকা মশার ম্যাক্সিলারি পাল্পের দৈর্ঘ্য পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। স্ত্রী মশার ক্ষেত্রে, যদি পাল্প সূঁচের মতো দীর্ঘ হয়, তবে মশাটি এনোফিলাইন বলে ধরে নেওয়া হয়। কিউলিকাইন স্ত্রী মশার পাল্প খাটো হয়। এনোফিলাইন মশার ডানা ছিটমোট বা ফোঁটাযুক্ত, আর কিউলিকাইন মশার ডানা স্বচ্ছ। এনোফিলাইন মশা মাথা নিচু করে ও পেছনের অংশ উঁচু করে বসে, বিশেষ করে রক্তপান করার সময়। কিউলিকাইন স্ত্রী মশা দেহ সমান্তরাল রেখে বসে। এনোফিলাইন মশার লার্ভা গতিবিহীন অবস্থায় পানির উপরে আনুভূমিকভাবে ভাসে। কিউলিকাইন লার্ভা মাথা নিচু করে ভাসে এবং শুধু লেজের শ্বাসনালিটি পানির উপরে থাকে।[৩]
স্ত্রী মশা জল বা পানির উপরে একসাথে ৩০০ টি পর্যন্ত ডিম ছাড়ে। ডিমগুলো ছোট্ট, সিগারের মতো আকৃতির, গাঢ় বাদামি রঙের এবং একে অপরের সাথে লেগে থাকে। ডিম ফুটতেই লার্ভা বের হয়। ডিম ফোটার জন্য পানি অপরিহার্য। পুকুর, ঝিল, খাদ, টিনের ক্যান, বালতি, বোতল এবং পানি মজুতকারী ট্যাংক - এই ধরনের জায়গায় মশা ডিম পাড়ে। লার্ভা পুরোপুরি পানিতে বাস করে। লার্ভা জৈব পদার্থ, ক্ষুদ্র জীবজন্তু বা উদ্ভিদের উপরিভাগ খেয়ে বেড়ে ওঠে। লার্ভা পানিতে উলম্ব অবস্থানে থাকে। লার্ভা বেশ কয়েকবার লোমশ মুখের অংশ ব্যবহার করে পানিতে ভেসে বেড়ায়। লার্ভা পর্যায়ের পর পিউপা পর্যায়ে আসে। পিউপা দেখতে কমা আকৃতির এবং খায় না। পিউপা শ্বাস নিতে নিয়মিত পানির উপরে থাকতে হয়। পিউপা শত্রু থেকে বাঁচতে দ্রুত ঝাঁকুনির মতো সাঁতার কাটতে পারে।[৪][৫]
২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার পর পিউপা ফেটে প্রাপ্তবয়স্ক মশা বেরিয়ে আসে। প্রাপ্তবয়স্ক মশা পানির উপরে থেকে উড়ে যায়। স্ত্রী মশা রক্ত পান করে ডিম উৎপাদনের জন্য প্রোটিন সংগ্রহ করে। পুরুষ মশা ফুলের মধু খায়। স্ত্রী মশা ডিম পাড়ার জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করে। জীবনচক্র পুনরায় শুরু হয়। কুলেক্স মশার জীবনচক্র গরম আবহাওয়ায় প্রায় দুই সপ্তাহ সময় নেয়। জীবনচক্রের সময়কাল তাপমাত্রা, খাদ্য এবং পানির প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। কুলেক্স মশা ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জাপানিজ এনসেফালাইটিস এবং ফাইলেরিয়া সহ বিভিন্ন রোগের বাহক। মশার জীবনচক্র সম্পর্কে জানা মশা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কুলেক্স মশা বিভিন্ন রোগের বাহক হিসেবে পরিচিত। এই মশার বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করে।
নোনানাল নামক একটি যৌগ[৬][৭][৮] এবং কার্বন ডাই অক্সাইড কুলেক্স মশাকে আকর্ষণ করে।[৯]
কিউলেক্স একটি বৈচিত্রপূর্ণ গণ। এটি ২০ টিরও বেশি উপগণের সমন্বয়ে গঠিত, যার মধ্যে মোট ১,০০০ টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এদের নতুন প্রজাতির নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য ও গবেষণা সময়ে সময়ে দ্রুত প্রকাশিত হয়।